আমাদের শ্রীগুরুপরম্পরা :
শ্রীশ্রীল ভক্তিনির্ম্মল আচার্য্য মহারাজ শ্রীশ্রীল ভক্তিসুন্দর গোবিন্দ দেবগোস্বামী মহারাজ শ্রীশ্রীল ভক্তিরক্ষক শ্রীধর দেবগোস্বামী মহারাজ ভগবান্ শ্রীশ্রীল ভক্তি সিদ্ধান্ত সরস্বতী গোস্বামী ঠাকুর
              প্রভুপাদ
“শ্রীচৈতন্য-সারস্বত মঠে সূর্যাস্ত কখনই হয় না” :
আমাদের মঠের পরিচয় ও বৈশিষ্ট্য
 
আমাদের সম্পর্কে শ্রীউপদেশ শ্রীগ্রন্থাগার শ্রীগৌড়ীয় পঞ্জিকা ছবি ENGLISH
 

সাধ্যবস্তুর মূল : ছয় গুণ

ওঁ বিষ্ণুপাদ শ্রীল ভক্তি নির্ম্মল আচার্য্য মহারাজের হরি-কথামৃত
২ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

 

ছয় গুণটা কী ? মন দিয়ে শুনুন ।

উৎসাহ । এই যেমন ভক্তগণ উৎসাহ করে আমাকে ডেকেছেন আর আপনাদের সবাইকে নিমন্ত্রণ করেছেন, “আসুন, আপনারা গুরুদেবের কাছ থেকে হরিকথা শুনবেন আর প্রসাদ পেয়ে যাবেন ।” এটা হচ্ছে উৎসাহ । “গুরুদেব বছরের মধ্যে একবার আসেন, আপনারা সবাই আসবেন, আমি ঠাকুরের সেবা করব, ভক্ত সেবা করব”—সেইটা উৎসাহ, আগ্রহ । ভক্তির অনুষ্ঠানে উৎসাহ—অকাজ কুকাজে উৎসাহ নয়, সেটা খারাপ জিনিস । ভক্তির কাজে উৎসাহ থাকতে হবে ।

নিশ্চয় । এটা মানে দৃঢ় বিশ্বাস । বিশ্বাসটা হচ্ছে মুখ্য । আমি যখন জন্ম নিয়েছিলাম তখন আমার মা আমাকে শিখিয়ে দিয়েছিল, “এটা তোর বাবা ।” বাবাকে কে চিনিয়েছে ? মা চিনিয়েছে । সত্য কথা না মিথ্যা কথা সেটা মা-ই জানে ? মা যখন বলে দিচ্ছে এটা তোর বাবা—আমরা বিশ্বাস করে নিচ্ছি । ভগবানের প্রতি এরকম দৃঢ় বিশ্বাস থাকতে হবে ।

ধৈর্য্য । কেউ ভাবছে, “অনেক দিন আগে দীক্ষা নিলাম, ১৫, ২০ বা ৩০ বছর হয়ে গেল । গুরুদেব তো বলেছেন ১৬বার হরিনাম করতে হবে, আর আমি আরও বেশি করছি কিন্তু ফলটা পাচ্ছি না । উহু, আর করব না !” আর তখন আস্তে আস্তে অনুশীলনটা কমিয়ে দেয়—ধৈর্য্য কম বা নেই, টলারেন্স (সহিষ্ণুতা) নেই ... এটা চলবেন না ।

ভক্তিপোষক কর্ম্ম—শ্রবণ-কীর্ত্তনাদি এবং শ্রীকৃষ্ণের জন্য নিজের ভোগ-সুখ পরিত্যাগ করা ।

সঙ্গত্যাগ । কাদের সঙ্গ ত্যাগ করতে বলেছে ? অধর্ম্মের সঙ্গ ত্যাগ করতে বলেছে । তারপর, স্ত্রীসঙ্গ ত্যাগ করতে হবে—স্ত্রীসঙ্গ মানে পরের স্ত্রীর সঙ্গ, নিজের স্ত্রী নয় । যারা পরের স্ত্রীর সঙ্গ করে, তাদের সঙ্গ করবেন না আর যে বিবাহিত পুরুষ অবৈধ সঙ্গ করে (পরের স্ত্রীর সঙ্গ করে), আপনি তার সঙ্গ করবেন না, তার মুখও দেখবেন না । স্ত্রৈণ—যারা স্ত্রীর বশীভূত, ওদের সঙ্গ করতে নেই । মায়াবাদীর কাছ থেকে দূরে থাকতে হবে । (যারা নাস্তিক, যারা ভগবানের আকার নেই বলে) । ভগবান আপনাদের দুটো চোখ, দুটো কান, দুটো নাসারন্ধ্র, দুটো পা, দুটো হাত দিয়েছেন আর আপনারা বলেন ভগবান নেই বা ভগবানের আকার নেই । এক ধনী লোকের কাছ থেকে কিছু পয়সা ধার নিলেন আপনি কিছু দিন পরে বললেন যে, লোকটার কোন টাকা নেই—যার কাছ থেকে টাকা ধার নিলেন আপনি বলছেন ওর টাকা নেই ! তাই ভগবানও আমাদেরকে হাত, পা, নাক, চোখ, সব দিয়েছেন আর আমরা কেন বলছি ভগবানের আকার নেই ? এই রকম কিছু সম্প্রদায় আছে, তারা মায়াবাদী, নিরীশ্বর—তারা ঈশ্বরকে বিশ্বাস করে না । তাদের সঙ্গ করতে নেই ।

সদ্বৃত্তি—সাধুগণ যে বৃত্তির দ্বারা জীবন নির্ব্বাহ করে সেই বৃত্তি স্বীকার করতে হবে । আপনারা বাড়িতে অষ্টপ্রহর, পালা কীর্ত্তন, লীলা কীর্ত্তন ব্যবস্থা করেন—তারা ওসব কীর্ত্তন করে কিসের জন্য ? পয়সা উপার্জন করবার জন্য । তারা হরিনামকে বিক্রি করে ।

যখন কোন বাড়িতে একদিন কীর্ত্তন হয় তখন তারা নিরামিষ খায় (শুধু আলুর দম, তরকারি, ছোলার ডাল, লুচি-টুচি খায়) আর অন্য সময় আজেবাজে বা অমেধ্য খাবার খায় । বাড়িতে দুঘন্টা কীর্ত্তন করল, কিছু টাকা নিয়ে গেল আর সেটাকা দিয়ে মদ, গাঁজা, বিড়ি, সিগারেট খায় । এতে আপনাদের কি মঙ্গল হবে ? সাধুগণ যেভাবে জীবন ধারণ করছেন সেইভাবে আপনাদেরকেও জীবন ধারণ করতে হবে । যদি কোন ‘সাধু’ আপনার কাছে গিয়ে বলেন, “আমাকে টাকা পয়সা দিতে হবে,” “আমাকে গাড়ি দিতে হবে,” “এ দিতে হবে,” “সে দিতে হবে,” “অমুক দিতে হবে,” “তমুক দিতে হবে”—এসব সত্যিকারের সাধুরা করেন না । একঘন্টা কীর্ত্তন করলে ১০০০ টাকা দিতে হবে, দুঘন্টা কীর্ত্তন করলে ২০০০ টাকা দিতে হবে—এরকম কোন কাজ সত্যিকারের সাধু করতে পারেন না । এরা নিজেরা ব্যাবসা করার জন্য এসব করে, আর এদের সঙ্গ করতে নেই । এটা সদ্বৃত্তি নয়, এটা অসদ্বৃত্তি আচরণ ।

যে ভগবানের নাম করে, ভগবানের পূজা করে পয়সার বিনিময়ে, তাদের সঙ্গ কিছু মঙ্গল বয়ে আনতে পারে না । এটা হচ্ছে নাম বলে পাপাচার : “আমি ৩৬৪ দিন হরিনাম করব না, আর বছরে একদিন একটু ভাড়াটিয়া দল নিয়ে কীর্ত্তন দেব আর আমার পাপ সব চলে যাবে ।” এই বুদ্ধি করে যারা হরিনাম দেয় আর যারা হরিনাম করে উভয়েই নরকগামী প্রাপ্ত হয় ।

এই অষ্টপ্রহর কীর্ত্তনগুলা আর লীলাকীর্ত্তনগুলা বন্ধ করতে হবে । ওইসব নাম বলে পাপাচার । যে তা করবে তাতে তার পাপ (অপরাধ) হবে, তাতে ক্ষতি হবে । এগুলো ইমিডিয়েটলি (অবিলম্বে) বন্ধ করতে হবে । এগুলো বন্ধ না করলে আপনাদের মঙ্গল বয়ে আনবে না । এটা শাস্ত্রের কথা । সেই কথাগুলা শুনে চলতে হবে, সেই কথাগুলা মনে রাখতে হবে ।

আপনাদের নিজে কীর্ত্তন করতে হবে । আমি এসেছি কী জন্য ? জীবকে দয়া করতে এসেছি । আপনাদের বাড়িতে কীর্ত্তন করতে হবে । আপনি নিজে সারা দিন কীর্ত্তন করবেন । বাড়িতে বসে, খাইতে, শুইতে, বসতে—সব সময় “হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ” করবেন ।

 


 

← গ্রন্থাগারে

অন্য রচনা:
শ্রীনৃসিংহদেবের কথা
দণ্ড মহৎসব
মায়ার চিন্তা বা কৃষ্ণের চিন্তা ?
আমাদের একমাত্র উপায়
ভক্তির অভাব
গৃহে আবদ্ধ
মায়ের পেট থেকে মায়ার পেটের মধ্যে
জীবকে সত্য দয়া কি ?
ভোগী নই ত্যাগীও নই
শ্রবণ-কীর্ত্তনে মতি
ভগবানের কৃপা ও আপনার চেষ্টা
শান্তির গুপ্ত কথা
পবিত্র জীবন
বামনদেবের কথা
ভক্ত ও নাপিত
ভগবানের চরণে পথ
পূজনীয় বিসর্জন
শিবজী মহারাজ : পরম বৈষ্ণব
শ্রীহরিনাম দীক্ষা : গুরুপাদপদ্মের দান
আমি তো সব ব্যবস্থা করি নাকি ?
চকচক করলেই সোনা হয় না
আমার শোচন
বৃক্ষসম ক্ষমাগুণ করবি সাধন । প্রতিহিংসা ত্যজি আন্যে করবি পালন ॥ জীবন-নির্ব্বাহে আনে উদ্বেগ না দিবে । পর-উপকারে নিজ-সুখ পাসরিবে ॥