| |||||||
|
|||||||
সুখের স্বরূপ (ওঁ বিষ্ণুপাদ শ্রীল ভক্তিসুন্দর গোবিন্দ দেবগোস্বামী মহারাজ)
সুখং বৈষয়িকং ব্রাহ্মমৈশ্বরঞ্চেতি চ ত্রিধা । (ভঃ রঃ সিঃ ।)
কীট হইতে ব্রহ্মা পর্য্যন্ত জীব সমুদয় আনন্দের সন্ধানে ব্যাপৃত, আনন্দই যে সকলের প্রয়োজন ইহা কাহাকেও বুঝাইয়া দিতে হয় না । তাহারা আনন্দ হইতেই আসিয়াছে, আনন্দেই বাঁচিয়া আছে, আবার আনন্দেই গমন কতিবে । আনন্দ চেতনের স্বরূপে অবস্থিত । জ্ঞানের বিচিত্রতা অনুসারে আনন্দও বিচিত্র । প্রধানতঃ, এই জ্ঞান ত্রিবিধ, বিষয়-সম্বন্ধি, ব্রহ্ম-সম্বন্ধি ও ঈশ্বর-সম্বন্ধি । জীবচৈতন্য যাহা ভোগ করে, তাহাতে আসক্ত বা বদ্ধ হয় । এই ভোগ্য বিষয় পঞ্চপ্রকার—রূপ, রস, গন্ধ, স্পর্শ ও শব্দ । যাহার সাহায্যে ভোগ করে, তাহাকে করণ বা ইন্দ্রিয় বলে । চক্ষু, কর্ণ, নাসিকা, জিহ্বা ও ত্বক্—এই পাঁচটি জ্ঞানেন্দিয় এবং হস্ত, পদ, বাক, পায়ু ও উপস্থ—এই পাঁচটি কর্ম্মেন্দ্রিয় । চক্ষুর দ্বারা শুক্ল, নীল, পীত, রক্ত, হরিৎ, কপিশ ও চিত্র—এই সপ্তবিধ রূপ গৃহীত হয় ; কর্ণ দ্বারা শব্দ, নাসিকা দ্বারা গন্ধ, জিহ্বা দ্বারা কটু, তিক্ত, মধুর, অম্ল, কষায় ও লবণ রস এবং ত্বগিন্দ্রিয় দ্বারা উষ্ণ, শীতল, কঠিন ও কোমল স্পর্শ গৃহীত হইয়া থাকে । মন বা অন্তঃকরণ যে ইন্দ্রিয়ে সংযুক্ত হয়, সেই ইন্দ্রিয় দ্বারা বিষয়ের অনুভব হইয়া থাকে, অন্য ইন্দ্রিয় দ্বারা হয় না । ভোক্তাজীব য়ে বিষয়কে অনুকূল বলিয়া বিবেচনা করে, সুখবোধে তাহা গ্রহণ করে এবং যাহা প্রতিকূল বলিয়া মনে করে, তাহা দুঃখবোধে ত্যাগ করে ; আর, যাহা উদাসীন বলিয়া মনে করে, তাহাকে উপেক্ষা করে । এই বিষয়সুখ নরক হইতে ব্রহ্মলোক পর্য্যন্ত পরিব্যাপ্ত ; এই সুখ অনিত্য ভোগের দ্বারা ক্ষয় হইয়া যায় । বৈধ জীবন যাপনের ফলে এই অনিত্য সুখভোগের বাসনা ক্ষয়োন্মুখ হইলে নিত্য সুখের অনুসন্ধান হয়, প্রথমে ইহা জড় বিপরীতক্রমে প্রকটিত হয় । জাগ্রতাবস্থায় স্থুলদেহে যে সুখ অনুভূত হয়, স্বপ্নাবস্থায় সূক্ষ্মদেহে ঐ সুখেরই অনুভূতি হইয়া থাকে । কিন্তু সুষুপ্তি অবস্থায় ইন্দ্রিয়, মন ও অহঙ্কারের সহিত স-বাসন জীব প্রকৃতি সহিত ব্রহ্মে লীন হয় ; তখন বিষয় ভোগের সাধন থাকে না, একপ্রকার অস্পষ্ট, অনির্দ্দেশ্য সুখের উপলব্ধি হইয়া থাহে, সুষুপ্তির অবসানে 'আমি সুখে নিদ্রিত ছিলাম, কিছুই কানিতে পারি নাই' এইপ্রকার স্মরণই এ বিষয়ে প্রমাণ, ভোগ বাসনা সমূলে ক্ষয় না হওয়া পর্য্যন্ত এই স্মৃতি স্থিরতর হয় না । জাগ্রদবস্থায় বিরূদ্ধ বাসনা দ্বারা লুপ্ত হইয়া যায়, সেই কারণে উহা অপ্রয়োজনীয় বলিয়া মনে হয়, যে সুখে অভ্যস্ত তাহার জন্য সর্ব্বপ্রকারের বিরাম হয় না । সুষুপ্তি অবস্থার এই সুখ অনির্দ্দেশ্য হইলেও অখণ্ডরূপে বৃহৎরূপে প্রতীতির বিষয় হয় বলিয়া উহা ব্রহ্ম-সম্বন্ধি ; মোক্ষবাসনার উদয় হইলে এই সুখের উপলব্ধি হইতে থাকে, আবার যখন মহাভাগবতগণের কৃপাবলে নিরুপাধিক ভক্তিবাসনার প্রকট অভিব্যক্তি হয়, তখন অস্পষ্ট, অনির্দ্দেশ্য, অসীম এই সুখকে ক্রোড়ে করিয়া যে সুস্পষ্ট, সুনির্দ্দেশ্য অনস্ত বিচিত্রতাময়—ঐশ্বর্য্যময় যে সুখের প্রতীতি হয়, তাহাই ঐশ্বরসুখ, তাহাই বিশুদ্ধচেতনের চরম কাম্য—পরম প্রয়োজন ।
শ্রীগৌড়ীয়-দর্শন, ১ বর্ষ, ১ সংখ্যা
☜ ফিরে গ্রন্থাগারে |
|||||||
বৃক্ষসম ক্ষমাগুণ করবি সাধন । প্রতিহিংসা ত্যজি আন্যে করবি পালন ॥ জীবন-নির্ব্বাহে আনে উদ্বেগ না দিবে । পর-উপকারে নিজ-সুখ পাসরিবে ॥ | |||||||
© Sri Chaitanya Saraswat Math, Nabadwip, West Bengal, India. For any enquiries please visit our contact page. |