| |||||||
|
|||||||
শ্রীশ্রীপ্রপন্নজীবনামৃতম্
প্রথমোঽধ্যায়ঃ উপক্রমামৃতম্
অথ মঙ্গলাচরপম্—
শ্রীগুরু-গৌর-গান্ধর্ব্বা-গোবিন্দাঙ্ঘ্রীন্ গণৈঃ সহ । শ্রীগুরুপাদপদ্ম, শ্রীগৌরপাদপদ্ম ও শ্রীশ্রীগান্ধর্ব্বাগিরিধারীর পাদপদ্ম তাঁহাদের গণের সহিত বন্দনা করি, যাঁহাদের প্রসাদে সমস্ত আরম্ভ শুভকর হয় ॥১॥
গৌর-বাগ্বিগ্রহং বন্দে গৌরাঙ্গং গৌরবৈভবম্ । গৌর-সরস্বতীর শ্রীমূর্ত্তির বন্দনা করি, যাঁহার অবয়ব শ্রীগৌরসুন্দরের ন্যায়, যিনি গৌরহরির কায়ব্যূহস্বরূপ, যিনি শ্রীগৌরবিহিত সঙ্কীর্ত্তনে সর্ব্বদা মত্ত এবং যাঁহাকে শ্রীগৌরাঙ্গের করুণা-শক্তির অধিষ্ঠান পরমসুন্দর করিয়াছেন ॥২॥ (বিবিধ ব্যাখ্যা সম্ভব)
গুরুরূপহরিং গৌরং রাধারুচিরুচাবৃতম্ । শ্রীরাধিকার ভাবকান্তি-আচ্ছাদিত হইয়া গুরুরূপে অবতীর্ণ শ্রীহরি শ্রীগৌরাঙ্গের নিত্যকাল বন্দনা করি, যিনি এই নবদ্বীপ-ধামে প্রচুর নামসঙ্কীর্ত্তন ও নৃত্যবিলাসপরায়ণ ॥৩॥ (ইহার আরও ব্যাখ্যা হইতে পারে)
শ্রীমৎপ্রভুপদাম্ভোজমধুপেভ্যো নমো নমঃ । শ্রীগুরুপাদপদ্মের মধুপানকারী নিত্য পরিকরগণের পুনঃপুনঃ বন্দনা করি ; তাঁহারা কৃপাপূর্ব্বক এই প্রপন্নজীবনামৃত আস্বাদন করিয়া তৃপ্তি প্রকাশ করুন, এই প্রার্থনা ॥৪॥
আত্মবিজ্ঞপ্তিঃ—
অত্যর্ব্বাচীনরূপোঽপি প্রাচীনানাং সুসন্মতান্ । অত্যন্ত অর্ব্বাচীন হইলেও আমি প্রাচীনগণের সুসম্মত কতিপয় শ্লোক সাধুগণের সন্তোষের নিমিত্ত এই গ্রন্থে আহরণ করিতেছি ॥৫॥
"তদ্বাগ্বিসর্গো জনতাঘবিপ্লবো, "যে বাক্যে বা গ্রন্থে ভগবান্ অনন্তদেবের মহিমাপর নামসমূহ বর্ণিত আছে, তাহার প্রতি শ্লোক অপশব্দাদিযুক্ত হইলেও অর্থাৎ প্রসাদগুণ না থাকিলেও সেই বাগ্বিন্যাস লোকের পাপ বিনাশ করে ; কেন না, সেই নাম-সমূহ সাধুগণ (বক্তা থাকিলে) শ্রবণ করেন, কেহ না থাকিলেও নিজেই গান করেন, এবং (শ্রোতা থাকিলে) কীর্ত্তন করেন ॥"৬॥
"অভিব্যক্তা মত্তঃ প্রকৃতিলঘুরূপাদপি বুধা, "হে পণ্ডিতগণ ! স্বভাবতঃ অতি লঘুব্যক্তি আমা হইতে প্রকাশিত হইলেও এই হরিগুণময়ী রচনা আপনাদের অভীষ্ট বিধান করিবেন । কেননা নীচজাতি পুলিন্দ কর্ত্তৃক কাষ্ঠসংঘর্ষণে উৎপাদিত অগ্নি কি সুবর্ণসমূহের অন্তর্মল বিদূরিত করে না ?" ॥৭॥
যথোক্তা রূপপাদেন নীচেনোৎপাদিতেঽনলে । শ্রীল রূপ গোস্বামিপাদ (দৈন্যভরে) যে প্রকার উক্তি করিয়াছেন, তাহাতে নীচের দ্বারা উৎপাদিত অগ্নিতে যেরূপ সুবর্ণের শুদ্ধিবিধান হয়, তদ্রূপ এই গ্রন্থদ্বারাও (উদ্দীপন জন্য) সাধুগণের বিরহজনিত দুঃখের মোচন হইতে পারে ॥৮॥
অন্তঃ কবিযশস্কামং সাধুতাবরণং বহিঃ । অন্তরে কবিযশস্কামী, বাহিরে সাধুতার ভাণকারী, অতএব কপটতারূপ দুরারোগ্যব্যাধিযুক্ত এই দুর্জ্জনকে, হে সাধুগণ ! আপনারা শোধন করুন ॥৯॥
কৃষ্ণগাথাপ্রিয়া ভক্তা ভক্তগাথাপ্রিয়ো হরিঃ । ভক্তগণ স্বভাবতঃ কৃষ্ণকথাপ্রিয় ; ভক্তপ্রসঙ্গও শ্রীহরির প্রিয়, যেহেতু এই গ্রন্থে কোন প্রকারে শ্রীভগবান্ ও তদ্ভক্তেরই প্রসঙ্গ উল্লিখিত হইয়াছে, অতএব হে সাধুগণ ! আমি আপনাদের প্রসন্নতা প্রার্থনা করিতে পারি ॥১০॥
স্বভাবকৃপয়া সন্তো মদুদ্দেশ্যমলিনতাম্ । হে সাধুগণ ! আপনারা আপনাদের স্বভাবসিদ্ধ কৃপাদ্বারা আমার উদ্দেশ্যের মলিনতা (অপরাধ) সংশোধন করিয়া ইহা অঙ্গীকার করুন । যেহেতু আপনারা অহৈতুক-করুণার সমুদ্র, ইহা নিশ্চিত ॥১১॥
অথ গ্রন্থপরিচয়ঃ—
গ্রন্থেঽস্মিন্ পরমে নাম প্রপন্নজীবনামৃতে । প্রপন্নজীবনামৃত নামক এই পরমগ্রন্থে দশটী অধ্যায়ে শরণাগত জনগণের জীবনে প্রাণসঞ্চারকারী, নিত্য বর্দ্ধন ও পোষণকারী, হৃদয় ও চিদিন্দ্রিয়সমূহের রসায়নস্বরূপ, অপ্রাকৃত রসের নব-নবায়মান্ বিলাস দ্বারা পরস্পর সুখসম্পাদনকারী, বিপ্রলম্ভ ও সম্ভোগলীলাপর ভগবান্ শ্রীকৃষ্ণ ও তাঁহার পরিজনগণের প্রসঙ্গ এবং প্রপত্তিবিষয়ক শাস্ত্র সাধুসম্মত বাক্য উদ্ধৃত হইয়াছে ॥১২-১৪॥
অত্র চানন্যচিত্তানাং কৃষ্ণপাদরজোজুষাম্ । এই গ্রন্থে অনন্যচিত্ত, শ্রীকৃষ্ণের পদরজসেবী, কৃষ্ণপদপ্রপন্ন, কৃষ্ণের নিমিত্ত অখিলকর্ম্মকারী, একমাত্র কৃষ্ণপ্রেমলুব্ধ ও কৃষ্ণের উচ্ছিষ্ট মাত্রে জীবনধারণকারী, শ্রীকৃষ্ণের সুখমাত্রবাঞ্ছাকারী ও কৃষ্ণকিঙ্করগণের পরিচর্য্যাকারী, কৃষ্ণবিচ্ছেদে যাঁহাদের হৃদয় দগ্ধ হয় এবং কৃষ্ণসঙ্গে যাঁহাদের হৃদয় উল্লসিত হয়, কৃষ্ণই যাঁহাদের স্বজন ও বন্ধু এবং কৃষ্ণই যাঁহাদের একমাত্র প্রাণবল্লভ, সেই সমস্ত ভক্তগণের হৃদয়োদ্ঘাটনপর পরম মর্ম্মগাথারূপ অমৃতের সঙ্গে সঙ্গে ভক্তগণের আর্ত্তিহরণকারী, ভক্তের আশা ও অভীষ্টপূরণকারী সমস্ত সংশয় ছেদন ও নিখিল অবিদ্যাগ্রন্থিভেদনকারী প্রজ্ঞানপূরিত এবং অত্যাশ্চর্য্য রসলহরীসমূহের দ্বারা চিত্তচমৎকারকারী, বিরহব্যাধিসন্তপ্ত ভক্তচিত্তের মহৌষধস্বরূপ, যোগ্যাযোগ্যবিচারবিহীন হইয়া ভক্তের নিমিত্ত অখিল চেষ্টাপর, এমন কি আপনাকে পর্য্যন্ত দান করিবার চরম প্রতিজ্ঞা-সমন্বিত-প্রতিশ্রুতিযুক্ত এবং নিজ স্বরূপের একমাত্র ভক্তপ্রেমবশ্যত্ব উল্লাস সহকারে ঘোষণাকারী ও ভক্তগণের প্রতি পরিপূর্ণ আশ্বাসপ্রদানকারী সাক্ষাৎ শ্রীগোবিন্দমুখনিঃসৃত পরম বাক্যামৃত যত্ন-সহকারে সংগৃহীত হইয়াছে । হে পবিত্রদর্শন সাধুগণ ! আপনারা ইহা পান করুন ॥১৫-২২॥
অধ্যায়-পরিচয়ঃ—
অত্রৈব প্রথমাধ্যায়ে উপক্রমামৃতাভিধে । ইহাই 'উপক্রমামৃত' নামক প্রথম অধ্যায় । এই অধ্যায়ে মঙ্গলাচরণ, আত্মবিজ্ঞপ্তি, গ্রন্থ ও অধ্যায়-পরিচয় এবং গ্রন্থের প্রতিপাদ্য বিষয়সম্বন্ধীয় বিচার যথাজ্ঞান সন্নিবেশিত হইয়াছে ॥২৩॥
দ্বিতীয়াধ্যায়কে নাম শ্রীশাস্ত্রবচনামৃতে । 'শ্রীশাস্ত্রবচনামৃত' নামক দ্বিতীয় অধ্যায়ে প্রপত্তিবিষয়ক নানা প্রকার শাস্ত্রোক্তি সমূহ সংগৃহীত হইয়াছে ॥২৪॥
তৃতীয়তোঽষ্টমং যাবৎ শ্রীভক্তবচনামৃতে । তৃতীয়াধ্যায় হইতে অষ্টমাধ্যায় পর্য্যন্ত 'শ্রীভক্তবচনামৃত' নামক এই ছয়টি অধ্যায়ে বহু ভাগবতের শ্রীমুখবিগলিত শ্লোক উদ্ধার করিয়া ষড়ঙ্গ প্রপত্তির বিষয় বলা হইয়াছে ॥২৫॥
আনুকূল্যস্য সঙ্কল্পঃ প্রাতিকূল্য-বিবর্জ্জনম্ । অনুকূল বিষয়ের সঙ্কল্প, প্রতিকূল বিষয়ের বর্জ্জন, (শ্রীকৃষ্ণ) রক্ষা করিবেন—এইরূপ বিশ্বাস, কৃষ্ণকে নিজ স্বামীত্বে বরণ, তাঁহাতে আত্মনিক্ষেপ এবং নিজ দীনহীনতার বোধ—এই ক্রমে ছয়প্রকার শরণাগতির প্রত্যেকটি এক এক অধ্যায়ে সংগৃহীত হইয়াছে ॥২৬-২৭॥
অধ্যায়ে নবমে নাম ভগবদ্বচনামৃতে । 'শ্রীভগবদ্বচনামৃত' নামক নবম অধ্যায়ে সাক্ষাৎ শ্রীভগবানের শ্রীমুখনিঃসৃত শ্লোকামৃত সমাহৃত হইয়াছে ॥২৮॥
দশমে চরমাধ্যায়ে চাবশেষামৃতাভিধে । 'অবশেষামৃত' নামক শেষ দশমাধ্যায়ে গুরুকৃষ্ণস্মৃতির মধ্যে এই গ্রন্থের উপসংহার করা হইল ॥২৯॥
উদ্ধৃতশ্লোকপূর্ব্বে তু তদর্থ-সুপ্রকাশকম্ । উদ্ধৃত শ্লোকের পূর্ব্বে সেই শ্লোকমর্ম্মপ্রকাশক বাক্য যথাজ্ঞান যত্নপূর্ব্বক সন্নিবিষ্ট হইল ॥৩০॥
ভগবদ্গৌরচন্দ্রানাং বদনেন্দুসুধাত্মিকা । ভগবান্ শ্রীগৌরচন্দ্রের শ্রীমুখচন্দ্রনিঃসৃত শ্লোকামৃতসমূহ ভক্তগণের উক্ত শ্লোকের সহিতই সন্নিবিষ্ট হইয়াছে । যেহেতু ঐগুলি ভক্তভাব অবলম্বন করিয়াই প্রকাশিত হইয়াছে ॥৩১॥
প্রপত্ত্যা সহ চানন্য-ভক্তের্নৈকট্যহেতুতঃ । প্রপত্তির সহিত অনন্যভক্তির নিকট সম্বন্ধহেতু অনন্যভক্তি-সম্বন্ধীয় বহুবাক্য এখানে উদ্ধৃত হইল ॥৩২॥
ভগবদ্ভক্ত-শাস্ত্রানাং সম্বন্ধোঽস্তি পরস্পরম্ । শ্রীভগবদ্বচনামৃত, শ্রীভক্তবচনামৃত ও শ্রীশাস্ত্রবচনামৃত সকলেরই পরস্পর সম্বন্ধ বিদ্যমান । তথাপি সেই সেই বিষয়ের প্রাধান্যহেতু ভিন্ন ভিন্ন নামকরণ হইল ॥৩৩॥
প্রত্যধ্যায়বিশেষস্তু তত্র তত্রৈব বক্ষ্যতে । প্রত্যেক অধ্যায়ের বিশেষত্ব সেই সেই অধ্যায়ে বলা হইবে । এক্ষণে (এই বিষয়ে) মহাজনের বিচারসম্বন্ধীয় সামান্য কিছু আলোচনা করা হইতেছে ॥৩৪॥
বস্তু-নির্ণয়ঃ—
ভগবদ্ভক্তিতঃ সর্ব্বমিত্যুৎসৃজ্য বিধেরপি । শ্রীভগবানের সেবাদ্বারাই সমস্ত সিদ্ধি হয়—এই প্রকার বিশ্বাসচালিত হইয়া শাস্ত্রবিধিরও দাসত্ব পরিত্যাগপূর্ব্বক সর্ব্বতোভাবে একমাত্র কৃষ্ণপাদপদ্মাশ্রয়কেই শরণাগতি কহে ॥৩৫॥
সর্ব্বান্তর্যামিতাং দৃষ্ট্বা হরেঃ সম্বন্ধতোঽখিলে । কাহারও কাহারও মতে ভগবানের সর্ব্বান্তর্যামিত্বদর্শন দ্বারা নিখিল জীবাদিতে যে অপৃথক্ ভাব বা ভগবদ্দৃষ্টি, তাহাই শরণাগতি । কিন্তু ইহা জ্ঞানভক্তিরই অন্তর্গত অর্থাৎ শুদ্ধভক্তিপর নহে ॥৩৬॥
নিত্যত্বঞ্চৈব শাস্ত্রেষু প্রপত্তের্জ্ঞায়তে বুধৈঃ । পণ্ডিতগণ শাস্ত্রসমূহে প্রপত্তির নিত্যতা সম্বন্ধে জানিয়া থাকেন । যেহেতু অপ্রপন্ন ব্যক্তির মনুষ্যজন্মের বিফলতা শাস্ত্রে ঘোষিত হইয়াছে । সুতরাং প্রপত্তির নিত্যত্ব সিদ্ধ হইতেছে ॥৩৭॥
নান্যদিচ্ছন্তি তৎপাদরজঃপ্রপন্নবৈষ্ণবাঃ । যেহেতু ভগবৎপাদরজঃপ্রপন্ন বৈষ্ণবগণ তদাশ্রয় ব্যতীত অপর কোন কিছুই আকাঙ্ক্ষা করেন না ; অতএব পণ্ডিতগণ প্রপত্তিকে সাধ্যতত্ত্ব বলিয়া উক্তি করেন ॥৩৮॥
ভবদুঃখবিনাশশ্চ পরনিস্তারযোগ্যতা । প্রপত্তি দ্বারাই জননমরণাদি ক্লেশসমূহের বিনাশ, অন্য ব্যক্তিকে সেই ক্লেশ হইতে নিস্তারের যোগ্যতা, বিষ্ণুর পরমপদ ও শ্রীকৃষ্ণসেবা লভ্য হইয়া থাকে ॥৩৯॥
শ্রবণকীর্ত্তনাদীনাং ভক্ত্যঙ্গানাং হি যাজনে । শ্রীহরিচরণে শরণাগতি দ্বারাই শ্রবণকীর্ত্তনাদি ভক্ত্যঙ্গসমূহের যাজনে অসমর্থ ব্যক্তিরও সর্ব্বলাভ হইয়া থাকে ॥৪০॥
সখ্যরসাশ্রিতপ্রায়া সেতি কেচিৎ বদন্তি তু । কেহ কেহ বলিয়া থাকেন যে, প্রপত্তি প্রায় সখ্যরসাশ্রিত । কিন্তু মাধুর্য্যাদি রসে প্রপন্নগণের প্রবেশ নাই, এরূপ নহে ॥৪১॥
সকৃৎ প্রবৃত্তিমাত্রেণ প্রপত্তিঃ সিধ্যতীতি যৎ । যেহেতু একবারমাত্র প্রবৃত্ত হইলেই প্রপত্তি সিদ্ধ হয়, সুতরাং প্রপত্তিতে লোভ-উৎপাদনের নিমিত্ত তদ্বিষয়ে আলোচনার প্রয়োজন আছে ॥৪২॥
অপি তদানুকূল্যাদি-সঙ্কল্পাদ্যঙ্গলক্ষণাৎ । অধিকন্তু প্রপত্তির অঙ্গসমূহের মধ্যে আনুকূল্য-প্রাতিকূল্যাদি ও তদ্বিষয়ে গ্রহণ-বর্জ্জনাদি উল্লিখিত থাকায় মহাজনগণ প্রপত্তির অনুশীলনীয়ত্বই উপদেশ করিয়া থাকেন ॥৪৩॥
ভবার্ত্তিপীড্যমানো বা ভক্তিমাত্রাভিলাষ্যপি । সংসারভয়প্রপীড়িত ব্যক্তি বা ভক্তিমাত্রাভিলাষী হইয়াও বৈমুখ্যবাধ্যমান ব্যক্তি অনন্যগতি হইয়া শ্রীভগবানের শরণ গ্রহণ করে ॥৪৪॥
আশ্রয়ান্তররাহিত্যে বান্যাশ্রয়বিসর্জ্জনে । আশ্রয়ান্তরের অভাবে বা অন্যাশ্রয় পরিত্যাগে অনন্যগতিত্ব দুই প্রকার হইয়া থাকে ॥৪৫॥
মনোবাক্কায়ভেদাচ্চ ত্রিবিধা শরণাগতিঃ । কায়িক, বাচিক ও মানসিক ভেদে শরণাগতি তিন প্রকার । সর্ব্বাঙ্গসম্পন্না প্রপত্তি শীঘ্রই সম্পূর্ণ ফলপ্রদান করেন । অন্যথা যথাসম্পত্তি ফললাভ হইয়া থাকে ॥৪৬॥
অপূর্ব্বফলত্বং—
বিনাশ্য সর্ব্বদুঃখানি নিজমাধুর্য্যবর্ষণম্ । শরণাগতবৎসল ভগবান্ নিজ প্রপন্নজনের সমস্ত দুঃখ দূর করিয়া চিত্তে নিজ অপ্রাকৃত স্বরূপ-মাধুর্য্য বর্ষণ করেন ॥৪৭॥
অপ্যসিদ্ধং তদীয়ত্বং বিনা চ শরণাগতিম্ । শরণাগতি ব্যতীত "তদীয়ত্ব"ই অসিদ্ধ হইয়া থাকে, এই কারণে পণ্ডিতগণ প্রপত্তির অপূর্ব্বফলপ্রদত্বের (অনন্য-সাধারণ) প্রশংসা করিয়া থাকেন ॥৪৮॥
অথবা বহুভিরেতৈরুক্তিভিঃ কিং প্রয়োজনম্ । অথবা এই সমস্ত বহুবাক্যের প্রয়োজন কি ? একমাত্র গোবিন্দচরণে শরণাপত্তির দ্বারাই নিখিল সিদ্ধি লাভ হইয়া থাকে অর্থাৎ কিছুই অলভ্য থাকে না ॥৪৯॥
শ্রীসনাতন-জীবাদি-মহাজন-সমাহৃতম্ । হে পণ্ডিতগণ ! মাদৃশ নীচজনস্পৃষ্ট হইলেও, শ্রীল সনাতন ও শ্রীজীব প্রভৃতি মহাজন কর্ত্তৃক সমাহৃত অমৃত, আপনারা পান করুন ॥৫০॥ ইতি শ্রীপ্রপন্নজীবনামৃতে উপক্রমামৃতং নাম প্রথমোঽধ্যায়ঃ ।
|
সূচিপত্র: প্রকাশকের নিবেদন নিবেদন ১ উপক্রমামৃতম্ ২ শ্রীশাস্ত্রবচনামৃতম্ শ্রীভক্তবচনামৃতম্—
৩ আনুকূল্যস্য সঙ্কল্পঃ
গ্রন্থকারের রচিত কতিপয় স্তব-রত্ন৪ প্রাতিকূল্য-বিবর্জ্জনম্ ৫ রক্ষিষ্যতীতি বিশ্বাসঃ ৬ গোপ্তৃত্বে-বরণম্ ৭ আত্মনিক্ষেপঃ ৮ কার্পণ্যম্ ৯ শ্রীশ্রীভগবদ্বচনামৃতম্ ১০ অবশেষামৃতম্
শ্রীশ্রীপ্রভুপাদপদ্ম-স্তবকঃ
প্রণতি-দশকম্শ্রীমদ্ভক্তিবিনোদবিরহদশকম্ শ্রীশ্রীমদ্গৌরকিশোরনমস্কারদশকম্ শ্রীশ্রীদয়িতদাসদশকম্ শ্রীমদ্রূপপদরজঃ-প্রার্থনা-দশকম্ শ্রীদয়িত-দাস-প্রণতি-পঞ্চকম্ শ্রীগুরু আরতি-স্তুতি প্রণাম-মন্ত্রম্ |
||||||
বৃক্ষসম ক্ষমাগুণ করবি সাধন । প্রতিহিংসা ত্যজি আন্যে করবি পালন ॥ জীবন-নির্ব্বাহে আনে উদ্বেগ না দিবে । পর-উপকারে নিজ-সুখ পাসরিবে ॥ | |||||||
© Sri Chaitanya Saraswat Math, Nabadwip, West Bengal, India. For any enquiries please visit our contact page. |