আমাদের শ্রীগুরুপরম্পরা :
শ্রীশ্রীল ভক্তিনির্ম্মল আচার্য্য মহারাজ শ্রীশ্রীল ভক্তিসুন্দর গোবিন্দ দেবগোস্বামী মহারাজ শ্রীশ্রীল ভক্তিরক্ষক শ্রীধর দেবগোস্বামী মহারাজ ভগবান্ শ্রীশ্রীল ভক্তি সিদ্ধান্ত সরস্বতী গোস্বামী ঠাকুর
              প্রভুপাদ
“শ্রীচৈতন্য-সারস্বত মঠে সূর্যাস্ত কখনই হয় না” :
আমাদের মঠের পরিচয় ও বৈশিষ্ট্য
 
আমাদের সম্পর্কে শ্রীউপদেশ শ্রীগ্রন্থাগার শ্রীগৌড়ীয় পঞ্জিকা ছবি ENGLISH
 

তোমার ট্রেনটা কোথায় ?

ওঁ বিষ্ণুপাদ শ্রীল ভক্তি নির্ম্মল আচার্য্য মহারাজের হরি-কথামৃত
উলুবেড়িয়া, ২৬ জানুয়ারি ২০২০

 

কৃষ্ণ ভুলি' সেই জীব অনাদি-বহির্ম্মুখ ।
অতএব মায়া তারে দেয় সংসারাদি-দুঃখ ॥

(চৈঃ চঃ, ২/২০/১১৭)

যারা এই আত্ম পরিচয় জানতে পেরেছেন, যারা জানেন যে, আমি নিত্য কৃষ্ণদাস—তারা জানেন যে, এই জগতে সবকিছুর মালিক হচ্ছেন ভগবান । যা কিছু এই জগতে আছে, সেটা সব তার জিনিস । যদি ভগবান বায়ু বন্ধ করে দেন, তাহলে সব শেষ, তখন সব বাহাদুরি শেষ । আমরা ভগবানের বায়ু ভোগ করছি কিন্তু অক্সিজেনটা ভগবান দিচ্ছেন সারা পৃথিবীতে—এক্ষুনি যদি ভগবান বায়ু বন্ধ করে দেন, যদি ভগবান জলটা বন্ধ করে দেন, তাহলে আমাদের জীবন শেষ, এক্ষুনি দেহ ছেড়ে দিতে হবে । সেই ভগবানকে ভুলে গিয়ে আমরা “আমার বাড়ি, আমার ঘর, আমার পুত্র, আমার পরিজন” নিয়ে সব সময় এই সংসারের মধ্যে ছিনিমিনি খেলছি, বৃথা সময় ব্যয় করছি । দিন যায় নানা কাজে, রাত্রে যায় নিদ্রায় । কখন তুমি হরিভজন করবি ত, বাবা ?

দিন যায় মিছা কাজে নিশা নিদ্রাবশে ।
নাহি ভাবি মরণ নিকটে আছে বসে ॥

(শ্রীলভক্তিবিনোদ ঠাকুর)

আমরা বৃথা সময় ব্যয় করে কখনও ভাবি না যে, মরণটা চলে এসেছি আমাদের কাছে ।

জীবন অনিত্য জানহ সার
তাহে নানাবিধ বিপদ-ভার ।
নামাশ্রয় করি' যতনে তুমি
থাকহ আপন কাজে ॥

(শ্রীলভক্তিবিনোদ ঠাকুর)

নিজের কাজ করতে বারণ করি নি, চাষ করতে, ব্যবসায় করতে, চাকরি করতে বারণ করি নি—যা কিছু করবে, তোমার সংসার থেকে তুমি কৃষ্ণের সংসারের সংসারী হয়ে যাও । যখন আপনারা গুরুর পাদে চরণাশ্রয় করেন, তখন গুরুদেবের কাছে আত্মসমর্পণ করেন আর গুরুদেব কী করেন ? উনি আপনাদেরকে টিকিট কেটে দেন । কিসের টিকেট ? বৃন্দাবন যাওয়ার টিকিট ।

কিন্তু সমস্যাটা হয়েছে যে, গুরুদেব আপানদেরকে বৃন্দাবন যাওয়ার টিকিতটা কেটে দিলেন আর আপনারা বৃন্দাবন না গিয়ে রাস্তায় মাঝখানে বর্ধমান নেমে গেলে অন্য দিকে ঘুরে বেড়ান—তাহলে কি বৃন্দাবন যাওয়ার হবে ? গুরুদেব আপানদের বৃন্দাবন যাওয়া টিকিট কেটে দিয়েছেন আর আপনারা মাঝখান থেকে সেবা ছেড়ে দিলেন, মাঝখান থেকে হরিনাম ছেড়ে দিলেন এবং অন্য লাইন ধরলেন, সেইজন্য বৃন্দাবন যাওয়ার হল না । কিন্তু আপনারা না গেলে কে করবে ? আপানারা মাঝখানতে যদি নেমে যান সেটা আপনাদের ক্ষতি হবে । তাহলে আপনারাই দায়ী হন । আপনারা নিজের মনের খেলে অন্য দিকে চলছেন বা ট্রেন থেকে নেমে ট্রেনটা ছেড়ে পালিয়ে যান—ট্রেনটা কি আপনার জন্য ধরে থাকবে ? ট্রেনটা স্টেশনে থামবে এক মিনিটের জন্য আর আপনারা যদি ট্রেন থেকে নেমে স্টেশনে ঘুরে যান, তখন পরে দেখবেন যে, ট্রেনটা চলে গিয়েছে । তারপর ওই টিকিটটা আর কাজ হবে না । পুনরায় টিকিট কাটতে হবে—পুনরায় গুরুর কাছ থেকে বলতে হবে, “গুরুদেব, আমার টিকিট হারিয়ে গিয়েছে ।” এখানেও তাই—হরিভজন করতে করতে আমরা অন্য লাইনে চলে যাই  । হরিভজন ছেড়ে দেই, গুরুদেবকে ছেড়ে দেই, ভগবানকে ছেড়ে দিই, গুরুদেব কথা মত চলি না, গুরুদেবের কথা আমরা মানি না, তাহলে আমাদের হরিভজন হবে না । আমাদের সময় মত আর বৃন্দাবনে যাওয়া হবে না । এটা মনে রাখতে হবে ।

 


 

 

← গ্রন্থাগারে

বৃক্ষসম ক্ষমাগুণ করবি সাধন । প্রতিহিংসা ত্যজি আন্যে করবি পালন ॥ জীবন-নির্ব্বাহে আনে উদ্বেগ না দিবে । পর-উপকারে নিজ-সুখ পাসরিবে ॥