| |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
|
|||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা
প্রথমোঽধ্যায়ঃ সৈন্য-দর্শন
ধৃতরাষ্ট্রঃ উবাচ—(ধৃতরাষ্ট্র বলিলেন) [হে] সঞ্জয় ! (হে সঞ্জয় ! ) ধর্ম্মক্ষেত্রে কুরুক্ষেত্রে (ধর্ম্মভূমি কুরুক্ষেত্রে) যুযুৎসবঃ (যুদ্ধ করিতে ইচ্ছুক) সমবেতাঃ (সমবেত) মামকাঃ (দুর্য্যোধনাদি) পাণ্ডবাশ্চ (এবং যুধিষ্ঠিরাদি) এব (অনন্তর) কিম্ (কি) অকুর্ব্বত (করিয়াছিলেন ? ) ॥১॥ অনুবাদ—ধৃতরাষ্ট্র কহিলেন, হে সঞ্জয় ! ধর্ম্মভূমি কুরুক্ষেত্রে যুদ্ধার্থ সমবেত হইয়া মৎপুত্ত্র ও পাণ্ডুপুত্রগণ কি করিলেন ? ॥১॥
সঞ্জয়ঃ উবাচ—(সঞ্জয় কহিলেন) তদা তু (তখন) রাজা দুর্য্যোধনঃ (দুর্য্যোধন) পাণ্ডবানীকং (পাণ্ডবসৈন্যকে) ব্যূঢ়ং (ব্যূহাকারে অবস্থিত) দৃষ্ট্বা (দেখিয়া) আচার্য্যং (দ্রোণাচার্য্যের) উপসঙ্গম্য (নিকটে গমন করিয়া) বচনং (নিম্নোক্ত বাক্য) অব্রবীৎ (বলিয়াছিলেন) ॥২॥ সঞ্জয় বলিলেন, রাজা দুর্য্যোধন, পাণ্ডব-সৈন্য সামন্তগণকে ব্যূহরচনায় অবস্থিত দেখিয়া, দ্রোণাচার্য্যের নিকট গমনপূর্ব্বক বলিলেন ॥২॥
[হে] আচার্য্য (হে আচার্য্যদেব !) তব (আপনার) ধীমতা শিষ্যেণ দ্রুপদপুত্রেণ (বুদ্ধিমান্শিষ্য দ্রুপদপুত্ত্র ধৃষ্টদ্যুম্ন কর্ত্তৃক) ব্যূঢ়াং (ব্যূহাকারে স্থাপিত) পাণ্ডুপুত্ত্রাণাং (পাণ্ডবগণের) এতাং মহতীং (এই বিশাল) চমূং (সপ্তাক্ষৌহিণী পরিমিত সেনাকে) পশ্য (দেখুন) ॥৩॥ হে আচার্য্য! আপনার শিষ্য, ধীমান্ ধৃষ্টদ্যুম্ন কর্ত্তৃক ব্যূহ রচনায় অবস্থিত পাণ্ডবগণের মহান্ সৈন্যসমাবেশ নিরীক্ষণ করুন ॥৩॥
অত্র (এই ব্যূহে) মহেষ্বাসাঃ (মহাধনুর্ধারী) যুধি (যুদ্ধে) ভীমার্জ্জুনসমাঃ (ভীমার্জ্জুনের সমান) শূরাঃ (বীরগণ) [সন্তি] (রহিয়াছেন) [যথা] যুযুধানঃ (সাত্যকি) বিরাটশ্চ (বিরাট রাজা) মহারথঃ দ্রুপদশ্চ (মহারথদ্রুপদ) ধৃষ্টকেতুঃ (ধৃষ্টকেতু) চেকিতানঃ (চেকিতান রাজা) বীর্য্যবান্ কাশীরাজশ্চ (বলশালী কাশীরাজ) পুরুজিৎ (পুরুজিৎ) কুন্তিভোজশ্চ (কুন্তিভোজ) নরপুঙ্গবঃ (নরশ্রেষ্ঠ) শৈব্যঃ চ (শৈব্যরাজ) বিক্রান্তঃ (বিক্রমশালী) যুধামন্যুশ্চ (যুধামন্যু) বীর্য্যবান্ উত্তমৌজাশ্চ (বীর উত্তমৌজা) সৌভদ্রঃ (অভিমন্যু) দ্রৌপদেয়াশ্চ (ও দ্রৌপদীর প্রতিবিন্ধ্য প্রভৃতি পঞ্চ পুত্ত্র) সর্ব্বে এব মহারথাঃ (সকলেই মহারথ) ॥৪–৬॥ এই পাণ্ডবসৈন্য মধ্যে মহাধনুর্দ্ধর ভীমার্জ্জুন ও তৎসমকক্ষ যোদ্ধাগণ আছেন । যথা সাত্যকি, বিরাটরাজ, মহারথদ্রুপদ, ধৃষ্টকেতু, চেকিতান, বীর্য্যবান্ কাশীরাজ, পুরুজিৎ, কুন্তিভোজ, নরশ্রেষ্ঠ শৈব্য, বিক্রমশালী যুধামন্যু, বীর্য্যবান্ উত্তমৌজা, অভিমন্যু, ও দ্রৌপদীর পুত্রগণ—ইঁহারা সকলেই মহারথ ॥৪–৬॥
[হে] দ্বিজোত্তম ! (হে দ্বিজশ্রেষ্ঠ দ্রোণ !) অস্মাকং (আমাদের) [মধ্যে] তু যে বিশিষ্টাঃ (যাঁহারা প্রধান) মম সৈন্যস্য (আমার সৈন্যগণের) নায়কাঃ (নায়ক) তান্ (তাঁহাদিগকে) নিবোধ (জানুন) তে সংজ্ঞার্থং (আপনার সম্যক্ অবগতির জন্য) তান্ (তাঁহাদিগের নাম) ব্রবীমি (বলিতেছি) ॥৭॥ হে দ্বিজোত্তম ! আমাদেরও যে সকল বিশিষ্ট বীর এবং সেনানায়ক আছেন, সে সকলও জানুন । আপনার সম্যক্ জ্ঞানার্থ নিবেদন করিতেছি ॥৭॥
ভবান্ (আপনি) ভীষ্মশ্চ (ভীষ্ম) কর্ণশ্চ (কর্ণ) সমিতিঞ্জয়ঃ কৃপশ্চ (যুদ্ধজয়ী কৃপ) অশ্বত্থামা (অশ্বত্থামা) বিকর্ণশ্চ (বিকর্ণ) সৌমদত্তিঃ (ভূরিশ্রবা) জয়দ্রথঃ (জয়দ্রথ) নানাশস্ত্রপ্রহরণাঃ (বিবিধ শস্ত্রধারী) অন্যে চ বহবঃ শূরাঃ (অন্যান্য বহুবীর) [সন্তি] (আছেন), সর্ব্বে (তাঁহারা সকলে) যুদ্ধবিশারদাঃ (যুদ্ধপারদর্শী) মদর্থে (আমার জন্য) ত্যক্তজীবিতাঃ (প্রাণ-ত্যাগেও কৃতসঙ্কল্প) ॥৮–৯॥ রণবিজয়ী আপনি, ভীষ্ম, কর্ণ, কৃপাচার্য্য, অশ্বত্থামা, বিকর্ণ, সৌমদত্তি (ভূরিশ্রবা) ও জয়দ্রথ এবং ইহা ছাড়াও অনেক আছেন,যাঁহারা যুদ্ধবিশারদ, নানাশস্ত্রপ্রহরণধারী, বীরপুরুষ, এবং আমার জন্য প্রাণত্যাগে কৃতসংকল্প ॥৮–৯॥
ভীষ্মাভিরক্ষিতম্ (ভীষ্মের দ্বারা পরিরক্ষিত) অস্মাকম্ তৎ বলং (আমাদের তাদৃশ সৈন্যগণ) অপর্য্যাপ্তং (অপর্য্যাপ্ত, প্রচুর নহে) তু (কিন্তু) ভীমাভিরক্ষিতম্ (ভীম কর্ত্তৃক পরিরক্ষিত) এতেষাং (ইহাদের) ইদং বলং (এই সৈন্যদল) পর্য্যাপ্তং (পর্য্যাপ্ত, প্রচুর) [ভাতি] (মনে হয়) ॥১০॥ ভীষ্মের দ্বারা অভিরক্ষিত আমাদের সৈন্যবল অপর্য্যাপ্ত (প্রচুর নহে), কিন্তু ভীমের দ্বারা রক্ষিত পাণ্ডবসৈন্য সমূহ পর্য্যাপ্ত (প্রচুর) ॥১০॥
ভবন্তঃ (আপনারা) সর্ব্বে এব হি (সকলেই) সর্ব্বেষু অয়নেষু চ (সকল ব্যূহ-প্রবেশ পথে) যথাভাগম্ (বিভাগানুসারে) অবস্থিতাঃ [সন্তঃ] (অবস্থিত হইয়া) ভীষ্মমেব (ভীষ্মকেই) অভিরক্ষন্তু (সর্ব্বতোভাবে রক্ষা করুন) ॥১১॥ অতএব আপনারা ব্যূহদ্বারে স্ব-স্ব বিভাগানুযায়ী অবস্থান পূর্ব্বক সকলে পিতামহ ভীষ্মকেই রক্ষা করুন ॥১১॥
প্রতাপবান্ (প্রতাপশালী) কুরুবৃদ্ধঃ পিতামহঃ (ভীষ্ম) তস্য (তাঁহার অর্থাৎ দুর্য্যোধনের) হর্ষং সংজনয়ন্ (হর্ষ উৎপাদনার্থ) উচ্চৈঃ (উচ্চৈঃস্বরে) সিংহনাদং বিনদ্য (সিংহের ন্যায় গর্জ্জন করিয়া) শঙ্খং দধ্মৌ (শঙ্খ বাজাইলেন) ॥১২॥ অনন্তর প্রবলপ্রতাপ কুরুবৃদ্ধ পিতামহ ভীষ্ম দুর্য্যোধনের হর্ষোৎপত্তির নিমিত্ত সিংহনাদপূর্ব্বক উচ্চৈঃস্বরে শঙ্খধ্বনি করিলেন ॥১২॥
ততঃ (তদনন্তর) শঙ্খাশ্চ, ভের্য্যশ্চ, পণবানক-গোমুখাঃ (শঙ্খ, ভেরী, মাদল, ঢক্কা ও রণশিঙ্গাপ্রভৃতি বাদ্য সকল) সহসা এব অভ্যহন্যন্ত (তৎক্ষণাৎ বাজিয়া উঠিল) স শব্দঃ (সেই শব্দ) তুমুলঃ অভবৎ (প্রবল হইল) ॥১৩॥ তারপরেই শঙ্খ, ভেরী, মাদল, পটহ, রণশিঙ্গা প্রভৃতি সহসা বাদিত হইলে তুমুল শব্দ উদ্ভূত হইল ॥১৩॥
ততঃ (তৎপরে) শ্বেতৈঃ হয়ৈঃ যুক্তে (শ্বেতবর্ণ অশ্ব-যুক্ত) মহতি স্যন্দনে (মহন্রথে) স্থিতৌ (অবস্থিত) মাধবঃ পাণ্ডবশ্চ এব (শ্রীকৃষ্ণ ও অর্জ্জুন উভয়েই) দিব্যৌ শঙ্খৌ (অলৌকিক শঙ্খদ্বয়) প্রদধ্মতুঃ (বাজাইলেন) ॥১৪॥ এদিকে ভগবান্ শ্রীকৃষ্ণ এবং অর্জ্জুন শ্বেতবর্ণ অশ্বযুক্ত মহান্রথে অবস্থান পূর্ব্বক দিব্য-শঙ্খ-ধ্বনি করিলেন ॥১৪॥
হৃষীকেশঃ (শ্রীকৃষ্ণ) পাঞ্চজন্যং (পাঞ্চজন্য) ধনঞ্জয়ঃ (অর্জ্জুন) দেবদত্তং (দেবদত্ত) ভীমকর্ম্মা বৃকোদরঃ (ঘোরকর্ম্মা ভীমসেন) পৌণ্ড্রং (পৌণ্ড্র নামক) মহাশঙ্খং (মহাশঙ্খ) দধ্মৌ (বাজাইলেন) ॥১৫॥ হৃষীকেশ স্বীয় ‘পাঞ্চজন্য’, ধনঞ্জয় ‘দেবদত্ত’, এবং ভীমকর্ম্মা ভীমসেন, ‘পৌণ্ড্র’ নামক শঙ্খ বাজাইলেন ॥১৫॥
কুন্তীপুত্ত্রঃ রাজা যুধিষ্ঠিরঃ (কুন্তীপুত্ত্র রাজা যুধিষ্ঠির) অনন্তবিজয়ং (অনন্তবিজয়) নকুলঃ সহদেবশ্চ (নকুল ও সহাদেব) সুঘোষ-মণিপুষ্পকৌ (সুঘোষ ও মণিপুষ্পক নামক শঙ্খদ্বয়) [দষ্মৌ] (বাজাইলেন) ॥১৬॥ কুন্তীপুত্ত্র রাজা যুধিষ্ঠির ‘অনন্তবিজয়’ নকুল ‘সুঘোষ’ এবং সহদেব ‘মণিপুষ্পক’ নামক শঙ্খ বাজাইলেন ॥১৬॥
[হে] পৃথিবীপতে ! (হে পৃথিবীনাথ ধৃতরাষ্ট্র !) পরমেষ্বাসঃ (মহাধর্নুদ্ধারী) কাশ্যশ্চ (কাশীরাজ) মহারথঃ শিখণ্ডী চ (মহারথ শিখণ্ডী) ধৃষ্টদ্যুম্নঃ বিরাটশ্চ (ধৃষ্টদ্যুম্ন ও বিরাট রাজা) অপরাজিতঃ (রণবিজয়ী) সাত্যকিশ্চ (সাত্যকি) দ্রুপদঃ (দ্রুপদ রাজা) দ্রৌপদেয়াশ্চ (দ্রৌপদীর তনয়গণ) মহাবাহুঃ সৌভদ্রশ্চ (এবং মহাবাহু অভিমন্যু) সর্ব্বশঃ (সকলেই) পৃথক্ পৃথক্ শঙ্খান্ (পৃথক্ পৃথক্ শঙ্খ সকল) দধ্মুঃ (বাজাইলেন) ॥১৭–১৮॥ হে পৃথিবীপতে ! উৎকৃষ্ট ধনুর্দ্ধারী কাশীরাজ, মহারথ শিখণ্ডী, ধৃষ্টদ্যুম্ন, বিরাট রাজা এবং অপরাজিত সাত্যকি, দ্রুপদ রাজা, দ্রৌপদীর পুত্রগণ, এবং মহাবাহু সুভদ্রা-তনয় অভিমন্যু, ইঁহারা সকলেই পৃথক্ পৃথক্ শঙ্খধ্বনি করিলেন ॥১৭–১৮॥
নভশ্চ পৃথিবীং চ এব (আকাশ ও পৃথিবীকে) অভ্যনুনাদয়ন্ (প্রতিধ্বনিত করিয়া) সঃ তুমুলঃ ঘোষঃ (সেই তুমুল শব্দ) ধার্ত্তরাষ্ট্রানাং (ধৃতরাষ্ট্র তনয়গণের) হৃদয়ানি[ণি?] (হৃদয় সকল) ব্যদারয়ৎ (বিদীর্ণ করিল) ॥১৯॥ সেই সকল তুমুল শঙ্খনাদ ধরাতল এবং গগনমণ্ডল প্রতিধ্বনিত করিতে করিতে যেন ধার্ত্তরাষ্ট্রগণের হৃদয় বিদীর্ণ করিতে লাগিল ॥১৯॥
[হে] মহীপতে ! (হে মহারাজ !) অথ (অনন্তর) শাস্ত্র-সম্পাতে (অস্ত্রাদি নিক্ষেপ) প্রবৃত্তে [সতি] (আরম্ভ কালে) কপিধ্বজঃ পাণ্ডবঃ (বানরধ্বজ অর্জ্জুন) ধার্ত্তরাষ্ট্রান্ (ধৃতরাষ্ট্র পুত্ত্রগণকে) ব্যবস্থিতান্ দৃষ্ট্বা (যুদ্ধোদ্যোগে অবস্থিত দেখিয়া) ধনুঃ উদ্যম্য (ধনু উত্তোলন পূর্ব্বক) তদা (তৎকালে) হৃষীকেশং (শ্রীকৃষ্ণকে) ইদং বাক্যম্ (এই বাক্য) আহ (বলিয়াছিলেন) ॥২০॥ হে মহীপতে ! তৎকালে শস্ত্র-নিক্ষেপে সমুদ্যত কপিধ্বজ-রথারূঢ় ধনঞ্জয়, দুর্য্যোধনাদিকে যুদ্ধোদ্যোগে অবস্থিত দেখিয়া ধনু উত্তোলন পূর্ব্বক শ্রীকৃষ্ণকে এই কথা বলিলেন ॥২০॥
অর্জ্জুনঃ উবাচ (অর্জ্জুন কহিলেন) [হে] অচ্যুত ! (হে অচ্যুত !) উভয়োঃ সেনয়োঃ মধ্যে (উভয় সেনার মধ্যস্থলে) মে রথঃ (আমার রথ) স্থাপয় (স্থাপন কর) ॥২১॥ অর্জ্জুন কহিলেন—হে কৃষ্ণ ! উভয় সেনার মধ্যস্থলে আমার রথ স্থাপন কর ॥২১॥
যাবৎ (যে পর্য্যন্ত) অহং (আমি) যোদ্ধু কামান্ অবস্থিতান্ এতান্ (যুদ্ধাভিলাষী এই সকল বীরগণকে) নিরীক্ষে (নিরীক্ষণ করি) অস্মিন্রণসমুদ্যমে (এই যুদ্ধে) কৈ সহ (কাহাদিগের সহিত) ময়া যোদ্ধব্যং (আমাকে যুদ্ধ করিতে হইবে) অত্র যুদ্ধে (এই সংগ্রামে) দুর্ব্বুদ্ধেঃ (দুর্ম্মতি) ধার্ত্তরাষ্ট্রস্য (দুর্য্যোধনের) প্রিয়চিকীর্ষবঃ (হিতৈষী) এতে যে সমাগতাঃ (যে সকল ব্যক্তি আসিয়াছেন) [তান্] (সেই সকল) যোৎস্যমানান্ (যোদ্ধৃগণকে) অহং (আমি) অবেক্ষে (অবলোকন করি) ॥২২–২৩॥ যতক্ষণ এই যুদ্ধক্ষেত্রে কাহার কাহার সহিত আমাকে যুদ্ধ করিতে হইবে, এবং এই যুদ্ধে দুর্ব্বদ্ধি দুর্য্যোধনের প্রিয় সাধনেচ্ছায় যুদ্ধার্থ যাঁহারা আসিয়াছেন, সেই সকল অবস্থিত যোদ্ধাগণকে আমি নিরীক্ষণ করি ॥২২–২৩॥
সঞ্জয়ঃ উবাচ (সঞ্জয় কহিলেন) [হে] ভারত ! (হে ধৃতরাষ্ট !) গুড়াকেশেন (জিতনিদ্র অর্জ্জুন কর্ত্তৃক) এবং উক্তঃ [সন্] (এইরূপে উক্ত হইয়া) হৃষীকেশঃ (শ্রীকৃষ্ণ) উভয়োঃ সেনয়োঃ মধ্যে (উভয় সেনার মধ্যে) ভীষ্ম-দ্রোণ-প্রমুখতঃ (ভীষ্ম-দ্রোণ প্রভৃতি) সর্ব্বেষাং চ মহীক্ষিতাম্ (এবং সমুদয় রাজগণের) [পুরতঃ] (সম্মুখে) রথোত্তমম্ (উত্তম রথ) স্থাপয়িত্বা (স্থাপন পূর্ব্বক) [হে] পার্থ ! (হে অর্জ্জুন !) সমবেতান্ (সমবেত) এতান্ কুরূন্ (এই সকল কুরুপক্ষীয়গণকে) পশ্য (দেখ) ইতি উবাচ ইহা বলিয়াছিলেন) ॥২৪–২৫॥ সঞ্জয় কহিলেন—হে ভারত ! গুড়াকেশ অর্জ্জুন এইকথা বলিলে, (সর্ব্বেন্দ্রিয় নিয়ন্তা) শ্রীকৃষ্ণ, উভয় সেনার মধ্যস্থলে ভীষ্ম, দ্রোণ ও সমুদয় রাজন্যবর্গের সম্মুখে সেই উত্তম রথ স্থাপন পূর্ব্বক কহিলেন, হে পার্থ ! যুদ্ধার্থ সমবেত এই কৌরবগণকে নিরীক্ষণ কর ॥২৪–২৫॥
অথ(অনন্তর) পার্থঃ অপি (অর্জ্জুনও) তত্র (তথায়) উভয়োঃ সেনয়োঃ [মধ্যে] (উভয় সেনার মধ্যে) স্থিতান্ (অবস্থিত) পিতৄন্ (পিতৃব্য) পিতামহান্ (পিতামহ) আচার্য্যান্ (আচার্য্য) মাতুলান্ (মাতুল) ভ্রাতৄন্ (ভ্রাতা) পুত্ত্রান্ (পুত্ত্র) পৌত্ত্রান্ (পৌত্ত্র) সখীন্ (সখা) তথা শ্বশুরান্ (শ্বশুর) সুহৃদশ্চ এব (এবং সুহৃদ্গণকেই) অপশ্যৎ (দেখিতে পাইলেন) ॥২৬॥ অনন্তর পার্থ, উভয়সেনার মধ্যে অবস্থিত পিতৃস্থানীয়গণকে, পিতামহ, আচার্য্য, মাতুল, ভ্রাতা, পুত্ত্র, পৌত্ত্র, সখা, শ্বশুর ও অন্যান্য বন্ধুগণকে দেখিতে পাইলেন ॥২৬॥
সঃ কৌন্তেয়ঃ (সেই কুন্তীপুত্ত্র) [তত্র] (রণস্থলে) অবস্থিতান্ (অবস্থিত) তান্ সর্ব্বান্ বন্ধূন্ (সেই সকল বন্ধুগণকে) সমীক্ষ্য (দেখিয়া) পরয়া কৃপয়া আবিষ্টঃ (অতিশয় কৃপাপরবশ) বিষীদন্ [সন্] (ও বিষণ্ণ হইয়া) ইদম্ অব্রবীৎ (ইহা বলিয়াছিলেন) ॥২৭॥ সেই কৌন্তেয় রণস্থলে অবস্থিত সেই সমস্ত বন্ধুগণকে দেখিয়া অত্যন্ত কৃপা-পরবশ ও বিষণ্ণ হইয়া এইকথা বলিলেন ॥২৭॥
অর্জ্জুনঃ উবাচ (অর্জ্জুন কহিলেন) [হে] কৃষ্ণ ! (হে কৃষ্ণ!) যুযুৎসূন্ (যুদ্ধার্থী) ইমান্ স্বজনান্ (এই সকল স্বজনগণকে) সমবস্থিতান্ (সমবেত) দৃষ্ট্বা (দেখিয়া) মম গাত্রাণি (আমার শরীর) সীদন্তি (অবসন্ন হইতেছে) মুখং চ পরিশুষ্যতি (এবং মুখ শুষ্ক হইতেছে) ॥২৮॥ অর্জ্জুন বলিলেন, হে কৃষ্ণ! এই স্বজনগণকে যুদ্ধাভিলাষে সম্যক্ অবস্থিত দেখিয়া আমার অঙ্গসকল অবসন্ন ও মুখ পরিশুষ্ক হইতেছে ॥২৮॥
মে শরীরে (আমার শরীরে) বেপথুঃ (কম্প) চ (এবং) রোমহর্ষঃ চ (রোমাঞ্চও) জায়তে (হইতেছে) হস্তাৎ (হাত হইতে) গাণ্ডীবং (গাণ্ডীব ধনু) স্রংসতে (খসিয়া পড়িতেছে) ত্বক্ চ পরিদহ্যতে এব (এবং চর্ম্মও দগ্ধ হইতেছে) ॥২৯॥ আমার শরীর রোমাঞ্চিত ও কম্পিত হইতেছে । হস্ত হইতে গাণ্ডীব ধনু খসিয়া পড়িতেছে এবং গাত্রদাহ হইতেছে ॥২৯॥
[হে] কেশব ! (হে শ্রীকৃষ্ণ !) [অহং] (আমি) অবস্থাতুং চ (আর অবস্থান করিতেও) ন শক্নোমি (পারিতেছি না) মে মনঃ (আমার মন) ভ্রমতি ইব (যেন চঞ্চল হইতেছে) বিপরীতানি নিমিত্তানি চ (এবং কুলক্ষণযুক্ত নিমিত্ত সকলও) পশ্যামি (দেখিতেছি) ॥৩০॥ আমি আর অবস্থান করিতে পারিতেছি না । আমার চিত্ত উদ্[zero space]ভ্রান্ত হইতেছে । হে কেশব ! আমি কেবল বিপরীত ভাব-বিশিষ্ট দুর্ল্লক্ষণ সমূহ দেখিতেছি ॥৩০॥
[হে] কৃষ্ণ ! (হে কৃষ্ণ !) আহবে (যুদ্ধে) স্বজনং হত্বা (বন্ধুজনকে বিনাশ করিয়া) শ্রেয়ঃ চ (মঙ্গলও) ন অনুপশ্যামি (দেখিতেছি না) [অহং] (আমি) বিজয়ং ন কাঙ্ক্ষে (বিজয় আকাঙ্ক্ষা করি না) রাজ্যং সুখানি চ ন (রাজ্য এবং সুখও চাহি না) ॥৩১॥ এই যুদ্ধে স্বজনবধে কিছুমাত্র মঙ্গল দেখি না । হে কৃষ্ণ ! আমি বিজয় আকাঙ্ক্ষা করি না, রাজ্যও চাই না, সুখও চাই না ॥৩১॥
[হে] গোবিন্দ ! (হে শ্রীকৃষ্ণ!) যেষাম্ অর্থে (যাঁহাদের জন্য) নঃ (আমাদিগের) রাজ্যং ভোগাঃ সুখানি চ (রাজ্য, ভোগ ও সুখসকল) কাঙ্ক্ষিতং (আকাঙ্ক্ষিত) তে ইমে (সেই এই সব) আচার্য্যাঃ (আচার্য্য) পিতরঃ (পিতৃব্য) পুত্ত্রাঃ (পুত্ত্র) তথা এব ব পিতামহাঃ (এবং তদ্রূপ পিতামহ) মাতুলাঃ (মাতুল) শ্বশুরাঃ (শ্বশুর) পৌত্ত্রাঃ (পৌত্ত্র) শ্যালাঃ (শ্যালক) তথা সম্বন্ধিনঃ (এবং কুটুম্বগণ) ধনানি প্রাণান্ চ (ধন ও প্রাণ) ত্যক্ত্বা (ত্যাগ স্বীকার করিয়া) যুদ্ধে অবস্থিতাঃ (যুদ্ধে উপস্থিত হইয়াছেন) [অতএব] নঃ রাজ্যেন কিম্ (আমাদের রাজ্যেই বা কি প্রয়োজন ? ) ভোগৈঃ জীবিতেন বা কিম্ (ভোগ এবং জীবনেই বা কি প্রয়োজন ? ) [হে] মধুসূদন ! (হে মধুসূদন ! ) ঘ্নতঃ অপি (তাহাদিগের দ্বারা হত হইলেও) এতান্ হন্তুং [আমি] (ইহাদিগকে বধ করিতে) ন ইচ্ছামি (ইচ্ছা করি না) ॥৩২–৩৪॥ হে গোবিন্দ ! আমাদের রাজ্যে কি প্রয়োজন ? ভোগ সুখেরই বা কি প্রয়োজন ? যাঁহাদের জন্য আমরা রাজ্য, ভোগ ও সুখের আকাঙ্ক্ষা করি (আজ) সেই আচার্য্য, পিতৃব্য, পুত্ত্র, পিতামহ, মাতুল, শ্বশুর, পৌত্ত্র, শ্যালক ও অন্য সম্বন্ধিগণ—সকলেই, ধন ও প্রাণ পর্য্যন্ত ত্যাগ স্বীকার করিয়া এই যুদ্ধে উপস্থিত হইয়াছেন । অতএব হে মধুসূদন ! যদি ইহারা আমাকে হত্যাও করে তথাপি আমি ইহাদিগকে হনন করিতে ইচ্ছা করি না ॥৩২–৩৪॥
[হে] জনার্দ্দন ! (হে শ্রীকৃষ্ণ ! ) মহীকৃতে কিং নু (পৃথিবীর রাজত্বের নিমিত্ত কি কথা ? ) ত্রৈলোক্যরাজ্যস্য হেতোঃ অপি (ত্রিভুবনের রাজত্বের জন্যও) ধার্ত্তরাষ্ট্রান্ (দুর্য্যোধনাদিকে) নিহত্য (বধ করিয়া) নঃ (আমাদিগের) কা প্রীতিঃ স্যাৎ (কি সুখ লাভ হইবে ?) ॥৩৫॥ হে জনার্দ্দন ! পৃথিবী কেন ? ত্রৈলোক্যের আধিপত্য লাভ করিলেও এই দুর্য্যোধনাদিকে নিধন করিয়া আমাদের কি প্রীতিলাভ হইবে? ॥৩৫॥
[হে] মাধব ! (হে মাধব ! ) এতান্ আততায়িনঃ (এই সকল আততায়ীকে) হত্বা (বধ করিয়া) অস্মান্ (আমাদিগকে) পাপম্ এব (পাপই) আশ্রয়েৎ (আশ্রয় করিবে) । তস্মাৎ (অতএব) বয়ং (আমরা) স্ববান্ধবান্ (নিজ আত্মীয়) ধার্ত্তরাষ্ট্রান্ (দুর্য্যোধনাদিকে) হন্তুং (বধ করিতে) ন অর্হাঃ (পারি না) । হি (যেহেতু) স্বজনং হত্বা (স্বজনগণকে বধ করিয়া) [বয়ং] (আমরা) কথং (কি প্রকারে) সুখিনঃ (সুখী) স্যাম (হইব ? ) ॥৩৬॥ ঐ আচার্য্যাদি আততায়ী হইলেও ইঁহাদিগকে হত্যা করিলে আমাদিগকে পাপই আশ্রয় করিবে । অতএব আমাদের বান্ধব ধার্ত্তরাষ্ট্রগণকে সংহার করিতে পারি না । হে মাধব ! স্বজন হত্যা করিয়া কিরূপে আমরা সুখী হইব ॥৩৬॥
[হে] জনার্দ্দন ! (হে জনার্দ্দন ! ) যদ্যপি এতে (যদিও ইহারা) লোভোপহতচেতসঃ [সন্তঃ] (লোভাক্রান্তচিত্ত হইয়া) কুলক্ষয়কৃতং দোষং (কুলক্ষয়জনিত দোষ) মিত্রদ্রোহে চ (এবং স্বজনবিরোধে) পাতকং ন পশ্যন্তি (পাতক দেখিতেছে না) । [তথাপি] কুলক্ষয়কৃতং দোষং (কুলক্ষয়জনিত দোষ) প্রপশ্যদ্ভিঃ (সম্যক্ দর্শনকারী ) [অস্মাভিঃ] (আমরা) অস্মাৎ পাপাৎ (এই পাপ হইতে) নিবর্ত্তিতুং কথং ন জ্ঞেয়ম্ (নিবৃত্ত কেন না হইব ? ) ॥৩৭–৩৮॥ যদিও লোভহতচিত্ত ইহারা কুলক্ষয় কৃতদোষ এবং বন্ধু বিচ্ছেদ জনিত পাপ দেখিতে পাইতেছে না, তথাপি হে জনার্দ্দন ! আমরা কুলক্ষয় জনিত দোষ সম্যক্ দেখিয়াও কেন এই পাপ হইতে নিবৃত্ত হইব না ? ॥৩৭–৩৮॥
কুলক্ষয়ে (কুলক্ষয় হইলে) সনাতনাঃ (কুলপরম্পরা প্রাপ্ত) কুলধর্ম্মাঃ প্রণশ্যন্তি (কুলধর্ম্ম বিনষ্ট হইবে) ধর্ম্ম নষ্টে [সতি] (ধর্ম্ম বিনষ্ট হইলে) অধর্ম্মঃ (অধর্ম্ম) কৃৎস্নম্ উত কুলম্ (সমস্ত বংশকেই) অভিভবতি (অভিভূত করে) ॥৩৯॥ কুলক্ষয়ে সনাতন কুলধর্ম্ম বিনষ্ট হয় । ধর্ম্ম নষ্ট হইলে অবশিষ্ট সমস্ত কুলই অধর্ম্মে অভিভূত হইয়া থাকে ॥৩৯॥
[হে] কৃষ্ণ ! (হে কৃষ্ণ ! ) অধর্ম্মাভিভবাৎ (কুল অধর্ম্মে অভিভূত হইলে) কুলস্ত্রিয়ঃ (কুলস্ত্রীগণ) প্রদুষ্যন্তি (ব্যভিচারিণী হয়) । [হে] বার্ষ্ণেয় (হে বৃষ্ণিবংশধর ! ) স্ত্রীষু দুষ্টাষু [সৎসু] (কুলস্ত্রীগণ ব্যাভিচারিণী হইলে) বর্ণসঙ্করঃ (বর্ণসঙ্কর) জায়তে (জন্মে) ॥৪০॥ হে বৃষ্ণি বংশধর কৃষ্ণ ! অধর্ম্মে অভিভূত কুলস্ত্রী সকল ব্যাভিচারিণী হয়, স্ত্রীগণ ব্যভিচারিণী হইলে বর্ণসঙ্কর জন্মে ॥৪০॥
সঙ্করঃ (বর্ণসঙ্কর) কুলস্য কুলঘ্নানাং চ (কুল ও কুলনাশকগণের) নরকায় এব [ভবতি] (নরকের নিমিত্তই হইয়া থাকে) । এষাং (ইহাদিগের) লুপ্তপিণ্ডোদকক্রিয়াঃ পিতরঃ (পিতৃগণ পিণ্ড ও তর্পণাদি কার্য্য লোপ হেতু) পতন্তি হি (নিশ্চয়ই পতিত হন) ॥৪১॥ বর্ণসঙ্কর কুলের ও কুলনাশকগণের নরকপ্রাপ্তির কারণ হয়, এবং ইহাদের পিতৃগণ পিণ্ড এবং তর্পণাদির লোপ হেতু নিশ্চিতই নরকে পতিত হন ॥৪১॥
কুলঘ্নানাং (কুলনাশকগণের) এতৈঃ (এই সকল) বর্ণসঙ্করকারকৈঃ (বর্ণসঙ্করকারক) দোষৈঃ (দোষে) শাশ্বতাঃ (সনাতন) জাতি-ধর্ম্মাঃ কুলধর্ম্মাশ্চ (বর্ণধর্ম্ম ও কুলধর্ম্ম) উৎসাদ্যন্তে (উৎসন্ন হইয়া যায়) ॥৪২॥ এইসব বর্ণসঙ্করকারী কুলঘ্নগণের দোষে সনাতন কুলধর্ম্ম এবং জাতিধর্ম্ম উচ্ছন্ন হইয়া যায় ॥৪২॥
[হে] জনার্দ্দন ! (হে জনার্দ্দন ! ) উৎসন্নকুলধর্ম্মাণাং (যাহাদের কুলধর্ম্ম বিনষ্ট হয়) [তেষাং] মনুষ্যাণাং (সেই সকল মনুষ্যের) নিয়তং (চিরকাল) নরকে বাসঃ (নরকে বাস) ভবতি (হয়), ইতি (এরূপ) [বয়ং] অনুশুশ্রুম (আমরা শুনিয়াছি) ॥৪৩॥ হে জনার্দ্দন ! শুনিয়াছি যে সকল মনুষ্যের কুলধর্ম্ম, জাতিধর্ম্ম ও আশ্রমধর্ম্ম উৎসন্ন হইয়া যায়, তাহাদিগকে নিয়ত নরকে বাস করিতে হয় ॥৪৩॥
অহোবত (হায় ! কি দুঃখের বিষয়) বয়ং (আমরা) মহৎ পাপং (মহাপাপ) কর্ত্তুং (করিতে) ব্যবসিতাঃ (কৃতনিশ্চয় হইয়াছি) যৎ (যেহেতু) রাজ্যসুখলোভেন (রাজ্যসুখ লোভে) স্বজনং হন্তুং (আত্মীয়-বধে) উদ্যতাঃ (উদ্যত হইয়াছি) ॥৪৪॥ হায় ! আমরা কি মহৎ পাপ করিতে কৃতসঙ্কল্প হইয়াছি, যেহেতু তুচ্ছ রাজ্যসুখের লোভে স্বজন বধে উদ্যত হইয়াছি ॥৪৪॥
যদি (যদি) শস্ত্রপাণয়ঃ (অস্ত্রধারী) ধার্ত্তরাষ্ট্রাঃ (ধৃতরাষ্ট্রপুত্ত্রগণ) অপ্রতীকারং (প্রতীকার রহিত) অশস্ত্রং (ও শস্ত্রহীন) মাং (আমাকে) রণে (যুদ্ধে) হন্যুঃ (বধ করে) তৎ (তবে তাহাই) মে (আমার পক্ষে) ক্ষেমতরং (অধিকতর হিতকর) ভবেৎ (হইবে) ॥৪৫॥ যদি অস্ত্রধারী ধৃতরাষ্ট্র-পুত্ত্রগণ প্রতীকার-বিমুখ ও অস্ত্রহীন অবস্থায় আমাকে এই রণস্থলে হত্যা করে, তাহাই আমার পক্ষে মঙ্গলজনক হইবে ॥৪৫॥
সঞ্জয়ঃ উবাচ (সঞ্জয় কহিলেন) অর্জ্জুনঃ (অর্জ্জুন) এবং উক্ত্বা (এইরূপ বলিয়া) সংখ্যে (যুদ্ধক্ষেত্রে) সশরং চাপং (শরের সহিত ধনুঃ) বিসৃজ্য (পরিত্যাগপূর্ব্বক) শোকসংবিগ্নমানসঃ (শোকাকুল চিত্ত হইয়া) রথোপস্থে (রথোপরি) উপাবিশৎ (উপবিষ্ট হইলেন) ॥৪৬॥ সঞ্জয় কহিলেন—অর্জ্জুন এই বলিয়া সেই সংগ্রাম স্থলে ধনুর্ব্বাণ পরিত্যাগ পূর্ব্বক শোকাকুলিত চিত্তে রথোপরি উপবেশন করিলেন ॥৪৬॥
ইতি প্রথম অধ্যায়ের অন্বয় সমাপ্ত ॥ ইতি সৈন্যদর্শন নামক প্রথম অধ্যায় সমাপ্ত ॥
—···—
|
সূচিপত্র: মঙ্গলাচরণম্ গ্রন্থ-পরিচয় প্রকাশকের নিবেদন ১ সৈন্য-দর্শন ২ সাংখ্যযোগ ৩ কর্ম্মযোগ ৪ জ্ঞানযোগ ৫ কর্ম্মসন্ন্যাসযোগ ৬ ধ্যানযোগ ৭ জ্ঞানবিজ্ঞানযোগ ৮ তারকব্রহ্মযোগ ৯ রাজগুহ্যযোগ ১০ বিভূতিযোগ ১১ বিশ্বরূপ-দর্শনযোগ ১২ ভক্তিযোগ ১৩ প্রকৃতিপুরুষ-বিবেক-যোগ ১৪ গুণত্রয়-বিভাগ-যোগ ১৫ পুরুষোত্তমযোগ ১৬ দৈবাসুরসম্পদ্-বিভাগ যোগ ১৭ শ্রদ্ধাত্রয়-বিভাগ-যোগ ১৮ মোক্ষযোগ গীতামাহাত্ম্যম্ |
||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
বৃক্ষসম ক্ষমাগুণ করবি সাধন । প্রতিহিংসা ত্যজি আন্যে করবি পালন ॥ জীবন-নির্ব্বাহে আনে উদ্বেগ না দিবে । পর-উপকারে নিজ-সুখ পাসরিবে ॥ | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
© Sri Chaitanya Saraswat Math, Nabadwip, West Bengal, India. For any enquiries please visit our contact page. |