| |||||||
|
|||||||
গুরুদেবের আবির্ভাব তিথি (দুপুর)
শ্রীগুরুপাদপদ্ম ওঁবিষ্ণুপাদ
(১) ক্ষিদা মেটানো
জয় ওঁ বিষ্ণুপাদ জগদ্গুরু শ্রীলভক্তি সুন্দর গোবিন্দ দেবগোস্বামী মহারাজ কী
জয় আমার সঙ্গে বলুন:
হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে । [শ্রোতাগণের মধ্যে গোলমাল] কত অন্য কথা বেরচ্ছে ! দিনের মধ্যে আবল-তাবল কত পচাল পাড়িতে পার, তার মধ্যে কি একবারও গোবিন্দ বলতে নার । কত কথা আমরা বলি ! আমার সঙ্গে সঙ্গে বলুন:
হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে ।
সমাগত শ্রীগৌরভক্তবৃন্দ কী জয় গুরুদেবের একটা সুন্দর কথা আছে । যখন তিনি মেক্সিকোতে গিয়েছিলেন, তখন একটা হরিকথা বলেছিলেন আর তার পর ওই হরিকথাটা থেকে একটা বই চাপা হয়েছিল । আমি ওই বইটা এখন বাংলায় করে দিয়েছি । ওখানে শ্রীল প্রভুপাদেরও একটা কথা উল্লেখ হয়েছে । মঠে একটা উৎসব চলছে, তার মধ্যে একজন এসে বলছেন, “কাঙ্গালীর ভোজন কখন হবে ?” প্রভুপাদের উত্তর আমি আপনাদেরকে পরে শুনাব, এখন শুধু সংক্ষেপে বলে দেব । মঠে তো উৎসব পাওয়া যায়, হরিকথা শোনা যায়—এই তো প্রসাদ কিন্তু যখন ওই লোকটা জিজ্ঞাসা করলেন, “কাঙ্গালীর ভোজন কবে হবে ?” প্রভুপাদ উত্তরে বললেন : আরে মন, সত্য বল, তুমি কিসের কাঙ্গাল—ভজনের কাঙ্গাল না ভোজনের কাঙ্গাল ? আমরা সবাই ভোজনের কাঙ্গাল । যখন প্রসাদ পাওয়ার সময় হবে, তখন দেখবেন মন্দির লোক ভর্তি হয়ে যাবে, জায়গা হবে না । তাহলে আমরা সবাই ভোজনের কাঙ্গাল । প্রভুপাদ খুব সুন্দর করে লিখে দিয়েছেন । পড়বেন । তাই মন, তুই কিসের কাঙ্গাল ? ভোজনের কাঙ্গাল ? জিহ্বার কাঙ্গাল ? এই আশাতৃপ্তি পোষণ করার জন্যই কি এই জগতে এসেছিস, না শুধু আত্মকল্যাণের জন্য এসেছিস ? কোনটা ? আমরা সবাই কেউ আত্মকল্যাণের চিন্তা করি না । আমরা সবাই ইন্দ্রিয়তর্পণের জন্য চিন্তা করি । ইন্দ্রিয়তর্পণ মানে চখের লালসা, মুখের লালাসা, জিহ্বার লালসা, মনের লালসা—এই সব লালসার জন্য আমরা ভাবছি যে, “এখানে আমার জন্য সব সৃষ্টি হয়েছে !” মহাজনগণের কাছ থেকে যে হরিকথা শুনব, সে দিকে আমাদের কার রতি-মতি নেই । আমরা সবাই ভোজনের কাঙ্গাল । তার জন্য মঠে আসা কী দরকার ? মঠে আসতে হবে কেন ? আত্মকল্যাণের জন্য যদি আসতে চান, তাহলে মঠে আসুন—ভোজনের কাঙ্গাল হয়ে নয়, ভজনের কাঙ্গাল হয়ে আসুন । মঠে আসতে হলে ভজনের কাঙ্গাল হয়ে, ভোজনের কাঙ্গাল হয়ে নয় । এটা সবসময় মনে রাখবেন । যাকগে, আমি এখন বেশি বলব না কারণ আমাদের সময়টা সংকীর্ণ । অন্যান্য সন্ন্যাসীগণ এখানে উপস্থিত হচ্ছেন তাই আমি আপনাদেরকে অনুরোধ করি কিছু গুরুদেবের মহিমা-কীর্ত্তন করবেন । [পূজনীয় ধামভূষণ-সন্ন্যাসীগণের হরিকথার পরে শ্রীল গুরু মহারাজ বলছেন] আমি তো ভাবছিলাম যে, lockdown (লকডাউন) হয়ে গিয়েছে আর ভক্তগণ আমাদেরকে বোধ হয় ভুলে গিয়েছেন, কিন্তু এখন দেখছি যে, নাটমন্দিরে জায়গা হচ্ছে না । জায়গাটা সামনে ও পিছনে ছিল না তাই আমি মন্দিরটা বড় করতে পারি নি । আমার গুরুদেবের মঠটা ছেড়ে চলে এসেছি, এত দুর্ভাগা আমি । তবু এখানে সবাই চলে এসেছেন আমাকে কৃপা করবার জন্য, এটাই আমার খুব সৌভাগ্য । আমি আপনাদের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি । আমি এখন দুইচারি কথা গুরুদেবের সম্বন্ধে একটু বলব । গুরুদেবের অনেক কথা এবং ওর মহিমা-কীর্ত্তন করবার মত এই অধমের পক্ষে সম্ভব নয়, তাই আমি শুধু দুই-চারি কথা বলব । গুরুদেবের একটা প্রণামমন্ত্র আছে, সেটা আমাদের পরমগুরুদেব ওঁ বিষ্ণুপাদ শ্রীলভক্তি রক্ষক শ্রীধর দেবগোস্বামী মহারাজ রচনা করেছেন । কোথাও দেখা যায় না যে, কোন শিষ্যের প্রণামমন্ত্র গুরুদেব নিজে রচনা করেন কিন্তু শ্রীল শ্রীধর দেবগোস্বামী মহারাজ সেটা করেছিলেন (তিনি আমার গুরুদেবের প্রণামমন্ত্র নিজে রচনা করেছেন ) ।
গুর্ব্বাভীষ্টসুপূরকং গুরুগণৈরাশীষসংভূষিতং “গুর্ব্বাভীষ্টসুপূরকং গুরুগণৈরাশীষসংভূষিতং” : তিনি তাঁর গুরুদেবের সব ইচ্ছা পূরণ করে তাঁর গুরুদেবের আশীর্বাদে সম্পূর্ণ ভূষিত । “চিন্ত্যাচিন্ত্যসমস্তবেদনিপুণং” : চন্তাচিন্তের বাহিরে তিনি সমস্ত বেদে নিপুণ । “শ্রীরূপপন্থানুগম্” : শ্রীরূপানুগ-ধারায় তিনি এই প্রচার কর্য করে চলবেন । “গোবিন্দাভিধমুজ্জ্বলং” : শ্রীল গোবিন্দ দেবগোস্বামী মহারাজ নাম করে এই জগতকে তিনি উজ্জ্বল প্রকাশিত হবেন । পরম গুরু মহারাজ বললেন, “আমি বিদেশে প্রচার করতে পারি নি, আমি নিজে অপারক ছিলাম, কিন্তু আমার ও প্রভুপাদের কথাগুলো শ্রীল গোবিন্দ মহারাজ এই বিশ্বে প্রচার করবেন ।” এই তিনি অভয়বাণী দিয়েছিলেন তাঁর শিষ্যের প্রণামমন্ত্রে ।
(২) শ্রীল গুরুদেবের লীলাগুলো—১ আপনারা জানেন যে, আমার গুরুপদপ্ম ১৯৪৭ সালে মঠে এসেছিলেন । পূজ্যপাদ ভক্তিকমল মধুসূদন মহারাজ, নৃসিংহানন্দ ব্রহ্মচারী (পরে তিনি হয়েছেন পূজ্যপাদ ভক্তিবৈভব পুরি মহারাজ) আর ভুতবৃৎ প্রভু (পূজ্যপাদ আশ্রম মহারাজ) নদনঘাটে প্রচারে গিয়েছিলেন । আপনি জানেন—আমি বাড়াতে চাই না—সমস্ত গুরুভ্রাতারা শ্রীলশ্রীধর দেবগোস্বামী মহারাজকে বাৎসল্যরসে ভালোবাসতেন । তাদের অসুবিধা যেন না হয়, তাদেরকে তিনি আশ্রয় দিয়েছিলেন । ভালো ঘর-টর ছিল না কিন্তু তিনি তাদেরকে আশ্রয় দিয়েছিলেন । আমাদের গুরুদেব ওই সময় পিতৃ বিয়োগ হয়ে তার সংসার চলবার জন্য একটা গ্রামে ২০টাকা উপার্জন করতেন । তার মাতৃদেবী ছিলেন, তাই ওই সংসার চলবার জন্য তিনি নদনঘাটে ডাক্তারের কম্পাউন্ডার হিসেবে উপস্থিত ছিলেন । তখন মঠের ভক্তেরা সারা দিন বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে ভিক্ষা করে সন্ধ্যার সময় ওই নদনঘাটের জমিদারের বাড়িতে যার পাশে গুরুদেব কাজ করতেন বসে কীর্ত্তন ও প্রচার করতেন । গুরুমহারাজ আমাদেরকে বললেন, “নৃসিংহানন্দ ব্রহ্মচারীর হরিকথা শুনে আমি একটুকু বুঝেছি । উনি বললেন যে, দেহ কিছু নয়, মন কিছু নয়, আত্মাই সব । এটা শুনে আমার মনে হয়—কী শুনছি ।!” আর তখন কীর্ত্তনের সময় ব্রহ্মচারীরা মৃদঙ্গ বাজাত । গুরুদেবের তখন ছোট বয়স তো (১৪-১৭ বয়স), তিনি মেনে মনে বলছেন, “ওর মৃদঙ্গ বাজানো ভালো হচ্ছে না, আমাকে মৃদঙ্গ দিলে একটু ভালো বাজাতে পারি ।” একথা মনে মনে বলছেন কিন্তু বলতে সাহস পাচ্ছেন না । তখন হাত জোর করে বলেই ফেললেন, “আমাকে একটু মৃদঙ্গ বাজাতে দেবেন ।” গুরুদেব খুব মৃদঙ্গ বাজাতে পারতেন । তাই তিনি ওই দিন মৃদঙ্গ বাজিয়েছেন । সমস্ত সন্ন্যাসীরা তাঁকে বললেন, “মঠে যাবে ।” গুরুদেব বললেন, “হ্যাঁ, যাব । আজকে নিয়ে যাবেন । আজকে যদি নিয়ে যাবেন, আজকেই যাব ।” তখন নদনঘাটে নদী সাঁতরিয়ে নৃসিংহচাতুর্দ্দশী দিন তিনি মঠে প্রথম এসেছিলেন । তারপর ত অনেক গঙ্গা দিয়ে অনেক জল বয়ে গিয়েছে । আমি একদিন গুরু মহারাজকে জিজ্ঞাসা করলাম, “আপনি শ্রীধর মহারাজের চরণে আশ্রয় গ্রহণ করেছেন, তবু আপনি কি করে সংসারে চলে গেলেন ।” তিনি বললেন, “আমি অন্যায্য করেছি ।” আমি জিজ্ঞাসা করলাম, “কী অন্যায্য করেছিলেন ।” গুরুদেব উত্তরে বললেন, “ওই সময় আমার বাচ্চা বয়স ত, আমি জানতাম না কোনটা কী । মঠের মধ্যে একটা পেঁয়াজগাছ লাগিয়েছিলাম । তখন এক দিন শ্রীল শ্রীধর মহারাজ হাঁটতে হাঁটতে বাগানে গিয়ে বললেন যে, তুমি কী গাছ লেগেছ, দেখছি । তখন তিনি দেখেছিলেন যে, কিছু পেঁয়াজ লাগানো হয়েছে । তিনি বললেন, তোমার শেষ ! তোমার পদস্খলন হয়ে যাবে । তুমি চলে যাবে ।” তখন গুরু মহারাজ ২৪ বছর বয়সে সন্ন্যাস নিয়েছিলেন ; সন্ন্যাস নেওয়ার পরেও তিনি চলে গিয়েছিলেন । গুরুদেব বলেছিলেন, “আমি গর্তের মধ্যে পড়ে গিয়েছিলাম, কিন্তু আমি কারো হাত ধরে উঠি নি । আমি গর্তের মধ্যে কুক্কুরের মত পড়ে ঘেউ ঘেউ করেছিলাম—একটা কুক্কুর যদি ১০ফুট গর্তের মধ্যে পড়ে গেলে কী করে । গর্তটা থেকে উদ্ধার করবার জন্য ঘেউ ঘেউ করে । আমার গুরুদেব তখন আমাকে হাত দিয়ে অবার উপরে তুলে দিয়েছিলেন ।” শ্রীল শ্রীধর মহারাজ গুরুদেবের নাম “গোবিন্দ মহারাজ” দিয়েছিলেন যখন গুরুদেব ২৪ বয়সে ছেলে ছিলেন । পরে গৃহস্থ হয়েও, মাথায় কোঁকড়া সুন্দর সুন্দর চুল নিয়ে থাকতেন । কলকাতায় তিনি কি করতেন, জানেন । কলকাতায় কিছু ব্যবসা করে শ্রীল শ্রীধর মহারাজকে টাকা পাঠাতেন । তার মেয়ে হয়েছে—উনি এখন স্কুলে হেড-মিস্ট্রেস করছেন, Mathematics MSc করেছেন । গুরু মহারাজ বলতেন, “আমার মেয়ের দুধ কিনার পায়সা ছিল না, বার্লি কিনে ওকে খাওয়াতাম কিন্তু মাসে আমার গুরু মহারাজকে ২০টাকা পাঠিয়ে দিলাম ।” আসলে গুরুদেব স্কুলে বেশি পড়েন নি । প্রাইমারি তিনতে পড়েছেন আর চারতে উঠছেন । তিনি বললেন, “আমি এত দুষ্ট ছিলাম । যে দিন স্কুলে গিয়েছি, কোন দিন আমার পেটানো ২-৪বার পড়ি নি, এমন দিন ছিল না । মাস্টার আমাকে মেরে আনন্দ পেতেন । ওরা মারতেই ভালোবাসতেন ।” এই করম গুরুমহারাজ বলেছেন । তাই তিনি স্কুলে বেশি পড়েন নি, তবু তিনি প্রিন্টিং প্রেসে প্রুফরিডিং করতেন । আমরা লেখাপড়া শিক্ষা যা করেছি কত জড়বিদ্যা পড়েছি কিন্তু এখন বাংলা লিখতে গিয়ে ১০টা ভুল হয় । আর গুরুমহারাজ যখন ইংরেজিতে চেক সই করতেন, আমি দেখলাম এত হাতের লিখা সুন্দর ! আমিও এত সুন্দর করতে পারি না । তিনি সব প্রুফ দেখতেন । আমরা এত বারবারই করে ভুল হচ্ছে দেখছি, প্রুফ দেখছি, কিন্তু তারপর গুরু মহারাজ একটা করে ভুল লক্ষ্য করবেন । তাই তিনি প্রেসে প্রুফ দেখতেন আর কলকাতায় বই চাপিয়ে সে বেইয়ের টাকা শ্রীল শ্রীধর মহারাজকে দিতেন ।
|
সম্পূর্ণ পাঠ ডাউনলোড / শুনুন | ||||||
বৃক্ষসম ক্ষমাগুণ করবি সাধন । প্রতিহিংসা ত্যজি আন্যে করবি পালন ॥ জীবন-নির্ব্বাহে আনে উদ্বেগ না দিবে । পর-উপকারে নিজ-সুখ পাসরিবে ॥ | |||||||
© Sri Chaitanya Saraswat Math, Nabadwip, West Bengal, India. For any enquiries please visit our contact page. |