![]() |
|||||||
| |||||||
|
|||||||
শ্রীউপদেশ (১২) পূজনীয় বিসর্জন
রামানুজ আচার্য্যের দুই বিশেষ শিষ্য ছিল । কি ভাবে তারা বিসর্জন দিল ? তারা কোন সুখের চিন্তা করত না, শুধু গুরু-সেবার জন্য চিন্তা করত আর গুরু-সেবার জন্য তারা জীবনটাও বিপন্ন করে দিল । শিষ্যর নাম ছিল ধনুরদাস আর সে তার স্ত্রীকে নিয়ে থাকত । প্রত্যেক দিন তারা ভিক্ষায় বেরত । তারা ভাবল, “দুজন দুই দিকে গেলে, তখন বেশি ভিক্ষা হবে”, তাই তারা এক সঙ্গে ভিক্ষা করতে যেত না । যা ভিক্ষা তারা পেত, তা দিয়ে ঠাকুরের ভোগ দিত আর যারা বাড়িতে আসত তাদেরকেও প্রসাদ দিত আর পরের দিনে আবার ভিক্ষা করত—জমাত না, প্রয়াসশ্চ করত না । তাদের কিছু সঞ্চয়-বুদ্ধি ছিল না । যেখানে মেয়েটা যেত, সেখানে একটা দুশ্চরিত্র খারাপ লোক ছিল যে তাকে সবসময় উৎপাত করত । বারবার সে তাকে বলল, “তুমি দেখতে কত সুন্দরী, তুমি এ রোদের মধ্যে শরীরটাকে পুড়িয়ে কেন ভিক্ষা করবে ? আমার বাড়িতে গেলেই, তোমাকে আমি সব দিয়ে দেব ! আমার বাড়ি তুমি এস, তোমার যা প্রয়োজন, তাই আমি তোমাকে দিয়ে দেব ।” মেয়েটা বারবার ওকে উত্তরে বলত, “ঠিক আছে, ঠিক আছে । তোমার আমাকে বারবার আসার দরকার নেই, আমি তোমার বাড়িতে ঠিক যাব ।” ও শুনত না । আবার পরের দিন তার পিছনে থেকে বলল, “আয়, চল আমার বাড়িতে !” মেয়েটা বলল, “ঠিক আছে, এক দিন সময় যখন হবে, সে দিন ঠিক যাব, তোমার চিন্তা করতে হবে না ।” এ অজুহাত দিয়ে মেয়েটা জলদি চলে গেল আর এই সব কথাগুলো তার স্বামীকে বলেনি । এক দিন সে তার স্বামীকে বলল, “আজকে তুমি ভিক্ষায় যাও, বাড়িতে আমার একটু কাজ-কর্ম্ম আছে—আমাদের জামাকাপড় ধুয়ে ফেলব, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করব । তুমি যাও ভিক্ষায় আজকে, আমি পারব না ।” ধনুরদাস বলল, “ঠিক আছে, তাই হবে,” আর ভিক্ষায় বেরিয়ে গেল । একটু পরে হঠাৎ মেয়েটা 'খরখর' শুনতে পেল—দরজায় কেউ আঘাত করেছিল… লোকটা কিছু কথা বলল না, শুধু আঘাত করল । মেয়েটা মনে মনে ভাবল, “কে আসল ? আমার স্বামী চলে গেল, আমি এখন একা আছি… আজকে ভিক্ষায় যাইনি, আমার মনে হচ্ছে দুঃশীল পুরুষ এসেছে ? এর বাড়ির পাশে আমি আজকে যাইনি, এ আমার বাড়িটা চেনে আজকে এখানেই চলে এসেছে ?” তাই মনে মনে বলছে, “হে গুরুদেব, দরজা আমি নাও খুলে, এ দরজা ভেঙ্গে দিয়ে ঢুকতে পারবে ! আমি বরং খুলে দেব…” গুরুদেবের নাম নিয়ে, গুরুদেবকে স্মরণ করতে করতে দরজাটা খুলে দিল আর তখন দেখছে তার গুরুদেব সামনে দাঁড়িয়ে আছেন, “ওরে, গুরুদেব এসেছেন ! বসুন, বসুন !” গুরুদেব ও তাঁর বান্দারা ভিতরে ঢুকে বসলেন । মেয়েটা মনে মনে ভাবল, “গুরুদেবকে কি দেব ?” এক গ্লাস জল দিয়ে বলল, “গুরুদেব, আপনি জল পান করুন, আমি দেখি, কিছু খাবার ব্যবস্থা করছি ।” জল দিয়ে সে চিন্তা করছে, “আমার স্বামী ভিক্ষায় বেরিয়ে গেছে, আমার বাড়িতে কিছুই নেই… আমি কোথায় থেকে কি দেব ? কোথায় থেকে কি দেব ? আঃ ! ওই লোকটা প্রত্যেক দিন বলে আমাকে যেতে, আমার বাড়ি এস, আমার বাড়ি এস, আমি তোমাকে সব দিয়ে দেব—আমি তার বাড়িতে যাব !” তখন সেই বাড়ি দৌড়িয়ে চলে গেল । গিয়ে হাঁপাতে হাঁপাতে বলল, “এ আমি এসেছি !” লোকটা অবাক হয়ে গল, “তুমি এসেছো ? বাঃ, খুব ভালো ! বস, বস !” “আমি পরে বসব, এখন সময় নেই । বাড়িতে আমার গুরু দাঁড়িয়ে আছেন ! তুমি প্রত্যেক দিন বল যে, তোমার বাড়িতে গেলে অনেক কিছু দেবে । দাও, যা আছে, তাই দাও ।” তখন লোকটা ফল, ডাল, চাল, সব দিয়ে দিল—সঙ্গে সঙ্গে মেয়েটার সামনে দুটি বৃহৎ বোঝা হয়ে গেল । মেয়েটা বোঝাগুলো দেখে বলল, “এগুলো আমি নেব কি করে ? তুমি আমার সঙ্গে চল !” সব ভোগটা বাড়িতে নিয়ে এসে মেয়েটা লোকটাকে বলল, “তুমি গুরুদেবের কাছে বসে গুরুর কথা শুন আর আমি এদিকে রান্না করছি, একটু পরে আমার স্বামীও চলে আসছে ।” আর তাড়াতাড়ি রান্নাঘরে চলে গেল । লোকটা গুরুর কাছ থেকে হরিকথা শুনল, তারপর প্রসাদ পেল, আর তখন তার কী হল ? তার ভক্তি এসে গেল ! এ মহিলাকে আগে যা খারাপ কথা বলেছিল, সে কথা বাদ দিয়ে এখন বলল, “তোমার গুরুর কাছ থেকে আমার দীক্ষা নেওয়ার ব্যবস্থা করে দাও ।”
বৈষ্ণব-সঙ্গেতে মন আনন্দিত অনুক্ষণ (শ্রীলনরত্তমদাস ঠাকুর) সাধুসঙ্গ করলে, হৃদয় থেকে ময়লা নিবৃত্ত হয় এবং ভক্তি বীজ উঠা হয় । এটা হচ্ছে সাধুসঙ্গের ফল । এটা সবসময় মনে রাখতে হবে । বৈষ্ণব-সেবা ছেড়ে কেউ নিস্তার পেতে পারে না । আমরা খুব অল্প দিন এ জগতে থাকব, তাই সময় নষ্ট না করে আমদের ভগবানের সেবায় নিযুক্ত করতে হবে আর কৃষ্ণের সংসার করতে হবে ।
— • • • —
|
সূচীপত্র: সূচনা : আমাদের একমাত্র কৃত্য ১। ভক্তির অভাব ২। গৃহে আবদ্ধ ৩। মায়ের পেট থেকে মায়ার পেটের মধ্যে ৪। জীবকে সত্য দয়া কি ? ৫। ভোগী নই ত্যাগীও নই ৬। শ্রবণ-কীর্ত্তনে মতি ৭। ভগবানের কৃপা ও আপনার চেষ্টা ৮। ভগবানের চরণে পথ ৯। শান্তির গুপ্ত কথা ১০। শ্রীবামনদেবের কথা ১১। শ্রীনৃসিংহদেবের কথা ১২। পূজনীয় বিসর্জন ১৩। ভক্ত ও নাপিত ১৪। চকচক করলেই সোনা হয় না ১৫। আমি তো সব ব্যবস্থা করি নাকি ? ১৬। দণ্ড মহৎসব ১৭। শিবজী মহারাজ : পরম বৈষ্ণব ১৮। মায়ার চিন্তা বা কৃষ্ণের চিন্তা ? ১৯। আমাদের একমাত্র উপায় ২০। পবিত্র জীবন ২১। শ্রীহরিনাম দীক্ষা : গুরুপাদপদ্মের দান ২২। আমার শোচন |
||||||
বৃক্ষসম ক্ষমাগুণ করবি সাধন । প্রতিহিংসা ত্যজি আন্যে করবি পালন ॥ জীবন-নির্ব্বাহে আনে উদ্বেগ না দিবে । পর-উপকারে নিজ-সুখ পাসরিবে ॥ | |||||||
© Sri Chaitanya Saraswat Math, Nabadwip, West Bengal, India. For any enquiries please visit our contact page. |