আমাদের শ্রীগুরুপরম্পরা :
শ্রীশ্রীল ভক্তিনির্ম্মল আচার্য্য মহারাজ শ্রীশ্রীল ভক্তিসুন্দর গোবিন্দ দেবগোস্বামী মহারাজ শ্রীশ্রীল ভক্তিরক্ষক শ্রীধর দেবগোস্বামী মহারাজ ভগবান্ শ্রীশ্রীল ভক্তি সিদ্ধান্ত সরস্বতী গোস্বামী ঠাকুর
              প্রভুপাদ
“শ্রীচৈতন্য-সারস্বত মঠে সূর্যাস্ত কখনই হয় না” :
আমাদের মঠের পরিচয় ও বৈশিষ্ট্য
 
আমাদের সম্পর্কে শ্রীউপদেশ শ্রীগ্রন্থাগার শ্রীগৌড়ীয় পঞ্জিকা ছবি ENGLISH
 

ভক্তিজগতের পরীক্ষা

ওঁ বিষ্ণুপাদ শ্রীল ভক্তি নির্ম্মল আচার্য্য মহারাজের হরি-কথামৃত
৬ মে ২০১৮

 

বৈষ্ণবের ছাব্বিশটা গুণ আছে : কৃপালু, অকৃতদ্রোহ, সত্যসার, সম, নির্দ্দোষ, বদান্য, মৃদু, শুচি, অকিঞ্চন, সর্ব্বোপকারক, শান্ত, কৃষ্ণৈকশরণ, অকাম, নিরীহ, স্থির, বিজিত-ষড়্­গুণ, মিতভুক্, অপ্রমত্ত, মানদ, অমানী, গম্ভীর, করুণ, মৈত্র, কবি, দক্ষ, মৌনী । সেই গুণটা আপনার মধ্যে আছে কি না ? ছাব্বিশটাই গুণ দূরে থাকুক তার মধ্যে একটাও আছে কি না ? সেইটা আপনাদের নিজেই নিজের দিকে বিচার করতে হবে ।

স্কুলে ফোর ক্লাস পর্যন্ত পড়লে প্রাইমারি পাস হয়, তারপর দশম ক্লাস পর্যন্ত পড়লে হাই স্কুল পাস হয়, আর দ্বাদশ ক্লাস পর্যন্ত পড়লে উচ্চমাধ্যমিক পাস হয়, তারপর কলেজে ভর্তি হয় । কিন্তু এখানে পরীক্ষা নেবে কে ? নিজের পরীক্ষা নিজেই নিতে হবে : আপনি সত্যিকারের ভজন করছেন কি করছেন না ? আপনার হরিকথায় মতি আসছে কি রতি আসছে না ? সেটা আপনাকে নিজেকে বিচার করতে হবে । আপনার পরীক্ষা আপনাকেই নিতে হবে : আপনি সত্যিকারের হরিভজন করছেন কি না ? আপনি সাধু হলেন কি না ? আপনি পরচর্চা, পরনিন্দা করছেন কি না ? ‘আমি’ ‘আমার’ বস্তুটা দেখছেন কি না ? নাম বলে পাপাচার করছেন কি না ? এই ধরনের জিনিষ যদি থাকে, তাহলে এটা হরিনাম হল না । কতক্ষণ হরিনাম হয় সেটা নিজেকে বুঝতে হবে । সেইজন্য বৈষ্ণব-ভজনটা (সেবা) আমাদের কর্তব্য ।

একাকি নির্জন ভজন করলে তবে এটা কৈতব । “নির্জনে একাকি থাকব ও কারও সঙ্গ করব না”—সেটা হচ্ছে কৈতব- অত্মবঞ্চনা । নির্জনে বসে থেকে একাকি ভজন করা মানে আপনি আত্মবঞ্চনা করলেন । কলিযুগের ভজনটা হচ্ছে গোষ্ঠভজন, গোষ্ঠ্যানন্দী—নির্জন ভজন নয় । সাবাইকে নিয়ে সঙ্কীর্ত্তন করতে হবে । তাহলে এটা সত্যিকারের নাম হয় ।

মনে মনে হরিনাম করলে আপনার অনেক চিন্তাভাবনা এই সময় আসে । এমনকি ১০ মিনিট এমনই বসে থাকতে মুশকিল কারণ অনেক চিন্তা মনের মধ্যে এসে যায়, যখন ধ্যানে বসেন অন্য চিন্তা মনের মধ্যে এসে যায় । আর যখন আপনি জোরে জোরে হরিনাম করেন, তখন পশুপাখি, গাছপালা, কীটপতঙ্গ (যারা বলতে না পারে, শুনতে না পারে) ওরাও কিছু মঙ্গল পেতে পারে । তারা সাউন্ড ভাইব্রেশন (শব্দতরঙ্গ) শুনতে পায় ।

গুরুমহারাজ বলছেন শব্দতরঙ্গ ইথারের মধ্যমে এসে যায় । ইথার মানে কী ? যেমন টেলিভিশনের সেন্টার বা আকাশতার (অ্যরিয়েল) সেন্টার হচ্ছে কলকাতায় কিন্তু আপনি এখান থেকে একটু সুইচ দেন আর সিগন্যালটা তরঙ্গের মধ্যমে ওখান থেকে চলে আসে । মোবাইলটাও এইরকম । টাওয়ারটা হচ্ছে কোথায় - অার এখান থেকে আমরা কথা শুনতে পাই, দেশ বিদেশের কথাও শুনতে পাই । সেটা হচ্ছে শব্দতরঙ্গ যেমন ইথারের মাধ্যমে চলে আসে ।

গুরুমহারাজ আর একটা কথা বলছেন, সুন্দর করে মন দিয়ে শুনতে হবে আর মনে রাখতে হবে ।

এই জগতের লোকগুলো বলে যে ভক্তি জগৎ নেই । যদি আপনার কান না থাকে (যদি কান বধির থাকে), তাহলে শব্দজগৎ বলতে কিছু আছে ? আপনি কথা বুঝতে পারবেন ? কানে যদি শুনতে না পাই (লোকে বলে ‘কান কালা’), বাহিরে যে অত শব্দ হচ্ছে (মাইক বাজছে, লোক কথা বলছে, পাঠও হচ্ছে) আমি সেটা কিছুই শুনতে পারছি না, তাহলে আমি ভাবছি যে, কোন শব্দ কি নেই এই জগতে ? কিন্তু সেটা কি সত্য কথা ? আমি যদি শুনতে পাই, তাহলেই বোঝা যায় যে, এটা সত্য কথা নয় । শব্দজগৎ আছে ।

দৃষ্ট জগৎও আছে । যদি চোখ অন্ধ হয় তাহলে আমার কাছে পৃথিবীতে আর কিছু নেই—আলো নেই, গাছপালা নেই, কীটপতঙ্গ নেই, পশুপাখী নেই, কিছুই নেই কারণ আমার দৃষ্ট বস্তু কিছু নেই । চোখে দেখতে পারছি না বলে জগতে আমি আর কিছু দেখতে পারছি না । এইজন্য, আমি বলি এই জগতে কিছুই নেই । কিন্তু সেটা কি সত্য কথা ? সেটা সত্য কথা নয় ।

কান থাকলে যেমন শব্দজগৎ আছে, চোখ থাকলে যেমন দৃষ্ট জগৎ আছে (দেখার বস্তু আছে), সেইরকম ভক্তি থাকলে ভগবান আছেন । এটা মনে রাখতে হবে । ভগবান নেই বললে সেটা কেউ শুনবেন না । ভক্তি থাকলে ভগবান আছেন ।

চোখ যদি থাকে, আমি এই বিল্ডিং দেখতে পারছি, গাছপালা দেখতে পারছি, পুকুর দেখতে পারছি, জঙ্গল ও রাস্তা দেখতে পারছি, আপনাদেরকে দেখতে পারছি । যাদের চোখ আছে, তারাও এটা বলবে । যদি চোখটা অন্ধ হতো দেখতে পেতাম না । তাহলে, যার ভক্তি আছে বলে, সে-ই ভগবানকে দেখতে পাবে—ভক্তি থাকলে ভগবানকে দর্শন হবে । ভগবান আছেন বলে সেটা বিশ্বাস করতে হবে । ভক্তি থাকলে সেটা বুঝতে পারবেন । ভক্তির মাধ্যমে ভগবানকে লাভ হয় । এইটা মনে রাখতে হবে ।

এটা পরমগুরুমহারাজ শ্রীল শ্রীধর দেবগোস্বামী মহারাজের কথা, এটা তিনি তাঁর বইতেও লিখেছেন ।

আমাদের সেইভাবে সব সময় এই চিন্তা করতে হবে । এই চিন্তাভাবনার মধ্যে আমাদের জানতে হবে, বুঝতে এবং থাকতে হবে ।

 


 

← গ্রন্থাগারে

অন্য রচনা:
শ্রীনৃসিংহদেবের কথা
দণ্ড মহৎসব
মায়ার চিন্তা বা কৃষ্ণের চিন্তা ?
আমাদের একমাত্র উপায়
ভক্তির অভাব
গৃহে আবদ্ধ
মায়ের পেট থেকে মায়ার পেটের মধ্যে
জীবকে সত্য দয়া কি ?
ভোগী নই ত্যাগীও নই
শ্রবণ-কীর্ত্তনে মতি
ভগবানের কৃপা ও আপনার চেষ্টা
শান্তির গুপ্ত কথা
পবিত্র জীবন
বামনদেবের কথা
ভক্ত ও নাপিত
ভগবানের চরণে পথ
পূজনীয় বিসর্জন
শিবজী মহারাজ : পরম বৈষ্ণব
শ্রীহরিনাম দীক্ষা : গুরুপাদপদ্মের দান
আমি তো সব ব্যবস্থা করি নাকি ?
চকচক করলেই সোনা হয় না
আমার শোচন
বৃক্ষসম ক্ষমাগুণ করবি সাধন । প্রতিহিংসা ত্যজি আন্যে করবি পালন ॥ জীবন-নির্ব্বাহে আনে উদ্বেগ না দিবে । পর-উপকারে নিজ-সুখ পাসরিবে ॥