| |||||||
|
|||||||
ভগবতধাম : পরমকল্যাণ ও সাধ্যবস্তু
ওঁ বিষ্ণুপাদ শ্রীল ভক্তি নির্ম্মল আচার্য্য মহারাজের হরি-কথামৃত
‘কৃষ্ণনাম’ করে অপরাধের বিচার । (চৈঃ চঃ, ১/৮/২৪) “কৃষ্ণ বলিলে অপরাধীর না হয় বিকার”—কারণটা কী জানেন ? এই কৃষ্ণনাম চেতনবস্তু আর এই চেতনবস্তু সবার মুখে আসে না । যাঁরা নামে অপরাধী (কৃষ্ণনামের প্রতি অপরাধ করেন) তাঁদের মুখে কখনও কৃষ্ণনাম আসতে পারে না । আপনারা নিশ্চয়ই কৃষ্ণনামে অপরাধী নন তাই আপনাদের মুখে কেন কৃষ্ণনাম আসবে না ? সবাইকে কৃষ্ণনাম করতে হবে । আমি কোন গায়ক নই, কোন পাঠক নই—আমি এসেছি আপনাদেরকে কৃষ্ণনাম করাতে, জীবকে দয়া ও সাহায্য করতে এসেছি । আপনারা এই কৃষ্ণনাম যদি করবেন, এ দিয়ে আমাদের কিছু মঙ্গল হবে, আপনাদেরও কিছু মঙ্গল হবে । এখন একদম কথা বলবেন না । কোন কথা নেই । কথাগুলা বললে আপনাদের অপরাধ হবে । আমাদের বৈষ্ণব অপরাধ বা ভক্তির যেটা প্রতিকূল সেগুলা করা উচিৎ নয় । ভগবানের কথা শোনার সময় অন্য প্রজল্প করা উচিত নয় । আমি আগেও এটা বুঝিয়ে দিয়েছি আর কীর্ত্তনে আমরা প্রতিদিন গাই : “ছয় বেগ দমি’, ছয় দোষ শোধি, ছয় গুণ দেহ দাসে” । ছয় বেগ কী ? ছয় দোষ কী ? আর ছয় গুণ কী ? এই ছয় বেগটা আর ছয় দোষটা আমাদের বর্জ্জন করতে হবে । ছয় দোষের মধ্যে অত্যাহার, প্রয়াস, প্রজল্প, নিয়মাগ্রহ, জনসঙ্গ, লৌল্য আছে । ছয় বেগের মধ্যে বাক্যবেগ, মনবেগ, ক্রোধবেগ, জিহ্বাবেগ, উদরবেগ, উপস্থবেগ । আর ছয় গুণটা মানে উৎসাহ, নিশ্চয়, ধৈর্য্য, ভক্তিপোষক কর্ম্ম, সঙ্গত্যাগ আর সদ্বৃত্তি । সেইজন্য, প্রজল্প কখনও করবেন না । আপানারা এসেছেন কিছু হরিকথা শ্রবণ কীর্ত্তন করবার জন্য, সেটাই মন দিযে শুনতে হবে । সেইটা মন দিয়ে শুনলে আপনাদের পরমকল্যাণ বস্তু লাভ হবে । পরমকল্যাণ এবং সাধ্যবস্তু কী ? আমাদের এই শ্রবণ কীর্ত্তন করার অর্থ কী ? রাধাগোবিন্দের সেবায় নিজেকে অর্পণ করা, তাঁদের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করা । সেটা হচ্ছে আমাদের পরমাবস্থা । শ্রীমদ্ভগবদ্গীতায় বলেছেন : ভগবানকে যদি প্রীতি সহকারে নিত্য সেবা করা হয়, তখন কী হয় ? ভগবান নিজেই বলেছেন : “সে আমার কাছে চলে যায় ।” বিরজা, ব্রহ্মলোক, বৈকুন্ঠ, পরব্যোম ভেদ করে গোবিন্দের চরণে গোলোক-বৃন্দাবনে তিনি জায়গা পান । আপনারা এই জন্মে সুদুর্লভ দেহ পেয়েছেন, এই দুর্লভ বস্তু হেলায় হারিয়ে ফেলবেন না । হেলায় হারালে আবার গতাগতের অনুসারে আপনাদের বারবার এই সংসারে প্রবেশ করতে হবে । এইজন্য আপনাদের বুঝতে হবে আমাদের সাধ্যবস্তু কী, সাধ্যবস্তু কী করলে পাওয়া যাবে ? “‘সাধ্যবস্তু’ ‘সাধন’ বিনা কেহ নাহি পায়” (চৈঃ চঃ, ২/৮/১৯৬) এই সাধ্যবস্তু পাওয়ার একমাত্র উপায় হচ্ছে সাধন । এই সাধ্যবস্তু আপনাদের পেতে হলে বার বার যাতে এই সংসারে আসতে না হয়—তাই আপনাদের কৃষ্ণ ভজন করতে হবে ।
‘শ্রদ্ধা’ শব্দে—বিস্বাস কহে সুদৃঢ় নিশ্চয় । (চৈঃ চঃ, ২/২২/৬২) সর্ব্বকর্ম্ম কীরকম ? পিতৃঋণ, মাতৃঋণ, ঋষিঋণ, দেবঋণ, সব ঋণ শোধ হয়ে যায় যদি আমরা কৃষ্ণপূজা করি আর ভগবানের সেবা ও গুণ কীর্ত্তন করি—তার দ্বারা আমরা ভগবতধামে পৌছে যাব । এই চিন্তাভাবনার মধ্যে থাকতে হবে ।
চারি বর্ণাশ্রমী যদি কৃষ্ণ নাহি ভজে । (চৈঃ চঃ, ২/২২/২৬) রৌরব মানে নরকের চাইতে আরও কঠিন জায়গা—সেটা অত্যন্ত কষ্টের জায়গা আপনাদের যেতে হবেই যদি আপনারা কৃষ্ণ ভজন না করে বর্ণাশ্রম পালন করবেন । আপনি ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য বা শুদ্র হতে পারেন বা ব্রহ্মচর্য, গৃহস্থজীবন বা বানপ্রস্থ আশ্রম পালন করতে পারেন, কিন্তু এটা দ্বারা ভগবানকে পাওয়া যায় না । বানপ্রস্থ করে বিভিন্ন তীর্থ ভ্রমণ করুন । কিন্তু শাস্ত্রে বলেছেন,
তীর্থযাত্রা পরিশ্রম কেবল মনের ভ্রম, (শ্রীলনরোত্তমদাস ঠাকুর) সর্ব্বসিদ্ধি হবে কি করে ? গোবিন্দের চরণে আশ্রয় গ্রহণ করলে । এটা সব সময় আপনাদের মনে রাখতে হবে । এটা যদি ভুলে যান তাহলে আপনাদের কিছু হবে না । আপনাদের সব সময় কৃষ্ণসেবায় নিজেকে নিযুক্ত থাকতে হবে । সেইজন্য আপনাদের ভক্তির অনুকূলটা স্বীকার করতে হবে আর ভক্তির প্রতিকূলটা বর্জন করতে হবে ।
|
অন্য রচনা: • শ্রীনৃসিংহদেবের কথা • দণ্ড মহৎসব • মায়ার চিন্তা বা কৃষ্ণের চিন্তা ? • আমাদের একমাত্র উপায় • ভক্তির অভাব • গৃহে আবদ্ধ • মায়ের পেট থেকে মায়ার পেটের মধ্যে • জীবকে সত্য দয়া কি ? • ভোগী নই ত্যাগীও নই • শ্রবণ-কীর্ত্তনে মতি • ভগবানের কৃপা ও আপনার চেষ্টা • শান্তির গুপ্ত কথা • পবিত্র জীবন • বামনদেবের কথা • ভক্ত ও নাপিত • ভগবানের চরণে পথ • পূজনীয় বিসর্জন • শিবজী মহারাজ : পরম বৈষ্ণব • শ্রীহরিনাম দীক্ষা : গুরুপাদপদ্মের দান • আমি তো সব ব্যবস্থা করি নাকি ? • চকচক করলেই সোনা হয় না • আমার শোচন |
||||||
বৃক্ষসম ক্ষমাগুণ করবি সাধন । প্রতিহিংসা ত্যজি আন্যে করবি পালন ॥ জীবন-নির্ব্বাহে আনে উদ্বেগ না দিবে । পর-উপকারে নিজ-সুখ পাসরিবে ॥ | |||||||
© Sri Chaitanya Saraswat Math, Nabadwip, West Bengal, India. For any enquiries please visit our contact page. |