আমাদের শ্রীগুরুপরম্পরা :
শ্রীশ্রীল ভক্তিনির্ম্মল আচার্য্য মহারাজ শ্রীশ্রীল ভক্তিসুন্দর গোবিন্দ দেবগোস্বামী মহারাজ শ্রীশ্রীল ভক্তিরক্ষক শ্রীধর দেবগোস্বামী মহারাজ ভগবান্ শ্রীশ্রীল ভক্তি সিদ্ধান্ত সরস্বতী গোস্বামী ঠাকুর
              প্রভুপাদ
“শ্রীচৈতন্য-সারস্বত মঠে সূর্যাস্ত কখনই হয় না” :
আমাদের মঠের পরিচয় ও বৈশিষ্ট্য
 
আমাদের সম্পর্কে শ্রীউপদেশ শ্রীগ্রন্থাগার শ্রীগৌড়ীয় পঞ্জিকা ছবি ENGLISH
 

শ্রীহরিনাম দীক্ষা : গুরুপাদপদ্মের দান

ওঁ বিষ্ণুপাদ শ্রীল ভক্তি নির্ম্মল আচার্য্য মহারাজের হরি-কথামৃত
২০ জানুয়ারী ২০১৬

 

ব্রহ্মাণ্ড ভ্রমিতে কোন ভাগ্যবান্ জীব ।
গুরু-কৃষ্ণ-প্রসাদে পায় ভক্তিলতা-বীজ ॥
মালী হঞা করে সেই বীজ আরোপণ ।
শ্রবণ-কীর্ত্তন-জলে করয়ে সেচন ॥

(শ্রীচৈতন্য-চরিতামৃত, ২/১৯/১৫১-১৫২)

এই কলিযুগে ভগবানকে পাওয়ার একমাত্র উপায় হচ্ছেন—হরিনাম সঙ্কীর্ত্তন ।

হরের্নাম হরের্নাম হরের্নামৈব কেবলম্ ।
কলৌ নাস্ত্যেব নাস্ত্যেব নাস্ত্যেব গতিরন্যথা ॥

(শ্রীচৈতন্য-চরিতামৃত, ১/৭/৭৬)

কলিযুগে হরিনাম বিনা অন্য কোন গতি নাই, গতি নাই, গতি নাই ।

সত্যযুগের ধর্ম্ম, ত্রেতাযুগের ধর্ম্ম, দ্বাপরযুগের ধর্ম্ম কলিযুগের ধর্ম্মের আলাদা । সত্যযুগে লোক এক লাখ বছর বাঁচতেন আর ধ্যান করে ভগবানকে পেতেন । ত্রেতাযুগে লোক যজ্ঞ করতেন, তখন দশ হাজার বছর আয়ু ছিল, আর দ্বাপরযুগে লোকের আয়ু নেমে আসল এক হাজার বছর । দ্বাপরযুগের ধর্ম্ম ছিল অর্চনা-পূজা । আর কলিযুগের ধর্ম্ম হচ্ছে হরিনাম সঙ্কীর্ত্তন ।

এই নাম গোলোক-বৃন্দাবন থেকে এসেছে । এই নাম ব্রহ্মা পেয়েছেন কৃষ্ণ থেকে, ব্রহ্মা থেকে নারদ পেয়েছেন, নারদ থেকে ব্যাসদেব পেয়েছেন, ব্যাসদেব থেকে মধ্বাচার্য্য পেয়েছেন—এই ভাবে করতে করতে মাধবেন্দ্রপুরী পেয়েছেন, মাধবেন্দ্রপুরী থেকে ঈশ্বরপুরী পেয়েছেন, আর ঈশ্বরপুরী থেকে মহাপ্রভু পেয়েছেন । মহাপ্রভু নিজেও দীক্ষা নিয়েছেন । “নিজে আচারি ধর্ম্ম জীবকে শিখায়, আচরণ না করলে শিখন না যায়”—তিনি গয়ায় গিয়ে বললেন, “গয়া-যাত্রা সফল আমার ।” কেননা তিনি ওখানে গুরু পেয়েছিলেন ।

সংসার-সমুদ্র হৈতে উদ্ধারহ মোরে ।
এই অমি দেহ সমর্পিলাঙ তোমারে ॥

(শ্রীচৈতন্য ভাগবত, ১/১৭/৫৪)

দীক্ষা নেওয়ার আগে মহাপ্রভু ঈশ্বরপুরীকে বলেছিলেন, “এই দেহ, প্রাণ, মন সমর্পিলাঙ তোমারে । সংসার-সমুদ্র হৈতে উদ্ধারিয়া মোরে এই দেহ, প্রাণ, মন সমর্পিলাম তোমারে ।”

দীক্ষাকালে ভক্ত করে আত্মসমর্পণ ।
সেইকালে কৃষ্ণ তারে করে আত্মসম ॥

(শ্রীচৈতন্য-চরিতামৃত, ৩/৪/১৯২)

সেইজন্য, এই গুরুপরম্পরার মধ্যে মহাপ্রভু চলে যাওয়ার পরে কিছু আউল, বাউল, কর্তাভজা, নেড়া, দরবেশ, সানি, সহজিয়া, সখীভেকী, স্মার্ত, জাতগোসাঁই সম্প্রদায় সৃষ্টি হয়েছিল, তারপর শ্রীলগৌরকিশোরদাস বাবাজী মহারাজ, শ্রীলজগন্নাথদাস বাবাজী মহারাজ আর শ্রীলভক্তিবিনোদ ঠাকুর এসে আবার গৌর ধর্ম্মটা প্রচলিত করলেন । তারপর শ্রীলভক্তিসিদ্ধান্ত সরস্বতী ঠাকুর, তাঁর অন্তিমকালে, শেষ সময় রূপগোস্বামীর পাওয়ারটা শ্রীলশ্রীধর দেবগোস্বামী মহারাজকে দিয়ে গেছেন । শ্রীলশ্রীধর দেবগোস্বামী মহারাজ আমাদের মঠের ফাউন্ডার (প্রতিষ্ঠাতা), তিনি পাওয়ারটা আমাদের গুরুদেবকে (ওঁবিষ্ণুপাদ শ্রীলভক্তিসুন্দর গোবিন্দ দেবগোস্বামী মহারাজকে) দিয়েছিলেন তাঁর জীবদ্দশায় । আর গুরুদেব তাঁর জীবদ্দশায় আমাকে বলে গিয়েছিলেন, “যাঁরা সত্যকারে হরিনাম নিতে চান, যাঁরা সত্যকারে নিয়ম-কানুন মানবেন, তাঁদের তুমি এই হরিনাম দিয়ে দিতে পার ।”

চারটা নিয়মটা আমি বলেছি—দ্যূত, পান, স্ত্রীয়, সূনা । জুয়া খেলা, তাস খেলা, পাশা খেলা, পান, মদ, গাঁজা, ভাং, বিড়ি, সিগারেট, চা, এসব কিছু খাবেন না । স্ত্রীয় বলতে অবৈধ স্ত্রী সঙ্গ, সেটা করবেন না । আর সূনা বলতে জীব-হিংসা—মাছ, মাংস, ডিম, পেঁয়াজ, রসুন খাবেন না । এইভাবে যদি করেন, খুব ভালো, এই ভাবে হরিনাম করলে ভগবানকে পাবেন ।

হাত পাতুন । এই দুই আঙ্গুলে মালা ধরে (বৃদ্ধাঙ্গুলে ও মধ্যমায়—তর্জনী আঙুলদ্বারা মালা স্পর্শ করবেন না) প্রথমে পাঁচ-তত্ত্বের নাম করবেন :

শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য প্রভু নিত্যানন্দ ।
শ্রীঅদ্বৈত গদাধর শ্রীবাসাদি গৌরভক্তবৃন্দ ॥

এইটা হচ্ছে পাঁচ-তত্ত্বের নাম তাঁদেরকে প্রণাম করবেন, বলবেন, “প্রভু, আমি অধম, আমার যোগ্যতা নাই, তোমরা আমাকে কৃপা কর, যেন আমি হরিনাম করতে পারব ।” তাঁরা এই জগতে হরিনাম নিয়ে এসেছেন । তারপর এই দুই দিকে দুটা মালা আছে, একটা বড় আর একটা ছোট । বড় মালা থেকে শুরু করবেন । প্রত্যেক মালায়, একে একে, এই মন্ত্র করবেন :

হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে ।
হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে ॥

এই বড় মালা থেকে করতে করতে এই ছোট মালায় আসবেন, আর মালা ঘুরে এই ছোটা মালা থেকে করতে করতে বড় মালায় আসবেন—শেষে সবচেয়ে বড় মালা (তার নাম হচ্ছে ‘সুমেরু’) ডিঙিয়ে চলে আসবেন না ।

এইভাবে জপ করবেন দিনের মধ্যে ষোলবার । যদি অসুবিধা হয় কোন দিন, সময় পাচ্ছেন না, চারবার করবেন, কিন্তু মুখে সবসময় হরিনাম করবেন । আপনি কোন কাজ করার সময় মুখে “হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে” করবেন । মালা নিয়ে সবসময় করতে হবে এমন কোন কথা নেই । বাথরুমে বসে হরিনাম করা যায়, স্নান করার সময় হরিনাম করা যায়, খাবার সময় হরিনাম করা যায় ইত্যাদি ।

আর এই হরিনাম করলে লোকে বেশি ফল পায় না, কারণটা কী জানেন ? কারণ হচ্ছে দশটা নাম-অপরাধ আছে । এই বই নিয়ে পড়বেন, এখানে দশটা-অপরাধ লেখা আছে । গুরুদেব কবিতাকারে লিখে দিয়েছেন এখানে, অর্থ করে লিখে দিয়েছেন । এই সব পড়বেন আর মুখস্থ করবেন । এই দশটা-অপরাধ বর্জন করে হরিনাম করলে তবে আপনার পরম কল্যাণ বস্তু লাভ হবে আর তাড়াতাড়ি ফল হয়ে যাবে ।

 


 

← গ্রন্থাগারে

অন্য রচনা:
শ্রীনৃসিংহদেবের কথা
দণ্ড মহৎসব
মায়ার চিন্তা বা কৃষ্ণের চিন্তা ?
আমাদের একমাত্র উপায়
ভক্তির অভাব
গৃহে আবদ্ধ
মায়ের পেট থেকে মায়ার পেটের মধ্যে
জীবকে সত্য দয়া কি ?
ভোগী নই ত্যাগীও নই
শ্রবণ-কীর্ত্তনে মতি
ভগবানের কৃপা ও আপনার চেষ্টা
শান্তির গুপ্ত কথা
পবিত্র জীবন
বামনদেবের কথা
ভক্ত ও নাপিত
ভগবানের চরণে পথ
পূজনীয় বিসর্জন
শিবজী মহারাজ : পরম বৈষ্ণব
শ্রীহরিনাম দীক্ষা : গুরুপাদপদ্মের দান
আমি তো সব ব্যবস্থা করি নাকি ?
চকচক করলেই সোনা হয় না
আমার শোচন
বৃক্ষসম ক্ষমাগুণ করবি সাধন । প্রতিহিংসা ত্যজি আন্যে করবি পালন ॥ জীবন-নির্ব্বাহে আনে উদ্বেগ না দিবে । পর-উপকারে নিজ-সুখ পাসরিবে ॥