| |||||||
|
|||||||
চকচক করলেই সোনা হয় না
ওঁ বিষ্ণুপাদ শ্রীল ভক্তি নির্ম্মল আচার্য্য মহারাজের হরি-কথামৃত
বৃহৎ স্বার্থ পেতে হলে, ক্ষুদ্র স্বার্থ ত্যাগ করতে হয় । বর্ধমান জেলায় মানকর নামে এক গ্রাম ছিল । সে মানকরে এবং ব্রাহ্মণ ছিল, তার নাম ছিল জীবন চক্রবর্ত্তী । সে জীবন চক্রবর্ত্তী শিবের পূজা করত এবং তার পূজায় সন্তুষ্ট হয়ে শিব ঠাকুর এক রাত্রে তার কাছে হাজির হয়ে জিজ্ঞেস করলেন, “জীবন, তুমি কী চাও ?” জীবন বলল, “ঠাকুর, আমার বড়িতে মেয়ে বড় হয়েছে কিন্তু আমি ওকে বিয়ে দিতে পারছি না, তবে কিছু ধন (টাকাপয়সা) চাই…” শিব ঠাকুর বললেন, “আমি কোথায় ধন পাব ? ধন পেতে হলে, তোমাকে বৃন্দাবনে যেতে হবে ।” “বৃন্দাবন ? ঠিক আছে, যাব । কার কাছে যেতে হবে ?” “সনাতন গোস্বামীর কাছে যাও, তিনি তোমাকে সব দিতে পারেন ।” তখন বৃন্দাবনে ঢুকে জীবন চক্রবর্ত্তী রাস্তায় এক লোককে জিজ্ঞেস করল, “সনাতন গোস্বামী কোথায় থাকেন ?” লোকটা বলল, “ওই দ্বাদশাদিত্য-টিলায় মদনমোহনের মন্দির আছে, ওখানেই থাকেন সনাতন গোস্বামী ।” ওখানে গিয়ে জীবন রাস্তায় দেখতে পেল এক গরিব ব্রাহ্মণ বসে বসে হরিনাম করছিলেন । তাঁর কাছে গিয়ে জীবন জিজ্ঞেস করল, “সনাতন গোস্বামী কোথায় থাকেন ?” ব্রাহ্মণ বললেন, “আমি এটা ।” “আপনি ?” “কেন ? বিশ্বাস হচ্ছে না ?” “না, না, মানে…” “তোমাকে কে পাঠিয়েছে ?” “শিব ঠাকুর ।” “শিব ঠাকুর তোমাকে কি জন্য আমার কাছে পাঠিয়েছেন ?” জীবন বলল, “ধনের জন্য…” “আমি কোথায় ধন পাব ?” “হ্যাঁ, আমার তাই মনে হচ্ছে । আমার বাড়িতে একটা রূপের ও কিছু পিতলের হাড়ি-কড়াই আছে, কিন্তু আপনার তাও নাই । আপনার মাটির একটা বাসন, মাটির একটা হাড়ি আছে । আমি চলে যাচ্ছি… আমার হয়তো ভুল হয়ে গেছে ।” জীবন যখন চলে গেল তখনই সনাতন গোস্বামী ফট করে তাকে ডাকলেন, “শুন, শুন ! মনে পড়েছে । আমি এক দিন যমুনায় স্নান করতে গিয়ে পেয়েছিলাম এক পরশমণি, সেটাই আমি যমুনার পাড়ে বালির মধ্যে রেখে দিয়েছি । ওখানে গেলে খুঁজে পাওয়া যাবে ।” তখন ওখানে গিয়ে জীবন পরশমণিটা খুঁজতে লাগল কন্তু কিছু পেল না । ফিরে এসে সনাতন গোস্বামীকে বলল, “আমি কিছু খুঁজে পাচ্ছি না ।” সনাতন বললেন, “আমি দেখছি… দেখি, ওখানে খুঁজো তো !” শেষে তিনি ওই পরশমণিটা বালির মধ্যে পেলেন । তার হাতে একটা লোহার কবচ ছিল—পরশমণি দিয়ে সেই লোহার কবচটা সোনার হয়ে গেল । জীবন সুখী হয়ে গেল আর বাড়িতে ফিরে যেতে লাগল কিন্তু একটু পরে হঠাৎ মনে মনে ভাবল, “এই সাধু এত দামি জিনিস পেয়ে কেন যমুনার পাড়ে ফেলে দিলেন ? সাধু নিশ্চয় বড় কিছু পেয়েছেন… সবাই ক্ষুদ্র জিনিস পেলে তুচ্ছ করে আর বড় জিনিস পেলে সবাই কাছে রাখে । নিশ্চয় তিনি বড় কিছু পেয়েছেন !” তখন জীবন আবার সনাতনের কাছে এল । তাকে দেখতে পেয়ে সনাতন গোস্বামী অবাক হয়ে বললেন, “আরে, কেন তুমি এসেছো ? তুমি দামি জিনিস পেয়েছো, সেই জিনিসটা তুমি নিয়ে যাও । তোমার সব সোনার হয়ে যাবে, মেয়ের বিয়ে দেবে, বাড়ি-ঘর, টাকা-পয়সা, ধন-দৌলত—সব হয়ে যাবে । যাও !” “না, প্রভু, আমার একটা প্রশ্ন জেগেছে…” “কী প্রশ্ন ?” “কী ধনে হয়েছ ধনী, মণিরে না মানে মণি, সেই ধনের একটা খানিক মাগি নতশিরে আপনার শ্রীচরণে । আপনি কী ধনে ধনী হয়েছেন ? সেই ধনটা আমি চাই ।” “সেই ধন আমি দিতে পারি কিন্তু তুমি নেবে, জীবন ?” “হ্যাঁ, প্রভু, নেব ।” “তবে তোমার পরশমণি ফেলে দাও আর হাত পাতো ।” পরশমণি ফেলে দিয়ে জীবন হাত পাতল আর সনাতন গোস্বামী তার হাতে একটা জপ মালাই দিয়ে দিলেন এবং বললেন, “এখন বৃন্দাবনে থাকো ।” …ওদিকে তার মেয়ে ভালো জায়গায় বিয়ে হয়েছে, ভালো ঘরবাড়ি হয়ে যাচ্ছে আর জীবন চক্রবর্ত্তী বৃন্দাবনে থাকল । কে সব করেন ? ভগবান সব করেন । মালিক হচ্ছেন ভগবান । ভগবান বলেন, “তুমি আমার চিন্তা করবে, আমি তোমার চিন্তা করব ।” এইজন্য, ভগবানের চিন্তা সবসময় করবেন, তাহলে দেখবেন ভগবানকে লাভ করতে পারেন ।
|
অন্য রচনা: • শ্রীনৃসিংহদেবের কথা • দণ্ড মহৎসব • মায়ার চিন্তা বা কৃষ্ণের চিন্তা ? • আমাদের একমাত্র উপায় • ভক্তির অভাব • গৃহে আবদ্ধ • মায়ের পেট থেকে মায়ার পেটের মধ্যে • জীবকে সত্য দয়া কি ? • ভোগী নই ত্যাগীও নই • শ্রবণ-কীর্ত্তনে মতি • ভগবানের কৃপা ও আপনার চেষ্টা • শান্তির গুপ্ত কথা • পবিত্র জীবন • বামনদেবের কথা • ভক্ত ও নাপিত • ভগবানের চরণে পথ • পূজনীয় বিসর্জন • শিবজী মহারাজ : পরম বৈষ্ণব • শ্রীহরিনাম দীক্ষা : গুরুপাদপদ্মের দান • আমি তো সব ব্যবস্থা করি নাকি ? • চকচক করলেই সোনা হয় না • আমার শোচন |
||||||
বৃক্ষসম ক্ষমাগুণ করবি সাধন । প্রতিহিংসা ত্যজি আন্যে করবি পালন ॥ জীবন-নির্ব্বাহে আনে উদ্বেগ না দিবে । পর-উপকারে নিজ-সুখ পাসরিবে ॥ | |||||||
© Sri Chaitanya Saraswat Math, Nabadwip, West Bengal, India. For any enquiries please visit our contact page. |