আমাদের শ্রীগুরুপরম্পরা :
শ্রীশ্রীল ভক্তিনির্ম্মল আচার্য্য মহারাজ শ্রীশ্রীল ভক্তিসুন্দর গোবিন্দ দেবগোস্বামী মহারাজ শ্রীশ্রীল ভক্তিরক্ষক শ্রীধর দেবগোস্বামী মহারাজ ভগবান্ শ্রীশ্রীল ভক্তি সিদ্ধান্ত সরস্বতী গোস্বামী ঠাকুর
              প্রভুপাদ
“শ্রীচৈতন্য-সারস্বত মঠে সূর্যাস্ত কখনই হয় না” :
আমাদের মঠের পরিচয় ও বৈশিষ্ট্য
 
আমাদের সম্পর্কে শ্রীউপদেশ শ্রীগ্রন্থাগার শ্রীগৌড়ীয় পঞ্জিকা ছবি ENGLISH
 

শ্রীল প্রভুপাদের অপ্রকট-কালীন আশীর্ব্বাণী

(শ্রীচৈতন্য-সারস্বত মঠের শ্রগৌড়ীয়-দর্শন থেকে, ১ম বর্ষ ৬ষ্ঠ সংখ্যা : ২৭শে পৌষ ১৩৬২ / ১২ই জানুয়ারী ১৯৫৫)
(অপ্রকট তারিখ বাং ১৬ই পৌষ, ১৩৪৩, বৃহস্পতিবার নিশান্ত; ইং ১লা জানুয়ারী, ১৯৩৭, শুক্রবার)

 

"আমি বহু লোককে উদ্বেগ দিয়েছি, অকৈতব সত্য কথা বলতে বাধ্য হয়েছি বলে, নিষ্কপটে হরি-ভজন করতে বলেছি বলে অনেক লোক হয় ত’ আমাকে শত্রুও মনে করেছেন । অন্যাভিলাষ ও কপটতা ছেড়ে নিষ্কপটে কৃষ্ণ-সেবায় উন্মুখ হবার জন্যই আমি অনেক লোককে নানাপ্রকার উদ্বেগ দিয়েছি । এ কথা তাঁ’রা কোনও না কোনও দিন বুঝতে পারবেন ।

সকলে রূপ-রঘুনাথের কথা পরমোৎসাহের সহিত প্রচার করুন । শ্রীরূপানুগগণের পাদপদ্মধূলি হওয়াই আমাদের চরম আকাঙ্ক্ষার বিষয় । আপনারা সকলেই এক অদ্বয়জ্ঞানের অপ্রাকৃত ইন্দ্রিয়তৃপ্তির উদ্দেশ্যে, আশ্রয়-বিগ্রহের আনুগত্যে মিলে-মিশে থাকবেন  । সকলেই এক হরি-ভজনের উদ্দেশ্যে এই দু’দিনের অনিত্য সংসারে কোনরূপে জীবন-নির্ব্বাহ করে চলবেন । শত বিপদ, শত গঞ্জনা ও শতা লাঞ্ছনায়ও হরি-ভজন ছাড়বেন না । জগতের অধিকাংশ লোক কৃষ্ণ-সেবার কথা গ্রহণ করছে না দেখে নিরুৎসাহিত হবেন না, নিজ-ভজন, নিজ-সর্ব্বস্ব কৃষ্ণ-কথা-শ্রবণ-কীর্ত্তন ছাড়বেন না । তৃণাদপি সুনীচ ও তরুর ন্যায় সহিষ্ণু হয়ে সর্ব্বক্ষণ হরি-কীর্ত্তন করবেন ।

আমাদের এই জরদ্গব-তুল্য দেহটাকে আমরা সপার্ষদ শ্রীকৃষ্ণচৈতন্যের সঙ্কীর্ত্তন-যজ্ঞে আহুতি দিবার আকাঙ্ক্ষা পোষণ করছি । আমরা কোন প্রকার কর্ম্মবীরত্ব বা ধর্ম্মবীরত্বের অভিলাষী নহি, কিন্তু জন্মে-জন্মে শ্রীরূপ-প্রভুর পাদপদ্মের ধূলিই আমাদের স্বরূপ—আমাদের সর্ব্বস্ব । ভক্তিবিনোদ-ধারা কখনও রুদ্ধ হবে না, আপনারা আরও অধিকতর উৎসাহের সহিত ভক্তিবিনোদ-মনোঽভীষ্ট-প্রচারে ব্রতী হবেন । আপনাদের মধ্যে বহু যোগ্য ও কৃতী ব্যক্তি রয়েছেন । আমাদের অন্য কোন আকাঙ্ক্ষা নাই, আমাদের একমাত্র কথা এই—

আদদানস্তৃণং দন্তৈরিদং যাচে পুনঃ পুনঃ ।
শ্রীমদ্ রূপ-পদাম্ভোজ-ধূলিঃ স্যাং জন্মজন্মনি ॥

সংসারে থাকা-কালে নানাপ্রকার অসুবিধা আছে, কিন্তু সেই অসুবিধায় মুহ্যমান হওয়া বা অসুবিধা দূর করবার চেষ্টা করাই আমাদের প্রয়োজন নয় । এই সকল অসুবিধা বিদূরিত হবার পর আমরা কি বস্তু লাভ করব, আমাদের নিত্যজীবন কি হবে, এখনে থাকা-কালেই তার পরিচয় লাভ করা আবশ্যক । এখানে যত রকম ধরণের আকর্ষণ ও বিকর্ষণের বস্তু আছে—যাহা আমরা চাই ও চাই না, এই উভয় প্রকারেরই মীমাংসা হওয়া আবশ্যক । কৃষ্ণপাদপদ্ম হতে আমরা যতটা তফাৎ হব, ততই এখানকার আকর্ষণ ও বিকর্ষণ আমাদিগকে আকৃষ্ট করবে । এই জগতের আকর্ষণ ও বিকর্ষণের অতীত হয়ে অপ্রাকৃত নামাকৃষ্ট হলেই কৃষ্ণ-সেবারসের কথা বুঝতে পারা যায় । কৃষ্ণের কথা আপাত বড়ই startling (চমকপ্রদ) ও perplexing (দুর্ব্বোধ্য) । যে আগন্তুক ব্যাপারসমূহ আমাদের নিত্যপ্রয়োজনের অনুভূতিতে বাধা প্রদান করছে, তাহা eliminate (দূরীকরণ) করবার জন্য মনুষ্য-নামধারী সকলেই জ্ঞাত ও অজ্ঞাতসারে ন্যূনাধিক struggle (প্রচেষ্টা) করছে । দ্বন্দ্বাতীত হয়ে সেই নিত্যপ্রয়োজনের রাজ্যে প্রবেশই আমাদের একমাত্র প্রয়োজন ।

এ জগতে কাহারও প্রতি আমাদের অনুরাগ বা বিরাগ নাই । এ জগতের সকল বন্দোবস্তই ক্ষণস্থায়ী । প্রত্যেকের পক্ষেই সেই পরম প্রয়োজনের অপরিহার্য্য প্রয়োজনীয়তা আছে  । আপনারা একই উদ্দেশ্যে ঐকতানে অবস্থিত হয়ে মূল আশ্রয়-বিগ্রহের সেবাধিকার লাভ করুন । জগতে শ্রীরূপানুগ-চিন্তাস্রোত প্রবাহিত হউক । সপ্তজিহ্ব শ্রীকৃষ্ণ-সংকীর্ত্তন-যজ্ঞের প্রতি যেন কখনও আমরা কোন অবস্থায় বিরাগ প্রদর্শন না করি । তাতে একান্ত বর্দ্ধমান অনুরাগ থাকলেই সর্ব্বার্থ-সিদ্ধি হবে । আপনারা শ্রীরূপানুগ-গণের একান্ত আনুগত্যে শ্রীরূপ-রঘুনাথের কথা পরমোৎসাহে ও নির্ভীক-কণ্ঠে প্রচার করুন ।"

 


 

ফিরে গ্রন্থাগারে

HARE KRISHNA HARE KRISHNA KRISHNA KRISHNA HARE HARE | HARE RAMA HARE RAMA RAMA RAMA HARE HARE