আমাদের শ্রীগুরুপরম্পরা :
শ্রীশ্রীল ভক্তিনির্ম্মল আচার্য্য মহারাজ শ্রীশ্রীল ভক্তিসুন্দর গোবিন্দ দেবগোস্বামী মহারাজ শ্রীশ্রীল ভক্তিরক্ষক শ্রীধর দেবগোস্বামী মহারাজ ভগবান্ শ্রীশ্রীল ভক্তি সিদ্ধান্ত সরস্বতী গোস্বামী ঠাকুর
              প্রভুপাদ
“শ্রীচৈতন্য-সারস্বত মঠে সূর্যাস্ত কখনই হয় না” :
আমাদের মঠের পরিচয় ও বৈশিষ্ট্য
 
আমাদের সম্পর্কে শ্রীউপদেশ শ্রীগ্রন্থাগার শ্রীগৌড়ীয় পঞ্জিকা ছবি ENGLISH
 
শ্রীশ্রীপ্রপন্নজীবনামৃতম্


অষ্টমোঽধ্যায়ঃ

শ্রীভক্তবচনামৃতম্
কার্পণ্যম্

 

 

ভগবন্ রক্ষ রক্ষৈবমার্ত্তভাবেন সর্ব্বতঃ ।
অসমোর্দ্ধ্বদয়াসিন্ধোর্হরেঃ কারুণ্যবৈভবম্ ॥১॥
স্মরতাংশ্চ বিশেষেণ নিজাতিশোচ্যনীতাম্ ।
ভক্তানামার্ত্তিভাবস্তু কার্পণ্যং কথ্যতে বুধৈঃ ॥২॥

হে ভগবন্ রক্ষ কর, রক্ষ রক—এই প্রকার আর্ত্তভাবে অসমোর্দ্ধ্ব করুণাসাগর শ্রীহরির করুণাপ্রভাব সর্ব্বপ্রকারে স্মরণকারী এবং বিশেষ করিয়া নিজের অতি শোচনীয় হীনতা-স্মরণকারী ভক্তগণের কাতরভাবকে পণ্ডিতগণ ‘কার্পণ্য’ বলিয়া থাকেন ॥১-২॥

শ্রীকৃষ্ণনাম-স্বরূপস্য পরমপাবনত্বং, জীবস্য দুর্দ্দৈবঞ্চ—
নাম্নামকারি বহুধা নিজসর্ব্বশক্তি-
স্তত্রার্পিতা নিয়মিতঃ স্বরণে ন কালঃ ।
এতাদৃশী তব কৃপা ভগবন্ মমাপি
দুর্দ্দৈবমীদৃশমিহাজনি নানুরাগঃ ॥৩॥
শ্রীশ্রীভগবতশ্চৈতন্যচন্দ্রস্য
ভগবন্নাম পরম পবিত্রকারী, কিন্তু জীবের দুর্দ্দৈব-রূপ বাধা—
“হে ভগবন্, তোমার নামই জীবের সর্ব্বমঙ্গল বিধান করেন, এইজন্যই তোমার ‘কৃষ্ণ’ ‘গোবিন্দাদি’ বহুবিধ নাম বিস্তার করিয়াছ । সেই নামে তুমি স্বীয় সর্ব্বশক্তি অর্পণ করিয়াছ এবং সেই নাম-স্মরণের কালাদি নিয়ম (বিধি বা বিচার) কর নাই । প্রভো ! জীবের পক্ষে এরূপ কৃপা করিয়া তুমি তোমার নামকে সুলভ করিয়াছ ; তথাপি আমার নামাপরাধরূপ দুর্দ্দৈব এরূপ করিয়াছে যে, তোমার সুলভ নামেও আমার অনুরাগ জন্মিতে দেয় না” ॥৩॥
উদ্বুদ্ধ-স্বরূপে স্বভাব-কার্পণ্যম্—
পরমকারুণিকো ন ভবৎপরঃ পরমশোচ্যতমো ন চ মৎপরঃ ।
ইতি বিচিন্ত্য হরে ময়ি পামরে যদুচিতং যদুনাথ তদাচর ॥৪॥
কস্যচিৎ
আত্মার জাগরণে স্বাভাবিক দৈন্য—
হে হরে, তোমার তুল্য পরম করুণাময় আর কেহ নাই এবং আমার অপেক্ষা পরম শোচনীয়দশাগ্রস্তও আর কেহ নাই । হে যদুপতে, এই বিচার করিয়া এই পামরের প্রতি যাহা উচিত হয়, বিধান কর ॥৪॥
মায়াবশজীবস্য মায়াধীশকৃপৈকগতিত্বম্—
নৈতন্মনস্তব কথাসু বিকুণ্ঠনাথ
সম্প্রীয়তে দুরিতদুষ্টমসাধু তীব্রম্ ।
কামাতুরং হর্ষশোকভয়ৈষণার্ত্তং
তস্মিন্ কথং তব গতিং বিমৃশামি দীনঃ ॥৫॥
শ্রীপ্রহ্লাদস্য
মায়াবশ জীবের মায়াধীশ-কৃপাই একমাত্র গতি—
“দুরিত-দূষিত-মন অসাধু মানস । কাম-হর্ষ-শোক-ভয়-এষণার বশ ।
তব কথারতি কিসে হইবে আমার । কিসে কৃষ্ণ তব লীলা করিব বিচার” ॥৫॥
কৃষ্ণোন্মুখ চিত্তে বদ্ধভাবস্য দুর্ব্বিলাস-পরিচয়ঃ—
জিহ্বৈকতোঽচ্যুত বিকর্ষতি মাবিতৃপ্তা
শিশ্নোঽন্যতস্ত্বগুদরং শ্রবণং কুতশ্চিৎ ।
ঘ্রাণোঽন্যতশ্চপলদৃক্ ক্ব চ কর্ম্মশক্তি-
র্বহ্ব্যঃ সপত্ন্য ইব গেহপতিং লুনন্তি ॥৬॥
শ্রীপ্রহ্লাদস্য
কৃষ্ণোন্মুখ চিত্তে বদ্ধভাবের দুর্ব্বিলাস-পরিচয়—
“জিহ্বা টানে রস প্রতি উপস্থ কদর্থে ।
উদর ভোজনে টানে বিষম অনর্থে ॥
চর্ম্ম টানে শয্যাদিতে, শ্রবণ কথায় ।
ঘ্রাণ টানে সুরভিতে, চক্ষু দৃশ্যে যায় ॥
কর্ম্মেন্দ্রিয় কর্ম্মে টানে বহুপত্নী যথা ।
গৃহপতি আকর্ষয় মোর মন তথা ॥
এমত অবস্থা মোর শ্রীনন্দনন্দন ।
কিরূপে তোমার লীলা করিব স্মরণ” ॥৬॥
পরুষোত্তমসেবা-প্রার্থিনো ভক্তস্য নিজ-লজ্জাকরাযোগ্যতা-নিবেদনম্—
মত্তুল্যো নাস্তি পাপাত্মা নাপরাধী চ কশ্চন ।
পরিহারেঽপি লজ্জা মে কিং ব্রুবে পরুষোত্তম ॥৭॥
কস্যচিৎ
শ্রীপুরুষোত্তম-সেবাপ্রার্থী ভক্তের নিজ-লজ্জাকর অযোগ্যতা-নিবেদন—
“হে পুরুষোত্তম, মৎকৃত পাপ ও অপরাধের উল্লেখ করিয়া তৎ পরিহারে চেষ্টা করিতেও আমার লজ্জা হইতেছে” ॥৭॥
মঙ্গলময়ভগবন্নামাভাসে পাপিনামাত্মধিক্কারঃ—
ক্ব চাহং কিতবঃ পাপো ব্রহ্মঘ্নো নিরপত্রপঃ ।
ক্ব চ নারায়ণেত্যেতদ্­ভগবন্নাম মঙ্গলম্ ॥৮॥
অজামিলস্য
ভগবানের মঙ্গলময় নামাভাসে পাপিগণের আত্মধিক্কার—
“কোথায় আমি—কঞ্চক, পাপী, ব্রাহ্মণত্বনাশক, নির্ল্লজ্জ ; আর কোথায় এই মঙ্গলস্বরূপ শ্রীভগবানের ‘নারায়ণ’ নাম” ॥৮॥
শ্রীভগবৎকৃপোদয়ে ব্রহ্মবন্ধূনাং দারিদ্র্যমপি ন বাধকম্—
ক্বাহং দরিদ্রঃ পাপীয়ান্ ক্ব কৃষ্ণঃ শ্রীনিকেতনঃ ।
ব্রহ্মবন্ধুরিতি স্মাহং বাহুভ্যাং পরিরম্ভিতঃ ॥৯॥
শ্রীসুদাম্নঃ
শ্রীভগবৎকৃপা বিপ্রাধমেরও অযোগ্যতানিরপেক্ষ—
“কোথায় আমি অতি পাপিষ্ঠ দরিদ্র, আর কোথায় শ্রীনিকেতন কৃষ্ণ ? অযোগ্য ব্রাহ্মণসন্তান জানিয়াও তিনি আমাকে আলিঙ্গন করিলেন,—ইহা অতি আশ্চর্য্যের বিষয়” ॥৯॥
বিধাতুরপি হরিসম্বন্ধি-পশ্বাদিজন্ম-প্রার্থনা—
তদস্তু মে নাথ স ভূরিভাগোভবেঽত্র বান্যত্র তু বা তিরশ্চাম্ ।
যেনাহমেকোঽপি ভবজ্জনানাং ভূত্বা নিষেবে তব পাদপল্লবম্ ॥১০॥
শ্রীব্রহ্মণঃ
স্বয়ং বিধাতার হরিসেবানুকূল পশুপক্ষীজন্ম প্রার্থনা—
“এই ব্রহ্ম জন্মেই বা অন্য কোন ভবে ।
পশুপক্ষী হয়ে জন্মি তোমার বিভবে ॥
এইমাত্র আশা তব ভক্তগণ-সঙ্গে ।
থাকি তব পদসেবা করি নানা রঙ্গে” ॥১০॥
অনন্যশরণেষু মৃগেষ্বপি ভগবৎকৃপা—
কিং চিত্রমচ্যুত তবৈতদশেষবন্ধো
দাসেষ্বনন্যশরণেষু যদাত্মসাত্ত্বম্ ।
যোঽরোচয়ৎ সহ মৃগৈঃ স্বয়মীশ্বরাণাং
শ্রীমৎকিরীটতটপীড়িতপাদপীঠঃ ॥১১॥
শ্রীমদুদ্ধবস্য
অনন্যশরণ পশুতেও ভগবানের কৃপা—
“হে অখিলবান্ধব শ্রীকৃষ্ণ ! রামরূপে ব্রহ্মাদি ঈশ্বরগণের সুরম্য কিরীটাগ্রভাগ দ্বারা আপনার পাদপীঠ বিলুণ্ঠিত হইলেও আপনি তৎ কালে বানরগণের সহিত প্রীতিপূর্ব্বক সখ্য স্থাপন করিয়াছিলেন । সুরতাং সেই আপনি যে নন্দ মহারাজ, গোপী, বলি প্রভৃতি একান্তাশ্রিত দাসগণের অধীনতা প্রদর্শন করিতেছেন, ইহা আশ্চর্য্য নহে” ॥১১॥
তৎকৃপোপলব্ধমাহাত্ম্যস্য তৎকৈঙ্কর্য্যপ্রার্থনাপি ঔদ্ধত্যবদেব প্রতীয়তে—
ধিগশুচিমবিনীতং নির্দ্দয়ং মামলজ্জং
পরমপুরুষ যোঽহং যোগিবর্য্যাগ্রগণ্যৈঃ ।
বিধি-শিব-সনকাদ্যৈর্ধ্যাতুমত্যন্তদূরং
তব পরিজনভাবং কাময়ে কামবৃত্তঃ ॥১২॥
শ্রীযামুনাচার্য্যস্য
ভগবৎকৃপায় তন্মাহাত্ম্য-উপলব্ধিতে তৎকৈঙ্কর্য্য-প্রার্থনাও ঔদ্ধত্যবৎ অনুভূত—
অশুচি, অবিনীত, নিষ্ঠুর ও নির্ল্লজ্জ আমাকে ধিক্ ; যেহেতু স্বেচ্ছাচারী হইয়া, হে পরম পুরুষ, বিধি-শিব-সনকাদি যোগীন্দ্র শ্রেষ্ঠগণেরও ধারণার সুদূরাতীত তোমার কৈঙ্কর্য্য কামনা করিতেছি ॥১২॥
উপলব্ধ-স্বদোষ-সহস্রস্যাপি তচ্চরণ-পরিচর্য্যালোভোঽপ্যবার্য্যমাণঃ—
অমর্য্যাদঃ ক্ষুদ্রশ্চলমতিরসূয়াপ্রসবভূঃ
কৃতঘ্নো দুর্ম্মানী স্মরপরবশো বঞ্চনপরঃ ।
নৃশংসঃ পাপিষ্ঠঃ কথমহমিতো দুঃখজলধে-
রপারাদুত্তীর্ণস্তব পরিচরেয়ং চরণয়োঃ ॥১৩॥
শ্রীযামুনাচার্য্যস্য
নিজের সহস্র দোষ থাকিলেও ভক্ত ভগবৎপরিচর্য্যার লোভ সম্বরণ করিতে পারেন না—
হে ভগবন্, মর্য্যাদাজ্ঞানহীন, ক্ষুদ্র, চঞ্চল, অসূয়াপর, অকৃতজ্ঞ, দুরভিমান, কামপরবশ, প্রবঞ্চক, ক্রূর ও পাপাত্মা আমি কিরূপে এই অপার দুঃখ-সমুদ্র অতিক্রম করিয়া তোমার শ্রীপাদপদ্মের পরিচর্য্যা লাভ করিব ॥১৩॥
প্রপন্নস্য প্রপত্তিসামান্যকৃপায়ামপি নিজাযোগ্যতা-প্রতীতিঃ—
ননু প্রযত্নঃ সকৃদেব নাথ
তবাহমস্মীতি চ যাচমানঃ ।
তবানুকম্প্যঃ স্মরতঃ প্রতিজ্ঞাং
মদেকবর্জ্জং কিমিদং ব্রতন্তে ॥১৪॥
শ্রীযামুনাচার্য্যস্য
শরণাগত-মাত্রের প্রতি স্বাভাবিকী ভগবৎকৃপা হইলেও শরণাগতের নিজেকে অযোগ্যবুদ্ধি—
হে নাথ, যে ব্যক্তি তোমার প্রতিজ্ঞা স্মরণ করিয়া “আমি তোমারই” বলিয়া একমাত্র শরণাগত হয়, সেও তোমার কৃপাপাত্র । কেবলমাত্র আমাকেই বর্জ্জন করিয়া কি তোমার এই প্রতিজ্ঞা ? ১৪॥
সুস্পষ্টদৈন্যেনাত্মবিজ্ঞপ্তিঃ—
ন নিন্দিতং কর্ম্ম তদস্তি লোকে
সহস্রশো যন্ন ময়া ব্যধায়ি ।
সোঽহং বিপাকাবসরে মুকুন্দ
ক্রন্দামি সম্প্রত্যগতিস্তবাগ্রে ॥১৫॥
শ্রীযামুনাচার্য্যস্য
সুস্পষ্ট দৈন্যের সহিত আত্মবিজ্ঞপ্তি—
হে মুকুন্দ, ইহলোকে এমন নিন্দিত কার্য্য নাই, যাহা আমি সহস্র সহস্রবার না করিয়াছি । সেই আমি এখন পরিণাম-সময়ে গত্যন্তরহীন হইয়া তোমার সম্মুখে ক্রন্দন করিতেছি ॥১৫॥
অসীমকৃপস্য কৃপায়াঃ শেষসীমান্তর্গতমাত্মানমনুভবতি—
নিমজ্জতোঽনন্ত ভবার্ণবান্তশ্চিরায় মে কূলমিবাসি লব্ধঃ ।
ত্বয়াপি লব্ধং ভগবন্নিদানীমনুত্তমং পাত্রমিদং দয়ায়াঃ ॥১৬॥
শ্রীযামুনাচার্য্যস্য
অসীমকৃপাময় ভগবানের কৃপার শেষসীমার মধ্যে আপনাকে অনুভব—
হে ভগবন্, অগাধ, অনন্ত সংসার-সমুদ্র মধ্যে নিমগ্ন আমি চিরকালের নিমিত্ত কূল-ভূমিস্বরূপে তোমারকে প্রাপ্ত হইয়াছি । তুমিও এতদিনে তোমার দয়াযোগ্য সর্ব্বোত্তম পাত্র লাভ করিয়াছ ॥১৬॥
ভগবদ্ভক্তস্য স্বস্মিন্ দীনত্ববুদ্ধিরেব স্বাভাবিকী, ন তু ভক্তত্ববুদ্ধিঃ—
দীনবন্ধুরিতি নাম তে স্মরন্ যাদবেন্দ্র পতিতোঽহমুৎসহে ।
ভক্তবৎসলতয়া ত্বয়ি শ্রুতে মামকং হৃদয়মাশু কম্পতে ॥১৭॥
জগন্নাথস্য
ভগবদ্ভক্তের আপনাকে দীনবুদ্ধিই স্বাভাবিক, ভক্তিবুদ্ধি স্বাভাবিক নহে—
হে যাদবেন্দ্র ! তোমার ‘দীনবন্ধু’ নাম স্মরণ করিয়া পতিত আমি উৎসাহিত হই । কিন্তু তুমি ‘ভক্তবৎসল’ শ্রবণ করিয়া সম্প্রতি আমার হৃৎকম্প উপস্থিত হইতেছে ॥১৭॥
শিববিরিঞ্চ্যাদি-দেবসেব্যে স্বসম্বন্ধলেশাসম্ভাবনয়া নৈরাশ্যম্—
স্তাবকাস্তব চতুর্ম্মুখাদয়ো
ভাবকা হি ভগবন্ ভবাদয়ঃ ।
সেবকাঃ শতমখাদয়ঃ সুরা
বাসুদেব যদি কে তদা বয়ম্ ॥১৮॥
ধনঞ্জয়স্য
শিববিরিঞ্চ্যাদি-দেবসেব্য ভগবানে নিজ সম্বন্ধলেশের অসম্ভাবনায় নৈরাশ্যবোধ—
হে ভগবন্, যদি চতুরানন-প্রমুখ তোমার স্তবকারী হইলেন, পঞ্চানন-প্রমুখ দেবগণ তোমার ধ্যানকারী হইলেন, শতক্রতু প্রভৃতি দেবগণ তোমার আজ্ঞাকারী হইলেন, তবে হে বাসুদেব, আমরা তোমার কে ? ১৮॥
গৌরাবতারস্যাত্যুৎকৃষ্টফলদত্বমত্যৌদার্য্যত্বঞ্চ বিলোক্য তত্রাতিলোভত্বাদাত্মন্যতিবঞ্চিতত্ববোধঃ—
বঞ্চিতোঽস্মি বঞ্চিতোঽস্মি বঞ্চিতোঽস্মি ন সংশয়ঃ ।
বিশ্বং গৌররসে মগ্নং স্পর্শোঽপি মম নাভবৎ ॥১৯॥
শ্রীপ্রবোধানন্দপাদানাং
শ্রীগৌরাবতারের অত্যুৎকৃষ্ট ফলদাতৃত্ব ও ঔদার্য্য দর্শনে তৎপ্রতি অতিলোভবশতঃ নিজেকে অতিবঞ্চিত বোধ—
আমি বঞ্চিত হইলাম, বঞ্চিত হইলাম, নিঃসন্দেহে বঞ্চিত হইলাম । সমগ্র বিশ্ব শ্রীগৌরপ্রেমে মগ্ন হইল, হায় আমার ভাগ্যে স্পর্শমাত্রও ঘটিল না ॥১৯॥
শ্রীগৌরসেবারসগৃধ্নুজনস্য তদপ্রাপ্ত্যাশঙ্কয়া খেদোক্তিঃ
অদর্শনীয়ানপি নীচজাতীন্
সংবীক্ষতে হন্ত তথাপি নো মাম্ ।
মদেকবর্জ্জ্যং কৃপয়িষ্যতীতি
নির্ণীয় কিং সোঽবততার দেবঃ ॥২০॥
শ্রীপ্রতাপরুদ্রস্য
শ্রীগৌরসেবালোলুপজনের তাহা অপ্রাপ্তির আশঙ্কায় খেদোক্তি—
“অদর্শনীয় নীচজাতিগণকেও দর্শন দিতেছেন, তথাপি আমাকে দর্শন দিবেন না ! আমি বিনা সকল জীবকে কৃপা করিবেন, ইহাই স্থির করিয়া কি তিনি (শ্রীচৈতন্যদেব) অবতীর্ণ হইয়াছেন ?” ২০॥
প্রেমময়-স্ব-নাথাতিবদান্যতোপলব্ধেস্তন্নিত্য-পার্ষদস্য দৈন্যোক্তিঃ
ভবাব্ধিং দুস্তরং যস্য
দয়য়া সুখমুত্তরেৎ ।
ভারাক্রান্তঃ খরোঽপ্যেষ
তং শ্রীচৈতন্যমাশ্রয়ে ॥২১॥
শ্রীসনাতনপাদানাং
প্রেমময় নিজনাথের অতিবদান্যতা উপলব্ধিহেতু তৎপার্ষদের দৈন্যোক্তি—
যাঁহার দয়ায় দুস্তর ভব-সমুদ্র সুখে উত্তীর্ণ হয়, এই ভারাক্রান্ত খরও সেই শ্রীচৈতন্যচরণ আশ্রয় করিতেছে ॥২১॥
মহাপ্রেমপীযূষবিন্দুপ্রার্থিনঃ স্বদৈন্যানুভূতিঃ—
প্রসারিত-মহাপরেম-পীযূষ-রসসাগরে ।
চৈতন্যচন্দ্রে প্রকটে যো দীনো দীন এব সঃ ॥২২॥
শ্রীপ্রবোধানন্দপাদানাং
মহাপ্রেমামৃতবিন্দুপ্রার্থীর নিজ দৈন্যানুভূতি—
অনন্ত-প্রসারিত মহাপ্রেমরসামৃতসিন্ধু শ্রীচৈতন্যচন্দ্রের আবির্ভাবেও যে ব্যক্তি দরিদ্র রহিল, সে বাস্তবিক দরিদ্র ॥২২॥
বিপ্রলম্ভরসাশ্রিতস্য পরমসিদ্ধস্যাপি বিরহদুঃখে হৃদয়োদ্ঘাটনম্—
অয়ি দীনদয়ার্দ্রনাথ হে মথুরানাথ কদাবলোক্যসে ।
হৃদয়ং ত্বদলোককাতরং দয়িত ভ্রাম্যতি কিং করোম্যহম্ ॥২৩॥
শ্রীমাধবেন্দ্রপুরীপাদানাং
বিপ্রলম্ভরসাশ্রিত পরমসিদ্ধেরও বিরহদুঃখে হৃদয়োদ্ঘাটন—
“ওহে দীনদয়ার্দ্রনাথ ! ওহে মথুরানাথ ! কবে তোমাকে দর্শন করিব ? তোমার দর্শনাভাবে আমার কারত হৃদয় অস্থির হইয়া পড়িয়াছে ! হে দয়িত, আমি এখন কি করিব ?” ২৩॥
শ্রীকৃষ্ণবিরহে অসহায়বৎ স্বনাথকরুণাকর্ষণম্—
অমূন্যধন্যানি দিনান্তরাণি
হরে ত্বদালোকনমন্তরেণ ।
অনাথবন্ধো করুণৈকসিন্ধো
হা হন্ত হা হন্ত কথং নয়ামি ॥২৪॥
শ্রীবিল্বমঙ্গলস্য
শ্রীকৃষ্ণবিরহে অসহায়ভাবে প্রাণনাথের কৃপা আকর্ষণ—
“হে হরি, হে অনাথবন্ধো ! হে করুণার একমাত্র সমুদ্র ! তোমার দর্শন বিনা আমার এই অধন্য দিবারাত্রি সকল আমি কিরূপে যাপন করিব ?” ২৪॥
ব্রজেন্দ্রনন্দনবিরহে তজ্জীবিতেশ্বর্য্যাঃ স্বয়ংরূপায়া অপি দাসীবৎ কার্পণ্যম্—
হা নাথ রমণ প্রেষ্ঠ ক্বাসি ক্বাসি মহাভুজ ।
দাস্যাস্তে কৃপণায়া মে সখে দর্শয় সন্নিধিম্ ॥২৫॥
শ্রীরাধিকায়াঃ
ব্রজেন্দ্রনন্দনবিরহে তজ্জীবিতেশ্বরী শ্রীরাধিকারও দাসীবৎ দৈন্যোক্তি—
“হা নাথ ! হা রমণ ! হা প্রিয়তম ! হা মহাবাহো ! তুমি কোথায় ? আমি তোমার অতি দীনা দাসী, আমাকে নিকটস্থা কর” ॥২৫॥
বিপ্রলম্ভে শ্রীকৃষ্ণবল্লভানামপি গৃহাসক্তবদ্দৈন্যোক্তিঃ—
আহুশ্চ তে নলিননাভ পদারবিন্দং
যোগেশ্বরৈর্হৃদি বিচিন্ত্যমগাধবোধৈঃ ।
সংসারকূপপতিতোত্তরণাবলম্বং
গেহং জুষামপি মনস্যুদিয়াৎ সদা নঃ ॥২৬॥
শ্রীগোপিকানাং
শ্রীকৃষ্ণবল্লভা গোপীগণেরও বিরহে গৃহাসক্তবৎ দৈন্যোক্তি—
“গোপীগণ বলিলেন,—হে কমলনাভ, সংসারকূপে পতিতজনের উত্তরণের একমাত্র অবলম্বনস্বরূপ তোমার পাদপদ্ম, যাহা অগাধবোধ যোগেশ্বরদিগের হৃদয়েই সর্ব্বদা চিন্তনীয়, গৃহসেবী আমাদিগের মনে তাহা উদিত হউন” ॥২৬॥
বিরহকাতরো ভক্ত আত্মনমত্যসহায়ং মন্যতে—
গতো যামো গতৌ যামৌ গতা যামা গতং দিনম্ ।
হা হন্ত কিং করিষ্যামি ন পশ্যামি হরের্মুখম্ ॥২৭॥
শঙ্করস্য
বিরহকাতর ভক্তের নিজকে অতি অসহায় জ্ঞান—
“এক প্রহর গেল, দুই প্রহর গেল, তিন প্রহরও গেল, দিনও গেল, হায় হায় আমি কি করিব ? শ্রীহরিমুখচন্দ্রের দর্শন পাইলাম না” ॥২৭॥
গোবিন্দবিরহে সর্ব্বশূন্যতয়া অত্যনাথবদ্-দীর্ঘদুঃখবোধরূপ-প্রেমচেষ্টা—
যুগায়িতং নিমেষেণ চক্ষুষা প্রাবৃষায়িতম্ ।
শূন্যায়িতং জগৎসর্ব্বং গোবিন্দবিরহেণ মে ॥২৮॥
শ্রীশ্রীভগবতশ্চৈতন্যচন্দ্রস্য
শ্রীকৃষ্ণবিরহে সমস্ত শূন্যবোধহেতু অতি অনাথের ন্যায় দীর্ঘদুঃখবোধরূপ প্রেমচেষ্টা লক্ষিত—
“হে গোবিন্দ, তোমার অদর্শনে আমার নিমেষ সকল যুগবৎ বোধ হইতেছে ; চক্ষু হইতে বর্ষার ন্যায় জল পড়িতেছে ; সমস্ত জগৎ শূন্যপ্রায় বোধ হইতেছে” ॥২৮॥
শ্রীকৃষ্ণৈকবল্লভায়াস্তদ্বিরহে অনুভূতাখিলপ্রাণচেষ্টা-ব্যর্থতায়া দেহ-যাত্রানির্ব্বাহস্যাপি লজ্জাকরশোচ্যব্যবহারবৎ প্রতীতিঃ—
শ্রীকৃষ্ণরূপাদিনিষেবণং বিনা
ব্যর্থানি মেঽহান্যখিলেন্দ্রিয়াণ্যলম্ ।
পাষাণশুষ্কেন্ধভারকাণ্যহো
বিভর্ম্মি বা তানি কথং হতত্রপঃ ॥২৯॥
কেষাঞ্চিৎ
কৃষ্ণৈকবল্লভার কৃষ্ণবিরহে অখিল প্রাণচেষ্টা ব্যর্থ অনুভূত হওয়ায় নিজ দেহযাত্রাও লজ্জাকর শোচ্য বলিয়া বোধ—
“হে সখি, শ্রীকৃষ্ণের রূপ-গুণ-লীলা সেবন না করিয়া আমার অখিল ইন্দ্রিয় সকল ব্যর্থ হইতেছে, এখন সেই সকল পাষাণ ও শুষ্ক কাষ্ঠভার সদৃশ ইন্দ্রিয়গুলিকে আমি নির্ল্লজ্জ হইয়া কিরূপে ধারণ করিতে সক্ষম হইব ?” ২৯॥
অতিবিপ্রলম্ভে জীবিতপ্রণয়িন্যা রোদনমপি নিজদম্ভমাত্রত্বেন প্রতীয়তে—
যাস্যামীতি সমুদ্যতস্য বচনং বিশ্রব্ধমাকর্ণিতং
গচ্ছন্ দূরমুপেক্ষিতো মুহুরসৌ ব্যাবৃত্য পশ্যন্নপি ।
তচ্ছূন্যে পুনরাগতাস্মি ভবনে প্রাণাস্ত এব স্থিতাঃ
সখ্যঃ পশ্যত জীবিতপ্রণয়িনী দম্ভাদহং রোদিমি ॥৩০॥
রুদ্রস্য
অতি বিরহে জীবিত প্রণয়িনীর রোদনেও নিজের দম্ভমাত্র প্রতীতি—
“যাইতেছি” বলিয়া গমনোদ্যত তাঁহার বাক্য বেশ নিশ্চিন্ত চিত্তে শ্রবণ করিলাম, যাইতে যাইতে দূর হইতে পুনঃ পুনঃ মুখ ফিরাইয়া অবলোকন করিলেও উহা উপেক্ষা করিলাম, কৃষ্ণশূন্য গৃহে আবার ফিরিয়া আসিয়াছি এবং আমার প্রাণ এখনও রহিয়াছে ; হে সখীগণ ! তোমরা দেখ, তাঁহার “প্রাণ-প্রণয়িনী” বলিয়া দম্ভপূর্ব্বক আমি কেমন রোদন করিতেছি ॥৩০॥
লব্ধশ্রীকৃষ্ণপ্রেম-পরাকাষ্ঠস্য প্রতিক্ষণ-বর্দ্ধমান-তদাস্বাদন-লোলুপতয়া তদপ্রাপ্তিবৎ প্রতীতিঃ ; তত্র শ্রীকৃষ্ণপ্রেম্­ণস্তু সর্ব্বোচ্চ সৌভাগ্যকর-পরমসুদুর্ল্লভপুমর্থত্বঞ্চ সূচিতম্—
ন প্রেমগন্ধোঽস্তি দরাপি মে হরৌ
ক্রন্দামি সৌভাগ্যভরং প্রকাশিতুম্ ।
বংশীবিলাস্যাননলোকনং বিনা
বিভর্ম্মি যৎ প্রাণপতঙ্গকান্ বৃথা ॥৩১॥
শ্রীশ্রীভবগতশ্চৈতন্যচন্দ্রস্য
শ্রীকৃষ্ণপ্রেমের চরমাবস্থা প্রাপ্ত ব্যক্তির ক্ষণে ক্ষণে বর্দ্ধমান প্রেমাস্বাদন-লোভহেতু প্রেমের অপ্রাপ্তিবৎ প্রতীতি । এখানে কৃষ্ণ-প্রেমের সর্ব্বশ্রেষ্ঠ সৌভাগ্যপ্রদত্ব ও পরম সুদুর্ল্লভ পুরুষার্থত্ব সূচিত—
“হে সখি, কৃষ্ণ আমার সামান্য প্রেমগন্ধও নাই । তবে যে আমি ক্রন্দন করি, তাহা কেবল নিজের সৌভাগ্যাতিশয্য প্রকাশ করিবার জন্য । বংশীবদন কৃষ্ণের দর্শন বিনা আমি যে প্রাণপতঙ্গ ধারণ করি, তাহা বৃথা” ॥৩১॥

ইতি শ্রীপ্রপন্নজীবনামৃতে শ্রীভক্তবচনামৃতান্তর্গতং
কর্পণ্যং নাম অষ্টমোঽধ্যায়ঃ ।

 

 

← ৭ আত্মনিক্ষেপঃ ৯ শ্রীশ্রীভগবদ্বচনামৃতম্ →

 

সূচিপত্র:
প্রকাশকের নিবেদন
নিবেদন
১ উপক্রমামৃতম্
২ শ্রীশাস্ত্রবচনামৃতম্
শ্রীভক্তবচনামৃতম্—
৩ আনুকূল্যস্য সঙ্কল্পঃ
৪ প্রাতিকূল্য-বিবর্জ্জনম্
৫ রক্ষিষ্যতীতি বিশ্বাসঃ
৬ গোপ্তৃত্বে-বরণম্
৭ আত্মনিক্ষেপঃ
৮ কার্পণ্যম্
৯ শ্রীশ্রীভগবদ্বচনামৃতম্
১০ অবশেষামৃতম্
গ্রন্থকারের রচিত কতিপয় স্তব-রত্ন
শ্রীশ্রীপ্রভুপাদপদ্ম-স্তবকঃ
শ্রীমদ্ভক্তিবিনোদবিরহদশকম্
শ্রীশ্রীমদ্­গৌরকিশোরনমস্কারদশকম্
শ্রীশ্রীদয়িতদাসদশকম্
শ্রীমদ্রূপপদরজঃ-প্রার্থনা-দশকম্
শ্রীদয়িত-দাস-প্রণতি-পঞ্চকম্
প্রণতি-দশকম্
শ্রীগুরু আরতি-স্তুতি
প্রণাম-মন্ত্রম্

বৃক্ষসম ক্ষমাগুণ করবি সাধন । প্রতিহিংসা ত্যজি আন্যে করবি পালন ॥ জীবন-নির্ব্বাহে আনে উদ্বেগ না দিবে । পর-উপকারে নিজ-সুখ পাসরিবে ॥