আমাদের শ্রীগুরুপরম্পরা :
শ্রীশ্রীল ভক্তিনির্ম্মল আচার্য্য মহারাজ শ্রীশ্রীল ভক্তিসুন্দর গোবিন্দ দেবগোস্বামী মহারাজ শ্রীশ্রীল ভক্তিরক্ষক শ্রীধর দেবগোস্বামী মহারাজ ভগবান্ শ্রীশ্রীল ভক্তি সিদ্ধান্ত সরস্বতী গোস্বামী ঠাকুর
              প্রভুপাদ
“শ্রীচৈতন্য-সারস্বত মঠে সূর্যাস্ত কখনই হয় না” :
আমাদের মঠের পরিচয় ও বৈশিষ্ট্য
 
আমাদের সম্পর্কে শ্রীউপদেশ শ্রীগ্রন্থাগার শ্রীগৌড়ীয় পঞ্জিকা ছবি ENGLISH
 

সুযোগ নষ্ট করেন না

ওঁ বিষ্ণুপাদ শ্রীল ভক্তি নির্ম্মল আচার্য্য মহারাজের হরি-কথামৃত
উলুবেড়িয়া, ২৬ জানুয়ারি ২০২০

 

ষড়ঙ্গ শরণাগতি কী ?

দৈন্য, আত্মনিবেদন, গোপ্তৃত্বে বরণ ।
'অবশ্য রক্ষিবে কৃষ্ণ’—বিশ্বাস পালন ॥
ভক্তি-অনুকূল মাত্র কার্য্যের স্বীকার ।
ভক্তি-প্রতিকূল ভাব—বর্জ্জনাঙ্গীকার ॥

(১) “দৈন্য” থাকতে হবে । (২) “আত্মনিবেদন” মানে দেহ, প্রাণ, মন, বুদ্ধি, অহঙ্কার, সব কিছু ভগবানের চরণে, গুরুদেবের চরণে সমর্পণ করে দিতে হবে । “হে কৃষ্ণ, তুমি আমাকে যন্ত্রণা দিচ্ছ না দিচ্ছ, কী কষ্ট দিচ্ছ না দিচ্ছ, সে সব তোমার ব্যাপার, আমি তোমার চরণে পড়ে আছি ।” (৩) “গোপ্তৃত্বে বরণ” মানে কৃষ্ণ আমাদের পালনকর্তা । (৪) ’অবশ্য রক্ষিবে কৃষ্ণ’ মানে কৃষ্ণ অবশ্যই আমাদেরকে রক্ষা করবেন । কৃষ্ণের কাছে শরণাপন্ন নিলে কৃষ্ণ অবশ্যই রক্ষা করবেন । আমি নিজেকে নিজেই রক্ষা করতে পারি না । কৃষ্ণ রক্ষাকর্তা, কৃষ্ণ নিজেই সব ব্যবস্থা করেন । আমার দ্বারা কিছু হয় না, আমি কিছু করতে পারি না । সমস্ত কিছু কৃষ্ণ ব্যবস্থা করেন । তারপর, (৫) “ভক্তি-অনুকূল কার্য্যের স্বীকার” আর (৬) “ভক্তি-প্রতিকূল ভাব—বর্জ্জনাঙ্গীকার” । আমি বারবারই বলি যে, যেটা ভক্তি-অনুকূল, তাই করবেন, আর যেটা প্রতিকূল, সেটা বিবর্জন করতে হবে ।

ভগবানকে পেতে হলে ভক্তি অনুশীলন করতে হবে—ভুক্তির দ্বারা নয়, মুক্তির দ্বারা নয় । অনেকে বলে, “উঃ মঠ-মন্দিরে ঝামেলা, আমি নিরিবিলি থাকব !” আর নিরিবিলি থাকলে কী সমাধান হবে ? আপনি যদি নিজের বাড়িতে একটা পাঁচিল দেন, পাশের বাড়ির লোক এসে বলবে, “এই ! আমার জায়গা এক ইঞ্চি নিয়ে নিয়েছ !” আবার এত ঝামেলায় পড়বেন তখন । যারা কোন ঝামেলা, কোন কষ্ট চায় না, তারা মুক্তিকামী । ভগবান বলছেন, “আমাকে তাদ্বারা পাবে না ।” যারা হাঙ্গামা-ঝামেলা এড়িয়ে চুপচাপ থাকতে চান, তারা ভগবানকে পাবেন না । সত্যিকারের ভক্তগণ বলেন, “প্রভু ! আমি তোমার সেবায় ঝামেলা চাই ! তোমার সেবা করতে গেলে যদি ঝামেলা আসে আসুক ! যত ঝামেলা আসে আসুক ! আমি সব নিজের কাঁধে বহন করব । ঝামেলা আসুক না, প্রভু । তুমি ঝামেলা দিচ্ছো আর আমি সেই ঝামেলা সহ্য করে, ধৈর্য ধরে তোমার সেবা করে যাব ।” এটা মনে রাখতে হবে ।

তোমার সেবায় দুঃখ হয় যত,
সেও ত' পরম সুখ ।

(শরণাগতি, শ্রীলভক্তিবিনোদ ঠাকুর)

ঝামেলা ছাড়া কোন কাজ হবে না । প্রভুপাদ শ্রীল ভক্তিসিদ্ধান্ত সরস্বতী ঠাকুর যখন প্রচার করেছেন, শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু যখন প্রচারক করেছেন, সেটা কি নির্বিঘ্ন হয়েছিল ? মহাপ্রভু যখন প্রচার করেছেন, তাঁকে বাধা দেয় নি ? প্রভুপাদ যখন প্রচার করেছেন, তাঁকে বাধা দেয় নি ? সবাই বাধা দিয়েছিল । সেইজন্য, অনেক জঞ্জাল আসবে । সেটা হচ্ছে constructive (গঠনমূলক) এবং destructive (ধ্বংসাত্মক) । দুই জিনিসটা আলাদা থাকবে । যখন একটা thesis আছে, তখন antithesis-ও থাকবে । যখন দিন আসবে, তখন রাত্রও আসবে । রাত্রই না থাকবে দিনের কি কোন মূল্য হবে ? আমি যখন রাশিয়া গিয়েছিলাম, সেখানে রাত্রও হয় না—আমি ভাবলাম, “হট্ ! কোন দেশে আসলাম ? সারাদিন শুধু সূর্য্য !” যেখানে আমাদের মঠটা হচ্ছে রাশিয়াতে, সেখানে ২৪ ঘন্টাই সূর্য্য—১৫ মিনিটের জন্য সূর্য্য বন্ধ হয় আবার সূর্য্য উঠে যায় । আর যখন শীতকাল, তখন আর সূর্য্য দেখতেই পাই না—সব সময় রাত্র । আমি আবাক হয়ে গেলাম—কখন কাজ করতে হবে, কখন ঘুমাতে হবে, কিছু বুঝতে পারি না । আমি ভাবলাম, “উঃ ! আমাদের ভারতে কত সুন্দর, সব জায়গায় সব কিছু পাওয়া যায় !” ওখানে এক দিন আমার মনে হল একটা কাঁচা লঙ্কা কিনতে যাব—একজন সাকলে কাঁচা লঙ্কা কিনতে বেরিয়েছে আর রাত্রে এসে বলছে, “পেয়েছি ! সেটা ।” আমি দেখছি লঙ্কাটা ৭ ইঞ্চি লম্বা ! এত বড় ! আর মুখে দিচ্ছি—সে গরম নয়, মিষ্টি ! ওইরকম অবস্থা ওই দেশে । আর আমাদের ভারতে সব জায়গায় সব কিছু পাওয়া যায় । তাই, বহু ভাগ্যের ফলে আমরা সেই ভূমিতে আবির্ভূত হয়েছি—সেই ভূমিতে থেকে যদি আমরা হরি ভজন করার সুযোগ নষ্ট করব, তাহলে আমাদের জীবনটা বৃথা যাবে ।

 


 

 

← গ্রন্থাগারে

বৃক্ষসম ক্ষমাগুণ করবি সাধন । প্রতিহিংসা ত্যজি আন্যে করবি পালন ॥ জীবন-নির্ব্বাহে আনে উদ্বেগ না দিবে । পর-উপকারে নিজ-সুখ পাসরিবে ॥