আমাদের শ্রীগুরুপরম্পরা :
শ্রীশ্রীল ভক্তিনির্ম্মল আচার্য্য মহারাজ শ্রীশ্রীল ভক্তিসুন্দর গোবিন্দ দেবগোস্বামী মহারাজ শ্রীশ্রীল ভক্তিরক্ষক শ্রীধর দেবগোস্বামী মহারাজ ভগবান্ শ্রীশ্রীল ভক্তি সিদ্ধান্ত সরস্বতী গোস্বামী ঠাকুর
              প্রভুপাদ
“শ্রীচৈতন্য-সারস্বত মঠে সূর্যাস্ত কখনই হয় না” :
আমাদের মঠের পরিচয় ও বৈশিষ্ট্য
 
আমাদের সম্পর্কে শ্রীউপদেশ শ্রীগ্রন্থাগার শ্রীগৌড়ীয় পঞ্জিকা ছবি ENGLISH
 

শ্রীশ্রীপ্রেমবিবর্ত্ত


১৫। শ্রীনবদ্বীপে পূর্ব্বাহ্ণ-লীলা

 

যখন যাহা মনে পড়ে গৌরাঙ্গ-চরিত ।

তাহা লিখি, হইলেও ক্রম-বিপরীত ॥১॥

গৌরাঙ্গ-প্রসাদ

শচী আই একদিন বড় যত্ন করি’ ।

গোরা-অবশিষ্ট-পাত্র মোরে দিল ধরি’ ॥২॥

আমি খাইলাম যেন অমৃতাস্বাদন ।

গৌরাঙ্গ-প্রসাদ পাঞা আহ্লাদিত মন ॥৩॥

কভু কি করিব আমি সে ভূরি ভোজন ।

আবোনা অচ্যুত শাক আইয়ের রন্ধন ॥৪॥


মোচাঘণ্ট, কচুশাক তাহে ফুলবড়ি ।

মানচাকি, নিম্বপটোল, আর দধি কড়ি ॥৫॥

গাদিগাছা গ্রামে গমন

ভোজনে আনন্দমতিচলিলাম হংসগতি

নিতাই-গৌরাঙ্গগণ-সঙ্গে ।

গঙ্গাতীরে তীরে যাইগাদিগাছা গ্রাম পাই

হরিনাম-গানের প্রসঙ্গে ॥৬॥
 
গোবিন্দ মৃদঙ্গ বায়বাসুঘোষ নাম গায়

নাচে গদাধর বক্রেশ্বর ।

হরিবোল রব শুনি’চারিদিকে হুলুধ্বনি

গোরাপ্রেমে সবে মাতোয়ার ॥৭॥
 
নাচ গান নাহি জানিতবু নাচি ঊর্দ্ধপাণি

গৌরাঙ্গ নাচায় অঙ্গে পশি’ ।

সুরতালবোধ নাইতবু নাচি, তবু গাই

কি জানি কি জানে গৌরশশী ॥৮॥
 

তথায় গোপগণের সেবা

গাদিগাছা গ্রামে আসি’গোপপল্লী মাঝে পশি’

গোরা বলে, “শুন ভক্তগণ ।

দহকূলে বিচরণআজি মোদের বিচরণ
বৃক্ষমূলে করিব শয়ন ॥৯॥
 
এই বটবৃক্ষতলেগাভী আছে কুতূহলে

গোপ-সহ করিব বিহার” ।

বহু গোপগণ আইলদধি, ছানা, ননী দিল

পথশ্রম না রহিল আর ॥১০॥
 
নৃসিংহানন্দের সঙ্গেপ্রদ্যুম্ন আইল রঙ্গে

পুরুষোত্তমাচার্য্য মিলিল ।

মৃদঙ্গের বাদ্যরবেগৃহ ছাড়ি’ আইল সবে

হরিধ্বনি গগনে উঠিল ॥১১॥
 

ভীম গোপ

ভীম-নামে গোপ এক পরম উদার ।

অগ্রসর হঞা বলে, “শুনহ গোহার ॥১২॥

আমার জননী শ্যামা গোয়ালিনী ধন্যা ।

গঙ্গানগরের সাধু গোয়ালার কন্যা ॥১৩॥

শচী আইকে মা বলিয়া সদা করে সেবা ।

সে সম্পর্কে তুমি আমার মাতুল হইবা ॥১৪॥

চল মামা মোর ঘরে চল দল লঞা ।

শ্রীকৃষ্ণকীর্ত্তন কর আনন্দিত হঞা ॥১৫॥

দধি-দুগ্ধ যাহা কিছু রাখিয়াছে মা ।

সব খাওয়াইব আর টীপে দিব পা” ॥১৬॥

গৌরাঙ্গের ভীমের গৃহে গমন ও ক্ষীর-ভোজন

নাছোড় হইয়া যবে সকলে ধরিল ।

গোপপ্রেমে গোরা গোপগৃহেতে চলিল ॥১৭॥

শ্যামা গোয়ালিনী তবে উলুধ্বনি দিয়া ।

সকলকে গোয়াল-ঘরে দিল বসাইয়া ॥১৮॥

শ্যামা বলে, “পণ্ডিত দাদা, কেমন আছেন মা ?” ।
“ভাল ভাল” বলি’ গোরা নাচাইল গা ॥১৯॥

কলাপাতা পাতি’ শ্যামা দেয় দধি-ক্ষীর ।

ভক্তগণ লঞা নিমাঞি ভোজনে বসে ধীর ॥২০॥

গোরাদহ

ভোজন সমাপি’ চলে সেই দহের তীরে ।

হরিগুণগান সবে করে ধীরে ধীরে ॥২১॥

রামদাস গোপ আসি’ করে নিবেদন ।

“দহের জল পান নাহি করে গাভীগণ ॥২২॥

দহে নক্র

নক্র এক ভয়ঙ্কর বেড়ায় দহের জলে ।

জল না খাইয়া গাভী ডাকে হাম্বা বোলে” ॥২৩॥

তাহা শুনি’ গোরা করে শ্রীনামকীর্ত্তন ।

কীর্ত্তনে আকৃষ্ট হইল নক্র তত ক্ষণ ॥২৪॥

নক্র নহে, দেবশিশু

শীঘ্র করি’ উঠিয়া আইল গোরা-পায় ।

পদস্পর্শে দেবশিশু পরিদৃশ্য হয় ॥২৫॥

কাঁদি’ সেই দেবশিশু করেন স্তবন ।

নিজ দুঃখকথা বলে আর করয় রোদন ॥২৬॥

নক্ররূপী দেবশিশুর পূর্ব্ব-বিবরণ

দেবশিশু বলে, “প্রভু দুর্ব্বাসার শাপে ।

নক্ররূপে ভ্রমি আমি, সর্ব্বলোক কাঁপে ॥২৭॥

কাম্যবনে মুনিবর শুতিয়া আছিল ।

চঞ্চলতা করি’ তার জটা কাটি নিল ॥২৮॥

ক্রোধে মুনি কহে, ‘তুমি পাঞা নক্ররূপ ।

চারি যুগ থাক কর্ম্মফল-অনুরূপ’ ॥২৯॥

তবে কাঁদিলাম আমি মিনতি করিয়া ।

দয়া করি’ মুনি মোরে কহিল ডাকিয়া ॥৩০॥

‘ওরে দেবশিশু যবে শ্রীনন্দনন্দন ।

নবদ্বীপে হইবেন শচীপ্রাণধন ॥৩১॥


তাঁহার কীর্ত্তনে তোমার শাপ-ক্ষয় হবে ।

দিব্য দেহ পেয়ে তবে ত্রিপিষ্টপ যাবে’ ॥৩২॥

দেবশিশুর স্তব

জয় জয় শচীসুত পতিতপাবন ।

দীনহীন অগতির গতি মহাজন ॥৩৩॥

চৌদ্দ ভুবনে ঘোষে সুকীর্ত্তি তোমার ।

আমা হেন অধমেরে করিলে উদ্ধার ॥৩৪॥

এই নবদ্বীপধাম সর্ব্বধামসার ।

এখানে হইলে কলি-পাবনাবতার ॥৩৫॥

কলিজীব উদ্ধারিবে দিয়া হরিনাম ।

আসিয়াছ, মহাপ্রভু তোমাকে প্রণাম ॥৩৬॥

চারি যুগ আছি আমি নক্ররূপ ধরি’ ।

এবে উদ্ধারিলে তুমি পতিতপাবন হরি ॥৩৭॥

তব মুখে হরিনাম পরম মধুর ।

স্থাবরাস্থাবর জীব তারিলে প্রচুর ॥৩৮॥

আজ্ঞা দেও যাই আমি ত্রিপিষ্টপ যথা ।

মাতা পিতা দেখি’ সুখ পাইব সর্ব্বথা” ॥৩৯॥

দেবশিশুর স্বরূপপ্রাপ্তি ও স্বস্থানে গমন

এত বলি’ প্রণমিয়া দেবশিশু যায় ।

কীর্ত্তনের রোল তবে উঠে পুনরায় ॥৪০॥

মধ্যাহ্ন হইল দেখি’ সর্ব্ব ভক্তগণ ।

প্রভুসঙ্গে মায়াপুর করিল গমন ॥৪১॥

মহাপ্রভুর এই লীলা যে করে শ্রবণ ।

ব্রহ্মশাপমুক্ত হয় সেই মহাজন ॥৪২॥

গোরাদহ দর্শনের ফল

সেই হইতে ‘গোরাদহ’ নাম পরচার ।

কালীয়দহের ন্যায় হইল তাহার ॥৪৩॥

সেই ‘দহ’ দর্শনে স্পর্শনে পাপক্ষয় ।

কৃষ্ণভক্তি লাভ হয় সর্ব্ববেদে কয় ॥৪৪॥

সেই গোপগণ দেখ মহাপ্রেমানন্দে ।

গৌরাঙ্গে করিল হেথা মামা বলি’ স্কন্ধে ॥৪৫॥

সকলে দেখিল প্রভুর পূর্ব্বাহ্ণ-বিহার ।

তঁহি মধ্যে দেখে রামকৃষ্ণ-লীলাসার ॥৪৬॥

দেখে গোবর্দ্ধন তথা মানস-জাহ্নবীপুলিন ।

কৃষ্ণগোচারণলীলা অতি সমীচীন ॥৪৭॥

গোপগণ জানিল যে নিমাঞি-চরিত ।

শ্রীনন্দনন্দনলীলা নিজ সমীহিত ॥৪৮॥

 


 

← ১৪। বিপরীত বিবর্ত্ত ১৬। পীরিতি কিরূপ ? →

 

সূচীপত্র:
১। মঙ্গলাচরণ
২। গ্রন্থরচনা
৩। প্রথম প্রণাম
৪। গৌরস্য গুরুতা
৫। বিবর্ত্তবিলাসসেবা
৬। জীব-গতি
৭। সকলের পক্ষে নাম
৮। কুটীনাটি ছাড়
৯। যুক্তবৈরাগ্য
১০। জাতিকুল
১১। নবদ্বীপ-দীপক
১২। বৈষ্ণব-মহিমা
১৩। শ্রীগৌরদর্শনের ব্যাকুলতা
১৪। বিপরীত বিবর্ত্ত
১৫। শ্রীনবদ্বীপে পূর্ব্বাহ্ণ-লীলা
১৬। পীরিতি কিরূপ ?
১৭। ভক্তভেদে আচারভেদ
১৮। শ্রীএকাদশী
১৯। নামরহস্যপটল
২০। নাম-মহিমা
বৃক্ষসম ক্ষমাগুণ করবি সাধন । প্রতিহিংসা ত্যজি আন্যে করবি পালন ॥ জীবন-নির্ব্বাহে আনে উদ্বেগ না দিবে । পর-উপকারে নিজ-সুখ পাসরিবে ॥