আমাদের শ্রীগুরুপরম্পরা :
শ্রীশ্রীল ভক্তিনির্ম্মল আচার্য্য মহারাজ শ্রীশ্রীল ভক্তিসুন্দর গোবিন্দ দেবগোস্বামী মহারাজ শ্রীশ্রীল ভক্তিরক্ষক শ্রীধর দেবগোস্বামী মহারাজ ভগবান্ শ্রীশ্রীল ভক্তি সিদ্ধান্ত সরস্বতী গোস্বামী ঠাকুর
              প্রভুপাদ
“শ্রীচৈতন্য-সারস্বত মঠে সূর্যাস্ত কখনই হয় না” :
আমাদের মঠের পরিচয় ও বৈশিষ্ট্য
 
আমাদের সম্পর্কে শ্রীউপদেশ শ্রীগ্রন্থাগার শ্রীগৌড়ীয় পঞ্জিকা ছবি ENGLISH
 
শ্রীশ্রীপ্রপন্নজীবনামৃতম্


গ্রন্থকারের রচিত কতিপয় স্তব-রত্ন

শ্রীশ্রীদয়িতদাসদশকম্

 

(ওঁ বিষ্ণুপাদ শ্রীশ্রীমদ্ভক্তিসিদ্ধান্ত সরস্বতী ঠাকুরের লীলাসংগোপনের পরে প্রকাশিত)

নীতে যস্মিন্ নিশান্তে নয়নজলভরৈঃ স্নাতগাত্রার্ব্বুদানাং
উচ্চৈরুৎক্রোশতাং শ্রীবৃষকপিসুতয়াধীরয়া স্বীয়গোষ্ঠীম্ ।
পৃথ্বী গাঢ়ান্ধকারৈর্হৃতনয়নমণীবাবৃতা যেন হীনা
যত্রাসৌ তত্র শীঘ্রং কৃপণনয়ন হে নীয়তাং কিঙ্করোঽয়ম্ ॥১॥

যস্য শ্রীপাদপদ্মাৎ প্রবহতি জগতি প্রেমপীযূষধারা
যস্য শ্রীপাদপদ্মচ্যুতমধু সততং ভৃত্যভৃঙ্গান্ বিভর্ত্তি ।
যস্য শ্রীপাদপদ্মং ব্রজরসিকজনো মোদতে সম্প্রশস্য
যত্রাসৌ তত্র শীঘ্রং কৃপণনয়ন হে নীয়তাং কিঙ্করোঽয়ম্ ॥২॥

বাৎসল্যং যচ্চ পিত্রো জগতি বহুমতং কৈতবং কেবলং তৎ
দাম্পত্যং দস্যুতৈব স্বজনগণ-কৃতা বন্ধুতা বঞ্চনেতি ।
বৈকুণ্ঠস্নেহমূর্ত্তেঃ পদনখকিরণৈর্যস্য সন্দর্শিতোঽস্মি
যত্রাসৌ তত্র শীঘ্রং কৃপণনয়ন হে নীয়তাং কিঙ্করোঽয়ম্ ॥৩॥

যা বাণী কণ্ঠলগ্না বিলসতি সততং কৃষ্ণচৈতন্যচন্দ্রে
কর্ণক্রোড়াজ্জনানাং কিমু নয়নগতাং সৈব মূর্ত্তিং প্রকাশ্য ।
নীলাদ্রীশস্য নেত্রার্পণভবনগতা নেত্রতারাভিধেয়া
যত্রাসৌ তত্র শীঘ্রং কৃপণনয়ন হে নীয়তাং কিঙ্করোঽয়ম্ ॥৪॥

গৌরেন্দোরস্তশৈলে কিমু কনকঘনো হেমহৃজ্জম্বুনদ্যা
আবির্ভূতঃ প্রবর্ষৈর্নিখিলজনপদং প্লাবয়ন্ দাবদগ্ধম্ ।
গৌরাবির্ভাবভূমৌ রজসি চ সহসা সংজুগোপ স্বয়ং স্বং
যত্রাসৌ তত্র শীঘ্রং কৃপণনয়ন হে নীয়তাং কিঙ্করোঽয়ম্ ॥৫॥

গৌরো গৌরস্যো শিষ্যো গুরুরপি জগতাং গায়তাং গৌরগাথা
গৌড়ে গৌড়ীয়-গোষ্ঠ্যাশ্রিতগণ-গরিমা দ্রাবিড়ে গৌরগর্ব্বী ।
গান্ধর্ব্বা গৌরবাঢ্যো গিরিধরপরমপ্রেয়সাং যো পরিষ্ঠো
যত্রাসৌ তত্র শীঘ্রং কৃপণনয়ন হে নীয়তাং কিঙ্করোঽয়ম্ ॥৬॥

যো রাধাকৃষ্ণনামামৃতজলনিধিনাপ্লাবয়দ্­বিশ্বমেত-
দাম্লেচ্ছাশেষলোকং দ্বিজনৃপবণিজং শূদ্রশূদ্রাপকৃষ্টম্ ।
মুক্তৈঃ সিদ্ধৈরগম্যঃ পতিতজনসখো গৌরকারুণ্যশক্তি-
যত্রাসৌ তত্র শীঘ্রং কৃপণনয়ন হে নীয়তাং কিঙ্করোঽয়ম্ ॥৭॥

অপ্যাশা বর্ত্ততে তৎ পুরটবরবপুর্লোকিতুং লোকশন্দং
দীর্ঘং নীলাব্জনেত্রং তিলকুসুমনসং নিন্দিতার্দ্ধেন্দুভালম্ ।
সৌম্যং শুভ্রাংশুদন্তং শতদলবদনং দীর্ঘবাহুং বরেণ্যং
যত্রাসৌ তত্র শীঘ্রং কৃপণনয়ন হে নীয়তাং কিঙ্করোঽয়ম্ ॥৮॥

গৌরাব্দে শূন্যবাণান্বিতনিগমমিতে কৃষ্ণপক্ষে চতুর্থ্যাং
পৌষে মাসে মঘায়ামমরগণগুরোর্বাসরে বৈ নিশান্তে ।
দাসো যো রাধিকায়া অতিশয়দয়িতো নিত্যলীলাপ্রবিষ্টো
যত্রাসৌ তত্র শীঘ্রং কৃপণনয়ন হে নীয়তাং কিঙ্করোঽয়ম্ ॥৯॥

হাহাকারৈর্জ্জনানাং গুরুচরণজুষাং পূরিতাভূর্নভশ্চ
যাতোঽসৌ কুত্র বিশ্বং প্রভুপদবিরহাদ্ধন্ত শূন্যায়িতং মে ।
পাদাব্জে নিত্যভৃত্যঃ ক্ষণমপি বিরহং নোৎসহে সোঢ়ুমত্র
যত্রাসৌ তত্র শীঘ্রং কৃপণনয়ন হে নীয়তাং কিঙ্করোঽয়ম্ ॥১০॥

শ্রীশ্রীদয়িত-দাস-দশকের অনুবাদ

শ্রীশ্রীবৃষভানুনন্দিনী নিশান্তকালে লক্ষ লক্ষ বিলাপকারী, নয়নধারা-সিঞ্চিত-গাত্র জনগণের মধ্য হইতে যাঁহাকে অধীরভাবে নিজ গোষ্ঠীমধ্যে আকর্ষণ করিলে যাঁহাকে হারাইয়া এই পৃথিবী হৃতনয়নমণিজনের ন্যায় (সরস্বতী ঠাকুরের গূঢ় নাম “নয়নমণি”) গভীর অন্ধকারে আচ্ছন্ন হইয়াছিল,—হে (প্রভুদর্শনবিরহিত) আমার দীন নয়ন ! (পক্ষান্তরে হে দীনোদ্ধারণ ! অথবা সঙ্গে না লইবার জন্য করুণাতে কৃপণতো-প্রকাশকারী হে নয়ন নামক প্রভুজন) ঐ মহাপুরুষ যেখানে, শীঘ্র এই কিঙ্করকে সেইখানে লইয়া চল ॥১॥

যাঁহার পাদপদ্ম হইতে জগতে প্রেমসুধানদী প্রবাহিত হইতেছে, যাঁহার পাদপদ্মচ্যুত মধু নিরন্তর পান করিতে করিতে অনুচর-মধুকরগণ নিজ নিজ জীবন ধারণ করিতেছে, ব্রজের বিশ্রম্ভ-রসাশ্রিত জন যাঁহার পাদপদ্মের প্রশংসা করিতে সুখবোধ করিয়া থাকেন—হে দীন নয়ন ! ঐ মহাপুরুষ যেখানে, শীঘ্র এই কিঙ্করকে সেইখানে লইয়া চল ॥২॥

মাতাপিতার বাৎসল্য বলিয়া জগতে যাহা বহুমানিত, (হরিভক্তির বাধারূপে) তাহা ছলনা মাত্র, সমাজপ্রচলিত তথাকথিত পবিত্র দাম্পত্যপ্রেম (উভয়ের সম্ভাব্য নিরুপাধিক প্রেমসম্পদ্ অর্জ্জনের উদ্যমলুণ্ঠনকারী আসুরিক প্রচেষ্টারূপে) দস্যুতা ভিন্ন কিছুই নয় এবং বন্ধুতা বঞ্চনামাত্র—এই সমুদায় বিচার যে অপ্রাকৃত স্নেহময় বিগ্রহ মহাপুরুষের পদনখকিরণের দ্বারা প্রদর্শিত হইয়াছি—হে দীন নয়ন, ঐ মহাপুরুষ যেখানে, শীঘ্র এই কিঙ্করকে সেইখানে লইয়া চল ॥৩॥

শ্রীকৃষ্ণচৈতন্যচন্দ্রের কণ্ঠস্বররূপে যে বাণী সর্ব্বদা জনগণের কর্ণক্রোড়ে বিলাস করিতেন, তিনিই কি কর্ণ হইতে নয়নগোচর মূর্ত্তি প্রকাশ করিয়া শ্রীনীলাচলচন্দ্রের (রথযাত্রাকালে) নয়নার্পণরূপ প্রসাদপ্রাপ্ত প্রাসাদে প্রকটিত হইয়া “নয়নমণি” নামের সার্থকতা প্রদর্শন করিতেন ? হে দীন নয়ন ! ঐ মহাপুরুষ যেখানে, শীঘ্র এই ভৃত্যকে সেইখানে লইয়া চল ॥৪॥

শ্রীভাগবতোক্ত জম্বুনদের নির্ম্মল স্বর্ণময় জল আকর্ষণ করিয়া কি এই কাঞ্চনবর্ণ মেঘ শ্রীগৌরচন্দ্রের অস্তগমনশৈলে উদিত হইয়া (ত্রিতাপ)-দাবাগ্নিদগ্ধ সমুদয় দেশকে প্রচুর বর্ষণ দ্বারা প্লাবিত করিতে করিতে শ্রীগৌরাঙ্গের উদয়ভূমিরজে অকস্মাৎ আত্মগোপন করিলেন ! হে দীন নয়ন ! ঐ মহাপুরুষ যেখানে, শীঘ্র এই কিঙ্করকে সেইখানে লইয়া চল ॥৫॥

যিনি গৌরবর্ণ এবং শ্রীগৌরগাথাগানকারী নিখিল জগতের (স্বাভাবিক) গুরু হইয়াও যিনি শ্রীগৌরকিশোর নামক কোন মহাত্মার শিষ্যত্ব অঙ্গীকার করিয়াছেন, যিনি সমগ্র গৌড়মণ্ডলে শুদ্ধ গৌড়ীয় গোষ্ঠীর আশ্রয়দাতৃগণের গরিমাস্থল, যিনি দ্রাবিড় বৈষ্ণবগণের (লক্ষ্মীনারায়ণোপাসকগণের) নিকট শ্রীগৌরপ্রদত্ত (শ্রীরাধাগোবিন্দের ব্রজভজনের) কথা কীর্ত্তন করিতে গর্ব্ব অনুভব করেন, শ্রীগান্ধর্ব্বার গণেও যাঁহার গরিমাসম্পদ্ দৃষ্ট হয় এবং গিরিধারীর পরম প্রিয়মণ্ডলে যিনি শ্রেষ্ঠ স্থানে অধিষ্ঠিত অর্থাৎ মুকুন্দপ্রেষ্ঠ—হে দীন নয়ন ! ঐ মহাপুরুষ যেখানে, শীঘ্র এই কিঙ্করকে সেইখানে লইয়া চল ॥৬॥

যিনি শ্রীরাধাকৃষ্ণনামামৃত-সমুদ্রে ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য, শূদ্র ও অপশূদ্র এমন কি ম্লেচ্ছ পর্য্যন্ত অশেষ লোকাত্মক সমগ্র বিশ্বকে প্লাবিত করিয়াছেন, মুক্ত ও সিদ্ধগণের অগম্য হইয়াও যিনি পতিতজনবন্ধু এবং শ্রীগৌরাঙ্গের করুণাশক্তি বলিয়া পরিচিত—হে দীন নয়ন ! ঐ মহাপুরুষ যেখানে, শীঘ্র এই কিঙ্করকে সেইখানে লইয়া চল ॥৭॥

সেই লোকমঙ্গলকর পুরটসুন্দর মূর্ত্তি-দর্শনের কি আশা আছে ? সেই সুদীর্ঘ, নীলকমলনয়ন ও তিলফুলজয়ী নাসিকা, সেই অর্দ্ধচন্দ্রধিক্কারী ললাট, সেই সৌম্যবদনকমল, সেই শুভ্রজ্যোতিঃ দন্তপংক্তি ও সেই আজানুলম্বিত বাহুসমন্বিত রমণীয় বিগ্রহের পুনর্দর্শনের কি আশা আছে ? হে দীন নয়ন ! ঐ মহাপুরুষ যেখানে, শীঘ্র এই কিঙ্করকে সেইখানে লইয়া চল ॥৮॥

চারি শত পঞ্চাশৎ সংখ্যক (৪৫০) গৌরাব্দে পৌষ মাসে, কৃষ্ণপক্ষে, চতুর্থী তিথিতে, মঘা নক্ষত্রে বৃহস্পতিবারে নিশান্ত সময়ে শ্রীমতী বৃষভানুনন্দিনীর অতীব দয়িত অনুচর যিনি নিত্যলীলায় প্রবেশ করিলেন—হে দীন নয়ন ! ঐ মহাপুরুষ যেখানে, শীঘ্র এই কিঙ্করকে সেইখানে লইয়া চল ॥৯॥

জনসাধারণের ও শ্রীগুরুপাদপদ্মের সেবারত শিষ্যগণের হাহাকারে সমস্ত পৃথিবী ও আকাশ পূর্ণ হইয়া গেল । ঐ মহাপুরুষ কোথায় গেলেন ? হায় ! সমস্ত বিশ্ব আজ প্রভুপাদ-বিরহে শূন্যবোধ হইতেছে । পাদপদ্মের নিত্য ভৃত্য ক্ষণমাত্র বিরহও সহ্য করিতে অসমর্থ । হে দীন নয়ন ! ঐ মহাপুরুষ যেখানে, শীঘ্র এই কিঙ্করকে সেইখানে লইয়া চল ॥১০॥

 

 

← শ্রীশ্রীমদ্­গৌরকিশোরনমস্কারদশকম্ শ্রীমদ্রূপপদরজঃ-প্রার্থনা-দশকম্ →

 

সূচিপত্র:
প্রকাশকের নিবেদন
নিবেদন
১ উপক্রমামৃতম্
২ শ্রীশাস্ত্রবচনামৃতম্
শ্রীভক্তবচনামৃতম্—
৩ আনুকূল্যস্য সঙ্কল্পঃ
৪ প্রাতিকূল্য-বিবর্জ্জনম্
৫ রক্ষিষ্যতীতি বিশ্বাসঃ
৬ গোপ্তৃত্বে-বরণম্
৭ আত্মনিক্ষেপঃ
৮ কার্পণ্যম্
৯ শ্রীশ্রীভগবদ্বচনামৃতম্
১০ অবশেষামৃতম্
গ্রন্থকারের রচিত কতিপয় স্তব-রত্ন
শ্রীশ্রীপ্রভুপাদপদ্ম-স্তবকঃ
শ্রীমদ্ভক্তিবিনোদবিরহদশকম্
শ্রীশ্রীমদ্­গৌরকিশোরনমস্কারদশকম্
শ্রীশ্রীদয়িতদাসদশকম্
শ্রীমদ্রূপপদরজঃ-প্রার্থনা-দশকম্
শ্রীদয়িত-দাস-প্রণতি-পঞ্চকম্
প্রণতি-দশকম্
শ্রীগুরু আরতি-স্তুতি
প্রণাম-মন্ত্রম্

বৃক্ষসম ক্ষমাগুণ করবি সাধন । প্রতিহিংসা ত্যজি আন্যে করবি পালন ॥ জীবন-নির্ব্বাহে আনে উদ্বেগ না দিবে । পর-উপকারে নিজ-সুখ পাসরিবে ॥