| |||||||
|
|||||||
ফাঁকি দেওয়া হবে না
ওঁ বিষ্ণুপাদ শ্রীল ভক্তি নির্ম্মল আচার্য্য মহারাজের হরি-কথামৃত
কালকে আমাকে একজন ভক্ত ফোন করলেন । উনি বললেন, “আমি পঠকীর্ত্তন করতে গিয়েছি আর দুজন এসে কটুকথা দিয়ে আমাকে মেরেছে ।” আমি জিজ্ঞাসা করলাম, “ঠাকুরকে ভোগ দিয়েছেন ?” উনি বললেন, “না, আজকে মন খারাপ, আমি রান্না করি নি—শুধু মিষ্টি ও মুড়ি দিয়ে দিয়েছি ।” বাঃ ! এটা সেবক নয় ! এটা সেবার বিরোধী ! কেউ তোমাকে মেরেছে, সেটা বলতে পারছ, কিন্তু যে তুমি ভগবানের সেবা করতে পারছ না, সেটার জন্য তোমার কষ্ট হচ্ছে না ! তোমাকে কেউ মেরেছে, সের জন্য অভিযোগ করতে ভাবছ । তোমার ভগবানের সেবা অপরাধটা হল—ভগবানের কাছে ক্ষমা চাও ! তুমি ঠাকুরের সেবার বিঘ্ন করবে কেন ? এটা মনে রাখতে হবে—শ্রদ্ধা সহকারে শ্রীমুর্ত্তির সেবা করতে হবে । এখানেও বিগ্রহ আসবে—বিগ্রহের সেবায় নিজেকে নিযুক্ত করতে হবে । যেটা গুরু-বৈষ্ণব পছন্দ করেন, ভগবান যেটা পছন্দ করেন, সেটার চিন্তা করতে হবে । কেউ ভাবে বা বলে, “আমার যাটা ভাল লাগে, সেইটা আমি ঠাকুরকে ভোগ দেব ; আমার সুগার হচ্ছে, আমি আলু খাই না, তাই আমি আলু মঠের জন্য কিনব না”—ঠাকুরের কি সুগার বা ডায়াবেটিস হয়েছে, ভাই ? সেই ভাবে বললে চলবে না ।
সাধুসঙ্গ, নামকীর্ত্তন, ভাগবতশ্রবণ । ভাগবতশ্রবণ মানে কী ? নিজের কল্পিত গ্রন্থ পড়লে হবে না । কোন বই কিনে নিয়ে মঠে এসে পঠ করতে শুরু করে দিলাম । সে হবে না । ভগবৎগ্রন্থ, প্রামাণিক গ্রন্থ পড়া চাই—শ্রীচৈতন্যচরিতামৃত, শ্রীমদ্ভাগবতং, মঠে যে গ্রন্থ আছে, এই সব গ্রন্থ ভগবৎকথা হচ্ছে । আমি বাজার বা কলেজ স্ট্রিটে গেলাম, একটা বই কিনে নিয়ে আসলাম, সেই বইটা পড়তে শুরু করলাম । এ সব হবে না । বাজারের গ্রন্থ হবে না । সাধু-গুরু-বৈষ্ণবগণ যে গ্রন্থ প্রামাণিক করেছেন, সেই গ্রন্থ অধ্যয়ন করতে হবে, সেই গ্রন্থ পঠ করতে হবে । অন্যভাবে নিজের খেয়াল খুশিমত পড়া কাগজ-টাগজ পড়ার সম হবে । শ্রীল গুরু মহারাজও বলতেন : তোমার এই ভাগবতং পড়তে ভালো লাগছে, তোমার কীর্ত্তন করতে ভালো লাগছে না তোমার লীলা-কীর্ত্তন বা রবীন্দ্র সংগীত শুনতে ভালো লাগছে ? নিজেকে নিজে পরীক্ষা দাও । তোমার সেবার প্রতি টান আছে কি না ? ভগবানের প্রতি টান আছে কি না ? হরিকথার প্রতি টান আছে কি না ? ভগবানের সেবায় বিঘ্ন ঘটলে তোমার মনটা কেমন ? সেই দেখো । সেবার প্রীতি আসছে কি না ? সেটা দেখতে হবে । শ্রীললিতা দেবী যখন শ্রীমতী রাধারাণীর সেবা করতে যাচ্ছেন, তিনি কি রকম সেবা করছেন ? শ্রীলরূপ গোস্বামী প্রভু লেখেছেন যে, যখন ললিতা দেবী শ্রীমতী রাধারাণীকে সাজাতেন, তখন হঠাৎ করে লক্ষ্য করলেন যে, রাধারাণীর এক ঝরা ঘাম থাকল—ললিতা দেবী সঙ্গে সঙ্গে কাপড় দিয়ে ঘামটা মুছিয়ে দিতেন । উনি সব সময় চিন্তা করে থাকেন, “কৃষ্ণকে কিছু দিলে ও খুশি হবে কি না, আমি তার সেবা করতে পারব কি না ?” তার এত উত্তেজনা উঠে—প্রভুর ঘাম এসে যাচ্ছে ! ঘামটা তিনি সঙ্গে সঙ্গে মুছিতে দিতেন । এই ভাবে সেবা করতেন । গুরু-বৈষ্ণবের সেবাটাই এইরকম হতে হবে । আমরা গুরুদেবের লাইনে চলি না, গুরুদেব যে বললেন, সেটা শুনব না—আমি শুধু মুখে বলব, “গুরুমুখ-পদ্মবাক্য চিত্তেতে করিয়া ঐক্য আর না করিহ মনে আশা,” আর যে গুরুদেব বললেন, আমি সেটা মানছি না ।
দীক্ষাকালে ভক্ত করে আত্মসমর্পণ । (শ্রী চৈঃ চঃ, ৩/৪/১৯২) তাহলে আত্মসমর্পণই করা হয় নি, শরণাগতি ও আত্মনিবেদন হয় নি । গুরুদেবের কাছ থেকে দীক্ষা নাম করে দীক্ষা আমরা অভিনয় করি । গলায় তিলক মালা পরি কিন্তু গুরুদেবের কথা মানি না । গুরুমহারাজও বলতেন, এই কলি যুগে অসুররা আসবেন তিলক মালা পরে । লোকের অসুরিক প্রবৃত্তি থাকবে—তাদের ভোগের বাসনা, মুক্তির বাসনা থাকবে । তাদেরকে চেনা খুব মুশকিল হয়ে যাবে—তারা একি তিলক মালা পরে । রাস্তায় গিয়ে দেখবেন ওরা তলক পরে, মালা করে মদ খাচ্ছেন, বিড়ি খাচ্ছেন, ইত্যাদি । আপনাদের কি সেটা চোখে কখনও পড়ে না ? ওই রকম লোকগুলো ঐই কলি যুগে এসে মূল-শ্রদ্ধাকে নষ্টা করে দেবে ।
গোরার আমি, গোরার আমি” মুখে বলিলে নাহি চলে । (শ্রীশ্রীপ্রেমবিবর্ত্ত, ৮/৬) আমি মুখে বলি, “আমি গোরার ভক্ত,” আর গোরার আচার, বিচার আমি মানব না । আপনারা যখন বীরভূমে একচক্রার উৎসবে যাবেন, তখন ট্রেনে দেখবেন লোকগুলো বসে ভিক্ষা করে বলে, “ক্ষ্যাপা ছেড়ে দিলে সোনার গৌড়, আর তো পাব না—তোমায় হৃদ মাঝারে রাখিব ছেড়ে দেব না ।” মিথ্যা কথা বলছে ! ওরা মুখে এটা বলছে আর আপনাদের পায়সা তুলছে, সেই পায়সা দিয়ে ওর স্ত্রী-পুত্র ভোগ-বাসনা মিটবে ।
লোক দেখান গোরা ভজা তিলক মাত্র ধরি । (শ্রীশ্রীপ্রেমবিবর্ত্ত, ৮/৭) এইরকম করলে গোরার কাছে, শুদ্ধ বৈষ্ণবের কাছে এক না এক দিন ধরা পড়ে যাবেন । কর্ম্মী, জ্ঞানী, যোগী যারা আছেন, তারা সব ধরা পড়ে যাবেন । কারও রেহাই নেই ! সবাই ধরা পড়ে যাবে । ভগবানের কাছে ফাঁকি দেওয়া চলে না । আমার কাছে ফাঁকি দেওয়া চলে কিন্তু ভগবানের কাছে আসল স্বরূপটা বেরিয়ে পড়বে । বেশি দিন ফাঁকি দিতে পারবেন না—নকল জিনিসটা কয় দিন চলে, বলুন ? বাজারে নকল জিনিস নিয়ে কয় দিন ঢুকে করবেন ? একদিন ধরা পড়ে যাবেন । ডিজেলের মধ্যে কেরোসিন মিশিয়ে কয় দিন বিক্রি করা যাবে ? এক দিন হামলা হবে । তাই, কয় দিন আপনারা ফাঁকি করতে পারবেন ? বেশি দিন পারবেন না কারণ যখন সময় হবে তখন আসল স্বরূপ বেরিয়ে পড়বে । এটা সব সময় মনে রাখবেন ।
|
|||||||
বৃক্ষসম ক্ষমাগুণ করবি সাধন । প্রতিহিংসা ত্যজি আন্যে করবি পালন ॥ জীবন-নির্ব্বাহে আনে উদ্বেগ না দিবে । পর-উপকারে নিজ-সুখ পাসরিবে ॥ | |||||||
© Sri Chaitanya Saraswat Math, Nabadwip, West Bengal, India. For any enquiries please visit our contact page. |