আমাদের শ্রীগুরুপরম্পরা :
শ্রীশ্রীল ভক্তিনির্ম্মল আচার্য্য মহারাজ শ্রীশ্রীল ভক্তিসুন্দর গোবিন্দ দেবগোস্বামী মহারাজ শ্রীশ্রীল ভক্তিরক্ষক শ্রীধর দেবগোস্বামী মহারাজ ভগবান্ শ্রীশ্রীল ভক্তি সিদ্ধান্ত সরস্বতী গোস্বামী ঠাকুর
              প্রভুপাদ
“শ্রীচৈতন্য-সারস্বত মঠে সূর্যাস্ত কখনই হয় না” :
আমাদের মঠের পরিচয় ও বৈশিষ্ট্য
 
আমাদের সম্পর্কে শ্রীউপদেশ শ্রীগ্রন্থাগার শ্রীগৌড়ীয় পঞ্জিকা ছবি ENGLISH
 

পুরুষোত্তম-মাস

এ বৎসর অধি-মাস বা পুরুষোত্তম-মাস সমুপস্থির হইয়া জীবের জাগাকে অধিক কৃষ্ণসেবানুকূল্যময় করিয়াছেন । পুরুষোত্তম-মাস, ভগবান পুরুষোত্তমের ন্যায় সর্ব্বগুণাধার এবং অন্যান্য সমস্ত মাসের মুকুটমণি স্বরূপ । বৈশাখাদি পূণ্য-মাস সমূহ পুরুষোত্তম মাসের সহিত কোনপ্রকারেই তুলনীয় নহেন । শ্রীভগবান স্বয়ং এই অধি-মাসকে অঙ্গীকার পূর্ব্বক নিজের সমস্ত ভগবত্ত্বা প্রদান করিয়াছেন, এসমস্ত কথা—বৃহন্নারদীয় পুরাণাদি পাঠে আমরা জানিতে পারি ।

এইমাসে কর্ম্ম-জড়-স্মার্ত্তসম্প্রদায় কর্ম্মকাণ্ডীয় বিচারে সর্ব্বপ্রকার শুভ ও পূণ্যকর্ম্ম হইতে বিরত থাকেন এবং এই অধিমাসকে 'মলমাস' বা 'মলিনমাস' সংজ্ঞায় অভিহিত করেন । কর্ম্ম, সুষ্ঠুরূপে অনুষ্ঠিত হইলে জ্ঞানে অধিকার জন্মে, গীতায় শ্রীভগবানের উক্তিতে দেখা যায় ।

"সর্ব্বং কর্ম্মাখিলং পার্থ ! জ্ঞানে পরিসমাপ্যতে ।"

কিন্তু জ্ঞানের চুরান্তফল,—জ্ঞান, জ্ঞেয়, জ্ঞাতা তিনেরই সর্ব্বনাশ (?) রূপ নির্ব্বিশেষ-গতি ।

শুভকর্ম্মের অনুষ্ঠানের ফলে স্বর্গাদিলোক লাভ হইয়া থাকে ও পূণ্যক্ষয়ে পুনরায় মর্ত্ত্যলোকে ফিরিতে হয় এবং এইভাবে কামকামী ব্যক্তিগণকে এই মায়িক ব্রহ্মাণ্ডেই অবস্থান করিতে করিতে স্বকৃত কর্ম্মফল ভোগ করোতে হয় ।

ভগবদ্ভক্তগণ—"কীর্ত্তনীয়ঃ সদা হরিঃ" মন্ত্রের উপাসক । তাঁহাদের আরাধনার প্রণালী চরিতামৃতে এইরূপ দেখা যায় ।

"নিজাভিষ্ট কৃষ্ণপ্রেষ্ঠ পাছে ত লাগিয়া ।
নিরন্তর সেবা করে অস্তর্ম্মনা হইয়া ॥"

তাঁহাদের চব্বিশঘন্টাই শ্রীভগবৎ-সেবায় নিয়োজিত হয় । আত্মেন্দ্রিয়সুখের নিমিত্ত তাঁহাদের একটি মুহুর্ত্তও দিবার সময় নাই । সেবা-বিমুখজীবের সঙ্গ তাঁহাদের কাছে দুর্ব্বিসহ । বিশেষতঃ সগুণোপাসক বা ফলকামী জীবের সঙ্গকে তাঁহারা নরকাপেক্ষাও ঘৃণ্য বলিয়া মনে করেন । এবিষয়ে প্রচুর শাস্ত্র দৃষ্টান্তও দেখিতে পাওয়া যায় ।

কজেই যাঁহারা গুণাতীত পর-ব্রহ্মের উপাসক, সগুণোপাসকগণ চিরদিনই তাঁহাদের প্রতিবন্ধকতা করিতে থাকেন । দৃষ্টান্তের ও অভাব নাই । এমত স্থলে যে মাসটি অধিক হইল—প্রকৃতি-নিয়মাবদ্ধ স্মার্ত্তগণ তাহাকে পরিত্যাগ করিতে বাধ্য হইলেন । যেহেতু তাঁহাদের দ্বাদশ মাসের কৃত্য পূর্ব হইতেই নির্দ্দিষ্ট রহিয়াছে । অপর পক্ষে যাঁহারা নিরন্তর ভগবদারাধনায় কাল যাপন করেন এবং পূণ্য কর্ম্মগুলিকে মায়িক বন্ধন বলিয়া জানেন, তাঁহারা এই নির্মল মাসটির বিশেষ সমাদর করিলেও প্রকৃতি-রাজ্যে তাহা 'মলিন-মাস' নামেই পরিত্যক্ত রহিল । তখন অধি-মাসের পক্ষে কর্ত্তৃপক্ষের নিকট শরণাগতকে হওয়াই স্বাভাবিক । ভগবান শরণাগতকে চিরদিনই বিশেষভাবে রক্ষা করেন, তাই অধি-মাসকে নিজের সমস্ত সম্পদ দান করিয়া আত্মসম করিলেন ও স্বয়ং নিজ নামে অধিমাসের নামকরণ করিলেন—"পুরুষোত্তম" ; এবং অধি-মাসকে সকল মাসের অধিপতি করিয়া স্বয়ংই তাঁহার মাহাত্ম্য নিজমুখে ঘোষণাপূর্বক আত্ম-প্রেষ্ঠ ভক্তগণের করে সমর্পণ করিলেন ! ভক্তগণও কর্ম-জড়-স্মার্ত্ত-সমাজের দৌরাত্ম্য-নির্ম্মুক্ত এই পুরুষোত্তম-মাসে অধিকতর প্রযত্নের সহিত পরমানন্দে গোলকবিহারী-পুরুষোত্তমের সেবা করিতে লাগিলেন ।


শ্রীগৌড়ীয়-দর্শন, ১ বর্ষ, ২য় সংখ্যা
৩০শে পুরুষোত্তম, ৩০শে ভাদ্র, ১৬ই সেপ্টেম্বর, শুক্রবার, গৌরাব্দ ৪৬৯, বঙ্গাব্দ ১৩৬২, ইং ১৯৫৫


 


 

ফিরে গ্রন্থাগারে

বৃক্ষসম ক্ষমাগুণ করবি সাধন । প্রতিহিংসা ত্যজি আন্যে করবি পালন ॥ জীবন-নির্ব্বাহে আনে উদ্বেগ না দিবে । পর-উপকারে নিজ-সুখ পাসরিবে ॥