আমাদের শ্রীগুরুপরম্পরা :
শ্রীশ্রীল ভক্তিনির্ম্মল আচার্য্য মহারাজ শ্রীশ্রীল ভক্তিসুন্দর গোবিন্দ দেবগোস্বামী মহারাজ শ্রীশ্রীল ভক্তিরক্ষক শ্রীধর দেবগোস্বামী মহারাজ ভগবান্ শ্রীশ্রীল ভক্তি সিদ্ধান্ত সরস্বতী গোস্বামী ঠাকুর
              প্রভুপাদ
“শ্রীচৈতন্য-সারস্বত মঠে সূর্যাস্ত কখনই হয় না” :
আমাদের মঠের পরিচয় ও বৈশিষ্ট্য
 
আমাদের সম্পর্কে শ্রীউপদেশ শ্রীগ্রন্থাগার শ্রীগৌড়ীয় পঞ্জিকা ছবি ENGLISH
 

অসৎসঙ্গ ও নিত্য স্মরণ

ওঁ বিষ্ণুপাদ শ্রীল ভক্তি নির্ম্মল আচার্য্য মহারাজের হরি-কথামৃত
২৬ জানুয়ারি ২০২০

 

প্রশ্ন : কার সঙ্গ অসৎ সঙ্গ হচ্ছে ?

অভক্তের সঙ্গ করতে হবে না । তাদের সঙ্গে বেশী মেশা, তাদের সঙ্গে কথা বলা—এটা হচ্ছে অসৎসঙ্গ । যখন বাজারে গিয়ে আমাদের পটল বা বেগুন কিনতে হয়, তাহলে আমরা অভক্ত বিক্রেতার সঙ্গে কথা বলি কিন্তু সেটা সঙ্গ নয় । তাহলে কি হবে ? বাজারে গিয়ে কথা বলা, সেটা বারণ করি নি । আমরা ত সংসার ছেড়ে দিয়ে মঠে চলে এসেছি, কিন্তু সেই সংসার, সেই বাড়িতে গিয়ে আমরা আবার লোকের হরিকথা বলছি—এই মায়া বদ্ধ জীবকে উদ্ধার করার জন্য, ভগবানের কাছে নিয়ে নেওয়ার জন্য । আমরা তাদের মনভাব, তাদের সিদ্ধান্ত স্বীকার করি না, আমরা তাদেরকের আমাদের গুরুবর্গের সিদ্ধান্তের সম্বন্ধে কথা বলি ।

শেষ কথা হচ্ছে যে, সদ্গুরুর চরণে আশ্রয় গ্রহণ করে আমাদের সবাইকে এই কৃষ্ণের সংসারের সংসারী হতে হবে । আপনি অনেক কিছু খুঁজেন কিন্তু গুরুদেব আপনার জন্য factory খুলে রেখেছেন । এই factoryর নাম হচ্ছে শ্রীচৈতন্য সারস্বত মঠ । সেই factoryতে অনেক চাকরি দরকার—অনেক লোক দরকার । এখানে আপনারা নিজেরা এসে সেই চারিতে যোগদান করুন । যোগদান করা মানে সেবা । সেটা হচ্ছে বড় সেবা । সেই সেবায় অংশগ্রহণ করুন তাহলে আপনাদের সমস্ত ত্রিতাপ-জ্বালা, যেখানে আমরা জ্বলে পুড়ে মরছি, সমস্ত কষ্ট দূরীভূত হয়ে যাবে  । এই সংসারকে যত আঁকড়ে ধরবেন, তত জ্বালা-যন্ত্রনা আপনাকে কষ্ট দেবে । সেই কষ্ট পেয়ে পয়ে জীবনটা কাটিয়ে যাবে আর আপনারা ভাবছেন, “বয়স হলে তখন হরি ভজন করব । যৌবন বয়সে করব না ।” কিন্তু বৃদ্ধ হলে তখন মাথা ব্যাথা করবে, কোমর ব্যাথা করবে, হাড় ব্যাথা করবে, হাঁটতে পারবেন না, পরিক্রমা করতে পারবেন না—তখন বিভিন্ন রোগ আক্রমন করবে । তখন মুখে কৃষ্ণনাম করতে ভাল লাগবে ? বলুন ।

একবার একজন মহিলা আমার কাছে এসে বললেন, “আমি লক্ষ লক্ষ হরিনাম একটা কাগজে লিখেছে !” আমি তার নিয়ে কি করব ? আমি বললাম, “আপনের হাততে যদি অভ্যাস থাকে, তাহলে লিখুন না । তাহলে হাতের কিছু ব্যায়াম হবে !” মুখ দিয়ে হরিনাম করতে হবে । কীর্ত্তনটা হৃদয় দিয়ে করতে হবে । গুরু মহারাজ বলতেন, “একজন সব সময় মালা নিয়ে ‘হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ’ করছে, আর ওকে পেতের মধ্যে ঘুষি মারলে, তখন ‘বাবা-মা’ চিৎকার করে ।” সেই জন্য কীর্তন করলে হৃদয়ংগম না করলে তাহলে গৌরের হরিনাম বা ‘হরে কৃষ্ণ’ বরবেন না । আমি সব সময় বলছি যে, যখন মোবাইল ফোন ধরছেন, তখন “hello” বলবেন না—“হবে কৃষ্ণ (বা ‘হরি বল’), কে বলছেন, প্রভু ?” বলতে হবে সব সময় যেন মুখে কৃষ্ণনাম আসে—গাইতে, শুইতে, বসতে.

কি শয়নে, কি ভোজনে, কিবা জাগরণে ।
অহর্নিশ চিন্ত কৃষ্ণ, বলহ বদনে ॥

দিন, রত্র, সব সময় হরিভজন করবেন । সর্ব্বাঙ্গ দিয়ে ভগবানের সেবা করবেন—দেহ, মন, বুদ্ধি, অহঙ্কার, যা কিছু আছে সমস্ত কিছু ভগবানের চরণে সমর্পণ করতে হবে । সমস্ত দুঃখ, জ্বালা, যন্ত্রনা, যা কিছু থাকবে, সব কিছু ভগবানের চরণে ছুড়ে দিতে হবে, “ভগবান আমি সব ব্যবস্থা তোমার জন্য তোমার চরণে ছুড়ে দিলাম । আমার যত জ্বালা হচ্ছে, আমি সব সহ্য করব, চিন্তা নাই কিন্তু তোমার সেবা যেন আমি ভুলে না যাই ।” সব সময় এটা মনে রাখবে । “সুখে দুঃখে ভুলো নাক, বদনে হরিনাম কর রে ।” সুখেও ভুলতে নেই, দুঃখেও ভুলতে নেই । আমরা দুঃখের সময় শুধু স্মরণ করি আর সুখের সময় স্মরণ করি না—সুখের সময় আমরা আনন্দ করছি, ভগবানকে আর স্মরণ রাখি না । সেটা মনে রাখতে হবে ।

 


 

 

← গ্রন্থাগারে

বৃক্ষসম ক্ষমাগুণ করবি সাধন । প্রতিহিংসা ত্যজি আন্যে করবি পালন ॥ জীবন-নির্ব্বাহে আনে উদ্বেগ না দিবে । পর-উপকারে নিজ-সুখ পাসরিবে ॥