আমাদের শ্রীগুরুপরম্পরা :
শ্রীশ্রীল ভক্তিনির্ম্মল আচার্য্য মহারাজ শ্রীশ্রীল ভক্তিসুন্দর গোবিন্দ দেবগোস্বামী মহারাজ শ্রীশ্রীল ভক্তিরক্ষক শ্রীধর দেবগোস্বামী মহারাজ ভগবান্ শ্রীশ্রীল ভক্তি সিদ্ধান্ত সরস্বতী গোস্বামী ঠাকুর
              প্রভুপাদ
“শ্রীচৈতন্য-সারস্বত মঠে সূর্যাস্ত কখনই হয় না” :
আমাদের মঠের পরিচয় ও বৈশিষ্ট্য
 
আমাদের সম্পর্কে শ্রীউপদেশ শ্রীগ্রন্থাগার শ্রীগৌড়ীয় পঞ্জিকা ছবি ENGLISH
 

মায়ের পেট থেকে মায়ার পেটের মধ্যে

ওঁ বিষ্ণুপাদ শ্রীল ভক্তি নির্ম্মল আচার্য্য মহারাজের হরি-কথামৃত
১৭ জানুয়ারী ২০১৬

 

কয় বার এলি কয় বার গেলি তবু তত্ত্ব না শিখিলি ।
নিজের মাথা নিজে খাইলি এই দোষ দিবি কারে ভাই ?

আপনারা দশ মাস দশ দিন মাতৃগর্ভে ছিলেন—মাথা ছিল নিচের দিকে, পা ছিল উপরের দিকে… আমি আপনাদের বারবার বলে দিচ্ছি কত কষ্ট জীব করেছি মায়ের পেটের মধ্যে । সে কষ্ট থেকে জীব উদ্ধার পেতে চায়, আর তখন তো কথা দিয়েছিল প্রভুকে ।

আপনারা যখন মায়ের পেটে ছিলেন কত কষ্ট তখন করেছিলেন, সেখানে আপনারা ভগবানকে ডেকেছেন, “প্রভু, আমি আর এ কষ্ট করতে পারছি না !” । কোন কোন ভাগ্যবান জীবকে মায়ের পেটে দেখা দেন ভগবান, “তুমি আমাকে কেন ডেকেছিলে ?” জীব তখন বলে, “প্রভু, আমি এই কষ্ট করতে পারছি না, আমাকে এখান থেকে ছেড়ে দাও !” তখনই, ভূমিষ্ঠ হাওয়ার আগে সেই জীব কথা দেয়, “চোখ দিয়ে তোমার বিগ্রহ দর্শন করব, মুখ দিয়ে তোমার নাম করব, কান দিয়ে তোমার কথা শুনব”—সব কিছু হ্যাঁ বলে দিয়ে এসেছিলাম । ভগবান যে ইন্দ্রিয়গুলো দিয়েছেন (চক্ষু, কর্ণ, নাসিকা, জিহ্বা, ত্বক্, মন, বুদ্ধি, অহঙ্কার) সে ইন্দ্রিয়গুলো দিয়েছেন গোবিন্দের সেবা করার জন্য । এই দুটো হাত দিয়েছেন তাঁর সেবা করার জন্য (তাঁর রান্না করবার জন্য, তাঁর বাসা মার্জন করবার জন্য, তাঁর মালা করবার জন্য), পাও দিয়েছেন তাঁর ধাম পরিক্রমা করবার জন্য, চোখ দিয়েছেন তাঁর বিগ্রহ দর্শন করবার জন্য, কান দিয়েছেন তাঁর কথা শুনবার জন্য । কিন্তু আমরা কি করেছি ? ভূমিষ্ঠ হাওয়ার পরে মায়ার কবলে পতিত হয়ে— দোষটা আমাদের নয়(?)…

চোখটাই ভাল প্রথমই ছিল কিন্তু যদি একটা ছানি পড়ে যায়, তখন ছানি না কেটে ছবি দেখতে পাব না । কানও এরকম—যখন আমরা বুড়ো হয়ে যাই, তখন ভালো শুনতে পাব না । পায়ে যদি ব্যথা হয়ে যায়, তাহলে বিভিন্ন জায়গায়, ধাম পরিক্রমা, তুলসী পরিক্রমাও করতে পারব না । এগুলো সব ভগবান আমাদেরকে দিয়ে দিয়েছিলেন কিন্তু আমরা তখন কি করলাম ? ওই মায়ার কবলে পতিত হয়ে পড়লেন…

সে মায়াকে কে সৃষ্টি করেছেন ? ভগবান ।

দৈবী হ্যেষা গুণময়ী মম মায়া দুরত্যয়া ।
মামেব যে প্রপদ্যন্তে মায়ামেতাং তরন্তি তে ॥

(শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা, ৭/১৪)

ভগবান বলছেন : “এ মায়াকে আমি সৃষ্টি করেছি, তুমি এই মায়া জয় করতে পারবে না । তবে পারবে কখন ? ‘মামেব যে প্রপদ্যন্তে মায়ামেতাং তরন্তি তে ।’ যে আমাকে প্রপদ্য করে—যে আমার চরণে শরণাগত হয়, যে আমার চরণে এসে পড়ে যায়—আমি তাকে আস্তে আস্তে মায়া থেকে রেহাই দেই । যখন তুমি আমার ভক্ত ও আমার শরণাপন্ন হয়, তখন দেখতে পেয়ে যে, ‘আমার সৃষ্টিকর্তা চলে এসেছেন’ মায়া দেবী তোমার কাছ থেকে আস্তে আস্তে পালিয়ে যায় । ‘মামেব যে প্রপদ্যন্তে মায়ামেতাং তরন্তি তে ।’”

মায়াকে জয় করবার জন্যই সাধু-সঙ্গ করা যায় । মায়াকে সাধু-সঙ্গ ছাড়া জয় করা যায় না :

মায়ারে করিয়া জয় ছাড়ান না যায় ।
সাধু-গুরু কৃপা বিনা না দেখি উপায় ॥

(‘কি রূপে পাইবে সেবা’, শ্রীল নরোত্তম দাস ঠাকুর)

 


 

← গ্রন্থাগারে

অন্য রচনা:
শ্রীনৃসিংহদেবের কথা
দণ্ড মহৎসব
মায়ার চিন্তা বা কৃষ্ণের চিন্তা ?
আমাদের একমাত্র উপায়
ভক্তির অভাব
গৃহে আবদ্ধ
মায়ের পেট থেকে মায়ার পেটের মধ্যে
জীবকে সত্য দয়া কি ?
ভোগী নই ত্যাগীও নই
শ্রবণ-কীর্ত্তনে মতি
ভগবানের কৃপা ও আপনার চেষ্টা
শান্তির গুপ্ত কথা
পবিত্র জীবন
বামনদেবের কথা
ভক্ত ও নাপিত
ভগবানের চরণে পথ
পূজনীয় বিসর্জন
শিবজী মহারাজ : পরম বৈষ্ণব
শ্রীহরিনাম দীক্ষা : গুরুপাদপদ্মের দান
আমি তো সব ব্যবস্থা করি নাকি ?
চকচক করলেই সোনা হয় না
আমার শোচন
বৃক্ষসম ক্ষমাগুণ করবি সাধন । প্রতিহিংসা ত্যজি আন্যে করবি পালন ॥ জীবন-নির্ব্বাহে আনে উদ্বেগ না দিবে । পর-উপকারে নিজ-সুখ পাসরিবে ॥