![শ্রীচৈতন্য-সারস্বত মঠ আন্তর্জাতিক](/bn/pantry/banner.jpg) |
আমাদের শ্রীগুরুপরম্পরা :
|
“শ্রীচৈতন্য-সারস্বত মঠে সূর্যাস্ত কখনই হয় না” :
|
|
|
|
|
|
শ্রীশ্রীপ্রেমবিবর্ত্ত
১৫। শ্রীনবদ্বীপে পূর্ব্বাহ্ণ-লীলা
যখন যাহা মনে পড়ে গৌরাঙ্গ-চরিত ।
তাহা লিখি, হইলেও ক্রম-বিপরীত ॥১॥
|
শচী আই একদিন বড় যত্ন করি’ ।
গোরা-অবশিষ্ট-পাত্র মোরে দিল ধরি’ ॥২॥
আমি খাইলাম যেন অমৃতাস্বাদন ।
গৌরাঙ্গ-প্রসাদ পাঞা আহ্লাদিত মন ॥৩॥
কভু কি করিব আমি সে ভূরি ভোজন ।
আবোনা অচ্যুত শাক আইয়ের রন্ধন ॥৪॥
মোচাঘণ্ট, কচুশাক তাহে ফুলবড়ি ।
মানচাকি, নিম্বপটোল, আর দধি কড়ি ॥৫॥
|
ভোজনে আনন্দমতি | চলিলাম হংসগতি
|
নিতাই-গৌরাঙ্গগণ-সঙ্গে । |
গঙ্গাতীরে তীরে যাই | গাদিগাছা গ্রাম
পাই
|
হরিনাম-গানের প্রসঙ্গে ॥৬॥ |
|
গোবিন্দ মৃদঙ্গ বায় | বাসুঘোষ নাম গায়
|
নাচে গদাধর বক্রেশ্বর । |
হরিবোল রব শুনি’ | চারিদিকে হুলুধ্বনি
|
গোরাপ্রেমে সবে মাতোয়ার ॥৭॥ |
|
নাচ গান নাহি জানি | তবু নাচি ঊর্দ্ধপাণি
|
গৌরাঙ্গ নাচায় অঙ্গে পশি’ । |
সুরতালবোধ নাই | তবু নাচি, তবু গাই
|
কি জানি কি জানে গৌরশশী ॥৮॥ |
|
গাদিগাছা গ্রামে আসি’ | গোপপল্লী মাঝে পশি’
|
গোরা বলে, “শুন ভক্তগণ । |
দহকূলে বিচরণ | আজি মোদের বিচরণ |
বৃক্ষমূলে করিব শয়ন ॥৯॥ |
|
এই বটবৃক্ষতলে | গাভী আছে কুতূহলে
|
গোপ-সহ করিব বিহার” । |
বহু গোপগণ আইল | দধি, ছানা, ননী দিল
|
পথশ্রম না রহিল আর ॥১০॥ |
|
নৃসিংহানন্দের সঙ্গে | প্রদ্যুম্ন আইল রঙ্গে
|
পুরুষোত্তমাচার্য্য মিলিল । |
মৃদঙ্গের বাদ্যরবে | গৃহ ছাড়ি’ আইল
সবে
|
হরিধ্বনি গগনে উঠিল ॥১১॥ |
|
ভীম-নামে গোপ এক পরম উদার ।
অগ্রসর হঞা বলে, “শুনহ গোহার ॥১২॥
আমার জননী শ্যামা গোয়ালিনী ধন্যা ।
গঙ্গানগরের সাধু গোয়ালার কন্যা ॥১৩॥
শচী আইকে মা বলিয়া সদা করে সেবা ।
সে সম্পর্কে তুমি আমার মাতুল হইবা ॥১৪॥
চল মামা মোর ঘরে চল দল লঞা ।
শ্রীকৃষ্ণকীর্ত্তন কর আনন্দিত হঞা ॥১৫॥
দধি-দুগ্ধ যাহা কিছু রাখিয়াছে মা ।
সব খাওয়াইব আর টীপে দিব পা” ॥১৬॥
|
গৌরাঙ্গের ভীমের গৃহে গমন ও ক্ষীর-ভোজন
|
নাছোড় হইয়া যবে সকলে ধরিল ।
গোপপ্রেমে গোরা গোপগৃহেতে চলিল ॥১৭॥
শ্যামা গোয়ালিনী তবে উলুধ্বনি দিয়া ।
সকলকে গোয়াল-ঘরে দিল বসাইয়া ॥১৮॥
শ্যামা বলে, “পণ্ডিত দাদা, কেমন আছেন মা ?” ।
“ভাল ভাল” বলি’ গোরা নাচাইল গা ॥১৯॥
কলাপাতা পাতি’ শ্যামা দেয় দধি-ক্ষীর ।
ভক্তগণ লঞা নিমাঞি ভোজনে বসে ধীর ॥২০॥
|
ভোজন সমাপি’ চলে সেই দহের তীরে ।
হরিগুণগান সবে করে ধীরে ধীরে ॥২১॥
রামদাস গোপ আসি’ করে নিবেদন ।
“দহের জল পান নাহি করে গাভীগণ ॥২২॥
|
নক্র এক ভয়ঙ্কর বেড়ায় দহের জলে ।
জল না খাইয়া গাভী ডাকে হাম্বা বোলে” ॥২৩॥
তাহা শুনি’ গোরা করে শ্রীনামকীর্ত্তন ।
কীর্ত্তনে আকৃষ্ট হইল নক্র তত ক্ষণ ॥২৪॥
|
শীঘ্র করি’ উঠিয়া আইল গোরা-পায় ।
পদস্পর্শে দেবশিশু পরিদৃশ্য হয় ॥২৫॥
কাঁদি’ সেই দেবশিশু করেন স্তবন ।
নিজ দুঃখকথা বলে আর করয় রোদন ॥২৬॥
|
নক্ররূপী দেবশিশুর পূর্ব্ব-বিবরণ
|
দেবশিশু বলে, “প্রভু দুর্ব্বাসার শাপে ।
নক্ররূপে ভ্রমি আমি, সর্ব্বলোক কাঁপে ॥২৭॥
কাম্যবনে মুনিবর শুতিয়া আছিল ।
চঞ্চলতা করি’ তার জটা কাটি নিল ॥২৮॥
ক্রোধে মুনি কহে, ‘তুমি পাঞা নক্ররূপ ।
চারি যুগ থাক কর্ম্মফল-অনুরূপ’ ॥২৯॥
তবে কাঁদিলাম আমি মিনতি করিয়া ।
দয়া করি’ মুনি মোরে কহিল ডাকিয়া ॥৩০॥
‘ওরে দেবশিশু যবে শ্রীনন্দনন্দন ।
নবদ্বীপে হইবেন শচীপ্রাণধন ॥৩১॥
তাঁহার কীর্ত্তনে তোমার শাপ-ক্ষয় হবে ।
দিব্য দেহ পেয়ে তবে ত্রিপিষ্টপ যাবে’ ॥৩২॥
|
জয় জয় শচীসুত পতিতপাবন ।
দীনহীন অগতির গতি মহাজন ॥৩৩॥
চৌদ্দ ভুবনে ঘোষে সুকীর্ত্তি তোমার ।
আমা হেন অধমেরে করিলে উদ্ধার ॥৩৪॥
এই নবদ্বীপধাম সর্ব্বধামসার ।
এখানে হইলে কলি-পাবনাবতার ॥৩৫॥
কলিজীব উদ্ধারিবে দিয়া হরিনাম ।
আসিয়াছ, মহাপ্রভু তোমাকে প্রণাম ॥৩৬॥
চারি যুগ আছি আমি নক্ররূপ ধরি’ ।
এবে উদ্ধারিলে তুমি পতিতপাবন হরি ॥৩৭॥
তব মুখে হরিনাম পরম মধুর ।
স্থাবরাস্থাবর জীব তারিলে প্রচুর ॥৩৮॥
আজ্ঞা দেও যাই আমি ত্রিপিষ্টপ যথা ।
মাতা পিতা দেখি’ সুখ পাইব সর্ব্বথা” ॥৩৯॥
|
দেবশিশুর স্বরূপপ্রাপ্তি ও স্বস্থানে গমন
|
এত বলি’ প্রণমিয়া দেবশিশু যায় ।
কীর্ত্তনের রোল তবে উঠে পুনরায় ॥৪০॥
মধ্যাহ্ন হইল দেখি’ সর্ব্ব ভক্তগণ ।
প্রভুসঙ্গে মায়াপুর করিল গমন ॥৪১॥
মহাপ্রভুর এই লীলা যে করে শ্রবণ ।
ব্রহ্মশাপমুক্ত হয় সেই মহাজন ॥৪২॥
|
সেই হইতে ‘গোরাদহ’ নাম পরচার ।
কালীয়দহের ন্যায় হইল তাহার ॥৪৩॥
সেই ‘দহ’ দর্শনে স্পর্শনে পাপক্ষয় ।
কৃষ্ণভক্তি লাভ হয় সর্ব্ববেদে কয় ॥৪৪॥
সেই গোপগণ দেখ মহাপ্রেমানন্দে ।
গৌরাঙ্গে করিল হেথা মামা বলি’ স্কন্ধে ॥৪৫॥
সকলে দেখিল প্রভুর পূর্ব্বাহ্ণ-বিহার ।
তঁহি মধ্যে দেখে রামকৃষ্ণ-লীলাসার ॥৪৬॥
দেখে গোবর্দ্ধন তথা মানস-জাহ্নবীপুলিন ।
কৃষ্ণগোচারণলীলা অতি সমীচীন ॥৪৭॥
গোপগণ জানিল যে নিমাঞি-চরিত ।
শ্রীনন্দনন্দনলীলা নিজ সমীহিত ॥৪৮॥
|
|
সূচীপত্র:
১। মঙ্গলাচরণ
২। গ্রন্থরচনা
৩। প্রথম প্রণাম
৪। গৌরস্য গুরুতা
৫। বিবর্ত্তবিলাসসেবা
৬। জীব-গতি
৭। সকলের পক্ষে নাম
৮। কুটীনাটি ছাড়
৯। যুক্তবৈরাগ্য
১০। জাতিকুল
১১। নবদ্বীপ-দীপক
১২। বৈষ্ণব-মহিমা
১৩। শ্রীগৌরদর্শনের
ব্যাকুলতা
১৪। বিপরীত বিবর্ত্ত
১৫। শ্রীনবদ্বীপে পূর্ব্বাহ্ণ-লীলা
১৬। পীরিতি কিরূপ ?
১৭। ভক্তভেদে আচারভেদ
১৮। শ্রীএকাদশী
১৯। নামরহস্যপটল
২০। নাম-মহিমা
|
|
বৃক্ষসম ক্ষমাগুণ করবি সাধন । প্রতিহিংসা ত্যজি আন্যে করবি পালন ॥ জীবন-নির্ব্বাহে আনে উদ্বেগ না দিবে ।
পর-উপকারে নিজ-সুখ পাসরিবে ॥
|