আমাদের শ্রীগুরুপরম্পরা :
শ্রীশ্রীল ভক্তিনির্ম্মল আচার্য্য মহারাজ শ্রীশ্রীল ভক্তিসুন্দর গোবিন্দ দেবগোস্বামী মহারাজ শ্রীশ্রীল ভক্তিরক্ষক শ্রীধর দেবগোস্বামী মহারাজ ভগবান্ শ্রীশ্রীল ভক্তি সিদ্ধান্ত সরস্বতী গোস্বামী ঠাকুর
              প্রভুপাদ
“শ্রীচৈতন্য-সারস্বত মঠে সূর্যাস্ত কখনই হয় না” :
আমাদের মঠের পরিচয় ও বৈশিষ্ট্য
 
আমাদের সম্পর্কে শ্রীউপদেশ শ্রীগ্রন্থাগার শ্রীগৌড়ীয় পঞ্জিকা ছবি ENGLISH
 

শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা


গ্রন্থ-পরিচয়

 

   বন্দে শ্রীগুরুগৌরাঙ্গৌ রাধাগোবিন্দ-সুন্দরৌ ।
   সগণৌ গীয়তে চাথ গীতা-গূঢ়ার্থ-গৌরবম্ ॥

     শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা-গ্রন্থ সুধী-সমাজে সুপরিচিত । অতএব এখানে গ্রন্থ সম্পাদকের অর্থ-পদ্ধতির পরিচিতিই প্রদত্ত হইতেছে । সম্পাদক শ্রীচৈতন্যাম্নায়-বিচারধারার অনুগত । সুতরাং পাঠকবর্গ বিবেচনা করিবেন যে, বর্ত্তমান সংস্করণ শ্রীগৌড়ীয় আচার্য্য মহাজন শ্রীবিশ্বনাথ ও শ্রীবলদেব এবং শ্রীল ভক্তিবিনোদ ঠাকুর কৃত শ্রীগীতা-ভাষ্য আলোচনা অবলম্বনে প্রকাশিত । শ্রীগুরুপাদপদ্ম ওঁ বিষ্ণুপাদ শ্রীল ভক্তিসিদ্ধান্ত সরস্বতী গোস্বামী প্রভুপাদের অনুকম্পা-স্ফূর্ত্ত ও পূর্ব্বোক্ত মহাজনগণের সঙ্কেত-লব্ধ কিছু কিছু নূতন অর্থের আলোক-সম্পাত দ্বারা স্থানে স্থানে ইহার গূঢ়ার্থ উদ্ঘাটিত হইয়াছে । বিশেষতঃ শ্রীবিশ্বনাথপাদ কথিত শ্রীগীতার দশম অধ্যায়ের চতুঃশ্লোকীর অর্থ সম্বন্ধে ভক্ত পাঠক একটু লক্ষ্য করিলে এই বৈশিষ্ট্য অনুভব করিবেন ।
     সাধারণ পরিচয়ে শ্রীগীতা একখানি অপূর্ব্ব ধর্ম্মবিজ্ঞান-গ্রন্থ । শ্রীগীতার ভাষা—সরল ও সুন্দর ; ভাব—গম্ভীর, ব্যাপক ও মৌলিক ; বিচার—সংক্ষিপ্ত, সুস্পষ্ট ও নিরপেক্ষ ; যুক্তি—দৃঢ় ও স্বাভাবিক । শ্রীগীতার—প্রারম্ভ, উপসংহার, আলোচনা, সমালোচনা, বিশ্লেষণ, সংশ্লেষণ, ও পরিবেশন কৌশল অতি অপূর্ব্ব ও হৃদয়গ্রাহী । শ্রীগীতা অলসের উদ্যম, ভীরুর সাহস, নিরাশের আশা ও মৃতের সঞ্জীবনী । শ্রীগীতা কি বৈপ্লবিক, কি তান্ত্রিক, কি উদ্যমী, কি উদাসীন, কি নির্ব্বাণবাদী, কি লীলাবাদী—সকলেরই সংগ্রহক ও পালক । অত্যন্ত স্থূলদর্শী নাস্তিক হইতে আরম্ভ করিয়া পরম সদ্ধর্ম্ম-পরায়ণ পর্য্যন্ত—সর্ব্ব শ্রেণীর দার্শনিকগণের বিচারের সারাংশ অতি বলিষ্ঠ ও সুস্পষ্ট যুক্তির সহিত ইহাতে উল্লিখিত হইয়াছে । কর্ম্মী, জ্ঞানী, যোগী ও ভগবদ্ভক্ত সম্প্রদায় সকলেই নিজ নিজ বিচার সমূহের নির্য্যাস—পূর্ণ ও উজ্জ্বল ভাবে ইহাতে দেখিতে পান ও তজ্জন্য সকলেই এই গ্রন্থরাজকে আদর করিয়া থাকেন । আর্য্য বেদোপনিষদ্গণের উপদেশ সমূহের সারমর্ম্ম সাক্ষাৎভাবে ও একটু লক্ষ্য করিলে অন্যান্য অনার্য্য ধর্ম্মবাচ্য মত সমূহেরও সারকথা এই গ্রন্থে পরিদৃষ্ট হয় । নিষ্কাম শাস্ত্রীয়-কর্ম্মের বিহিত অনুষ্ঠানে জ্ঞানোদয়ে চিত্তশুদ্ধি ও তৎফলে আত্মজ্ঞান বা বস্তুস্বরূপজ্ঞান বা চিদুপলব্ধি এবং এই বিশুদ্ধ জ্ঞানের পরম পরিপাকে আনন্দময় ভূমিকায় চেতনে প্রেমসেবার সন্ধান গীতা-তাৎপর্য্যে পাওয়া যায় । সম্বন্ধজ্ঞান-বিচারে শ্রীগীতা আকর-সত্যে চেতনব্যক্তিত্ব দর্শনের উপদেশ করিয়াছেন, প্রয়োজন বিচারে পরতত্ত্বানুশীলনময় ভাবসমূহকেই শ্রেষ্ঠ প্রাপ্তিরূপে উল্লেখ করিয়াছেন এবং অভিধেয় বিচারে প্রথম সোপানে ভগবদুদ্দেশ্যে কর্ম্ম ও তৎপরে ভগবদনুভূতি-সাপেক্ষ্য আত্মানুশীলনরূপ জ্ঞান এবং সর্ব্বশেষ সমস্ত চেষ্টা বিসর্জনে শরণাগতি বা শুদ্ধ শ্রদ্ধার আশ্রয়ে সিদ্ধ-স্বরূপে শ্রীভগবানের প্রেমসেবা অর্থাৎ সাধ্যেই সাধনের পর্য্যবসান—ইহাই শিক্ষা দিয়াছেন।
     শ্রীগীতা দেবতান্তর-উপাসনা বা কর্ম্ম-জ্ঞানাদি উপায় সমূহ বা কাম-মোক্ষাদি উপেয় সমূহের পরস্পর পার্থক্য ও বৈশিষ্ট্য প্রদর্শন স্পষ্ট ভাবেই করিয়াছেন । সুতরাং যাঁহারা সর্ব্বপ্রকার সাধ্য-সাধনাদি একই বলিয়া বিভ্রান্তি সৃষ্টি করেন, শ্রীগীতা—‘যো যচ্ছ্রদ্ধঃ স এব সঃ’ বিচারে তারতম্য অবধারণে উহা নিরস্ত করিয়াছেন—ইহা সুধীজন লক্ষ্য করিতে পারেন । এতৎপ্রসঙ্গে ‘তপস্বিভ্যোঽধিকো যোগী জ্ঞানিভ্যোঽপি মতোঽধিকঃ, কর্ম্মিভ্যশ্চাধিকো যোগী … যোগিনামপি সর্ব্বেষাং মদ্গতেনান্তরাত্মনা, শ্রদ্ধাবান্ ভজতে যো মাং স মে যুক্ততমো মতঃ শ্লোকও বিশেষ প্রণিধান যোগ্য । ত্যাগের নিন্দা ও নিরর্থকতা ঘোষণায় শ্রীগীতার দান সুদৃঢ় ও সুমৌলিক । কর্ম্মত্যাগের পরিবর্ত্তে কর্ম্মযোগ বা নিষ্কাম ভগবদর্পিত কর্ম্ম ও চরমে শরণাগতিমূলক ভগবৎ-প্রেরণায় কর্ম্ম বা ভক্তিই গীতার সর্ব্বশেষ ও শ্রেষ্ঠ উপদেশ । মোট কথা বিশেষ সূক্ষ্মানুধ্যানে শ্রীগীতা পরম ভক্তিদায়ক গ্রন্থরাজ । এই ভক্তি, পূর্ণতম প্রকাশে প্রেমভক্তি স্বরূপে আনন্দসুন্দর মূর্ত্তি শ্রীকৃষ্ণতত্ত্বেই একমাত্র প্রযোজ্য । “সর্ব্বধর্ম্মান্ পরিত্যজ্য মামেকং শরণং ব্রজ” এই মহাবাণী নিনাদ প্রসঙ্গে উহাতে সঙ্কীর্ত্তন ও ভাব-সেবাস্বরূপের গুহ্য , গুহ্যতর ও সর্ব্বগুহ্যতম উপদেশ শরণাগতি সহকারে সর্ব্বতোভাবে শ্রীভগবদনুশীলনময় জীবনের সর্ব্বোত্তমতার বিষয়-শ্রীগীতা কীর্ত্তন করিয়াছেন । কলিযুগপাবনাবতারী শ্রীচৈতন্যচন্দ্রের চরণচারণানুগগণের ইহাই সুবিচিন্তিত ও সৎপরম্পরা প্রাপ্ত সমীচীন অভিমত । ইতি শ্রীকৃষ্ণায় সমর্পিতমস্তু ।—

গ্রন্থ-সম্পাদক—
ত্রিদণ্ডিভিক্ষু—শ্রীভক্তিরক্ষক শ্রীধর
শ্রীচৈতন্য সারস্বত মঠ, নবদ্বীপ

শ্রীজন্মাষ্টমী বঙ্গাব্দ ১৩৬৮ সাল

 

 

 

 

 

———

 

 

← প্রকাশকের নিবেদন ১ সৈন্য-দর্শন →

 

সূচিপত্র:
মঙ্গলাচরণম্
গ্রন্থ-পরিচয়
প্রকাশকের নিবেদন
১ সৈন্য-দর্শন
২ সাংখ্যযোগ
৩ কর্ম্মযোগ
৪ জ্ঞানযোগ
৫ কর্ম্মসন্ন্যাসযোগ
৬ ধ্যানযোগ
৭ জ্ঞানবিজ্ঞানযোগ
৮ তারকব্রহ্মযোগ
৯ রাজগুহ্যযোগ
১০ বিভূতিযোগ
১১ বিশ্বরূপ-দর্শনযোগ
১২ ভক্তিযোগ
১৩ প্রকৃতিপুরুষ-বিবেক-যোগ
১৪ গুণত্রয়-বিভাগ-যোগ
১৫ পুরুষোত্তমযোগ
১৬ দৈবাসুরসম্পদ্-বিভাগ যোগ
১৭ শ্রদ্ধাত্রয়-বিভাগ-যোগ
১৮ মোক্ষযোগ
গীতামাহাত্ম্যম্
বৃক্ষসম ক্ষমাগুণ করবি সাধন । প্রতিহিংসা ত্যজি আন্যে করবি পালন ॥ জীবন-নির্ব্বাহে আনে উদ্বেগ না দিবে । পর-উপকারে নিজ-সুখ পাসরিবে ॥