| |||||||
|
|||||||
কেন আমরা প্রচারে যাই ?
ওঁ বিষ্ণুপাদ শ্রীল ভক্তি নির্ম্মল আচার্য্য মহারাজের হরি-কথামৃত
আজকে বহু ভাগ্যের ফলে আমরা এখানে উপস্থিত হইয়াছি কিছু ভাগবতকথা হরিকথা আলোচনা করিবার জন্য । মেঘাচ্ছন্ন দুর্দিন নহে—হরিকথা বিহীন দিন হইতেছে দুর্দিন । আমাদের হরিকথা প্রত্যেক দিন অনুশীলন করিতে হইবে, প্রত্যেক দিন আচার-আচরণ করিতে হইবে । মাঝে মাঝে লোক ভাবিতেছেন আজকে একদিন হরিনাম করলাম কালকে করিব না কিন্তু আমাদের আজকে খাইলে কালকেও খাইতে হইবে, আজকে বাথরুমে গেলে কালকেও বাথরুমে যাইতে হইবে । দৈনন্দিন গোবিনদের সেবা প্রত্যেকদিনই করিতে হইবে । এছাড়া কোন উপায় নাই । সর্ব্বাগ্রে মদীয় গুরুপাদপদ্ম ওঁ বিষ্ণুপাদ জগৎগুরু শ্রীল ভক্তিসুন্দর গোবিন্দ দেবগোস্বামী মহারাজের রাতুলচরণে ষাষ্টাঙ্গে দণ্ডবৎ পূর্ব্বক সেবামুখে তাঁহার অহৈতুকী কৃপা প্রার্থনা ভিক্ষা করিতেছি । তৎপর গুরুবর্গ, গুরুভ্রাতৃমণ্ডলী, শ্রোত্রীমণ্ডলী, মাতৃমণ্ডলী, ভক্তমণ্ডলী আপনাদের শ্রীচরণে অধমের দণ্ডবৎ প্রণতি জ্ঞাপন করিতেছি এই অধাম জীবকে কৃপা করিবেন । আজকে খুবই শুভ দিন কারণ আমরা বহু ভাগ্যের ফলে এখানে আসিয়া পারিয়াছি এবং সাধু-গুরু-বৈষ্ণবগণ খুবই ভাগ্যের ফলে এই বাড়িতে আসিয়া মিলে ।
মহান্ত-স্বভাব এই তারিতে পামর । (শ্রীচৈতন্যচরিতামৃত, ২/৮/৩৯) তাঁরা অপরের বাড়িতে যান কি জন্য ? যাঁরা হরিকথা শুনিবেন তাঁদের সাহায্য করিবার জন্য, তাঁদের মঙ্গলের জন্য সাধু-গুরু-বৈষ্ণবগণ গ্রামে বা বাড়িতে এসে উপস্থিত হন । তাঁরা হরিকথা কৃষ্ণকথা বলিবার জন্য আসেন ।কৃষ্ণকথা বলিয়া আমাদেরকে কৃষ্ণোন্মুখ, ভাগবতোন্মুখে করিবেন—এই আশায় সাধু-গুরু-বৈষ্ণবগণ বিভিন্ন প্রত্যন্ত গ্রামে অজ পাড়াগায় এসে উপস্থিত হন । কেহ ভাবেন সাধুগণ বাড়ি বাড়ি ঘুরিয়া বেড়ান শুধু ভালো খাওয়া দাওয়ার জন্য কিন্তু সেটা আসল বস্তু নহে… হইতে পারে আপনারা শুনিয়াছেন যে, আমাদের চৈতন্য সারস্বত মঠে শ্রীলকৃষ্ণদাস বাবাজী মহারাজ থাকিতেন । মাঝে মাঝে তিনি একটু ঘুরিতেও যাইতেন । তিনি ভক্তিসিদ্ধান্ত সরস্বতী ঠাকুরের শিষ্য এবং ভালো কীর্ত্তনীয়া ছিলেন । আমাদের যে কীর্ত্তন শ্রীগৌড়ীয় গীতাঞ্জলি গ্রন্থা সেটা প্রথমে রচনা করিয়াছিলেন শ্রীলকৃষ্ণদাস বাবাজী মহারাজ । একদিন তিনি মঠে আসিয়াচিলেন আর আপনি বুঝিতে পারেন যে, সবাইটা মঠে একরকম হয় না । সবাই মঠে আসলি সাধু হয় না । গুরুমহারাজ বলিতেন এই চার প্রকারের লোক মঠে হরিভজন করিতে আসেন : আর্ত্তো, অর্থার্থী, জিজ্ঞাসুর, জ্ঞানী । আর্ত্তো মানে গরিব লোক । অর্থার্থী মানে লোক যাঁরা অর্থ লভে আসেন । জিজ্ঞাসুর মানে লোকটা কিছু জানিতে চান । আর যাঁরা জ্ঞানী তাঁরা জ্ঞান হইয়া মঠে আসেন আর কিছু জ্ঞান উপার্জন করিবার জন্য । তাঁরা যদি সত্যিকারের নিঃশর্ত ভাবে নিস্কাম ভাবে অনুশীলন করেন তাহলে তাঁরা ভাগবতোন্মুখে হয়ে ভগবদ্ধামে সাধু-গুরু-বৈষ্ণবের সেবা করিতে পারেন । সবাইয়ের এটা ভাগ্য হয় না । মঠে ত অনেক লোকই আসলেন, অনেক লোকই যান । অনেক লোকই দীক্ষা নেন, অনেক লোকই ছেড়ে দেন । এই পথে শেষ পর্যন্ত সবাই থাকেন না । স্কুলেও প্রাইমারী স্কুলে অনেক ছাত্রী ভর্তি হয় কিন্তু হাই স্কুলে উঠলে ছাত্রীর সংখ্যা কমে যায়, কলেজে উঠলে আর কমে যায় আর শেষে ইউনিভার্সিটিতে উঠলে শুধু দুই-এক জন থাকেন । গুরুমহারাজও বললেন চলনী দিয়ে ছাঁকলে শেষ পর্যন্ত খুবই কম থাকে, বেশ থাকে না । সেইজন্য একদিন শ্রীলকৃষ্ণদাস বাবাজী মহারাজ মঠে আসিয়াছিলেন আর একজন ব্রহ্মচারী ফট করে বলিয়া ফেললেন যে, এই সাধুটা শুধু খাওয়ার জন্যই আসেন মঠে । সে কথা শুনিয়া বাবাজী মহারাজ আর খাইতে গেলেন না—তিনি বন্ধ ঘরের মধ্যে বসিয়া থাকলেন ভাবিয়া, “দেখি আমি না খেয়ে থাকতে পারি কি না !” এক দিন, দুই দিন, তিন দিন ধরে তিনি প্রসাদ পাইতেন না । তিনি মুখে শুধু হরিনাম সবসময় করিতেন কিন্তু না খাইয়া কত দিন থাকা যায় ? শেষ পর্যন্ত তিনি আস্তে আস্তে করে হরিনাম করিতেন আর সবাই ঘরে তাঁকে ডাকিয়া গিয়াছিলেন । তাঁর দুর্বল অবস্থাটা দেখিয়া তাঁকে জোর করে জল ও কিছু ফলের রস খাওয়ান হল । তারপর যিনি এই কাজটা করিয়াছিলেন তাঁকে অপরাধ ক্ষমা চাওয়ান হল আর তারপর বাবাজী মহারাজ প্রসাদ পেলেন । সেই ভাবে যাঁরা সত্যিকারের সাধু-গুরু-বৈষ্ণবগণ তাঁরা খাওয়া-দাওয়ার জন্য কিছু পাওয়ার ভরসায় আসেন না—তাঁরা আসেন এ পামর অধম জীবকে, পতীত জীবকে উদ্ধার করিবার জন্য, তাঁদেরকে কৃষ্ণোন্মুখ করিবার জন্য । আমরা সবাই এই কথা এই কৃষ্ণকথা সবসময় বলি এবং কৃষ্ণকথা সবসময় শুনিতে ইচ্ছা করি । শ্রীলমধুসূদন গোস্বামী মহারাজ প্রচারে যাইয়া বলিতেন, “আমরা কেন বার বার প্রচারে যাই ? কেন উৎসব অনিষ্ঠানের আয়োজন করি ? কিছু হরিকথা বলিলে নিজেকে কিছু মঙ্গল হয় এবং যাঁরা শুনিলে তাঁদেরকেও কিছু মঙ্গল হয় ।” এই শুধু আসল বস্তু ।
|
অন্য রচনা: • শ্রীনৃসিংহদেবের কথা • দণ্ড মহৎসব • মায়ার চিন্তা বা কৃষ্ণের চিন্তা ? • আমাদের একমাত্র উপায় • ভক্তির অভাব • গৃহে আবদ্ধ • মায়ের পেট থেকে মায়ার পেটের মধ্যে • জীবকে সত্য দয়া কি ? • ভোগী নই ত্যাগীও নই • শ্রবণ-কীর্ত্তনে মতি • ভগবানের কৃপা ও আপনার চেষ্টা • শান্তির গুপ্ত কথা • পবিত্র জীবন • বামনদেবের কথা • ভক্ত ও নাপিত • ভগবানের চরণে পথ • পূজনীয় বিসর্জন • শিবজী মহারাজ : পরম বৈষ্ণব • শ্রীহরিনাম দীক্ষা : গুরুপাদপদ্মের দান • আমি তো সব ব্যবস্থা করি নাকি ? • চকচক করলেই সোনা হয় না • আমার শোচন |
||||||
বৃক্ষসম ক্ষমাগুণ করবি সাধন । প্রতিহিংসা ত্যজি আন্যে করবি পালন ॥ জীবন-নির্ব্বাহে আনে উদ্বেগ না দিবে । পর-উপকারে নিজ-সুখ পাসরিবে ॥ | |||||||
© Sri Chaitanya Saraswat Math, Nabadwip, West Bengal, India. For any enquiries please visit our contact page. |