| |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
|
|||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা
অষ্টাদশোঽধ্যায়ঃ মোক্ষযোগ
অর্জ্জুনঃ উবাচ (অর্জ্জুন বলিলেন) [হে] মহাবাহো ! (হে মহাবীর !) [হে] হৃষীকেশ ! (হে ইন্দ্রিয়াধীশ !) [হে] কেশিনিসূদন ! (হে কেশিদৈত্যঘাতন !) সন্ন্যাসস্য (সন্ন্যাসের) ত্যাগস্য চ (এবং ত্যাগের) তত্ত্বম্ (স্বরূপ) পৃথক্ (পৃথক্রূপে) বেদিতুম্ (জানিতে) ইচ্ছামি (ইচ্ছা করি) ॥১॥ অর্জ্জুন বলিলেন—হে মহাবাহো ! হে হৃষীকেশ ! হে কেশিনিসূদন ! আমি সন্ন্যাস ও ত্যাগের প্রকৃত তত্ত্ব পৃথক্ রূপে জানিতে ইচ্ছা করি ॥১॥
শ্রীভগবান্ উবাচ (শ্রীভগবান্ বলিলেন) বিচক্ষণাঃ (নিপুণ) কবয়ঃ (পণ্ডিতগণ) কাম্যানাং (সকাম) কর্ম্মণাং (কর্ম্মসমূহের) ন্যাসং (পরিত্যাগকে) সন্ন্যাসং (সন্ন্যাস বলিয়া) বিদুঃ (জানেন) সর্ব্বকর্ম্মফলত্যাগং (নিত্য, নৈমিত্তিক ও কাম্য সমুদয় কর্ম্মের ফল ত্যাগকেই) ত্যাগং (ত্যাগ) প্রাহুঃ (বলিয়া থাকেন) ॥২॥ শ্রীভগবান্ কহিলেন—বিচক্ষণ পণ্ডিতগণ কাম্যকর্ম্মসমূহের পরিত্যাগকে—সন্ন্যাস, আর (নিত্যনৈমিত্তিক ও কাম্য) সকল প্রকার কর্ম্মের ফল-ত্যাগকে—ত্যাগ বলিয়া থাকেন ॥২॥
একে মনীষিণঃ (সাংখ্যবাদী কোন কোন পণ্ডিতগণ) কর্ম্ম (কর্ম্মমাত্রই) দোষবৎ (হিংসাদি দোষযুক্ত) ইতি (বলিয়া) ত্যাজ্যং (পরিত্যাজ্য) প্রাহুঃ (বলেন) ; অপরে চ (এবং অপর মীমাংসকগণ) যজ্ঞদানতপঃকর্ম্ম (যজ্ঞ, দান ও তপস্যা প্রভৃতি শাস্ত্রোক্ত কর্ম্ম) ন ত্যাজ্যং (ত্যাজ্য নহে) ইতি [প্রাহুঃ] (এইরূপ বলিয়া থাকেন) ॥৩॥ কোন কোন পণ্ডিত (সাংখ্যমতানুসারী) কর্ম্মমাত্রই (হিংসাদি দোষযুক্ত বলিয়া) পরিত্যাজ্য বলেন ; আবার কেহ কেহ (মীমাংসকগণ) বলেন যজ্ঞ, দান ও তপস্যাদি (শাস্ত্রোক্ত) কর্ম্ম ত্যাজ্য নহে ॥৩॥
[হে] ভরতসত্তম ! (হে ভরতশ্রেষ্ঠ !) তত্র (সেই) ত্যাগে (ত্যাগ বিষয়ে) মে (আমার) নিশ্চয়ং (সিদ্ধান্ত) শৃণু (শ্রবণ কর) । [হে] পুরুষব্যাঘ্র ! (হে পুরুষপ্রবর !) হি (যেহেতু) ত্যাগঃ (ত্যাগ) ত্রিবিধঃ (তিনপ্রকার) সংপ্রকীর্ত্তিতঃ (কথিত হইয়াছে) ॥৪॥ হে ভরতশ্রেষ্ঠ ! সেই ত্যাগ-বিষয়ে আমার সিদ্ধান্ত শ্রবণ কর । হে পুরুষপ্রবর ! এই ত্যাগ তিন প্রকার—ইহা সুষ্পষ্ট কথিত হইয়াছে ॥৪॥
যজ্ঞদানতপঃকর্ম্ম (যজ্ঞ, দান ও তপস্যা প্রভৃতি কর্ম্ম) ন ত্যাজ্যং (ত্যাজ্য নহে), তৎ (তাহা) কার্য্যম্ এব (অবশ্য কর্ত্তব্য) [যতঃ] (যেহেতু) যজ্ঞঃ (যজ্ঞ) দানং (দান) তপঃ চ (ও তপস্যা) মনীষিণাম্ (বিবেকিগণের) পাবনানি এব (চিত্ত-শুদ্ধিকরই) [ভবন্তি] (হইয়া থাকে) ॥৫॥ যজ্ঞ, দান ও তপস্যা প্রভৃতি কর্ম্ম—ত্যাজ্য নহে, তাহা অবশ্যই কর্ত্তব্য । কারণ যজ্ঞ, দান ও তপস্যাদি বিবেকী ব্যক্তিগণের চিত্তশুদ্ধি করে ॥৫॥
[হে] পার্থ ! (হে কুন্তীনন্দন !) এতানি (এই) কর্ম্মাণি অপি তু (কর্ম্মগুলিও কিন্তু) সঙ্গং (আসক্তি) ফলানি চ (ও ফল কামনা) ত্যক্ত্বা (পরিত্যাগ করিয়া) কর্ত্তব্যানি (শুধু কর্ত্তব্য বোধে করা আবশ্যক), ইতি (ইহাই) মে (আমার) নিশ্চিতং (স্থির) উত্তমম্ (উত্তম) মতম্ (সিদ্ধান্ত) ॥৬॥ হে পার্থ ! এই সমুদয় কর্ম্মও আসক্তি ও ফল কামনা পরিত্যাগপূর্ব্বক কর্ত্তব্য—ইহাই আমার নিশ্চিত উত্তম সিদ্ধান্ত জানিবে ॥৬॥
তু (কিন্তু) নিয়তস্য (নিত্য) কর্ম্মণঃ (কর্ম্মের) সন্ন্যাসঃ (পরিত্যাগ) ন উপপদ্যতে (যুক্তিসঙ্গত নহে) ; মোহাৎ (মোহবশতঃ) তস্য (সেই নিত্যকর্ম্মের) পরিত্যাগঃ (পরিত্যাগকে) তামসঃ (তামসিক) পরিকীর্ত্তিতঃ (বলা হয়) ॥৭॥ নিত্যকর্ম্মের পরিত্যাগ কখনও যুক্তিযুক্ত নহে ; মোহবশতঃ সেই নিত্যকর্ম্ম পরিত্যাগ করিলে উহাকে তামসিক বলা হয় ॥৭॥
[যঃ] (যে ব্যক্তি) যৎকর্ম্ম (সেই নিত্যকর্ম্মও) দুঃখম্ এব (কেবল দুঃখই) ইতি [মত্বা] (ইহা মনে করিয়া) কায়ক্লেশভয়াৎ (শারীরিক কষ্টের ভয়ে) ত্যজেৎ (ত্যাগ করে), সঃ (সেই) রাজসং (রাজসিক) ত্যাগং (ত্যাগ) কৃত্বা (করিয়া) ত্যাগফলং (ত্যাগের ফল—জ্ঞান) ন লভেৎ এব (কখনও লাভ করিতে পারে না) ॥৮॥ যে ব্যক্তি ‘দুঃখজনক’ মনে করিয়া শারীরিক কষ্টের ভয়ে নিত্যকর্ম্ম পরিত্যাগ করে, সে এই রাজসিক ত্যাগ করিয়া ত্যাগের ফল (জ্ঞান) প্রাপ্ত হয় না ॥৮॥
[হে] অর্জ্জুন ! (হে অর্জ্জুন !) সঙ্গং (আসক্তি) ফলং এব চ (ও ফলকামনাই) ত্যক্ত্বা (ত্যাগ করিয়া) কার্য্যম্ ইতি এব (অবশ্য কর্ত্তব্য বোধেই) যৎ (যে) নিয়তং (নিত্য) কর্ম্ম (কর্ম্মের) ক্রিয়তে (অনুষ্ঠান হয়) সঃ (উহাই) ত্যাগঃ সাত্ত্বিকঃ (সাত্ত্বিক ত্যাগ বলিয়া) [মে] (আমার) মতঃ (অভিমত ) ॥৯॥ হে অর্জ্জুন ! কর্ত্তব্য বোধে নিত্যকর্ম্মের অনুষ্ঠান করিয়াও যিনি আসক্তি ও ফলকামনা পরিত্যাগ করেন, তাঁহার ত্যাগই সাত্ত্বিক বলিয়া আমার অভিমত ॥৯॥
সত্ত্বসমাবিষ্টঃ (সত্ত্বগুণ সম্পন্ন) মেধাবী (তীক্ষ্ণবুদ্ধি) ছিন্নসংশয়ঃ (সন্দেহ রহিত) ত্যাগী (সাত্ত্বিক ত্যাগী ব্যক্তি) অকুশলং (দুঃখপ্রদ) কর্ম্ম (কর্ম্মের প্রতি) ন দ্বেষ্টি (বিদ্বেষ করেন না), কুশলে (সুখদায়ক কর্ম্মেও ) ন অনুষজ্জতে (আসক্ত হন না) ॥১০॥ সুতীক্ষ্ণবুদ্ধি, নিঃসংশয়, সত্ত্বগুণ-সম্পন্ন, ত্যাগী পুরুষ—দুঃখদায়ক কর্ম্মে বিদ্বেষ বা সুখজনক কর্ম্মে আসক্তি করেন না ॥১০॥
দেহভৃতা (দেহধারী জীব) অশেষতঃ (নিঃশেষরূপে) কর্ম্মাণি (কর্ম্মসমূহ) ত্যক্তুং (ত্যাগ করিতে) ন শক্যং হি (পারেই না) । তু (কিন্তু) যঃ (যিনি) কর্ম্মফলত্যাগী (কর্ম্মফল ত্যাগকারী) সঃ (তিনিই) ত্যাগী (প্রকৃত ত্যাগী) ইতি (এইরূপ) অভিধীয়তে (কথিত হন) ॥১১॥ দেহধারী জীবের পক্ষে নিঃশেষে সমস্ত কর্ম্ম পরিত্যাগ—সম্ভবই হয় না । সুতরাং যিনি কর্ম্মসমূহের ফলমাত্র ত্যাগী—তিনিই বাস্তবিক ত্যাগী বলিয়া অভিহিত হন ॥১১॥
অত্যাগিনাং (সকাম ব্যক্তিগণের) প্রেত্য (দেহত্যাগের পর) অনিষ্টম্ (নারকিত্ব) ইষ্টং (দেবত্ব) মিশ্রং চ (ও মনুষ্যত্ব) কর্ম্মণঃ (কর্ম্মের) ইতি (এই) ত্রিবিধং (তিন প্রকার) ফলম্ (ফল) ভবতি (হইয়া থাকে), তু (কিন্তু) সন্ন্যাসিনাং (সন্ন্যাসিগণের) ক্বচিৎ (কখনও) ন [ভবতি] (হয় না) ॥১২॥ সকাম ব্যক্তিদের মৃত্যুর পর ভাল, মন্দ ও মিশ্র—এই তিন প্রকার কর্ম্মফল লাভ হয়, কিন্তু সন্ন্যাসিগণকে কখনও (এই কর্ম্ম ফল) স্পর্শ করে না ॥১২॥
[হে] মহাবাহো ! (হে মহাবীর !) সাংখ্যে (বেদান্ত শাস্ত্রে) কৃতান্তে (কর্ম্মবিষয়ক সিদ্ধান্ত) প্রোক্তানি (কথিত) সর্ব্বকর্ম্মণাম্ (সমস্ত কর্ম্মের) সিদ্ধয়ে (নিষ্পত্তির প্রতি) এতানি (এই) পঞ্চ (পাঁচটি) কারণানি (কারণ) মে (আমার নিকট) নিবোধ (অবগত হও) ॥১৩॥ হে মহাবাহো ! সাংখ্য বা বেদান্তশাস্ত্রে কথিত কর্ম্ম-সমূহের সিদ্ধির এই কারণপঞ্চক আমার নিকট অবহত হও ॥১৩॥
অধিষ্ঠানং (দেহ) তথা (এবং) কর্ত্তা (চিৎ ও জড়ের গ্রন্থিরূপ অহঙ্কার) পৃথগ্বিধম্ (পৃথক্ পৃথক্) করণং চ (চক্ষুঃকর্ণাদি ইন্দ্রিয়গণ) বিবিধাঃ (নানাবিধ) পৃথক্ চ (অথচ বিভিন্ন) চেষ্টা (প্রাণ ও অপানাদির ব্যাপার) অত্র পঞ্চ (এই পাঁচটি) দৈবং এব চ (অন্তর্য্যামীই) ॥১৪॥ শরীর, (চিজ্জেড়র গ্রন্থিরূপ) অহঙ্কার, পৃথক পৃথক ইন্দ্রিয়, বিভিন্ন চেষ্টা ও দৈব অর্থাৎ জগদ্ব্যাপার নিয়ামকের সহায়তা—এই পাঁচটী (কর্ম্ম সমূহের কারণ) ॥১৪॥
নর (মনুষ্য) শরীরবাঙ্মনোভিঃ (কায়, বাক্য ও মনের দ্বারা) যৎ (যে) ন্যায্যং (ন্যায়) বিপরীতং বা (অথবা অন্যায়) কর্ম্ম (কর্ম্মের) প্রারভতে (অনুষ্ঠান করে) এতে (এই) পঞ্চ (পাঁচটি) তস্য (তাহার) হেতবঃ (কারণ) ॥১৫॥ মনুষ্য—কায়, মন ও বাক্যের দ্বারা যে কার্য্য করে তাহা ন্যায্য বা অন্যায্য যাহাই হউক—এই পাঁচটীই তাহার কারণ ॥১৫॥
এবং (এইরূপ) সতি (অবস্থায়) তত্র (সেই কর্ম্ম সম্পাদন বিষয়ে) যঃ (যে ব্যক্তি) তু (কিন্তু) কেবলং (কেবল মাত্র) আত্মানং (জীবাত্মাকেই) কর্ত্তারম্ (কর্ত্তা বলিয়া) পশ্যতি (দর্শন করে), সঃ (সেই ব্যক্তি) অকৃতবুদ্ধিত্বাৎ (অমার্জ্জিত বুদ্ধিবশতঃ) দুর্ম্মতিঃ (দুষ্টবুদ্ধি) [সঃ] ন পশ্যতি (সে যথার্থ দেখিতেই পায় না) ॥১৬॥ এইরূপ অবস্থায় যে কেবল আপনাকেই কর্ত্তা বলিয়া দেখে, অযুক্ত বিচার হেতু সেই দুষ্টবুদ্ধি দেখিতেই পায় না ॥১৬॥
যস্য (যাঁহার) অহং কৃতঃ (অহং বুদ্ধি প্রসূত) ভাবঃ (মনোভাব) ন (নাই), যস্য (যাঁহার) বুদ্ধিঃ (বুদ্ধি) ন লিপ্যতে (কর্ম্মফলে আসক্ত হয় না), সঃ (তিনি) ইমান্ (এই সমস্ত) লোকান্ (লোককে) হত্বা অপি (বধ করিয়াও) ন হন্তি (যথার্থতঃ কাহাকেও হনন করেন না) ন নিবধ্যতে (এবং কর্ম্মফলেও আবদ্ধ হন না) ॥১৭॥ যিনি (দ্বিতীয়াভিনিবেশজ) অহঙ্কারের বশীভূত নহেন, এবং যাঁহার বুদ্ধি (জগদ্ব্যাপারে) লিপ্ত নহে—তিনি এই সমুদায় লোককে হত্যা করিয়াও—হত্যা করেন না বা হত্যাকারীর দোষভাক্ হন না ॥১৭॥
জ্ঞানং (জ্ঞান) জ্ঞেয়ং (জ্ঞাতব্য বস্তু) পরিজ্ঞাতা (ও যিনি জানেন) [ইতি] (এই) ত্রিবিধা (তিন প্রকার) কর্ম্ম চোদনা (কর্ম্মপ্রবৃত্তির হেতু), করণং (সাধন) কর্ম্ম (অভিলষিত বিষয়) কর্ত্তা (ও অনুষ্ঠাতা) ইতি (এই) ত্রিবিধঃ (তিনপ্রকার) কর্ম্মসংগ্রহঃ (কার্য্যের আশ্রয়) ॥১৮॥ জ্ঞান, জ্ঞেয় ও জ্ঞাতা—এই তিনটি কর্ম্মপ্রবৃত্তির হেতু ; করণ, কর্ম্ম ও কর্ত্তা—এই তিনটী কর্ম্মের আশ্রয় ॥১৮॥
গুণসংখ্যানে (সাংখ্যশাস্ত্রে) জ্ঞানং (জ্ঞান) কর্ম্ম চ (কর্ম্ম) কর্ত্তা চ (ও কর্ত্তা) [এতে] (ইহারা প্রত্যেকে) গুণভেদতঃ (সাত্ত্বিকাদি গুণ-ভেদানুসারে) ত্রিধা এব (তিন প্রকারই) প্রোচ্যতে (কথিত হইয়াছে) ; তানি অপি (সেই সমুদয়ও) যথাবৎ (যথাযথভাবে) শৃণু (শ্রবণ কর) ॥১৯॥ সাংখ্যশাস্ত্রে জ্ঞান, কর্ম্ম ও কর্ত্তা—ইহারা প্রত্যেকে (সাত্ত্বিকাদি) গুণ-ভেদে তিন প্রকারই নির্ণীত হইয়াছে, সেই সকলও যথাযথরূপে শ্রবণ কর ॥১৯॥
যেন (যে জ্ঞান দ্বারা) বিভক্তেষু (পরস্পর ভিন্ন) সর্ব্বভূতেষু (সকল জীবের মধ্যে) একং (এক) অবিভক্তং (অখণ্ড) অব্যয়ম্ (অবিনশ্বর) ভাবম্ (জীবাত্মাকে) ঈক্ষতে (দর্শন করা যায়), তৎ (সেই) জ্ঞানং (জ্ঞানকে) সাত্ত্বিকম্ (সাত্ত্বিকজ্ঞান বলিয়া) বিদ্ধি (জানিবে) ॥২০॥ যে জ্ঞান দ্বারা পরস্পর পৃথক্ সমস্ত প্রাণিতে বর্ত্তমান এক অবিনশ্বর ও অখণ্ড চিন্ময় তত্ত্বকে (জীবরূপ আমার পরাশক্তি তত্ত্বকে) দর্শন করা যায়, সেই জ্ঞানকেই সাত্ত্বিক জ্ঞান বলা হয় ॥২০॥
যৎ (যে) জ্ঞানং (জ্ঞান), সর্ব্বেষু (সকল) ভূতেষু (প্রাণীমধ্যে) পৃথক্ত্বেন (পৃথক্ পৃথক্) পৃথগ্বিধান (নানাচেষ্টাযুক্ত) নানাভাবান্ (বহু পৃথক্ তত্ত্ব) বেত্তি (অনুভব করে) তৎ (সেই) জ্ঞানং তু (জ্ঞানকে) রাজসম্ (রাজসিক বলিয়া) বিদ্ধি (জানিবে) ॥২১॥ যে জ্ঞান—প্রাণী জগতে (পরস্পর স্বার্থ সংঘাতময়) পৃথক পৃথক নানা চেষ্টাযুক্ত, (স্বতন্ত্র) বহু পৃথক তত্ত্ব অনুভব করে—তাহাকে রাজস জ্ঞান বলে ॥২১॥
যৎ তু (আর যে জ্ঞান) একস্মিন্কার্য্যে (কোন খণ্ড বিষয়ে) কৃৎস্নবৎ (পূর্ণবৎ) সক্তম্ (আকৃষ্ট) অহৈতুকম্ (হেতু রহিত) অতক্ত্বার্থবৎ (শাস্ত্রবিচার হীন) অল্পং চ (সঙ্কীর্ণ) তৎ (তাহা) তামসম্ (তামসিক জ্ঞান বলিয়া) উদাহৃতম্ (কথিত হয়) ॥২২॥ আর যে জ্ঞান কোন খণ্ড (তুচ্ছ) বিষয়ে পূর্ণবৎ (উত্তমের ন্যায়) আকৃষ্ট, হেতু-রহিত, শাস্ত্রবিচারহীন, ও (পশুবৎ) সঙ্কীর্ণ—তাহা তামস বলিয়া কথিত ॥২২॥
অফলপ্রেপ্সুনা (অফলাকাঙ্ক্ষী ব্যক্তি) সঙ্গরহিতম্ (অনাসক্তভাবে) অরাগদ্বেষতঃ (রাগদ্বেষরহিত হইয়া) যৎ (যে) কর্ম্ম (কর্ম্ম) নিয়তং (নিত্য) কৃতম্ (সম্পাদন করেন) তৎ (তাহাকে) সাত্ত্বিকম্ (সাত্ত্বিক কর্ম্ম) উচ্যতে (বলা হয়) ॥২৩॥ ফলাকাঙ্ক্ষাশূন্য ব্যক্তি অনাসক্তভাবে রাগ-দ্বেষ বর্জ্জিত হইয়া, যে নিত্য-কর্ম্ম সম্পাদন করেন তাহাই সাত্ত্বিক কর্ম্ম ॥২৩॥
পুনঃ (আর) কামেপ্সুনা (ফলকামী) বা সাহঙ্কারেণ (অথবা অহঙ্কারী ব্যক্তি) বহুলায়াসং (অতিক্লেশসাধ্য) যৎ তু (যে) কর্ম্ম (কর্ম্ম) ক্রিয়তে (করে) তৎ (তাহাই) রাজসম্ (রাজসিক কর্ম্ম) উদাহৃতম্ (বলিয়া কথিত) ॥২৪॥ আর ফলকামী বা অহঙ্কারী ব্যক্তি বহু ক্লেশসাধ্য যে কর্ম্ম করে, তাহাই রাজসিক বলিয়া কথিত ॥২৪॥
অনুবন্ধং (পরিণাম) ক্ষয়ং (ক্ষতি) হিংসাম্ (হিংসা) পৌরুষম্ চ (ও নিজ সামর্থ্য) অনপেক্ষ্য (পর্য্যালোচনা না করিয়া) মোহাৎ (মোহবশতঃ) যৎ কর্ম্ম (যে কর্ম্ম) আরভ্যতে (আরম্ভ করা হয়), তৎ (তাহাকেই) তামসম্ (তামসিক কর্ম্ম) উচ্যতে (বলা হয়) ॥২৫॥ আর পরিণাম, ক্ষতি, হিংসা ও নিজের সামর্থ্য—এই সকল পর্য্যালোচনা না করিয়া মোহবশতঃ যে কর্ম্ম আরম্ভ করা হয়, তাহাকেই তামসিক কর্ম্ম বলে ॥২৫॥
মুক্তসঙ্গঃ (আসক্তি শূন্য) অনহংবাদী (অহঙ্কার বর্জ্জিত) ধৃত্যুৎসাহ সমন্বিতঃ (ধৈর্য্য ও উৎসাহশালী) সিদ্ধ্যসিদ্ধ্যোঃ (কার্য্যফলের সিদ্ধি ও অসিদ্ধি বিষয়ে) নির্ব্বিকারঃ (অবিকৃতচিত্ত) কর্ত্তা (কর্ত্তাকে) সাত্ত্বিকঃ (সাত্ত্বিক কর্ত্তা) উচ্যতে (বলে) ॥২৬॥ আসক্তিশূন্য, নিরহঙ্কার অথচ দৈর্য্য ও উৎসাহশালী এবং ফলের সিদ্ধি ও অসিদ্ধিতে নির্ব্বিকার কর্ত্তা—সাত্ত্বিক বলিয়া কথিত হন ॥২৬॥
রাগী (আসক্তিযুক্ত) কর্ম্মফলপ্রেপ্সুঃ (কর্ম্মফলাকাঙ্ক্ষী) লুব্ধঃ (লোভী) হিংসাত্মকঃ (হিংস্রস্বভাব) অশুচিঃ (অনাচারী) হর্ষশোকান্বিতঃ (হর্ষ শোকাদির বশীভূত) কর্ত্তা (কর্ত্তাকে) রাজসঃ (রাজসিক কর্ত্তা) পরিকীর্ত্তিতঃ (বলা হয়) ॥২৭॥ আসক্তিযুক্ত, ফলকামী, লোভী, হিংস্রস্বভাব, অনাচারী ও হর্ষ-শোকাদির বশীভূত কর্ত্তা—রাজসিক বলিয়া কথিত হয় ॥২৭॥
অযুক্তঃ (অস্থিরমতি) প্রাকৃতঃ (নির্ব্বাধ) স্তব্ধঃ (অনম্র) শঠঃ (ধূর্ত্ত) নৈষ্কৃতিকঃ (পরের অপমানকারী) অলসঃ (অলস) বিষাদী (খিন্ন) দীর্ঘসূত্রী চ (ও দীর্ঘসূত্রী) কর্ত্তা (কর্ত্তাকে) তামসঃ (তামসিক কর্ত্তা) উচ্যতে (বলে) ॥২৮॥ অস্থিরমতি, জড়বুদ্ধি, অনম্র, ধূর্ত্ত, পরাপমানকারী, অলস, খিন্ন ও দীর্ঘসূত্রী কর্ত্তা—তামসিক বলিয়া কথিত হয় ॥২৮॥
[হে] ধনঞ্জয় ! (হে ধনঞ্জয় !) বুদ্ধেঃ (বুদ্ধির) ধৃতেঃ চ এব (ও ধৃতির) গুণতঃ (গুণত্রয়ানুসারে) ত্রিবিধং (তিন প্রকার) ভেদং (ভেদ) অশেষেণ (সম্পূর্ণরূপে) পৃথক্ত্বেন (ও পৃথক্ভাবে) প্রোচ্যমানং (বলিতেছি), শৃণু (শ্রবণ কর) ॥২৯॥ হে ধনঞ্জয় ! গুণানুসারে বুদ্ধি ও ধৃতির তিন প্রকার ভেদ সম্পূর্ণরূপে ও পৃথক্ভাবে বলিতেছি—শ্রবণ কর ॥২৯॥
[হে] পার্থ ! (হে কুন্তীপুত্ত্র !) যা বুদ্ধিঃ (যে বুদ্ধি) প্রবৃত্তিং চ (ধর্ম্মে প্রবৃত্তি) নিবৃত্তিং চ (ও অধর্ম্ম হইতে নিবৃত্তি) কার্য্যাকার্য্যে (কর্ত্তব্য ও অকর্ত্তব্য), ভয়াভয়ে (ভয় ও অভয়) বন্ধং মোক্ষং চ (বন্ধন ও মোক্ষ), বেত্তি (যথার্থভাবে জানিতে পারে) সা (সেই বুদ্ধিই) সাত্ত্বিকী (সাত্ত্বিকী বুদ্ধি) ॥৩০॥ হে পার্থ ! যে বুদ্ধি-দ্বারা (ধর্ম্মে) প্রবৃত্তি ও (অধর্ম্মে) নিবৃত্তি, কর্ত্তব্য ও অকর্ত্তব্য, ভয় ও অভয় এবং বন্ধন ও মুক্তি (প্রভৃতির স্বরূপ) জানিতে পারা যায় তাহাই—সাত্ত্বিক বুদ্ধি ॥৩০॥
[হে] পার্থ ! (হে পার্থ !) যয়া (যে বুদ্ধি দ্বারা) ধর্ম্মম্ (ধর্ম্ম) অধর্ম্মং চ (ও অধর্ম্ম), কার্য্যং চ (কার্য্য) অকার্য্যম্ এব চ (ও অকার্য্য) অযথাবৎ (অসম্যগ্রূপে) প্রজানাতি (জানিতে পারা যায়), সা বুদ্ধিঃ (সেই বুদ্ধিই) রাজসী (রাজসিক বুদ্ধি) ॥৩১॥ হে পার্থ ! যে বুদ্ধি-দ্বারা ধর্ম্ম ও অধর্ম্ম, কার্য্য ও অকার্য্য প্রভৃতির স্বরূপ অসম্যগ্ভাবে নির্ণীত হয় তাহাই—রাজসিক বুদ্ধি ॥৩১॥
[হে] পার্থ ! (হে পার্থ !) যা বুদ্ধিঃ (যে বুদ্ধি) অধর্ম্মং (অধর্ম্মকে) ধর্ম্মম্ (ধর্ম্ম) সর্ব্বার্থান্ চ (এবং সমস্ত জ্ঞেয় পদার্থকে) বিপরীতান্ ইতি (বিপরীত বলিয়া) মন্যতে (মনে করে), সা (সেই বুদ্ধি) তমসা (তমোগুণে) আবৃতা (আচ্ছন্ন) তামসী (তামসিকী বুদ্ধি) ॥৩২॥ হে পার্থ ! যে বুদ্ধি-দ্বারা অধর্ম্মকে ধর্ম্ম তথা সমুদয় বিষয়কেই তাহার বিপরীতরূপে ধারণা হয়, সেই মোহাবৃত বুদ্ধিই—তামসিক বুদ্ধি ॥৩২॥
[হে] পার্থ ! (হে পার্থ !) যোগেন (চিত্তের একাগ্রতা বশতঃ) অব্যভিচারিণ্যা (অব্যভিচারিণী) যয়া (যে) ধৃত্যা (ধৃতি দ্বারা) মনঃপ্রাণেন্দ্রিয় ক্রিয়াঃ (মন, প্রাণ ও ইন্দ্রিয় সকলের চেষ্টাকে) ধারয়তে (নিয়মিত করে) সা ধৃতিঃ (সেই ধৃতিই) সাত্ত্বিকী (সাত্ত্বিকী ধৃতি) ॥৩৩॥ হে পার্থ ! যে ঐকান্তিকী ধৃতি নিষ্ঠার সহিত মন, প্রাণ, ইন্দ্রিয় ও তাহাদের ক্রিয়াসমূহ নিয়মিত করে, সেই ধৃতিই—সাত্ত্বিক ॥৩৩॥
[হে] পার্থ ! (হে পার্থ !) [হে] অর্জ্জুন ! (হে অর্জ্জুন !) যয়া (যে) ধৃত্যা (ধৃতি দ্বারা) ধর্ম্মকামার্থান্ (ধর্ম্ম, কাম ও অর্থকে) [প্রাধান্যেন] (প্রধান বলিয়া) ধারয়তে (ধারণ করে) [এবং] প্রসঙ্গেন (ইহাদের সঙ্গ বশতঃ) ফলাকাঙ্ক্ষী (ফলকামী) [ভবতি] (হয়) ; সা ধৃতিঃ (সেই ধৃতিই) রাজসী (রাজসিকী ধৃতি) ॥৩৪॥ হে পার্থ ! হে অর্জ্জুন ! যে ধৃতি ফলাকাঙ্ক্ষার সহিত ধর্ম্ম, অর্থ ও কামকে ধরিয়া থাকে তাহাকেই—রাজসিক ধৃতি বলা হয় ॥৩৪॥
দুর্ম্মেধাঃ (দুর্ব্বুদ্ধি ব্যক্তি) যয়া (যে ধৃতি দ্বারা) স্বপ্নং (নিদ্রা) ভয়ং (ভয়) শোকং (শোক) বিষাদং (দুঃখ) মদম্ এব চ (ও বিষয়ের গর্ব্বকে) ন বিমুঞ্চতি (পরিত্যাগ করে না) সা ধৃতিঃ (সেই ধৃতিই) তামসী (তামসিকী ধৃতি বলিয়া) মতা (কথিত হয়) ॥৩৫॥ দুর্ম্মতি ব্যক্তি যে ধৃতি দ্বারা নিদ্রা, ভয়, শোক, বিষাদ ও গর্ব্ব প্রভৃতিকে পরিত্যাগ করে না, সেই ধৃতিই—তামসিক ধৃতি ॥৩৫॥
[হে] ভরতর্ষভ ! (হে ভরতশ্রেষ্ঠ !) ইদানী তু (এখন) মে (আমার নিকট) ত্রিবিধং (তিন প্রকার) সুখং (সুখের বিষয়) শৃণু (শ্রবণ কর) যত্র (যাহাতে) অভ্যাসাৎ (পুনঃ পুনঃ অনুশীলন দ্বারাক্রমে) রমতে (রতি জন্মে) দুঃখান্তং চ (এবং দুঃখের অবসান) নিগচ্ছতি (লাভ করে) । হে ভরতর্ষভ ! সম্প্রতি আমার নিকট তিন প্রকার সুখের বিষয় শ্রবণ কর । যাহাতে পুনঃ পুনঃ (অনুশীলনরূপ) অভ্যাস দ্বারা রতি জন্মে এবং দুঃখের অবসানও ঘটে, যাহা প্রথমে বিষেয় ন্যায় কষ্টকর কিন্তু পরিণামে যাহা অমৃততুল্য সুখকর এবং যাহা শুদ্ধ আত্মজ্ঞান হইতে উৎপন্ন, সেই সুখকেই—সাত্ত্বিক সুখ বলে ॥৩৬–৩৭॥
যৎ (যে সুখ) বিষয়েন্দ্রিয়সংযোগাৎ (বিষয় ও ইন্দ্রিয়ের সংযোগ হইতে) [জায়তে] (উৎপন্ন হয়), তৎ (সেই সুখ) অগ্রে (প্রথমে) অমৃতোপমম্ (অমৃত তুল্য) পরিণামে (অবশেষে) বিষম্ ইব (বিষের ন্যায়) তৎ সুখং (সেই সুখই) রাজসং (রাজসিক সুখ) স্মৃতম্ (বলে) ॥৩৮॥ যে সুখ, বিষয় ও ইন্দ্রিয়ের সংযোগ হইতে সঞ্জাত—যাহা প্রথমে অমৃতের মত এবং পরিণামে বিষতুল্য অনুভূত হয়, সেই সুখকেই—রাজসিক সুখ বলে ॥৩৮॥
যৎ সুখং (যে সুখ) অগ্রে (আরম্ভে) অনুবন্ধে চ (ও পরিণামে) আত্মনঃ (আত্মার সম্বন্ধে) মোহনম্ (মোহ জনক) নিদ্রালস্যপ্রমাদোত্থং (নিদ্রা, আলস্য ও অবিবেক হইতে উৎপন্ন) তৎ (সেই সুখকে) তামসম্ (তামসিক সুখ) উদাহৃতম্ (বলা হয়) ॥৩৯॥ যে সুখ আগে ও পরে আত্মার মোহজনক, নিদ্রা, আলস্য ও অনবধানতা হইতে উত্থিত, সেই সুখকেই—তামসিক সুখ বলা হয় ॥৩৯॥
পুনঃ (আবার) পৃথিব্যাং (পৃথিবীতে) [মনুষ্যাদিষু] (মনুষ্যাদি জীবগণের মধ্যে) দিবি বা (অথবা স্বর্গে) দেবেষু বা (দেবগণের মধ্যেও) তৎ সত্ত্বং (সেইরূপ কোন প্রাণী বা অন্য বস্তু) ন অস্তি (নাই), যৎ (যাহার) প্রকৃতিজৈঃ (প্রকৃতি সম্ভূত) এভিঃ (এই) ত্রিভিঃ (তিন) গুণৈঃ (গুণ হইতে) মুক্তং স্যাৎ (স্বরূপতঃ মুক্ত থাকিবার সম্ভাবনা আছে) ॥৪০॥ এই পৃথিবীতে (মনুষ্য প্রভৃতি জীবগণের মধ্যে) অথবা স্বর্গে দেবগণের মধ্যে এমন কোন জীব বা বস্তু নাই, যাহা প্রকৃতিজাত এই তিনগুণ হইতে মুক্ত ॥৪০॥
[হে] পরন্তপ ! (হে শক্রবিমর্দ্দন !) ব্রাহ্মণক্ষত্রিয়বিশাং (ব্রাহ্মণ, ক্ষত্ত্রিয় ও বৈশ্যের) শূদ্রানাং চ (এবং শূদ্রগণের) কর্ম্মাণি (কর্ম্মসমূহ) স্বভাবপ্রভবৈঃ (প্রকৃতিজাত) গুণৈঃ (সত্ত্বাদি গুণ দ্বারা) প্রবিভক্তানি (প্রকৃতরূপে বিভাগ করা হইয়াছে) ॥৪১॥ হে পরন্তপ ! ব্রাহ্মণ, ক্ষত্ত্রিয়, বৈশ্য ও শূদ্রগণের স্বভাবজাত সত্ত্বাদি গুণের দ্বারাই কর্ম্মসকল প্রকৃষ্টভাবে বিভক্ত (শ্রেণীবদ্ধ) করা হইয়াছে ॥৪১॥
শমঃ (অন্তরিন্দ্রিয় সংযম) দমঃ (বাহ্যেন্দ্রিয় নিগ্রহ) তপঃ (তপস্যা) শৌচং (বাহ্য ও অভ্যন্তরে শুদ্ধি) ক্ষান্তিঃ (ক্ষমা) আর্জ্জবম্ এব চ (ও সরলতা) জ্ঞানং (শাস্ত্রজ্ঞান) বিজ্ঞানম্ (তত্ত্বানুভব) আস্তিক্যং (ও শাস্ত্র বাক্যে সুদৃঢ় বিশ্বাস) [এতানি] (এই সকলই) স্বভাবজম্ (স্বভাবজনিত) ব্রহ্মকর্ম্ম (ব্রহ্মণের কর্ম্ম) [ভবতি] (হয়) ॥৪২॥ শম, দম, তপস্যা, শৌচ, ক্ষমা, সরলতা, জ্ঞান, বিজ্ঞান ও আস্তিক্য—এই সকলই ব্রহ্মণের স্বভাবজাত কর্ম্ম ॥৪২॥
শৌর্য্যং (পরাক্রম) তেজঃ (তেজস্বিভাব) ধৃতিঃ (ধৈর্য্য) দাক্ষ্যং (কর্ম্ম কুশলতা) যুদ্ধে চ অপি (ও যুদ্ধে) অপলায়নম্ (অপরাঙ্মুখতা) দানম্ (দান) ঈশ্বর ভাবঃ চ (ও লোকনিয়ন্তত্ব) [এতানি] (এই সকলই) স্বভাবজম্ (স্বভাবজাত) ক্ষত্ত্রং কর্ম্ম (ক্ষত্ত্রিয়ের কর্ম্ম) [ভবতি] (হয়) ॥৪৩॥ শৌর্য্য, তেজ, ধৈর্য্য, দক্ষতা, যুদ্ধে অপলায়ন, দানশীলতা ও প্রভুত্ব—এই সকলই ক্ষত্রিয়ের স্বাভাবিক কর্ম্ম ॥৪৩॥
কৃষিগোরক্ষ্য বাণিজ্যং (কৃষিকার্য্য, গোপালন ও বাণিজ্য) [এতানি] (এই সকল) স্বভাবজম্ (স্বাভাবিক) বৈশ্যকর্ম্ম (বৈশ্যের কর্ম্ম) । পরিচর্য্যাত্মকং (ব্রাহ্মণাদিবর্ণত্রয়ের সেবারূপ) কর্ম্ম অপি (কর্ম্মই) শূদ্রস্য (শূদ্রের পক্ষে) স্বভাবজম্ (স্বাভাবিক) ॥৪৪॥ কৃষিকার্য্য, গো-পালন ও বাণিজ্য এই সকলই বৈশ্যের স্বাভাবিক কর্ম্ম এবং ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয় ও বৈশ্যের পরিচর্য্যারূপ কর্ম্মই (বা বিবিধ কর্ম্মের সহায়তাই) শূদ্রের স্বাভাবিক কর্ম্ম ॥৪৪॥
স্বে স্বে (নিজ নিজ অধিকার বিহিত) কর্ম্মণি (কর্ম্মে) অভিরতঃ (পরিনিষ্ঠিত) নরঃ (মানব) সংসিদ্ধিং (স্বরূপজ্ঞান) লভতে (লাভ করে) । স্বকর্ম্মনিরতঃ (নিজ নজি অধিকার-বিহিত কর্ম্মানুষ্ঠানকারী) যথা (যে প্রকারে) সিদ্ধিং (সিদ্ধি) বিন্দতি (লাভ করে) তৎ (তাহা) শৃণু (শ্রবণ কর) ॥৪৫॥ স্ব-স্ব অধিকার বিহিত কর্ম্মে তৎপর ব্যক্তি স্বরূপজ্ঞান লাভ করে ; নিজ নিজ অধিকার বিহিত কর্ম্মানুষ্ঠানকারী যেরূপে সিদ্ধিলাভ করে—তাহা শ্রবণ কর ॥৪৫॥
যতঃ (যাহা হইতে) ভূতানাং (জীবগণের) প্রবৃত্তিঃ (জন্মাদি) যেন (যিনি ব্যষ্টি ও সমষ্টিরূপে) ইদং (এই) সর্ব্বম্ (সমস্ত বিশ্বে) ততম্ (ব্যাপ্ত রহিয়াছেন), তম্ (সেই পরমেশ্বরকে) মানবঃ (মনুষ্য) স্বকর্ম্মণা (নিজ নিজ অধিকার-বিহিত কর্ম্মের দ্বারা) অভ্যর্চ্চ্য (আরাধনা করিয়া) সিদ্ধিং (সিদ্ধি) বিন্দতি (লাভ করে) ॥৪৬॥ যে পরমেশ্বর হইতে নিখিল প্রাণিগণের উৎপত্তি বা চেষ্টা এবং যিনি (ব্যাষ্টি ও সমষ্টিপ্রকাশ অধিকার করিয়া) এই সমগ্র বিশ্বে পরিব্যাপ্ত আছেন, সেই পরমেশ্বরকে মানব, নিজ নিজ অধিকার বিহিত কর্ম্মের দ্বারা আরাধনা করিয়া সিদ্ধিলাভ করে ॥৪৬॥
স্বনুষ্ঠিতাৎ (সমক্রূপে অনুষ্ঠিত) পরধর্ম্মাৎ (পরের ধর্ম্ম অপেক্ষা) বিগুণঃ (অসম্যক্রূপে অনুষ্ঠিত) স্বধর্ম্মঃ (নিজ নিজ ধর্ম্ম) শ্রেয়ান্ (শ্রেষ্ঠ), স্বভাবনিয়তং (প্রকৃতি-প্রেরিত) কর্ম্ম (কর্ম্ম) কুর্ব্বন্ (করিয়া) [মানবঃ] (মানব) কিল্বিষম্ ন আপ্নোতি (পাপভাগী হয় না) ॥৪৭॥ স্বধর্ম্ম দোষযুক্ত হইলেও, সুষ্ঠু অনুষ্ঠিত অপরের ধর্ম্ম হইতে শ্রেষ্ঠ ; প্রকৃতি-প্রেরিত ধর্ম্ম করিয়া মনুষ্য পাপভাগী হয় না ॥৪৭॥
[হে] কৌন্তেয় ! (হে কুন্তীপুত্ত্র !) সদোষম্ অপি (দোষ যুক্ত হইলেও) সহজং (স্বভাববিহিত) কর্ম্ম (কর্ম্ম) ন ত্যজেৎ (ত্যাগ করিতে নাই) হি (কারণ) ধূমেন (ধূমের দ্বারা) অগ্নিঃ ইব (আবৃত অগ্নির ন্যায়) সর্ব্বারম্ভাঃ (সমস্ত কর্ম্মই) দোষেণ (দোষের দ্বারা) আবৃতাঃ (আবৃত) ॥৪৮॥ হে কৌন্তেয়! দোষযুক্ত হইলেও স্বভাববিহিত কর্ম্ম ত্যাগ করিতে নাই, কারণ ধূমের দ্বারা আবৃত বহ্নির ন্যায়—সমস্ত কর্ম্মই দোষের দ্বারা (নূনাধিক) আবৃত ॥৪৮॥
সর্ব্বত্র (প্রাকৃত সমস্ত বস্তুতে) অসক্তে বুদ্ধিঃ (অনাসক্ত বুদ্ধি) জীতাত্মা (বশীকৃত-চিত্ত) বিগতস্পৃহঃ (ও নিষ্কাম ব্যক্তি) সন্ন্যাসেন (কর্ম্মফলের পরিত্যাগ দ্বারা) পরমাং নৈষ্কর্ম্ম্যসিদ্ধিং (নৈষ্কর্ম্ম্যরূপ পরমসিদ্ধি) অধিগচ্ছতি (লাভ করেন) ॥৪৯॥ প্রাকৃত সমুদয় বস্তুতে অনাসক্ত-বুদ্ধি, বশীকৃত-চিত্ত ও নিষ্কাম ব্যক্তি কর্ম্মফলের পরিত্যাগ দ্বারা নৈষ্কর্ম্ম্যরূপ পরমসিদ্ধি লাভ করেন ॥৪৯॥
[হে] কৌন্তেয় ! (হে কুন্তীনন্দন !) সিদ্ধিং প্রাপ্তঃ (নৈষ্কর্ম্ম্যরূপ সিদ্ধিপ্রাপ্ত ব্যক্তি) যথা (যেরূপে) ব্রহ্ম (ব্রহ্মকে) আপ্নোতি (প্রাপ্ত হন), যা (যে ব্রহ্মপ্রাপ্তি) জ্ঞানস্য (জ্ঞানের) পরা নিষ্ঠা (পরমগতি), তথা (তাহা) সমাসেন এব (সংক্ষেপে) মে (আমার নিকট) নিবোধ (শ্রবণ কর) ॥৫০॥ হে কৌন্তেয় ! নৈষ্কর্ম্ম্যরূপ সিদ্ধি প্রাপ্ত ব্যক্তি যেরূপে ব্রহ্মকে প্রাপ্ত হন,—যে ব্রহ্মপ্রাপ্তি (চিদাত্মবোধ) জ্ঞানের পরম গতি—তাহা তুমি আমার নিকট সংক্ষেপে শ্রবণ কর ॥৫০॥
বিশুদ্ধয়া (সাত্ত্বিকী) বুদ্ধ্যা (বুদ্ধি) যুক্তঃ [সন্] (যুক্ত হইয়া) ধৃত্যা (তাদৃশ ধৃতির দ্বারা) আত্মানং (মনকে) নিয়ম্য চ (সংযত করিয়া), শব্দাদীন্ (শব্দ, স্পর্শ প্রভৃতি) বিষয়ান্ (বিষয় সমূহকে) ত্যক্ত্বা (পরিত্যাগ পূর্ব্বক) রাগদ্বেষৌ (রাগ ও দ্বেষ) ব্যুদস্য চ (বিদূরিত করতঃ), বিবিক্তসেবী (বিষয়িসঙ্গ-রহিত) লঘ্বাশী (মিতভোজী) যতবাক্কায়মানসঃ (কায়-মন-বাক্য-সংযমী) নিত্যং (সর্ব্বদা) ধ্যানযোগপরঃ (ভগবচ্চিন্তাপরায়ণ) বৈরাগ্যং সমুপাশ্রিতঃ (ও বৈরাগ্য-সমাশ্রিত হইয়া) অহঙ্কারং (অহঙ্কার) বলং (সামর্থ্য) দর্পং (দর্প) কামং (কাম) ক্রোধং (ক্রোধ) পরিগ্রহম্ (ও দানাদিগ্রহণ) বিমূচ্য (পরিত্যাগ পূর্ব্বক) নির্ম্মমঃ (মমতাশূন্য) শান্তঃ (শান্তিপরায়ণ পুরুষ) ব্রহ্মভূয়ায় (চিদাত্মবোধের) কল্পতে (যোগ্য হন) ॥৫১–৫৩॥ সাত্ত্বিক বুদ্ধিযুক্ত হইয়া, তাদৃশ ধৃতির দ্বারা মনকে সংযত করিয়া, শব্দাদি বিষয় সকলকে পরিত্যাগ পূর্ব্বক, রাগ ও দ্বেষ বিদূরিত করতঃ, বিষয়িসঙ্গ-রহিত, মিতভোজী, কায়-মন-বাক্য-সংযমী, সর্ব্বদা ভগবচ্চিন্তা-পরায়ণ ও বৈরাগ্য-সমাশ্রিত হইয়া—অহঙ্কার, বল, দর্প, কাম, ক্রোধ ও দানাদি-গ্রহণ পরিত্যাগ পূর্ব্বক, মমতাশূন্য ও শান্তিপরায়ণ ব্যক্তি চিদাত্মবোধের যোগ্য হন ॥৫১–৫৩॥
ব্রহ্মভূতঃ (চিৎ স্বরূপ প্রাপ্ত) প্রসন্নাত্মা (প্রসন্ন চিত্ত ব্যক্তি) ন শোচতি (শোক করেন না) ন কাঙ্ক্ষতি (আকাঙ্ক্ষাও করেন না) । সর্ব্বেষু (সকল) ভূতেষু (প্রাণীর প্রতি) সমঃ (আমার পরাশক্তি বিচারে সমদর্শী হইয়া) পরাম্ (নির্গুণা) মদ্ভক্তিং (আমার ভক্তি) লভতে (লাভ করেন) ॥৫৪॥ চিৎ-স্বরূপ প্রাপ্ত ও প্রসন্ন-চিত্ত ব্যক্তি শোকও করেন না, আকাঙ্ক্ষাও করেন না ; তিনি সর্ব্বভূতে (আমার পরাশক্তি বিচারে) সমদর্শী হইয়া ক্রমশঃ আমার পরাভক্তি (প্রেমভক্তি) লাভ করেন ॥৫৪॥
[অহং] (আমি) যাবান্ (যেরূপ বিভূতি সম্পন্ন) যঃ চ অস্মি (ও স্বরূপতঃ যাহা হই) মাম্ (আমাকে) [সঃ] (সেই জ্ঞানী ব্যক্তি) ভক্ত্যা (নির্গুণা ভক্তি দ্বারা) তত্ত্বতঃ (যথার্থরূপে) অভিজানাতি (সম্যক্ জানিতে পারেন) ; তত্ত্বতঃ (স্বরূপতঃ) জ্ঞাত্বা (আমাকে অবগত হইয়া) তদনন্তরম্ (তাহার পর) ততঃ (সেই ভক্তি প্রভাবে) মাং (আমার নিত্যলীলায়) বিশতে (প্রবেশ লাভ করেন) ॥৫৫॥ সেই পরাভক্তি প্রভাবে আমার ঐশ্বর্য্যময় ও মাধুর্য্যময় স্বরূপদ্বয় সম্যক্ জানিতে পারেন এবং তৎপর স্বরূপগত সম্বন্ধজ্ঞান উপলব্ধি করিয়া আমার অভিন্ন-স্বরূপ অন্তরঙ্গ পরিকরগণ মধ্যে প্রবেশ লাভ করেন ॥৫৫॥
মদ্ব্যপাশ্রয়ঃ (আমার একান্ত আশ্রিত জন) সদা (সর্ব্বদা) সর্ব্ব কর্ম্মাণি (সর্ব্বপ্রকার কর্ম্ম) কুর্ব্বাণঃ অপি (করিয়াও) মৎপ্রসাদাৎ (আমার প্রসাদে) শাশ্বতং (নিত্য) অব্যয়ম্ (সমৃদ্ধ) পদম্ (সেবাপদ) অবাপ্নোতি (লাভ করেন) ॥৫৬॥ আমার একান্ত আশ্রিত জন সর্ব্বদা সর্ব্বপ্রকার কর্ম্ম করিয়াও—আমার অনুগ্রহে নিত্য সমৃদ্ধ সেবাপদ লাভ করেন ॥৫৬॥
চেতসা (সর্ব্বান্তঃকরণে) সর্ব্ব কর্ম্মাণি (সমস্ত কর্ম্ম) ময়ি (আমাতে) সংন্যস্য (সমর্পণ পূর্ব্বক) মৎপরঃ (মৎপরায়ণ হইয়া) বুদ্ধিযোগম্ (নিশ্চয়াত্মিকা বুদ্ধিকে) উপাশ্রিত্য (আশ্রয় করিয়া) সততং (সর্ব্বদা) মচ্চিত্তঃ (আমাতে অনুরক্ত) ভব (হও) ॥৫৭॥ সম্বন্ধ কৌশলে সমুদয় কর্ম্ম আমাতে সমর্পণ পূর্ব্বক, আমিই পরমগতি—নিশ্চয় করতঃ, বুদ্ধিযোগ (ব্যবহারিক কার্য্যে অনাসক্তি) আশ্রয় করিয়া—সর্ব্বদা আমাতে অনুরক্ত হও ॥৫৭॥
ত্বং (তুমি) মচ্চিত্তঃ (মদ্গতচিত্ত হইয়া) মৎপ্রসাদাৎ (আমার অনুগ্রহে) সর্ব্বদুর্গাণি (সমস্ত বাধা-বিপত্তি) তরিষ্যসি (অতিক্রম করিবে) । অথ চেৎ (আর যদি) অহঙ্কারাৎ (অহঙ্কার বশে) ন শ্রোষ্যসি (না শুন), [তর্হি] (তাহা হইলে) বিনঙ্ক্ষ্যসি (বিনাশ প্রাপ্ত হইবে) ॥৫৮॥ তুমি মদ্গত চিত্ত হইলে আমার অনুগ্রহে সর্ব্বপ্রকার দুস্তর বাধা-বিপদ উত্তীর্ণ হইতে পারিবে । আর যদি অহঙ্কার বশে আমার কথা না শুন তাহা হইলে বিনাশ প্রাপ্ত হইবে ॥৫৮॥
অহঙ্কারম্ (অহঙ্কারকে) আশ্রিত্য (আশ্রয় করিয়া) ন যোৎস্যে (যুদ্ধ করিব না) ইতি (এইরূপ) যৎ মন্যসে (যে মনে করিতেছ), তে (তোমার) [এষঃ] (এই) ব্যবসায়ঃ (সঙ্কল্প) মিথ্যা এব (মিথ্যাই) [ভবিষ্যতি] (হইবে) । প্রকৃতিঃ (ক্ষত্রিয়োচিত স্বভাব) ত্বাং (তোমাকে) নিযোক্ষ্যতি (নিযুক্ত করিবে) ॥৫৯॥ অহঙ্কারকে আশ্রয় করিয়া ‘যুদ্ধ করিব না’ এইরূপ যে মনে করিতেছ—তোমার এই সংকল্প মিথ্যাই হইবে । কারণ তোমার (ক্ষত্রিয়োচিত) স্বভাব তোমাকে অবশ্যই যুদ্ধে নিযুক্ত করিবে ॥৫৯॥
[হে] কৌন্তেয় ! (হে কুন্তীপুত্র !) [ত্বং] (তুমি) মোহাৎ (মোহবশে) যৎ (যাহা) কর্ত্তুং (করিতে) ন ইচ্ছসি (ইচ্ছা করিতেছ না), স্বভাবজেন (স্বভাবজাত) স্বেন (নিজের) কর্ম্মণা (বৃত্তির দ্বারা) নিবদ্ধঃ [সন্] (বাধ্য হইয়া) তৎ অপি (সেই কর্ম্মই) অবশঃ [সন্] (অবশভাবেই) করিষ্যসি (করিবে) ॥৬০॥ হে কৌন্তেয় ! তুমি মোহবশে যাহা এখন করিতে ইচ্ছা করিতেছ না, স্বভাবজাত নিজের বৃত্তি দ্বারা বাধ্য হইয়াই (একটু পরে) সেই কর্ম্ম অবশভাবেই করিবে ॥৬০॥
[হে] অর্জ্জুন ! (হে অর্জ্জুন !) ঈশ্বরঃ (অন্তর্যামী শ্রীভগবান্) সর্ব্বভূতানি (জীবসমূহকে) যন্ত্রারূঢ়াণি [ইব] (যন্ত্রারূঢ় পুত্তলের ন্যায়) মায়য়া (নিজ মায়াশক্তি দ্বারা) ভ্রাময়ন্ (নানাভাবে ভ্রমণ করাইতে করাইতে) সর্ব্বভূতানাং (নিখিল জীবের) হৃদ্দেশে (হৃদয় দেশেই) তিষ্ঠতি (অবস্থান করিতেছেন) ॥৬১॥ হে অর্জ্জুন ! অন্তর্যামী শ্রীভগবান্ স্বীয় মায়াশক্তি প্রভাবে জীবগণকে যন্ত্রারূঢ় পুত্তলের ন্যায় (নানাভাবে) ভ্রমণ করাইতে করাইতে নিখিল জীবের হৃদয়দেশেই অবস্থান করিতেছেন ॥৬১॥
[হে] ভারত ! (হে ভারত !) [অতঃ] (অতএব) সর্ব্বভাবেন (সর্ব্বতোভাবে) তম্ এব (তাঁহারই) শরণং গচ্ছ (শরণ গ্রহণ কর) । তৎপ্রসাদাৎ (তাঁহার কৃপায়) পরাং (পরম ) শান্তিং (শান্তি) শাশ্বতম্ (ও নিত্য) স্থানং (ধাম) প্রাপ্স্যসি (প্রাপ্ত হইবে) ॥৬২॥ হে ভারত ! সর্ব্বতোভাবে তাঁহারই শরণ গ্রহণ কর । তাঁহার কৃপায় পরম শান্তি ও নিত্যধাম লাভ করিবে ॥৬২॥
ইতি (এই পর্য্যন্ত) গুহ্যাৎ (গূঢ় হইতেও) গুহ্যতরং (গূঢ়তর) জ্ঞানম্ (জ্ঞানের কথা) ময়া (আমা কর্ত্তৃক) তে (তোমার নিকট) আখ্যাতং (কথিত হইল) ; এতৎ (ইহা) অশেষণ (সম্পূর্ণরূপে) বিমৃশ্য (পর্য্যালোচনা করিয়া) যথা (যেরূপ) ইচ্ছসি (ইচ্ছা কর) তথা (সেইরূপই) কুরু (কর) ॥৬৩॥ তোমাকে এই গূঢ় হইতেও গূঢ়তর জ্ঞানের কথা আমি বলিলাম। ইহা অশেষভাবে পর্য্যালোচনা করিয়া তোমার যেরূপ ইচ্ছা তাহাই কর ॥৬৩॥
মে (আমার) সর্ব্বগুহ্যতমং (সর্ব্বগুহ্যতম) পরমং (সর্ব্বশ্রেষ্ঠ) বচঃ (উপদেশ) ভূয়ঃ (আবার) শৃণু (শুন) [ত্বং] (তুমি) মে (আমার) দৃঢ়ম্ (অতিশয়) ইষ্টঃ (প্রিয়) অসি (হও), ইতি ততঃ (সেইহেতু) তে (তোমাকে) হিতম্ (মঙ্গলের কথা) বক্ষ্যামি (বলিতেছি) ॥৬৪॥ আমার সর্ব্বগুহ্যতম সর্ব্বশ্রেষ্ঠ উপদেশ আবার শুন । তুমি আমার অত্যন্ত প্রিয়, এই জন্যই তোমার হিত বলিতেছি ॥৬৪॥
[ত্বং] (তুমি) মন্মনাঃ (আমাতেই সমর্পিত চিত্ত) মদ্ভক্তঃ (আমারই শ্রবণ কীর্ত্তনাদি ভক্তি পরায়ণ) মদ্যাজী (ও অমারই পূজক) ভব (হও), মাং (আমাকে) নমস্কুরু (নমস্কার কর) । [তর্হি] (তাহা হইলে) মাম্ এব (আমাকেই) এষ্যসি (প্রাপ্ত হইবে), তে (তোমার নিকট) সত্যং (সত্য) প্রতিজানে (প্রতিজ্ঞা করিতেছি), [যতঃ ত্বং] (যে হেতু তুমি) মে (আমার) প্রিয়ঃ অসি (প্রিয় হও) ॥৬৫॥ তুমি আমারই চিন্তা কর, আমারই সেবা কর, আমারই পূজা কর, ও আমাকেই আত্মনিবেদন কর ; তাহা হইলে আমাকেই প্রাপ্ত হইবে—তোমার নিকট প্রতিজ্ঞা করিয়া সত্য বলিতেছি, কারণ তুমি আমার প্রিয় সখা ॥৬৫॥
সর্ব্বধর্ম্মান্ (সর্ব্বপ্রকার ধর্ম্ম) পরিত্যজ্য (সম্পূর্ণ বিসর্জ্জন দিয়া) একং (একমাত্র) মাম্ (আমারই) শরণং ব্রজ (শরণ লও) ; অহং (আমি) ত্বাং (তোমাকে) সর্ব্বপাপেভ্যঃ (সর্ব্ব প্রকার পাপ হইতে) মোক্ষয়িষ্যামি (মুক্ত করিব), মা শুচঃ (শোক করিও না) ॥৬৩॥ সর্ব্বপ্রকার ধর্ম্ম সম্পূর্ণ বিসর্জ্জন দিয়া একমাত্র আমারই শরণ লও । আমি তোমাকে সর্ব্বপ্রকার পাপ হইতে মুক্ত করিব, তুমি শোক করিও না ॥৬৬॥
ইদং (এই কথা) তে (তুমি) অতপস্কায় (আরাম প্রিয়) অভক্তায় ন (অভক্ত), অশুশ্রূষবে ন চ (সেবা-বিমুখ), যঃ চ (ও যে) মাং (আমাতে) অভ্যসূয়তি (অসূয়াকারী অর্থাৎ মৎসর—তাহাদিগকে) কদাচন (কখনও) ন বাচ্যং (বলিবে না) ॥৬৭॥ এই কথা তুমি কখনও আরামপ্রিয়, শ্রদ্ধাহীন, সেবা-বিমুখ ও আমাতে অসূয়াকারী অর্থাৎ মৎসর ব্যক্তিগণকে বলিবে না ॥৬৭॥
যঃ (যিনি) পরমং (সর্ব্বোৎকৃষ্ট) গুহ্যং (গোপনীয়) ইমং (এই সংবাদ) সদ্ভক্তেষু (আমার ভক্তগণের নিকট) অভিধাস্যতি (কীর্ত্তন করিবেন), [সঃ] (তিনি) ময়ি (আমার) পরাং (পরা) ভক্তিং (ভক্তি) কৃত্বা (লাভ করিয়া) অসংশয়ঃ (নিঃসন্দেহে) মাম্ এব (আমাকেই) এষ্যসি (প্রাপ্ত হইবেন) ॥৬৮॥ যিনি এই গোপনীয় পরম তত্ত্ব আমার ভক্তগণের নিকট কীর্ত্তন করিবেন, তিনি আমার পরাভক্তি লাভ করিয়া আমাকেই প্রাপ্ত হইবেন, ইহাতে কোন সংশয় নাই ॥৬৮॥
মনুষ্যেষু (মনুষ্য সমাজে) তস্মাৎ (তাঁর অর্থাৎ গীতা প্রচারকের অপেক্ষা) কশ্চিৎ (কেহ) মে (আমার) প্রিয়কৃত্তমঃ (অধিক প্রিয়কারী) ন চ (নাই), ভুবি চ (এবং পৃথিবীতে) তস্মাৎ (তাঁহার অপেক্ষা) অন্যঃ (অপর কেহ) মে (আবার) প্রিয়তরঃ (প্রিয়তরও) ন ভবিতা (হইবে না) ॥৬৯॥ মানব সমাজে তাঁর (গীতা প্রচারকের) অপেক্ষা কেহই আমার অধিক প্রিয়কারী নাই, এবং (ভবিষ্যতে) পৃথিবীতে তাঁহা অপেক্ষা আমার প্রিয়তরও কেহ হইবে না ॥৬৯॥
যঃ চ (আর যিনি) আবয়োঃ (আমাদের উভয়ের) ইমং (এই) ধর্ম্ম্যং (ধর্ম্ম) সংবাদম্ (সংলাপ) অধ্যেষ্যতে (পাঠ করিবেন), অহং (আমি) জ্ঞানযজ্ঞেন (জ্ঞানযজ্ঞদ্বারা) তেন (তৎকর্ত্তৃক) ইষ্টঃ (আরাধিত) স্যাম্ (হইব), ইতি (ইহাই) মে (আমার) মতিঃ (অভিমত) ॥৭০॥ আর যিনি আমাদের উভয়ের এই ধর্ম্ম-সংলাপ পাঠ করিবেন, আমি জ্ঞান-যজ্ঞের দ্বারা তৎকর্ত্তৃক আরাধিত হইব, ইহাই আমার অভিমত ॥৭০॥
শ্রদ্ধাবান্ (শ্রদ্ধাযুক্ত) অনসূয়ঃ চ (ও দোষদৃষ্টি রহিত) যঃ (যে) নরঃ (মানব) শৃণুয়াৎ অপি (কেবল শ্রবণ করেন), সঃ অপি (তিনিও) [পাপাৎ] (পাপ হইতে) মুক্তঃ [সন্] (মুক্ত হইয়া) পুণ্যকর্ম্মণাম্ (পুণ্যকারিগণের) [প্রাপ্য] (লভ্য) শুভান্ (উত্তম) লোকন্ (ধাম সকল) প্রাপ্নুয়াৎ (প্রাপ্ত হইবেন) ॥৭১॥ যে শ্রদ্ধাবান্ জন নির্মৎসর ভাবে কেবল শ্রবণও করিবেন, তিনিও মুক্ত হইয়া সুকৃতিশালী জনের যোগ্য মঙ্গলময় লোক সকল লাভ করিবেন ॥৭১॥
[হে] পার্থ ! (হে কুন্তীপুত্ত্র !) ত্বয়া কচ্চিৎ (তুমি কি) একাগ্রেণ (একাগ্র) চেতসা (চিত্তে) এতৎ (এই গীতা শাস্ত্র) শ্রুতং (শ্রবণ করিয়াছ ?) [হে] ধনঞ্জয় ! (হে অর্জ্জুন !) তে (তোমার) অজ্ঞান সম্মোহঃ (অজ্ঞান জনিত বিপরীত বুদ্ধি) প্রণষ্টঃ কচ্চিৎ (বিনষ্ট লইল কি ?) ॥৭২॥ হে পার্থ ! তুমি কি একাগ্রচিত্তে ইহা শ্রবণ করিলে ? হে ধনঞ্জয় ! তোমার অজ্ঞানোত্থ মোহ কি বিদূরিত হইল ? ॥৭২॥
অর্জ্জুন উবাচ (অর্জ্জুন বলিলেন) [হে] অচ্যুত ! (হে শ্রীকৃষ্ণ !) ত্বৎ প্রসাদাৎ (তোমার অনুগ্রহে) [মে] (আমার) মোহঃ (মোহ) নষ্টঃ (দূর হইয়াছে), ময়া (আমি) স্মৃতিঃ (আত্মস্মৃতি) লব্ধা (লাভ করিয়াছি), স্থিতঃ অস্মি (স্থিরতা প্রাপ্ত হইলাম), গত সন্দেহঃ (সংশয় দূর হইয়াছে) তব (তোমার) বচনং (আদেশ) করিষ্যে (পালন করিব)॥৭৩॥ অর্জ্জুন কহিলেন—হে অচ্যুত ! তোমার কৃপায় আমার মোহ বিনষ্ট হইয়াছে, আমি স্বরূপস্মৃতি লাভ করিয়াছি, আমি নিঃসংশয়ে শরণাপত্তিতে অবস্থিত হইলাম,—তোমার আদেশ পালন করিব ॥৭৩॥
সঞ্জয় উবাচ (সঞ্জয় বলিলেন) অহং (আমি) ইতি (এই প্রকারে) মহাত্মনঃ (মহাত্ম) বাসুদেবস্য (বাসুদেবের) পার্থস্য চ (ও অর্জ্জুনের) ইমম্ (এই) অদ্ভুতঃ (আশ্চর্য্য) রোমহর্ষণম্ (রোমাঞ্চকর) সংবাদম্ (কথোপকথন) অশ্রৌষম্ (শ্রবণ করিলাম) ॥৭৪॥ সঞ্জয় কহিলেন—এইরূপে আমি মহাত্মা বাসুদেব ও অর্জ্জুনের—এই অদ্ভুত রোমাঞ্চকর সংলাপ শ্রবণ করিলাম॥৭৪॥
অহং (আমি) ব্যাসপ্রসাদাৎ (ব্যাসদেবের কৃপায়) ইমং (এই) পরম্ (পরম) গুহ্যম্ (গোপনীয়) যোগং (কর্ম্ম, জ্ঞান ও ভক্তিযোগ) সাক্ষাৎ কথয়তঃ (স্বমুখে উপদেশ করিতে প্রবৃত্ত) যোগেশ্বরাৎ (যোগেশ্বর) স্বয়ম্ (স্বয়ংরূপ) কৃষ্ণাৎ (কৃষ্ণ হইতে) শ্রুতবান্ (শ্রবণ করিলাম) ॥৭৫॥ আমি শ্রীব্যাসদেবের অনুগ্রহে যোগেশ্বর স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণের সাক্ষাৎ শ্রীমুখগাথা হইতে এই গুহ্য সর্ব্বশ্রেষ্ঠ যোগ—শ্রবণ করিয়াছি ॥৭৫॥
[হে] রাজন্ ! (হে মহারাজ ধৃতরাষ্ট্র !) কেশবার্জ্জুনয়োঃ (শ্রীকৃষ্ণ ও অর্জ্জুনের) ইমম্ (এই) পুণ্যং (পবিত্র) অদ্ভুতম্ (বিস্ময়কর) সংবাদম্ (কথোপকথন) সংস্মৃত্য সংস্মৃত্য (পুনঃ পুনঃ স্মরণ করিয়া) মুহুর্ম্মহুঃ চ (বারংবারই) হৃষ্যামি (রোমাঞ্চিত হইতেছি) ॥৭৬॥ হে মহারাজ ! শ্রীকৃষ্ণ ও অর্জ্জুনের এই পুণ্যময়, অতি বিস্ময়কর সংলাপ পুনঃ পুনঃ স্মরণ করিতে করিতে আমি মুহুর্মুহুঃ হর্ষে পুলকিত হইতেছি ॥৭৬॥
[হে] রাজন্ ! (হে মহারাজ !) হরেঃ চ (আর শ্রীহরির) অত্যদ্ভুতং (অতি আশ্চর্য্য) তৎ রূপম্ (সেই বিশ্বরূপ) সংস্মৃত্য সংস্মৃত্য (পুনঃ পুনঃ স্মরণ করিয়া) মে (আমার) মহান্ (পরম) বিস্ময়ঃ (বিস্ময়) [ভবতি] (হইতেছে) পুনঃ পুনঃ চ (এবং আমি বারংবার) হৃষ্যামি (রোমাঞ্চিত হইতেছি) ॥৭৭॥ হে রাজন্ ! আবার ভগবান্ শ্রীহরির সেই মহান্ অত্যাশ্চর্য্যময় বিশ্বরূপ বারংবার স্মরণ করিতে করিতে আমার অত্যন্ত বিস্ময় ও পুনঃ পুনঃ পুলকোদ্গম হইতেছে ॥৭৭॥
যত্র (যেখানে) যোগেশ্বরঃ কৃষ্ণঃ (যোগেশ্বর শ্রীকৃষ্ণ) যত্র (ও যেখানে) ধনুর্দ্ধরঃ পার্থঃ (ধনুর্দ্ধর ধনঞ্জয়) তত্র (সেইখানেই) শ্রীঃ (রাজলক্ষ্মী) বিজয়ঃ (জয়শ্রী) ভূতিঃ (সম্পদ্বৃদ্ধি) নীতিঃ (ও ন্যায়) ধ্রুবা (প্রতিষ্ঠিত), [ইতি] (ইহাই) মম (আমার) মতিঃ (অভিমত) ॥৭৮॥ যেখাবে ভগবান্ যোগেশ্বর স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণ ও যেখানে স্বয়ং ধনঞ্জয় ধনুর্দ্ধর—সেইখানেই রাজলক্ষ্মী, সেইখানেই জয়শ্রী, সেইখানেই সমৃদ্ধি ও সেইখানেই সুনীতি সুপ্রতিষ্ঠিত—ইহাই আমার অভিমত ॥৭৮॥
ইতি অষ্টাদশ অধ্যায়ের অন্বয় সমাপ্ত ॥ ইতি অষ্টাদশ অধ্যায়ের বঙ্গানুবাদ সমাপ্ত ॥
—···—
|
সূচিপত্র: মঙ্গলাচরণম্ গ্রন্থ-পরিচয় প্রকাশকের নিবেদন ১ সৈন্য-দর্শন ২ সাংখ্যযোগ ৩ কর্ম্মযোগ ৪ জ্ঞানযোগ ৫ কর্ম্মসন্ন্যাসযোগ ৬ ধ্যানযোগ ৭ জ্ঞানবিজ্ঞানযোগ ৮ তারকব্রহ্মযোগ ৯ রাজগুহ্যযোগ ১০ বিভূতিযোগ ১১ বিশ্বরূপ-দর্শনযোগ ১২ ভক্তিযোগ ১৩ প্রকৃতিপুরুষ-বিবেক-যোগ ১৪ গুণত্রয়-বিভাগ-যোগ ১৫ পুরুষোত্তমযোগ ১৬ দৈবাসুরসম্পদ্-বিভাগ যোগ ১৭ শ্রদ্ধাত্রয়-বিভাগ-যোগ ১৮ মোক্ষযোগ গীতামাহাত্ম্যম্ |
||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
বৃক্ষসম ক্ষমাগুণ করবি সাধন । প্রতিহিংসা ত্যজি আন্যে করবি পালন ॥ জীবন-নির্ব্বাহে আনে উদ্বেগ না দিবে । পর-উপকারে নিজ-সুখ পাসরিবে ॥ | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
© Sri Chaitanya Saraswat Math, Nabadwip, West Bengal, India. For any enquiries please visit our contact page. |