আমাদের শ্রীগুরুপরম্পরা :
শ্রীশ্রীল ভক্তিনির্ম্মল আচার্য্য মহারাজ শ্রীশ্রীল ভক্তিসুন্দর গোবিন্দ দেবগোস্বামী মহারাজ শ্রীশ্রীল ভক্তিরক্ষক শ্রীধর দেবগোস্বামী মহারাজ ভগবান্ শ্রীশ্রীল ভক্তি সিদ্ধান্ত সরস্বতী গোস্বামী ঠাকুর
              প্রভুপাদ
“শ্রীচৈতন্য-সারস্বত মঠে সূর্যাস্ত কখনই হয় না” :
আমাদের মঠের পরিচয় ও বৈশিষ্ট্য
 
আমাদের সম্পর্কে শ্রীউপদেশ শ্রীগ্রন্থাগার শ্রীগৌড়ীয় পঞ্জিকা ছবি ENGLISH
 
শ্রীশ্রীপ্রপন্নজীবনামৃতম্


দ্বিতীয়োঽধ্যায়ঃ

শ্রীশাস্ত্রবচনামৃতম্

 

শ্রুতিস্মৃত্যাদিশাস্ত্রেষু প্রপত্তির্যন্নিরূপ্যতে ।
তদুক্তং দ্বিতীয়াধ্যায়ে শ্রীশাস্ত্রবচনামৃতে ॥১॥

শ্রুতি স্মৃতি প্রভৃতি শাস্ত্রসমূহে প্রপত্তি যে-ভাবে নিরূপিত হইয়াছেন, তাহা শ্রীশাস্ত্রবচনামৃত নামক এই দ্বিতীয় অধ্যায়ে লিখিত হইল ॥১॥

প্রপত্তিঃ শ্রুতৌ—
যো ব্রহ্মাণং বিদধাতিপূর্ব্বং যো ব্রহ্মবিদ্যাং
তস্মৈ গাঃ পালয়তি স্ম কৃষ্ণঃ ।
তং হি দেবমাত্মবৃত্তিপ্রকাশং
মুমুক্ষুর্বৈ শরণমমুং ব্রজেৎ ॥২॥
তাপণ্যাং (ব্রঃ সং টীকা ধৃত)

প্রপত্তি-শ্রুতি-প্রসিদ্ধ—
পূর্ব্বে যিনি ব্রহ্মাকে সৃষ্টি করিয়া ব্রহ্মবিদ্যা দান করিয়াছেন, সেই কৃষ্ণ গোসমূহ (শ্রুতিসমূহ) পালন করিয়া থাকেন । মুক্তিকামী ব্যক্তির আত্মবৃত্তিপ্রকাশক সেই দেবতার শরণ গ্রহণ করা উচিত ॥২॥

তাদাত্ম্যযাথার্থ্যং স্মৃতৌ—
অহঙ্কৃতির্মকারঃ স্যান্নকারস্তন্নিষেধকঃ ।
তস্মাত্তু নমসা ক্ষেত্রিস্বাতন্ত্র্যং প্রতিষিধ্যতে ॥৩॥
ভগবৎপরতন্ত্রোঽসৌ তদায়ত্তাত্মজীবনঃ ।
তস্মাৎ স্বসামর্থ্যবিধিং ত্যজেৎ সর্ব্বমশেষতঃ ॥৪॥
পাদ্ম-উত্তরখণ্ড

প্রপত্তির উপযোগিতার কারণ স্মৃতিশাস্ত্রে—
'ম'কারের অর্থ অহঙ্কার, 'ন'কার তন্নিষেধবাচক, অতএব নমস্কারের দ্বারা নমস্কর্ত্তার স্বতন্ত্রতা নিষিদ্ধ হইতেছে । জীব স্বভাবতঃ ভগবত্তত্ত্বের অধীন । জীবের স্বরূপ ও স্বরূপবৃত্তি সেই ভগবানেরই আয়ত্তাধীন । সুতরাং নিজ সামর্থ্য-বিধানসকল নিঃশেষরূপে পরিত্যাগ করা কর্ত্তব্য ॥৩-৪॥

অহঙ্কারাদপ্রপত্তিঃ—
অহঙ্কারনিবৃত্তানাং কেশবো নহি দূরগঃ ।
অহঙ্কারযুতানাং হি মধ্যে পর্ব্বতরাশয়ঃ ॥৫॥
ব্রঃ বৈঃ

অহঙ্কারই প্রপত্তির বাধা—
ভগবান্ কেশব জড়াভিনিবেশমুক্ত ব্যক্তিগণের নিকটেই থাকেন ; কিন্তু অহঙ্কারী ব্যক্তিগণ ও তাঁহার মধ্যে বহু পর্ব্বতপ্রমাণ ব্যবধান বিদ্যমান ॥৫॥

অদ্বয়জ্ঞানমনাশ্রিতানামেব জগদ্দর্শনম্—
যাবৎ পৃথক্ত্বমিদমাত্মন ইন্দ্রিয়ার্থ-
মায়াবলং ভগবতো জন ঈশ পশ্যেৎ ।
তাবন্ন সংসৃতিরসৌ প্রতিসংক্রমেত
ব্যর্থাপি দুঃখনিবহং বহতী ক্রিয়ার্থা ॥৬॥
ভাঃ ৩।৯।৯

অদ্বয়জ্ঞান শ্রীভগবানের অনাশ্রিত ব্যক্তিগণেরই সংসার ভ্রমণ—
"হে ভগবন্, জীব যে কাল পর্য্যন্ত পরমাত্ম-বস্তু আপনা হইতে পৃথক্ মায়া-কল্পিত ইন্দ্রিয়-গ্রাহ্য এই জগৎ দর্শন করে, তৎকাল পর্য্যন্ত কর্ম্মফলময় দুঃখপূর্ণ সংসার নিরর্থক হইলেও তাহাকে ত্যাগ করে না" ॥৬॥

তন্নিত্যত্বম্, তদভাবে আত্মনো বঞ্চিতত্বাৎ—
প্রাপ্যাপি দুর্ল্লভতরং মানুষ্যং বিবুধেপ্সিতম্ ।
যৈরাশ্রিতো ন গোবিন্দস্তৈরাত্মা বঞ্চিতশ্চিরম্ ॥৭॥
ব্রঃ বৈঃ

অপ্রপন্নজীব চিরবঞ্চিত ; অতএব প্রপত্তি নিত্যা—
দেবতা-বাঞ্ছিত সুদুর্ল্লভ মনুষ্যজন্ম পাইয়াও যাঁহারা গোবিন্দের আশ্রয় গ্রহণ করিলেন না, তাঁহারা চিরকালের জন্য আত্মাকে বঞ্চিত করিলেন ॥৭॥

অপ্রপন্নানাং জীবনবৈফল্যাচ্চ—

অশীতিঞ্চতুরশ্চৈব লক্ষাংস্তান্ জীবজাতিষু ।
ভ্রাম্যদ্ভিঃ পুরুষৈঃ প্রাপ্য মানুষ্যং জন্মপর্য্যয়াৎ ॥৮॥
তদপ্যফলতাং যাতং তেষামাত্মাভিমানিনাম্ ।
বরাকানামনাশ্রিত্য গোবিন্দচরণদ্বয়ম্ ॥৯॥
ব্রঃ বৈঃ

প্রপত্তিহীন জীবন নিতান্ত বিষ্ফল—
চৌরাশি লক্ষ প্রকার বিভিন্ন জীব-জাতিতে ভ্রমণ করিতে করিতে পর্য্যায়ক্রমে মনুষ্য-জন্ম পাইয়াও গোবিন্দচরণযুগল আশ্রয় না করিলে সেই ক্ষুদ্র দেহাভিমানি-ব্যক্তিগণের উহা কেবল নিষ্ফল হইয়া থাকে ॥৮-৯॥

সর্ব্বাধমেষ্বপি মুক্তিদাতৃত্ত্বম্—
সর্ব্বাচারবিবর্জ্জিতাঃ শঠধিয়ো ব্রাত্যা জগদ্বঞ্চকা
দম্ভাহঙ্কৃতিপানপৈশুনপরাঃ পাপান্ত্যজা নিষ্ঠুরাঃ ।
যে চান্যে ধনদারপুত্রনিরতাঃ সর্ব্বাধমাস্তেঽপি হি
শ্রীগোবিন্দপদারবিন্দশরণা মুক্তা ভবন্তি দ্বিজ ॥১০॥
নারসিংহ

অত্যন্ত নিকৃষ্ট ব্যক্তিও শরণাগত হইলে মুক্তিলাভ করে—
"হে দ্বিজ, সর্ব্বপ্রকার সদাচারশূন্য, সংস্কারহীন, জগদ্­বঞ্চক, শঠ, দাম্ভিক, অহঙ্কারপরায়ণ, পানাসক্ত, পাপাশয়, খল-স্বভাব, নিষ্ঠুর, পুত্র-কলত্র-বিত্তাদিতে অত্যাসক্ত, অত্যন্ত অধম ব্যক্তিগণও শ্রীগোবিন্দপাদপদ্মে শরণ গ্রহণ করিলে মুক্তি লাভ করিয়া থাকে" ॥১০॥

তন্নিষ্ঠস্য নাধোগতিঃ—
পরমার্থমশেষস্য জগতামাদিকারণম্ ।
শরণ্যং শরণং যাতো গোবিন্দং নাবসীদতি ॥১১॥
বৃঃ নাঃ

শরণাগতের অধোগতি হয় না—
সমস্ত বিশ্বের আদি কারণ, পরমতত্ত্বস্বরূপ ও শরণ্য গোবিন্দচরণে শরণ গ্রহণ করিলে কখনও অবসন্ন হইতে হয় না ॥১১॥

দুঃখহরত্বং মনোহরত্বঞ্চ—
স্থিতঃ প্রিয়হিতে নিত্যং য এব পুরুষর্ষভঃ ।
রাজংস্তব যদুশ্রেষ্ঠো বৈকুন্ঠঃ পুরুষোত্তমঃ ॥১২॥
য এনং সংশ্রয়ন্তীহ ভক্ত্যা নারায়ণং হরিম্ ।
তে তরন্তীহ দুর্গাণি ন মেঽত্রাস্তি বিচারণা ॥১৩॥
শান্তিপর্ব্ব

হরিশরণ দুঃখনাশ করে ও মাধুর্য্যবিশেষে চিত্তহরণ করে—
"হে রাজন্, যে যদুপতি বৈকুন্ঠপুরুষ পুরুষোত্তম তোমার হিত ও প্রিয়ানুষ্ঠানে সর্ব্বদা রত, সেই এই নারায়ণ হরিতে যাঁহারা ভক্তিপূর্ব্বক সম্যক্­রূপে আশ্রয় গ্রহণ করিয়া থাকেন, তাঁহারা যে এই দুস্তর ভব-সমুদ্র উত্তীর্ণ হন, এ বিষয়ে আমার বিচারের প্রয়োজন হয় না" ॥১২-১৩॥

অভয়ামৃতদাতৃত্বঞ্চ—
যে শঙ্খচক্রাব্জকরং হি শার্ঙ্গিণং
খগেন্দ্রকেতুং বরদং শ্রিয়ঃ পতিম্ ।
সমাশ্রয়ন্তে ভবভীতিনাশনং
তেষাং ভয়ং নাস্তি বিমুক্তিভাজাম্ ॥১৪॥
বামন

অশেষ ভয়নাশপূর্ব্বক অমৃতময় জীবন দান করে—
যে-সকল ব্যক্তি শঙ্খ-চক্র-পদ্ম-শার্ঙ্গধর গরুড়ধ্বজ ভবভয়হারী বরদাতা শ্রীপতিকে সম্যক্ আশ্রয় করেন, সেই পরম মুক্তির অধিকারিগণের কোন ভয় থাকে না ॥১৪॥

সর্ব্বার্থ-সাধকত্বম্—
সংসারেঽস্মিন্ মহাঘোরে মোহনিদ্রাসমাকুলে ।
যে হরিং শরণং যান্তি তে কৃতার্থা সংশয়ঃ ॥১৫॥
বৃঃ নাঃ

শরণাগতজন সর্ব্ববিষয়ে কৃতকৃত্য—
এই মোহনিদ্রা-সমাচ্ছন্ন মহাঘোর সংসারে যাঁহারা হরিপাদপদ্মে শরণ গ্রহণ করেন, তাঁহারাই কৃতকৃতার্থ—ইহাতে কোন সংশয় নাই ॥১৫॥

অজিতেন্দ্রিয়াণামপি শিবদত্বম্—
কিং দুরাপাদনং তেষাং পুংসামুদ্দামচেতসাম্ ।
যৈরাশ্রিতস্তীর্থপদশ্চরণো ব্যসনাত্যয়ঃ ॥১৬॥
ভাঃ ৩।২৩।৪২

অজিতেন্দ্রিয় ব্যক্তিরও শরণাগতি দ্বারা মঙ্গল লাভ—
সংসার-নাশন হরিপাদপদ্ম আশ্রয় করিলে বিক্ষিপ্তচিত্ত জনগণেরও দুর্ল্লভ কিছুই থাকে না ॥১৬॥

সংসারক্লেশহারিত্বম্—
শারীরা মানসা দিব্যা বৈয়াসে যে চ মানুষাঃ ।
ভৌতিকাশ্চ কথং ক্লেশা বাধেরন্ হরিসংশ্রয়ম্ ॥১৭॥
ভাঃ ৩।২২।৩৭

শরণাগতের সমূহ সংসার-ক্লেশ নাশ—
"হে বিদুর, শ্রীহরির চরণাশ্রিত ব্যক্তিকে ভৌতিক, লৌকিক বা দুষ্ট গ্রহাদিজনিত শারীরিক ও মানসিক ক্লেশ কি প্রকারে অভিভূত করিতে পারিবে ?" ১৭॥

শরণাগতানামযত্নসিদ্ধমেব পরং পদম্—
সমাশ্রিতা যে পদপল্লবং মহৎপদং পুণ্যযশো মুরারেঃ
ভবান্বুধির্বৎসপদং পরং পদং পদং যদ্বিপদাং ন তেষাম্ ॥১৮॥
ভাঃ ১০।১৪।৫৮

শ্রীবিষ্ণুর পরমপদ শরণাগতগণের অনায়াসলভ্য—
যাঁহারা পবিত্রকীর্ত্তি শ্রীকৃষ্ণের মহদাশ্রয়স্বরূপ পাদপদ্মতরণী সম্যক্ আশ্রয় করিয়াছেন, তাঁহাদের নিকট এই ভব-সমুদ্র গোষ্পদতুল্য ; তাঁহাদের প্রাপ্য স্থান পরমপদ কোনরূপ বিপদাস্পদ নহে ॥১৮॥

সর্ব্বাত্মাশ্রিতানাং বিবর্ত্তনিবৃত্তিঃ—
যেষাং স এব ভগবান্ দয়য়েদনন্তঃ
সর্ব্বাত্মনাশ্রিতপদো যদি নির্ব্যলীকম্ ।
তে দুস্তরামতিতরন্তি চ দেবমায়াং
নৈষাং মমাহমিতিধীঃ শ্বশৃণালভক্ষ্যে ॥১৯॥
ভাঃ ২।৭।৪২

সর্ব্বপ্রকারে ভগবদাশ্রিত ব্যক্তির দেহাদ্যহংবুদ্ধিরূপ বিবর্ত্ত নাশ—
সর্ব্বপ্রকারে তাঁহার পাদপদ্ম আশ্রয় করিলে অনন্তস্বরূপ ভগবান্ যাঁহাদের প্রতি অকপট দয়া করেন, তাঁহারাই এই দুষ্পারা দেবমায়াকে অতিক্রম করিয়া থাকেন । শৃগাল-কুক্কুরভক্ষ্য এই প্রাকৃত-শরীরে যাহাদের 'আমি' ও 'আমার' বুদ্ধি আছে, তাহাদের ভগবান্ দয়া করেন না ॥১৯॥

তদুপেক্ষিতানাং দুঃখ-প্রতিকারঃ ক্ষণিক এব—
বালস্য নেহ শরণং পিতরৌ নৃসিংহ
নার্ত্তস্য চাগদমুদন্বতি মজ্জতো নৌঃ ।
তপ্তস্য তৎপ্রতিবিধির্য ইহাঞ্জসেষ্ট-
স্তাবদ্­বিভো তনুংভৃতাং ত্বদুপেক্ষিতানাম্ ॥২০॥
ভাঃ ৭।৯।১৯

হরিসম্বন্ধবর্জ্জিত ব্যক্তির দুঃখ-প্রতিকার ক্ষণস্থায়ী—
"হে নৃশিংহ, হে বিভো, আপনার উপেক্ষিত সন্তপ্ত দেহিগণের অভিলষিত প্রতিকার ক্ষণিকমাত্র । মাতাপিতা বালকের, ঔষধ পীড়িতের, তরণী সমুদ্রে নিমজ্জমানের রক্ষক নহে" ॥২০॥

অনাশ্রিতানামসদবগ্রহাদেব বিবিধার্ত্তিঃ—
তাবদ্­ভয়ং দ্রবিণদেহসুহৃন্নিমিত্তং
শোকঃ স্পৃহা পরিভবো বিপুলশ্চ লোভঃ ।
তাবন্মমেত্যসদবগ্রহ আর্ত্তিমূলং
যাবন্ন তেঽঙ্ঘ্রিমভয়ং প্রবৃণীত লোকঃ ॥২১॥
ভাঃ ৩।৯।৬

অশরণাগতের ইতরবস্তুতে আগ্রহজন্য বিবিধ ক্লেশ—
"হে প্রভো ! যে পর্য্যন্ত তোমার অভয় পদকমল লোক বরণ না করে, সেইকাল পর্যন্ত দ্রবিণ, দেহ, সুহৃৎ-নিমিত্ত ভয় হয় এবং শোক, স্পৃহা, আসক্তি ও বিপুল লোভ হইয়া থাকে এবং আমি ও আমার বলিয়া অসদাগ্রহরূপ আর্ত্তিমূল দূর হয় না" ॥২১॥

পরিপূর্ণ-কামো হরিরেবাশ্রয়ণীয়োঽন্যদ্ধেয়ম্—
অবিস্মিতং তং পরিপূর্ণকামং
স্বেনৈব লাভেন সমং প্রশান্তম্ ।
বিনোপসর্পত্যপরং হি বালিশঃ
স্বলাঙ্গুলেনাতিতিতর্ত্তি সিন্ধুম্ ॥২২॥
ভাঃ ৬।৯।২২

পরিপূর্ণকাম শ্রীহরিই একমাত্র আশ্রয়ণীয়, অন্যদেবতাশ্রয়ে হেয়ফল লাভ—
কৃষ্ণ পরিপূর্ণকাম, স্বীয়লাভে পরিপূর্ণ, সম ও প্রশান্ত । তাঁহাতে কিছুই আশ্চর্য্য নাই—তাঁহাকে ছাড়িয়া শুভকর্ম্মাদি ও তত্তদুদ্দিষ্ট কোন দেবতাকে যে আশ্রয় করে, সে মূঢ় । সমুদ্র পার হইবার জন্য যাহায়া কুক্কুরের লেজ ধরে, সেই তদ্রূপ ॥২২॥

হরেরেব সর্ব্বোদ্ধারিত্বম্—
কিরাতহূণান্ধ্র-পুলিন্দ-পুক্কশা
আভীরশুহ্মা যবনাঃ খশাদয়ঃ ।
যেঽন্যে চ পাপা যদুপাশ্রয়াশ্রয়াঃ
শুধ্যন্তি তস্মৈ প্রভবিষ্ণবে নমঃ ॥২৩॥
ভাঃ ২।৪।১৮

শ্রীহরিই সর্ব্বাবস্থাপ্রাপ্ত জীবকে উদ্ধার করিতে সমর্থ—
"কিরাত, হূণ, অন্ধ্র, পুলিন্দ, পুক্কশ, আভীর, শুহ্ম (কঙ্ক), যবন ও খশাদি এবং আর যে সকল পাপযোনি জাতি আছে, সেই সকল জাতিই যাঁহার আশ্রিত বৈষ্ণবদিগের আশ্রয়ে পরিশুদ্ধ হয়, সেই প্রভাববিশিষ্ট বিষ্ণুকে নমস্কার করি" ॥২৩॥

হরিচরণাশ্রিতা এব সারগ্রাহিণোঽন্যথা কর্ম্মযোগাদিভিরাত্মঘাতিত্বম্—
অথাত আনন্দদুঘং পদাম্বুজং
হংসাঃ শ্রয়েরন্নরবিন্দলোচন ।
সুখং নু বিশ্বেশ্বর যোগকর্ম্মভি-
স্তন্মায়য়ামী বিহতা ন মানিনঃ ॥২৪॥
ভাঃ ১১।২৯।৩

শরণাগত জনই সারগ্রাহী, হরিকে উপেক্ষাকারীর যোগ-কর্ম্মাদি দ্বারা সুখানুসন্ধান আত্মঘাতিত্ব মাত্র—
"হে অরবিন্দ-লোচন ! তোমার আনন্দ-দোহনস্বরূপ পাদপদ্ম হংসগণ আশ্রয় করেন । হে বিশ্বেশ্বর ! তোমার চরণাশ্রয়কে যে সুখ বলিয়া মানে না, তাহারা জ্ঞানযোগী ও কর্ম্মজড় হইয়া তোমার বিষ্ণুমায়ায় নিহত হইয়াছে"॥২৪॥

শ্রীকৃষ্ণচরণশরণাগতেঃ পরমসাধ্যত্বম্—
ন নাকপৃষ্ঠং ন চ সার্ব্বভৌমং ন পারমেষ্ঠ্যং ন রসাধিপত্যম্ ।
ন যোগসিদ্ধীরপুনর্ভবং বা বাঞ্ছন্তি যৎপাদরজঃপ্রপন্নাঃ ॥২৫॥
ভাঃ ১০।১৬।৩৭

শ্রীকৃষ্ণপাদপদ্মে সমাশ্রয়ই পরম সাধ্যবস্তু—
"আপনার পদরজঃপ্রাপ্ত জনগণ স্বর্গলোক, সার্ব্বভৌমপদ, ব্রহ্মপদ, পৃথিবীর আধিপত্য, যোগসিদ্ধি কিংবা মোক্ষ বাসনা করেন না" ॥২৫॥

হরিপ্রপন্নানামন্য-নিস্তার-সামর্থ্যমাত্মারামাণামপি হরিপদপ্রপত্তিশ্চ—
যৎপাদসংশ্রয়াঃ সূত মুনয়ঃ প্রশমায়নাঃ ।
সদ্যঃ পুনন্ত্যুপস্পৃষ্টাঃ স্বর্ধুন্যাপোঽনুসেবয়া ॥২৬॥
ভাঃ ১।১।১৫

শ্রীহরিপদাশ্রিতজনের অন্যনিস্তারে সামর্থ্য, আত্মারামগণেরও হরিপদ-প্রপত্তি—
"হে সূত, যাঁহার পাদপদ্মে শরণাগত পরম শান্তিময় মুনিগণ সান্নিধ্যমাত্রে লোক পরিত্র করেন, কিন্তু সুরধুনী অবগাহনকারিগণকে পবিত্র করেন" ॥২৬॥

শ্রীকৃষ্ণৈকশরণা নৈব বিধিকিঙ্করাঃ—
দেবর্ষিভূতাপ্তনৃণাং পিতৄণাং
ন কঙ্করো নায়মৃণী চ রাজন্ ।
সর্ব্বাত্মনা যঃ শরণং শরণ্যং
গতো মুকুন্দ পরিহৃত্য কর্ত্তম্ ॥২৭॥
ভাঃ ১১।৫।৪১

একান্ত শরণাগতজন শাস্ত্রবিধিনিষেধের অধীন নহেন—
"যিনি পার্থিব কর্ত্তব্য পরিত্যাগপূর্ব্বক সর্ব্ব-স্বরূপে শরণ্য মুকুন্দের শরণাপন্ন হইয়াছেন, হে রাজন্, তিনি দেবতা, ঋষি, অন্য প্রাণী, আত্মীয়, মনুষ্য ও পিতৃগণের নিকট আর ঋণী থাকেন না" ॥২৭॥

তদনুগৃহীতা বেদধর্ম্মাতীতা এব—
যদা যস্যানুগৃহ্নাতি ভগবানাত্মভাবিতঃ ।
স জহাতি মতিং লোকে বেদে চ পরিনিষ্ঠিতাম্ ॥২৮॥
ভাঃ ৪।২৯।৪৫

ভগবদনুগ্রহপাত্রগণ বেদধর্ম্মাতীত—
"যে কোন ব্যক্তির সম্বন্ধে যখন আত্মভাবিত ভগবান্ হৃদয়ে প্রেরণাদ্বারা অনুগ্রহ করেন, তখন তিনি লোক ও বেদের প্রতি যে পরিনিষ্ঠিত বুদ্ধি, তাহা পরিত্যাগ করেন" ॥২৮॥

শ্রীকৃষ্ণস্বরূপমেব পরমাশ্রয়পদম্—
দশমে দশমং লক্ষ্যমাশ্রিতাশ্রয়বিগ্রহম্ ।
শ্রীকৃষ্ণাখ্যং পরং ধাম জগদ্ধাম নমামি তৎ ॥২৯॥
ভাঃ ১০।১।১ শ্লোকের ভাবার্থ দীপিকায়

রসোৎকর্ষবশতঃ ভগবানের শ্রীকৃষ্ণস্বরূপই সর্ব্বোৎকৃষ্ট আশ্রয়-স্থান—
"দশমস্কন্ধে আশ্রিতগণের আশ্রয়-বিগ্রহস্বরূপ শ্রীকৃষ্ণ লক্ষিত হইয়াছেন । সেই শ্রীকৃষ্ণাখ্য পরমধাম ও জগদ্ধামকে আমি নমস্কার করি" ॥২৯॥

শ্রীমন্মহাপ্রভোঃ পদাশ্রয়মাহাত্ম্যম্—
ধ্যেয়ং সদা পরিভবঘ্নমভীষ্টদোহং
তীর্থাস্পদং শিববিরিঞ্চনুতং শরণ্যম্ ।
ভৃত্যার্ত্তিহং প্রণতপাল ভবাব্ধিপোতং
বন্দে মহাপুরুষ তে চরণারবিন্দম্ ॥৩০॥
ভাঃ ১১।৫।৩৩

মহাজনলীলাভিনয়কারী ভগবদবতার শ্রীচৈতন্যচরণপ্রপত্তির অসমোর্দ্ধ্ব ফল—
"হে প্রণতপালক, হে মহাপুরুষ (মহাভাগবতলীলাভিনয়কারী মহাজন) আপনিই একমাত্র শুদ্ধজীবের নিত্যধ্যেয় বস্তু, আপনিই জীবের মোহবিনাশক, আপনিই বাঞ্ছাকল্পতরু, নিখিল ভক্তের আশ্রয়, শিব-বিরিঞ্চির (সেদাশিবরূপ শ্রীঅদ্বৈতাচার্য্য ও ব্রহ্ম-হরিদাস ঠাকুরের) বন্দ্য, আপনিই সর্ব্বশরণ, নামাপরাধাদি ভক্তার্ত্তি-হরণকারী এবং ভব-সমুদ্রের একমাত্র ভেলাস্বরূপ । আমি আপনার পাদপদ্ম বন্দনা করি" ॥৩০॥

শ্রীচৈতন্যচরণশরণে চিদেকরসবিলাস-লাভঃ—
সংসারসিন্ধুতরণে হৃদয়ং যদি স্যাৎ
সঙ্কীর্ত্তনামৃতরসে রমতে মনশ্চেৎ ।
প্রেমাম্বুধৌ বিহরণে যদি চিত্তবৃত্তি-
শ্চৈতন্যচন্দ্রচরণে শরণং প্রযাতু ॥৩২॥
শ্রীচৈতন্যচন্দ্রামৃত ৮।৯৩

শ্রীচৈতন্যচরণাশ্রিতের অপ্রাকৃত প্রেমসাগরে অবগাহন—
যদি সংসার-সাগর উত্তীর্ণ হইতে অভিলাষ থাকে, যদি সঙ্কীর্ত্তনামৃতরস আস্বাদনে বাসনা হয় ও যদি প্রেম-সমুদ্রে ক্রীড়ার আকাঙ্ক্ষা থাকে, তাহা হইলে শ্রীচৈতন্যচন্দ্রের চরণে শরণ গ্রহণ করুন ॥৩২॥

ষড়্­বিধা শরণাগতিঃ—
আনুকূল্যস্য সঙ্কল্পঃ প্রাতিকূল্য-বিবর্জ্জনম্ ।
রক্ষিষ্যতীতি বিশ্বাশো গোপ্তৃত্বে বরণং তথা ।
আত্মনিক্ষেপকার্পণ্যে ষড়্­বিধা শরণাগতিঃ ॥৩২॥
বৈষ্ণবতন্ত্র

শরণাগতি ছয় প্রকার—
অনুকূল বিষয় সঙ্কল্প, প্রতিকূল বিষয় পরিত্যাগ, তিনি রক্ষা করিবেন—এইরূপ বিশ্বাস, তাঁহাকে পালক বলিয়া বরণ, তাঁহাতে সম্পূর্ণ নির্ভরতা ও তদ্ব্যতীত স্বীয় অসহায়তা-বুদ্ধি—এই ছয় প্রকার শরণাগতির অঙ্গ ॥৩২॥

সা চ কায়মনোবাক্যৈঃ সাধ্যা—
তবাস্মীতি বদন্ বাচা তথৈব মনসা বিদন্ ।
তৎস্থানমাশ্রিতস্তন্বা মোদতে শরণাগতঃ ॥৩৩॥
বৈষ্ণবতন্ত্র

কায়মনোবাক্যে শরণাগতির সাধন আবশ্যক—
শরণাগত ব্যক্তি বাক্যের দ্বারা "আমি তোমারই"—বলিতে বলিতে, মনের দ্বারা তদ্রূপ বিন্তা করিতে করিতে এবং শরীর দ্বারা তাঁহার স্থান আশ্রয় করিয়া আনন্দিত চিত্তে অবস্থান করিয়া থাকেন ॥৩৩॥

ইতি শ্রীপ্রপন্নজীবনামৃতে শ্রীশাস্ত্রবচনামৃতং নাম দ্বিতীয়োঽধ্যায়ঃ ।।

 

 

← নিবেদন ৩ আনুকূল্যস্য সঙ্কল্পঃ →

 

← গ্রন্থাগারে ফিরে

সূচিপত্র:
প্রকাশকের নিবেদন
নিবেদন
১ উপক্রমামৃতম্
২ শ্রীশাস্ত্রবচনামৃতম্
শ্রীভক্তবচনামৃতম্—
৩ আনুকূল্যস্য সঙ্কল্পঃ
৪ প্রাতিকূল্য-বিবর্জ্জনম্
৫ রক্ষিষ্যতীতি বিশ্বাসঃ
৬ গোপ্তৃত্বে-বরণম্
৭ আত্মনিক্ষেপঃ
৮ কার্পণ্যম্
৯ শ্রীশ্রীভগবদ্বচনামৃতম্
১০ অবশেষামৃতম্
গ্রন্থকারের রচিত কতিপয় স্তব-রত্ন
শ্রীশ্রীপ্রভুপাদপদ্ম-স্তবকঃ
শ্রীমদ্ভক্তিবিনোদবিরহদশকম্
শ্রীশ্রীমদ্­গৌরকিশোরনমস্কারদশকম্
শ্রীশ্রীদয়িতদাসদশকম্
শ্রীমদ্রূপপদরজঃ-প্রার্থনা-দশকম্
শ্রীদয়িত-দাস-প্রণতি-পঞ্চকম্
প্রণতি-দশকম্
শ্রীগুরু আরতি-স্তুতি
প্রণাম-মন্ত্রম্

বৃক্ষসম ক্ষমাগুণ করবি সাধন । প্রতিহিংসা ত্যজি আন্যে করবি পালন ॥ জীবন-নির্ব্বাহে আনে উদ্বেগ না দিবে । পর-উপকারে নিজ-সুখ পাসরিবে ॥