আমাদের শ্রীগুরুপরম্পরা :
শ্রীশ্রীল ভক্তিনির্ম্মল আচার্য্য মহারাজ শ্রীশ্রীল ভক্তিসুন্দর গোবিন্দ দেবগোস্বামী মহারাজ শ্রীশ্রীল ভক্তিরক্ষক শ্রীধর দেবগোস্বামী মহারাজ ভগবান্ শ্রীশ্রীল ভক্তি সিদ্ধান্ত সরস্বতী গোস্বামী ঠাকুর
              প্রভুপাদ
“শ্রীচৈতন্য-সারস্বত মঠে সূর্যাস্ত কখনই হয় না” :
আমাদের মঠের পরিচয় ও বৈশিষ্ট্য
 
আমাদের সম্পর্কে শ্রীউপদেশ শ্রীগ্রন্থাগার শ্রীগৌড়ীয় পঞ্জিকা ছবি ENGLISH
 
শ্রীশ্রীপ্রপন্নজীবনামৃতম্


সপ্তমোঽধ্যায়ঃ

শ্রীভক্তবচনামৃতম্
আত্মনিক্ষেপঃ

 

 

হরৌ দেহাদিশুদ্ধাত্মপর্য্যন্তস্য সমর্পণম্ ।
এব নিঃশেষরূপেণ হ্যাত্মনিক্ষেপ উচ্যতে ॥১॥
আত্মার্থচেষ্টাশূন্যত্বং কৃষ্ণার্থৈকপ্রয়াসকম্ ।
অপি তন্ন্যস্তসাধ্যত্বসাধনত্বঞ্চ তৎফলম্ ॥২॥
এবং নিক্ষিপ্য চাত্মানং স্বনাথচরণাম্বুজাৎ ।
নাকর্ষ্টুং শক্নুয়াচ্চাপি সদা তন্ময়তাং ভজেৎ ॥৩॥

শ্রীহরিপাদপদ্মে দেহাদি হইতে শুদ্ধ আত্মা পর্য্যন্ত নিঃশেষরূপে সমর্পণকেই ‘আত্মনিক্ষেপ’ কহে । স্বনিমিত্ত চেষ্টা-ত্যাগ এ একমাত্র কৃষ্ণের নিমিত্তই চেষ্টাশীলতা ; এমন কি নিজ সাধ্য-সাধন পর্য্যন্তও কৃষ্ণের উপরেই নির্ভর করা—ইহার ফল স্বরূপ । এইরূপে নিজ নাথের চরণপদ্মে আপনাকে নিক্ষেপ করিয়া তথা হইতে আর ছাড়াইতে পারেন না এবং সর্ব্বদা তন্ময়তাই ভজনা করেন ॥১-৩॥

আত্মনিক্ষেপশ্চাত্মনিবেদনরূপম্—
কৃষ্ণায়ার্পিতদেহস্য নির্ম্মমস্যানহঙ্কৃতেঃ ।
মনসস্তৎস্বরূপত্বং স্মৃতমাত্মনিবেদনম্ ॥৪॥
কেষাঞ্চিৎ
আত্মনিক্ষেপ আত্মনিবেদনরূপ—
“শ্রীকৃষ্ণের সেবায় তাঁহারই প্রীতিবাঞ্ছায় যিনি দেহ উৎসর্গ করিয়াছেন, যিনি তদিতর বিষয়ে মমতাশূন্য এবং নিরহঙ্কার, সেই কৃষ্ণগত-চিত্ত জনের মনে যে ভগবৎস্বরূপতা (অর্থাৎ ভগবৎ সুখতাৎপর্য্যে আত্মসুখ-চেষ্টারাহিত্য), তাহাই ‘আত্ম-নিবেদন’ বলিয়া অভিহিত হয়” ॥৪॥
তত্র চেশ্বরাতিসামর্থ্যবিশ্বাসত্বম্—
ঈশ্বরস্য তু সামর্থ্যান্নালভ্যং তস্য বিদ্যতে ।
তস্মিন্ ন্যস্তভরঃ শেতে তৎকর্ম্মৈব সমাচরেৎ ॥৫॥
শ্রীব্যাসপাদানাং
সেখানে ঈশ্বরের অতিসামর্থ্যে বিশ্বাস—
ঈশ্বরের সামর্থ্যে তাঁহার অলভ্য কিছুই নাই । যিনি তাঁহাতে সমস্ত নির্ভর করিয়া নিজ চেষ্টারহিত হন, তিনি তাঁহারই কার্য্য সম্পাদন করেন ॥৫॥
তদ্­যন্ত্রমেবাত্মানমনুভবতি—
যৎ কৃতং যৎ করিষ্যামি তৎ সর্ব্বং ন ময়া কৃতম্ ।
ত্বয়া কৃতন্তু ফলভুক্ ত্বমেব মধুসূদন ॥৬॥
শ্রীকুলশেখরস্য
নিক্ষিপ্তাত্মা আপনাকে ভগবদ্­যন্ত্রমাত্র অনুভবকারী—
হে মধুসূদন ! আমি যাহা করিয়াছি, যাহা করিব, সেই সব আমার নহে । উহা তোমার কৃত, তুমিই উহার ফলভোগী ॥৬॥
হৃদি তন্নিযুক্তত্বানুভবান্ন মিথ্যাচারঃ—
কেনাপি দেবেন হৃদি স্থিতেন
যথা নিযুক্তোঽস্মি তথা করোমি ॥৭॥
গৌতমীয়তন্ত্রে
হৃদয়ে তৎপ্রেরণা অনুভূত হওয়ায় মিথ্যাচারের অবকাশাভাব—
কোন দেবতা দ্বারা যেরূপ নিযুক্ত হইতেছি, সেইরূপ করিতেছি ॥৭॥
গোবিন্দং বিনা তত্র সর্ব্বাত্মনা নান্যভাবঃ—
গোবিন্দং পরমানন্দং মুকুন্দং মধুসূদনম্ ।
ত্যক্ত্বান্যং বৈ ন জানামি ন ভজামি স্বরামি ন ॥৮॥
শ্রীব্যাসপাদানাং
সেখানে গোবিন্দ ব্যতীত কায়মনোবাক্যে অন্যভাব নাই—
পরমানন্দ, মুকুন্দ, মধুসূদন, গোবিন্দা ব্যতীত আমি অন্য কাহাকেও জানি না, ভজনা করি না বা স্মরণও করি না ॥৮॥
সর্ব্বত্রৈবাভীষ্টদেব-দর্শনম্—
ইতো নৃসিংহঃ পরতো নৃসিংহো, যতো যতো যামি ততো নৃসিংহঃ ।
বহির্নৃসিংহো হৃদয়ে নৃসিংহো নৃসিংহমাদিং শরণং প্রপদ্যে ॥৯॥
কেষাঞ্চিৎ
সর্ব্বত্রই অভীষ্টদেবের দর্শন—
“এদিকে নৃসিংহ, ওদিকে নৃসিংহ, যেখানে যেখানে যাই, সেইখানে নৃসিংহ, বাহিরে নৃসিংহ, আর হৃদয়ে নৃসিংহ,—এবম্বিধ সেই আদি-নৃসিংহের আমি শরণাপন্ন হইলাম” ॥৯॥
অন্যাভিসন্ধিবর্জ্জিতা স্থায়িরতিরেব স্যাৎ—
নাথে ধাতরি ভোগিভোগশয়নে নারায়ণে মাধবে
দেবে দেবকীনন্দনে সুরবরে চক্রায়ুধে শার্ঙ্গিণি ।
লীলাশেষ-জগৎ-প্রপঞ্চ-জঠরে বিশ্বেশ্বরে শ্রীধরে
গোবিন্দে কুরু চিত্তবৃত্তিমচলামন্যৈস্তু কিং বর্ত্তনৈঃ ॥১০॥
শ্রীকুলশেখরস্য
সর্ব্বপ্রকার অভিসন্ধিবর্জ্জিত স্থায়ী রতির উৎপত্তি—
যিনি তোমার নাথ, যিনি বিধাতা, অনন্তশয়ন, নারায়ণ, মাধব, দেবতা, দেবকীনন্দন, সুরশ্রেষ্ঠ, চক্রপাণি, শার্ঙ্গী, বিশ্বোদর, বিশ্বেশ্বর, শ্রীকৃষ্ণ ও গোবিন্দ প্রভৃতি নামলীলাময়, তাঁহাতেই তোমার অচলা মতি অর্পণ কর । অন্য লাভে প্রয়োজন কি ? ১০॥
পরমাত্মনি স্বাত্মার্পণমেব সর্ব্বথা বেদতাৎপর্য্যম্—
ধর্ম্মার্থকাম ইতি যোঽভিহিতস্ত্রিবর্গ
ঈক্ষাত্রয়ী নয়-দমৌ বিবিধা চ বার্ত্তা ।
মন্যে তদেতদখিলং নিগমস্য সত্যং
স্বাত্মার্পণং স্বসুহৃদঃ পরমস্য পুংসঃ ॥১১॥
শ্রীপ্রহ্লাদস্য
আত্মনিবেদনই সর্ব্বথা বেদতাৎপর্য্য—
“ধর্ম্ম, অর্থ এবং কাম, এই তিনটি ত্রিবর্গ বলিয়া অভিহিত । তন্নধ্যে আত্মবিদ্যা, কর্ম্মবিদ্যা, তর্ক, দণ্ডনীতি এবং কৃষি প্রভৃতি বিবিধ জীবিকা, এই সমস্তই ত্রৈগুণ্যবিষয় বেদের প্রতিপাদ্য ; সুতরাং ইহাদিগকে আমি নশ্বর বলিয়া মনে করি ; পক্ষান্তরে পরমপুরুষ শ্রীবিষ্ণুতে যে আত্মনিবেদন, উহাকেই আমি যথার্থ সত্য বলিয়া মনে করিয়া থাকি” ॥১১॥
আত্মনিক্ষেপ-পদ্ধতিঃ—
অপরাধ-সহস্র-ভাজনং পতিতং ভীমভবার্ণবোদরে ।
অগতিং শরণাগতং হরে কৃপয়া কেবলমাত্মসাৎ কুরু ॥১২॥
শ্রীযামুনাচার্য্যস্য
আত্মনিবেদনের প্রণালী—
হে হরে, সহস্র অপরাধকারী ঘোর ভবসাগর-মধ্যে পতিত গত্যন্তর-শূন্য এই শরণাগত জনকে কেবল করুণাপর হইয়া আত্মসাৎ কর ॥১২॥
অত্র কেচিদ্দেহার্পণমেবাত্মার্পণমিতি মন্যন্তে—
চিন্তাং কুর্য্যান্ন রক্ষায়ৈ বিক্রীতস্য যথা পশোঃ ।
তথার্পয়ন্ হরৌ দেহং বিরমেদস্য রক্ষণাৎ ॥১৩॥
কেষাঞ্চিৎ
এখানে কেহ কেহ দেহার্পণকেই আত্মার্পণ মনে করিয়া থাকেন—
বিক্রীত পশু সম্বন্ধে যেরূপ রক্ষণাবেক্ষণের চিন্তা করা হয় না, তদ্রূপ শ্রীহরিপাদপদ্মে দেহ অর্পণ করিয়া উহার রক্ষণাবেক্ষণ হইতে বিরত হইবে ॥১৩॥
গুণাতীত শুদ্ধক্ষেত্রজ্ঞস্যৈব সমর্পিতত্বোপলব্ধিঃ—
বপুরাদিষু যোঽপি কোঽপি বা গুণতোঽসানি যথাতথাবিধঃ ।
তদহং তব পাদপদ্ময়ো- রহমদ্যৈব ময়া সমর্পিতঃ ॥১৪॥
শ্রীযামুনাচার্য্যস্য
গুণাতীত শুদ্ধ ক্ষেত্রজ্ঞের ভগবন্নিবেদন-যোগ্যতার অনুভব—
“দেহাদি বিষয়ে আমার যে কোন আখ্যাই হউক না কেন, অথবা গুণবিচারে আমার যে কোন পরিচয়ই হউক না কেন, হে ভগবন্, আমি অদ্যই আমার এই অহংবুদ্ধি তোমার শ্রীপাদপদ্মে সমর্পণ করিলাম” ॥১৪॥
আত্মার্পণস্য দৃষ্টান্তঃ—
তন্মে ভবান্ খলু বৃতঃ পতিরঙ্গ জায়া-
মাত্মার্পিতশ্চ ভবতোঽত্র বিভো বিধেহি ।
মা বীরভাগমভিমর্শতু চৈদ্য আরাদ্
গোমায়ুবন্মৃগপতের্বলিমম্বুজাক্ষ ॥১৫॥
শ্রীরুক্মিণীদেব্যাঃ
আত্মার্পণের দৃষ্টান্ত—
“হে বিভো, হে কমললোচন, আমি আপনাকে পতিরূপে বরণ এবং আত্মসমর্পণ করিয়াছি ; অতএব আপনি এখানে আসিয়া আমাকে পত্নীরূপে গ্রহণ করিবেন । সিংহের আহার্য্য শৃগালের গ্রহণের ন্যায় আপনার ভোগ্য আমাকে যেন শিশুপাল আসিয়া সত্বর স্পর্শ না করে” ॥১৫॥
তত্র শুদ্ধাহঙ্কারস্য পরিচয়সমৃদ্ধেরভিব্যক্তিঃ—
নাহং বিপ্রো ন চ নরপতির্নাপি বৈশ্যো ন শূদ্রো
নাহং বর্ণী ন চ গৃহপতির্নো বনস্থো যতির্বা ।
কিন্তু প্রোদ্যন্নিখিলপরমানন্দপূর্ণমৃতাব্ধে-
র্গোপীভর্ত্তুঃ পদকমলয়োর্দাসদাসানুদাসঃ ॥১৬॥
শ্রীশ্রীভগবতশ্চৈতন্যচন্দ্রস্য
এ বিষয়ে বিশুদ্ধ অহঙ্কারের পরিচয় সমৃদ্ধির সুস্পষ্ট প্রকাশ—
“আমি ব্রাহ্মণ নই, ক্ষত্রিয় রাজা নই, বৈশ্য বা শুদ্র নই, অথবা ব্রহ্মচারী নই, গৃহস্থ নই, বানপ্রস্থ নই, সন্ন্যাসীও নই ; কিন্তু উন্মীলিত (অর্থাৎ নিত্য স্বতঃপ্রকাশমান) নিখিল পরমানন্দপূর্ণ অমৃত-সমুদ্ররূপ শ্রীকৃষ্ণের পদকমলের দাসানুদাস বলিয়া পরিচয় দিই” ॥১৬॥
ঔপাধিকধর্ম্মসম্বন্ধচ্ছেদশ্চ—
সন্ধ্যাবন্দন ভদ্রমস্তু ভবতো ভো স্নান তুভ্যং নমো
ভো দেবাঃ পিতরশ্চ তর্পণবিধৌ নাহং ক্ষমঃ ক্ষম্যতাম্ ।
যত্র ক্বাপি নিষদ্য যাদবকুলোত্তংসস্য কংসদ্ধিষঃ
স্মারং স্মারমঘং হরামি তদলং মন্যে কিমন্যেন মে ॥১৭॥
শ্রীমাধবেন্দ্রপুরীপাদানাং
ঔপাধিক ধর্ম্মসম্বন্ধের ছেদন—
“হে সন্ধ্যা-বন্দন, তোমার মঙ্গল হউক ; হে স্নান, তোমাকে নমস্কার ; হে দেবগণ, হে পিতৃগণ, আমি তর্পণবিধিপালনে অক্ষম, আমাকে ক্ষমা কর । যে কোন স্থানে উপবেশন করিয়া আমি যদুকুলভূষণ কংসারিকে স্মরণ করিতে করিতে পাপ হরণ করিব, ইহাই যথেষ্ট মনে করিতেছি । অন্যে আর আমার প্রয়োজন কি ?” ১৭॥
অলৌকিকভাবোদয়ে লৌকিকবিচারতুচ্ছত্বম্—
মুগ্ধং মাং নিগদন্তু নীতিনিপুণা ভ্রান্তং মুহুর্বৈদিকা
মন্দং বান্ধবসঞ্চয়া জড়ধিয়ং মুক্তাদরাঃ সোদরাঃ ।
উন্মত্তং ধনিনো বিবেকচতুরাঃ কামং মহাদাম্ভিকং
মোক্তুং ন ক্ষমতে মনাগপি মনো গোবিন্দপাদস্পৃহাম্ ॥১৮॥
মাধবস্য
অলৌকিক কৃষ্ণরতির উদয়ে লোকমত তুচ্ছীকৃত—
নীতিনিপুণ ব্যক্তিগণ আমাকে মোহগ্রস্ত বলিতে হয় বলুন । বৈদিকগণ আমাকে বারম্বার ভ্রন্ত বলিতে থাকুন ; বন্ধুগণ আমাকে মন্দ বলেন বলুন, সহোদরগণ আদর ত্যাগ করিয়া আমাকে জড়বুদ্ধি বলিতে থাকুন ; ধনবানগণ আমাকে উন্মাদ বলুন, আর বিবেকচতুর জনগণ প্রচুর পরিমাণে আমাকে মহাদাম্ভিক আখ্যা প্রদান করুন, তথাপি আমার মন শ্রীগোবিন্দচরণস্পৃহা কিঞ্চিন্মাত্রও পরিত্যাগ করিতে সমর্থ হইতেছে না ॥১৮॥
হরিরসপানমত্তানাং জনমতবিচারে নাবকাশঃ—
পরিবদতু জনো যথা তথায়ং
ননু মুখরো ন বয়ং বিচারয়ামঃ ।
হরি-রস-মদিরা-মদাতিমত্তা
ভুবি বিলুঠাম নটাম নির্ব্বিশামঃ ॥১৯॥
শ্রীসার্ব্বভৌমপাদানাং
হরিসেবানন্দমগ্নের লোকমত-বিচারের অনবকাশ—
মুখর লোক যেখানে সেখানে নিন্দা করিতে থাকুক, কিন্তু তাহা আমরা বিচার করিব না । হরিরসমদিরা-পানে পরম উন্মত্ত হইয়া আমরা নৃত্য করিব, ভূমিতে লুণ্ঠিত ও মূর্চ্ছিত হইব ॥১৯॥
বহুমানিতাদ্বৈতানন্দসিংহাসনাৎ ব্রজরসঘনমূর্ত্তেশ্চরণে লুণ্ঠনরূপমাত্মনিক্ষেপণম্—
অদ্বৈতবীথী-পথিকৈরুপাস্যাঃ স্বানন্দ-সিংহাসন-লব্ধদীক্ষাঃ ।
হঠেন কেনাপি বয়ং শঠেন দাসীকৃতা গোপবধূবিটেন ॥২০॥
শ্রীবিল্বমঙ্গলস্য
বহুমানিত অদ্বৈতানন্দ-সিংহাসন হইতে ব্রজরসমূর্ত্তি শ্রীকৃষ্ণের পদরজে লুণ্ঠনরূপ আত্মনিক্ষেপ—
“অদ্বৈতমার্গের পথিকগণ দ্বারা উপাস্য, আর আত্মানন্দ-সিংহাসন হইতে দীক্ষাপ্রাপ্ত হইয়াও আমি কোন গোপবধূলম্পট শঠ কর্ত্তৃক হঠক্রমে দাসীরূপে পরিণত হইয়াছি” ॥২০॥
অনুগ্রহনিগ্রহাভেদেন সেব্যানুরাগ এব আত্মনিক্ষেপঃ—
বিরচয় ময়ি দণ্ডং দীনবন্ধো দয়াম্বা
গতিরিহ ন ভবত্তঃ কাচিদন্যা মমাস্তি ।
নিপততু শতকোটির্নির্ভরং বা নবাম্ভ-
স্তদপি কিল পয়োদঃ স্তূয়তে চাতকেন ॥২১॥
শ্রীরূপপাদানাং
নিগ্রহানুগ্রহাভেদে সেব্যানুরাগই আত্মনিক্ষেপ—
হে দীনবন্ধো, আমার প্রতি দণ্ডই বিধান কর বা দয়াই কর, এ সংসারে তোমা ভিন্ন আমার অন্য কোন গতি নাই । বজ্রপতনই হউক বা প্রচুর নবাম্বুধারা-বর্ষণই হউক, চাতক সর্ব্বদা মেঘেরই স্তুতি গান করিয়া থাকে ॥২১॥
ব্রজরসলম্পটস্য স্বৈরাচারেষ্বাত্মনিক্ষেপস্যৈব পরমোৎকর্ষঃ—
আশ্লিষ্য বা পাদরতাং পিনষ্টু মা-
মদর্শনান্মর্ম্মহতাং করোতু বা ।
যথা তথা বা বিদধাতু লম্পটো
মৎপ্রাণনাথস্তু স এব নাপরঃ ॥২২॥
শ্রীশ্রীভগবতশ্চৈতন্যচন্দ্রস্য
ব্রজরসলম্পট শ্রীকৃষ্ণের স্বৈরাচারে আত্মনিক্ষেপই সর্ব্বোৎকৃষ্ট—
“এই পাদরতা দাসীকে কৃষ্ণ আলিঙ্গন পূর্ব্বক পেষণ করুন অথবা অদর্শন দ্বারা মর্ম্মাহতই করুন ; যিনি লম্পটপুরুষ, আমার প্রতি যেরূপই বিধান করুন না কেন, তিনি অপর কেহ ন’ন, আমারই প্রাণনাথ” ॥২২॥
মহৌদার্য্যলীলাময়শ্রীচৈতন্যচরণাত্মনিক্ষেপস্য পরমত্বম্—
পাত্রাপাত্রাবিচারণাং ন কুরুতে ন স্বং পরং বীক্ষতে
দেয়াদেয়-বিমর্শকো ন হি ন বা কালপ্রতীক্ষঃ প্রভুঃ ।
সদ্যো যঃ শ্রবণেক্ষণ-প্রণমন-ধ্যানাদিনা দুর্ল্লভং
দত্তে ভক্তিরসং স এব ভগবান্ গৌরঃ পরং মে গতিঃ ॥২৩॥
শ্রীপ্রবোধানন্দপাদানাং
মহৌদার্য্যলীলাময় শ্রীচৈতন্যচরণে আত্মনিক্ষেপের পরমতা—
যে প্রভু পাত্রাপাত্রের বিচার করেন না, স্ব-পর-ভেদ দর্শন করেন না, দেয় বা অদেয় বিচার করেন না, কালাকাল প্রতীক্ষা করেন না, শ্রবণ, দর্শন, প্রণাম ও ধ্যানাদি দ্বারা দুর্ল্লভ ভক্তিরস যিনি সদ্য সদ্য দান করেন—সেই ভগবান্ গৌরহরিই আমার একমাত্র গতি ॥২৩॥

ইতি শ্রীপ্রপন্নজীবনামৃতে শ্রীভক্তবচনামৃতান্তর্গত
আত্মনিক্ষেপো নাম সপ্তমোঽধ্যায়ঃ

 

 

← ৬ গোপ্তৃত্বে-বরণম্ ৮ কার্পণ্যম্ →

 

সূচিপত্র:
প্রকাশকের নিবেদন
নিবেদন
১ উপক্রমামৃতম্
২ শ্রীশাস্ত্রবচনামৃতম্
শ্রীভক্তবচনামৃতম্—
৩ আনুকূল্যস্য সঙ্কল্পঃ
৪ প্রাতিকূল্য-বিবর্জ্জনম্
৫ রক্ষিষ্যতীতি বিশ্বাসঃ
৬ গোপ্তৃত্বে-বরণম্
৭ আত্মনিক্ষেপঃ
৮ কার্পণ্যম্
৯ শ্রীশ্রীভগবদ্বচনামৃতম্
১০ অবশেষামৃতম্
গ্রন্থকারের রচিত কতিপয় স্তব-রত্ন
শ্রীশ্রীপ্রভুপাদপদ্ম-স্তবকঃ
শ্রীমদ্ভক্তিবিনোদবিরহদশকম্
শ্রীশ্রীমদ্­গৌরকিশোরনমস্কারদশকম্
শ্রীশ্রীদয়িতদাসদশকম্
শ্রীমদ্রূপপদরজঃ-প্রার্থনা-দশকম্
শ্রীদয়িত-দাস-প্রণতি-পঞ্চকম্
প্রণতি-দশকম্
শ্রীগুরু আরতি-স্তুতি
প্রণাম-মন্ত্রম্

বৃক্ষসম ক্ষমাগুণ করবি সাধন । প্রতিহিংসা ত্যজি আন্যে করবি পালন ॥ জীবন-নির্ব্বাহে আনে উদ্বেগ না দিবে । পর-উপকারে নিজ-সুখ পাসরিবে ॥