আমাদের শ্রীগুরুপরম্পরা :
শ্রীশ্রীল ভক্তিনির্ম্মল আচার্য্য মহারাজ শ্রীশ্রীল ভক্তিসুন্দর গোবিন্দ দেবগোস্বামী মহারাজ শ্রীশ্রীল ভক্তিরক্ষক শ্রীধর দেবগোস্বামী মহারাজ ভগবান্ শ্রীশ্রীল ভক্তি সিদ্ধান্ত সরস্বতী গোস্বামী ঠাকুর
              প্রভুপাদ
“শ্রীচৈতন্য-সারস্বত মঠে সূর্যাস্ত কখনই হয় না” :
আমাদের মঠের পরিচয় ও বৈশিষ্ট্য
 
আমাদের সম্পর্কে শ্রীউপদেশ শ্রীগ্রন্থাগার শ্রীগৌড়ীয় পঞ্জিকা ছবি ENGLISH
 

শ্রবণ-কীর্ত্তনে মতি

ওঁ বিষ্ণুপাদ শ্রীল ভক্তি নির্ম্মল আচার্য্য মহারাজের হরি-কথামৃত
১৭ জানুয়ারী ২০১৬

 

আমাদের কাজ হচ্ছে শ্রবণম্-কীর্ত্তনম্ । প্রথমে সুকৃতি আসতে হবে—সুকৃতি বলতে কি বুঝতে পারছেন ? পুণ্য আর সুকৃতি এক জিনিস নয় । যখন আপনি কিছু পুন্যকর্ম করেন, তখন এই কর্মের ফল আছে—ফলে স্বর্গ উপায় । কিন্তু সেটাও ক্ষণস্থায়ী : স্বর্গে গেলে পুণ্য যখন ক্ষয় হয়ে যাবে তখন আবার নেমে আসতে হয় । কিন্তু সাধু-গুরুর সেবার ফল হচ্ছে পূর্ব্বজন্মের সুকৃতি । “তদ্­বস্তু তদীয় সেবায়” : তাহার জিনিস তাহার সেবায় ।

বাড়িতে লাউ-গাছ লাগিয়েছেন, সে লাউটা খেয়ে নেবেন না—লাউটা যদি ঠাকুরের জন্য রান্না করে ভোগ লাগিয়ে দেন, ওই গাছটার কিছু মঙ্গল হয় মানে আপনার দ্বারা গাছটা কিছু উপকৃত (সুকৃতি) পায় । এই ভাবে জীব পূর্ব্বজন্মের সুকৃতি পেতে পারে আর সুকৃতির ফলে হয় শ্রদ্ধা (faith, বিশ্বাস) ।

শ্রদ্ধার ভাগ আছে । শ্রদ্ধা চার প্রকার : কমল শ্রদ্ধা, তরঙ্গ শ্রদ্ধা, দৃঢ় শ্রদ্ধা, সুদৃঢ় শ্রদ্ধা ।

আপনি গলায় তুলসী মালা পরলেন, তিলক করলেন, শিখা লাগালেন, কিন্তু আপনাকে দেখে কেউ নিন্দা করবেন আর আপনি তিলকটা মুছে ফেলবেন । তাহলে শ্রদ্ধাটা কম, এই শ্রদ্ধা পদ্মের মত—জল থেকে এক পদ্ম যদি তুলে নেন, ফুলটা সদ্য শুকিয়ে পড়ে যায় । তরঙ্গ শ্রদ্ধা ঢেউয়ের মত—আজকে এখানে হরিকথা হচ্ছে, আমি মহারাজের কাছে এলাম, তার উপদেশগুলো শুনলাম আর কালকে যেই সেই হয়ে গেল । কাজ হবে না । অনেক অনেক কথা বলা হয়, কিন্তু

পৃথিবীতে যত কথা ধর্ম্মনামে-চলে ।
ভাগবত কহে সব পরিপূর্ণ ছলে ॥

(শ্রীমদ্ভাগবত, ১/১/২, বাংলা অনুবাদ)

যখন নোটিস চলে আসবে, তখন সময় পাবেন না ! পরীক্ষিত মহারাজ সাত দিন আগে নোটিস পেয়েছিলেন । তিনি রাজা ছিলেন, রাজ্য পরিচালনা করতেন, তার লাখ লাখ প্রজা ছিল কিন্তু এক দিন নোটিস পেয়ে গেলেন যে, সাত দিন পর তাঁর এই দেহ ছেড়ে দিতে হবে । আমরা কি করতাম ? আমরা মনে মনে ভাবতাম যে, “সাত দিন পরে মরে যাব, তাহলে এ সব জিনিস কাকে দিয়ে দেব ? জমি-সম্পত্তি, টাকা-পয়সা কোথায়, কাকে দিয়ে যাব ? এই সব ব্যবস্থা করতে হয়…” তাই না, বলুন ? অনেক অনেক লোক বুদ্ধি দিয়েছিলেন পরীক্ষিত মহারাজকে, কিন্তু পরীক্ষিত মহারাজ সেটা শুনলেন না, তিনি সর্ব্বশেষে কি শুনলেন ? শুকদেব গোস্বামী সেখানে এসে বললেন, “তোমাকে ভাগবত্ শ্রবণ করতে হবে !” সেইজন্য তিনি সাত দিন ধরে ভাগবত্ শ্রবণ করলেন আর ভগবানকে প্রাপ্ত করলেন ।

খট্বাঙ্গ মহারাজও আটচল্লিশ মিনিট আগে নোটিস পেয়েছিলেন—আটচল্লিশ মিনিট time (সময়) পেয়েছিলেন । যখন দেবতারা অসুরের সঙ্গে যুদ্ধ করল, অসুরেরা যুদ্ধে পরািজত হল, দেবতারা যুদ্ধে জয় লাভ করল । তখন দেবতারা গিয়ে খট্বাঙ্গ মহারাজকে বললেন, “মহারাজ, আপনার আশীর্বাদে আমরা যুদ্ধে জয় লাভ করেছি । অসুরগণ সব পালিয়ে গেছে আর আমরা সর্ব্ব স্বর্গরাজ্য লাভ করেছি । আপনি কী চান ? স্বর্গে একটা রাজ্য পেতে চান ? দিয়ে দেব—থাকবেন সেখানে ?” খট্বাঙ্গ মহারাজ উত্তরে বললেন, “আপনারা আমাকে স্বর্গরাজ্য দেবেন, সেটা পরে নেব কিন্তু আগে বলুন আমার কত দিন আয়ু আছে ? আর কত দিন আমি থাকব ?” তখন দেবতারা একটু ধ্যানে বসে বললেন, “আপনার আয়ু মাত্র আটচল্লিশ মিনিট—আপনি এক মুহূর্ত পরে চলে যাবেন ।” তখন তিনি বললেন, “আমি এই এক মুহূর্তের মধ্যে একটা মিনিট সময় নষ্ট করব না ! যখন এক মুহুর্ত সময় পেয়েছি (আটচল্লিশ মিনিট), তখন আমি এখন থেকে ভগবানের চিন্তা করতে লাগব ।” তিনি ভগবানের চিন্তা করে, স্মরণ করে সর্ব্বশেষে ভগবানকে লাভ করতে পেরেছিলেন ।

কিন্তু আমাদের কখন চলে যেতে হবে আমরা জানি না । যে কোন মুহূর্তে আমরা চলে যেতে পারি । আমরা এখন, সেই মুহূর্তেও চলে যেতে পারি, সময় একটুও দেবেন না কিন্তু আমাদের বিশ্বাস নেই । আমরা যদি হরি-গুরু-বৈষ্ণবের কথা শ্রবণ করি, উপায় পেতে পারি কিন্তু আমরা মনে মনে ভাবছি, “এখন ঠিকই ? না, পরে করব, পরে হবে, পরে হবে ।” আমরা চিন্তা করি না যে, “কবে আমি ভগবানকে সেবা করব ?”

কবে হবে বল, সে দিন আমার ।
অপরাধ ঘুচি’ শুদ্ধ নামে রুচি
কৃপা-বলে হবে হৃদয়ে সঞ্চার ॥

(শরণাগতি, শ্রীলভক্তিবিনোদ ঠাকুর)

আমার কবে সেই দিন আসবে আমার যে অপরাধগুলো শেষ হয়ে গিয়ে কবে আবার আমি এই কৃষ্ণকীর্ত্তন করতে পারব ?

নাচিয়া গাইয়া, বেড়াইব ছুটে,
বাতুলের প্রায় ছাড়িয়া বিচার ॥

(শরণাগতি, শ্রীলভক্তিবিনোদ ঠাকুর)

“কৃষ্ণ-কীর্ত্তন করতে করতে আমি কখন পাগল হয়ে যাব ? কবে আমার সেই দিন আসবে ? কখন কৃষ্ণ-কীর্ত্তন করতে করতে আমার হৃদয় থেকে অন্য জিনিস নিবৃত্ত হয়ে যাবে ?!”

 


 

 

 

← গ্রন্থাগারে

অন্য রচনা:
শ্রীনৃসিংহদেবের কথা
দণ্ড মহৎসব
মায়ার চিন্তা বা কৃষ্ণের চিন্তা ?
আমাদের একমাত্র উপায়
ভক্তির অভাব
গৃহে আবদ্ধ
মায়ের পেট থেকে মায়ার পেটের মধ্যে
জীবকে সত্য দয়া কি ?
ভোগী নই ত্যাগীও নই
শ্রবণ-কীর্ত্তনে মতি
ভগবানের কৃপা ও আপনার চেষ্টা
শান্তির গুপ্ত কথা
পবিত্র জীবন
বামনদেবের কথা
ভক্ত ও নাপিত
ভগবানের চরণে পথ
পূজনীয় বিসর্জন
শিবজী মহারাজ : পরম বৈষ্ণব
শ্রীহরিনাম দীক্ষা : গুরুপাদপদ্মের দান
আমি তো সব ব্যবস্থা করি নাকি ?
চকচক করলেই সোনা হয় না
আমার শোচন
বৃক্ষসম ক্ষমাগুণ করবি সাধন । প্রতিহিংসা ত্যজি আন্যে করবি পালন ॥ জীবন-নির্ব্বাহে আনে উদ্বেগ না দিবে । পর-উপকারে নিজ-সুখ পাসরিবে ॥