| |||||||
|
|||||||
শিবজী মহারাজ : পরম বৈষ্ণব
ওঁ বিষ্ণুপাদ শ্রীল ভক্তি নির্ম্মল আচার্য্য মহারাজের হরি-কথামৃত
কেউ বলে, “তুমি শিব ভক্ত, আমি কৃষ্ণ ভক্ত !” এরকম বলবেন না । শিব আর কৃষ্ণ আলাদাও নয়, আবার শিব আর কৃষ্ণ একও নয় । শিব হচ্ছেন কৃষ্ণের অংশবিশেষ ।
ব্রজেন্দ্রনন্দন কৃষ্ণ সর্ব্বেশ্বরেশ্বর । (শ্রীলভক্তিসুন্দর গোবিন্দ দেবগোস্বামী মহারাজ, দশবিধ নামাপরাধ) প্রশ্ন : আমাদের বাড়িতে বিরাট শিব মন্দির আছে, শিবের পজিশনটা (সম্বন্ধটা) কী ? শিবের পূজা করলে অসুবিধা কিছু নেই । শিব হচ্ছেন পরম বৈষ্ণব । কিন্তু শিবজী মহারাজকে নকল করবেন না । শিব বিষ হজম করেছেন, আপনি বিষ খেতে পারবেন ? শিব গাঁজা খেতে পারেন কিন্তু আপনি যদি গাঁজা খাওয়া শুরু করেন, সেটা খুব খারাপ হচ্ছে । আমার গুরুদেব হচ্ছেন শিবের পুত্র, জানেন তো ? জামালপুরে বুড়োরাজ শিবজী মহারাজ আছে, তাঁর পুত্র হচ্ছেন আমাদের গুরুদেব । গুরুদেবের মা সন্তান না পেয়ে জামালপুরে গেলেন আর শিবজী মহারাজকে বললেন, “আমার ছেলে-সন্তান হয় না । ঠাকুর, ছেলে হলে, আমি তাকে তোমাকে দিয়ে দেব ।” তারপর একটু পরে তিনি সন্তান পেলেন—এটাই আমাদের গুরুদেব হচ্ছেন । ছেলেটা হাওয়ার পরে বাড়িতে অনেক ভূত-পেত্নী ঘুরতে লাগল বলে বাবা-মা তাঁকে গোবর-কাজল কপালে দিলেন যেন কিছু অশুভ হয় না । তখন গুরু মহারাজের বাবা (নিতাইপাদ) জামালপুরে গিয়ে যখন ওখানে প্রণাম করলেন তখন ওখান থেকে দৈববাণী শুনতে পেলেন—শিবজী মহারাজ বললেন, “কই ! তুমি আগে বলেছিলে ছেলেটা আমাকে দিয়ে দেবে । ছেলে তোমার কাছেই থাকবে কিন্তু ছেলেটা আমার ছেলে, তার মাথায় তুমি গোবর দিয়েছো কেন ?? গোবরটা ফেলে দিয়ে চন্দন দিয়ে দাও !” তখন নিতাইপাদ বাড়ি গিয়ে তাঁর মাকে বললেন যা ধর্ম্মরাজ (বুড়োরাজ শিবজী মহারাজ) বলে দিয়েছিলেন, আর তিনি গোবরটা সরিয়ে দিয়ে চন্দন ছেলের কপালে দিলেন । একবার শিবজী মহারাজকে ভগবান পরীক্ষা করলেন । শিবজী মহারাজ বললেন কৃষ্ণকে, “প্রভু, একটা লীলা আমাকে দেখাও তো ।” তখন কৃষ্ণ সঙ্গে সঙ্গে নিজে মোহিনী-রূপ ধারণ করলেন । মেয়ে হয়ে তিনি একটা বল নিয়ে পিং পং করে খেলা করছিলেন । তাঁকে দেখতে পেয়ে শিবজী মহারাজ মোহিত হয়ে পড়েলেন আর মেয়েটার পিছনে পিছনে দৌড়াতে লাগল । সবাই তাঁকে দেখে বলল, “আরে বাবা ! সাধু লোক একটা মেয়ের পিছনে দৌড়াছে কেন ? ও কি পাগল হয়ে গেল ?” পার্বতীও বললেন, “আরে ! তুমি কোথায় যাচ্ছো, প্রভু ?! আমি তোমার স্ত্রী আছি !” কোনটি স্ত্রী ? সব ছেড়ে দিয়ে শিবজী মহারাজ কিছু শুনতে পারলেন না । দৌড়ে গিয়ে অবশেষে মেয়েটাকে ধরে ফেললেন কিন্তু তিনি যখন তাঁকে আলিঙ্গন করলেন তখনই মেয়েটা কৃষ্ণ-রূপ হয়ে গেলেন আর উভয়ের দুই অঙ্গ মিশে গেল—একটা হরি আর একটা হর । যে স্থানে এসব হয়ে গেল, সে স্থানের নাম হল ‘হরিহর ক্ষেত্র’ । আপনি নবদ্বীপে গেলে এই ক্ষেত্রটা দেখতে পাবেন । শিবজী মহারাজ পরমভক্ত । আপনি যদি যান বৃন্দাবনে, সেখানে রাসেশ্বর মহাদেব, চকলেশ্বর, ভূতেশ্বর, গোপেশ্বর, এসব মহাদেব দেখতে পাওয়া যায় । একবার রাসেশ্বর মহাদেব গোকুলে এসে বসে ছিলেন গোপালকে দর্শন করবার জন্য কিন্তু যশোদা মা তাঁকে দেখতে পেয়ে বললেন, “না, না, আমার গোপাল তোমার দেখলে ভয় পেয়ে যাবে ! তোমার বিরাট বিরাট জটা, বিরাট বিরাট দাড়ি, গলায় সাপ নিয়ে এসেছো ! এসব কী ? আমি গোপালকে দেখাব না ।” তখন রাসেশ্বর মহাদেব সেখান থেকে তাঁর আস্তানায় চলে গেলেন আর সেখানে বসে ধ্যান করলেন, “কবে ভগবানের দর্শন পাব ?” এদিকে গোপাল, ভগবান শ্রীকৃষ্ণ, কাঁদতে শুরু করলেন—তাঁর ভক্ত তাঁকে না দেখে চলে গাছে, তাঁর কষ্ট হয়েছে… খুব কাঁদতে কাঁদতে গোপাল মাকে বললেন, “মহাদেবকে নিয়ে এসো তাহলে আমি কাঁদতে থামাব !” এইজন্য শিব ভগবানের সেবক, অংশবিশেষ—একও নয় আবার আলাদাও নয় । মনে রাখবেন ।
|
অন্য রচনা: • শ্রীনৃসিংহদেবের কথা • দণ্ড মহৎসব • মায়ার চিন্তা বা কৃষ্ণের চিন্তা ? • আমাদের একমাত্র উপায় • ভক্তির অভাব • গৃহে আবদ্ধ • মায়ের পেট থেকে মায়ার পেটের মধ্যে • জীবকে সত্য দয়া কি ? • ভোগী নই ত্যাগীও নই • শ্রবণ-কীর্ত্তনে মতি • ভগবানের কৃপা ও আপনার চেষ্টা • শান্তির গুপ্ত কথা • পবিত্র জীবন • বামনদেবের কথা • ভক্ত ও নাপিত • ভগবানের চরণে পথ • পূজনীয় বিসর্জন • শিবজী মহারাজ : পরম বৈষ্ণব • শ্রীহরিনাম দীক্ষা : গুরুপাদপদ্মের দান • আমি তো সব ব্যবস্থা করি নাকি ? • চকচক করলেই সোনা হয় না • আমার শোচন |
||||||
বৃক্ষসম ক্ষমাগুণ করবি সাধন । প্রতিহিংসা ত্যজি আন্যে করবি পালন ॥ জীবন-নির্ব্বাহে আনে উদ্বেগ না দিবে । পর-উপকারে নিজ-সুখ পাসরিবে ॥ | |||||||
© Sri Chaitanya Saraswat Math, Nabadwip, West Bengal, India. For any enquiries please visit our contact page. |