| |||||||
|
|||||||
কুটীনাটী ছেড়ে শুদ্ধ আচরণ করো
ওঁ বিষ্ণুপাদ শ্রীল ভক্তি নির্ম্মল আচার্য্য মহারাজের হরি-কথামৃত
একটা মোবাইল কিনে যদি ঘরে ফেলে রাখেন কয়েক দিন পরে চার্জটা ফুরিয়ে যাবে । মোবাইলের ব্যাটারিকে চার্জ দিতে হবে । মাইকের ব্যাটারিও চার্জ না দিলে কত দিন মাইক চলিবে ? তাকে চার্জ দিতে হবে তা না হলে ব্যাটারি নষ্ট হয়ে যাবে । সেইরকমই হরিকথা শুনিতে শুনিতে আপনাদের ব্যাটারিকে চার্জ দাওয়া হয় তা না হইলে যদি আমরা ব্যাটারিকে কয়েক দিন চার্জ না দেই মায়া আমাদের আক্রমণ করতে পারেন এবং আমরা আবার কৃষ্ণবহির্মুখ হয়ে যাব । মায়া অত্যন্ত শক্তিশালী । আপনারা দুর্বল হলে মায়া আপনাদের আক্রমণ করতে পারেন । সেইজন্য সব সময় সাধুসঙ্গ, ভক্তসঙ্গ করিলে মায়া চট করে আসতে পারবে না । যেখানে কৃষ্ণনাম করা হয় সেখান থেকে মায়া অত্যন্ত দূরে পালিয়ে যান । মায়া সব সময় চারদিকে ঘুরঘুর করে আপনাদের ধরতে চেষ্টা করে—যাহাতে আপনারা কৃষ্ণবহির্মুখ হয়ে যান । শুধু তাই নয়, আপনার ভগবানের সেবা চলে যেতে পারে । বিভিন্ন লোক বলে, “মহারাজ আমাকে কৃপা করবেন ।” কিন্তু কৃপা শব্দের অর্থ হচ্ছে সেবা পাওয়া । গুরু মহারাজও বলতেন : যদি আপনাদের সেবা থাকে আপনাদের কৃপা আছে—আর যদি আপনাদের সেবা নেই আপনার কৃপা নেই । সেটা মনে রাখতে হবে । আপনাদের কাছে সেবা চলে এসেছে বহু ভাগ্যের ফলে, ভগবানের সেবায় অংশ গ্রহণ করুন । এই সেবা এখানে অভ্যাস করতে করতে আমরা গোলোক-বৃন্দাবনে গিয়েও এই সেবা পাব । এখানে ভৌম বৃন্দাবন আর ওখানে গোলোক বৃন্দাবন—সেই গোলোক বৃন্দাবনে আমরা রাধাগোবিন্দের সেবায় অংশ গ্রহণ করতে পারব। “জীবন অনিত্য জানহ সার তাহে নানাবিধ বিপদ-ভার ।” জীবনটা অনিত্য যেকোন সময় চলে যেতে পারে । মহাজনের শ্রীমুখ থেকে শ্রবণ করেছেন ‘মৃত্যু অতি আসন্ন’, মানে মৃত্যু অত্যন্ত কাছেই আছে । যেকোন সময় আমাদের নিঃশ্বাসটা বেরিয়ে যেতে পারে । খট্বাঙ্গ মহারাজ বা পরীক্ষিত মহারাজের মত এত ভাগ্য জন্মায়নি যাতে আমরা জানতে পারব আমরা কত দিন আর বাঁচব । খট্বাঙ্গ মহারাজ জানতে পেরেছেন আটচল্লিশ মিনিট তিনি বাঁচবেন জগতে (তাঁর বাকি আয়ু ছিল আটচল্লিশ মিনিট) । পরীক্ষিত মহারাজ জানতে পেরেছেন তাঁর আয়ু ছিল সাত দিন । এইরকম মুনি-ঋষিগণ জানতে পারেন তাঁদের কত দিন আয়ু আছে কিন্তু আমাদের এত ভাগ্য হয়নি যে, আমরা জানতে পারব সাত দিন বা সাত সপ্তাহ বা সাত বছর বাঁচব কি না । কোন গ্যারান্টি নেই—যেকোন সেকেন্ডে চলে যেতে পারি । কিন্তু সময় নষ্ট না করে আমরা যদি গোবিন্দের সেবায় নিজেকে নিযুক্ত করি তাহলে আমাদের পরমকল্যাণ বস্তু, পরম তত্ত্ববস্তু লাভ হবে । তাহলে আমরা ভগবত-ধামে রাধাগোবিন্দের সেবায় নিজেকে অংশ গ্রহণ করতে পারব । সেইজন্য আমাদের এই কথাগুলো সব সময় শ্রবণ করতে হবে । শ্রবণ না করলে আমরা কিছু পাব না । শ্রবণ মানে ‘শ্রেয় + বন’ । দুটি কথা আছে, ‘শ্রেয়’ এবং ‘প্রেয়’ । প্রিয় কথা মানে নাচ, গান, হারমোনিয়াম বাজনা ইত্যাদি । আপনারা অনেক কীর্ত্তন দেখছেন—অষ্টপ্রহর, চব্বিশপ্রহর, লীলা কীর্ত্তন কিন্তু এমন কীর্ত্তন সারা জীবনই করলেও ভগবানকে লাভ হবে না । “কোটি জন্ম যদি করে শ্রবণ কীর্ত্তন তবু না পায় ব্রজেন্দ্রনন্দন ।” ওইরকম কোটি জন্ম কীর্ত্তন করলে ভগবানকে পাবেন না । ভাড়াটিয়া কীর্ত্তন শুনতে গিয়া লোককে বলা হয় যা ইচ্ছা তাই করবে, যা খুশি তাই করবে । তারা আচার আচরণ কিচ্ছু শুদ্ধ ভাবে করে না—গৌরের কথা মুখে বলে কিন্তু গৌরের আচরণ করে না ।
“গোরার আমি, গোরার আমি” মুখে বলিলে নাহি চলে । (শ্রীশ্রীপ্রেমবিবর্ত্ত, ৮/৬-৭) আপনি ভাবছেন, “আমি আজকে নির্জ্জলা একাদশী করছি সবাই তা জানেন !” কিন্তু এদিকে আপনি পুকুরে স্নান করতে গিয়ে কিছু জল খেয়ে নিলেন, এবং ভাবলেন—কেউ এটা দেখতে পেলেন না—কিন্তু ভগবান দেখতে পাবেন যে, আপনি চুরি করে জল খাচ্ছেন । এটাকেই বলে গোপনে অত্যাচার । আপনি কী করছেন না করছেন “গোরা ধরে চুরি” : গোরা জানেন আপনি চোর, তিনি আপনার চুরি ধরতে পারেন । ভগবানের কাছে, মহাপ্রভুর কাছে কিছু লুকানো যাবে না । ওইরকম, গুরুদেবের কাছে কিছু লুকানো যাবে না । গুরুদেব সব জানতে পারেন । যখন গুরুদেব নবদ্বীপ থেকে কলকাতা বা পুরী বা বৃন্দাবনে বেড়িয়ে যান তখন আমি এখানে বসে ভাবছি, “আমি এখানে কী করছি না করছি গুরুদেব কি করে জানতে পারবেন ?” তবু তিনি তো অন্তর্যামী তিনি সব বুঝতে পারেন । আপনি কী করছেন না, কী করছেন, গুরুদেব সব জানতে পারেন । আপনি লুকিয়ে রাখলে কিছু হবে না । যে ভাবছেন গুরুদেব জানতে পারবেন না সে গুরুকে মর্ত্ত্যবুদ্ধি করে । এটা হচ্ছে নামাপরাধ । গুরুদেবে মর্ত্ত্যবুদ্ধি, আমাদের মত মানুষ, সে কিছু বুঝতে পারছেন না, সে কিছু জানতে পারছেন না—এটা হয় নামাপরাধ । গুরুদেব সব জানতে পারেন, সব বুঝতে পারেন । এটা আপনাদের সব সময় মনে রাখতে হবে । কৃষ্ণোন্মুখে হয়ে শুদ্ধ আচরণ করবেন—সনাতন গোস্বামী, রূপ গোস্বামী যে শিক্ষা দিয়েছেন (রূপ-শিক্ষা, সনাতন-শিক্ষা), রঘুনাথ দাস গোস্বামীকে মহাপ্রভু যে শিক্ষা দিয়েছেন, সেই শিক্ষাগুলো আপনাদের আচরণ করতে হবে । সেই শিক্ষা যদি নিজে আচরণ করেন তাহলে আপনাদের পরমকল্যাণ হবে ।
|
অন্য রচনা: • শ্রীনৃসিংহদেবের কথা • দণ্ড মহৎসব • মায়ার চিন্তা বা কৃষ্ণের চিন্তা ? • আমাদের একমাত্র উপায় • ভক্তির অভাব • গৃহে আবদ্ধ • মায়ের পেট থেকে মায়ার পেটের মধ্যে • জীবকে সত্য দয়া কি ? • ভোগী নই ত্যাগীও নই • শ্রবণ-কীর্ত্তনে মতি • ভগবানের কৃপা ও আপনার চেষ্টা • শান্তির গুপ্ত কথা • পবিত্র জীবন • বামনদেবের কথা • ভক্ত ও নাপিত • ভগবানের চরণে পথ • পূজনীয় বিসর্জন • শিবজী মহারাজ : পরম বৈষ্ণব • শ্রীহরিনাম দীক্ষা : গুরুপাদপদ্মের দান • আমি তো সব ব্যবস্থা করি নাকি ? • চকচক করলেই সোনা হয় না • আমার শোচন |
||||||
বৃক্ষসম ক্ষমাগুণ করবি সাধন । প্রতিহিংসা ত্যজি আন্যে করবি পালন ॥ জীবন-নির্ব্বাহে আনে উদ্বেগ না দিবে । পর-উপকারে নিজ-সুখ পাসরিবে ॥ | |||||||
© Sri Chaitanya Saraswat Math, Nabadwip, West Bengal, India. For any enquiries please visit our contact page. |