আমাদের শ্রীগুরুপরম্পরা :
শ্রীশ্রীল ভক্তিনির্ম্মল আচার্য্য মহারাজ শ্রীশ্রীল ভক্তিসুন্দর গোবিন্দ দেবগোস্বামী মহারাজ শ্রীশ্রীল ভক্তিরক্ষক শ্রীধর দেবগোস্বামী মহারাজ ভগবান্ শ্রীশ্রীল ভক্তি সিদ্ধান্ত সরস্বতী গোস্বামী ঠাকুর
              প্রভুপাদ
“শ্রীচৈতন্য-সারস্বত মঠে সূর্যাস্ত কখনই হয় না” :
আমাদের মঠের পরিচয় ও বৈশিষ্ট্য
 
আমাদের সম্পর্কে শ্রীউপদেশ শ্রীগ্রন্থাগার শ্রীগৌড়ীয় পঞ্জিকা ছবি ENGLISH
 

শ্রীশ্রীপ্রেমবিবর্ত্ত


১ । মঙ্গলাচরণ

 

রাধাকৃষ্ণপ্রণয়বিকৃতির্হ্লাদিনী শক্তিরস্মাদ্

একাত্মানাবপি ভুবি পুরা দেহভেদং গতৌ তৌ
চৈতন্যাখ্যং প্রকটমধুনা তদ্দ্বয়ং চৈক্যমাপ্তং
রাধাভাবদ্যুতিসুবলিতং নৌমি কৃষ্ণস্বরূপম্

শ্রীরাধাকৃষ্ণতত্ত্ব অখণ্ড-অদ্বয়-জ্ঞান সর্ব্বতত্ত্বসার ।

সেই তত্ত্বে দণ্ড-পরণাম বার বার ॥১॥

সেই তত্ত্ব কভু দুই রাধাকৃষ্ণরূপে ।

কভু এক পরাৎপর চৈতন্যস্বরূপে ॥২॥

তত্ত্ব-বস্তু এক সদা অদ্বিতীয় ভায় ।

বস্তু বস্তুশক্তি মাঝে কিছু ভেদ নাই ॥৩॥

ভেদ নাই বটে, কিন্তু সদা ভেদ তায় ।

“ভেদাভেদ অবিচিন্ত্য” সর্ব্ব-বেদে গায় ॥৪॥

বস্তুশক্তি চিৎ-স্বরূপ ভাবেতে সন্ধিনী ।

ক্রিয়াতে হ্লাদিনী তাই ত্রিভাবধারিণী ॥৫॥

বস্তুশক্তিদ্বারে বস্তু দেয় পরিচয় ।

বস্তুশক্তি ক্রিয়াযোগে সর্ব্ব সিদ্ধ হয় ॥৬॥

অখণ্ড বস্তুতে ভাব ক্রিয়া নিত্য হয় ।

শক্তি শক্তিমান্ বস্তু তবু পৃথক্ নয় ॥৭॥

হ্লাদিনী বস্তুকে দিয়া দুইটী স্বরূপ ।

ব্রজে রাধাকৃষ্ণলীলা করায় অপরূপ ॥৮॥

রাধাকৃষ্ণ-প্রণয়ের বিকৃতি হ্লাদিনী ।

অবিচিন্ত্য শক্তি রাধাকৃষ্ণ-উন্মাদিনী ॥৯॥

অঘটন ঘটাইতে ধরে মহাশক্তি ।

নির্ব্বিকারে করিয়াছে বিকার অনুরক্তি ॥১০॥

তত্ত্ববস্তু তার্কিকের অগোচর; কৃষ্ণকৃপাসাপেক্ষ

এবে এক উঠিল অপূর্ব্ব পূর্ব্বপক্ষ ।

তার্কিক না বুঝে যদি চিন্তে বর্ষ লক্ষ ॥১১॥

কৃষ্ণ যারে কৃপা করে সেই মাত্র জানে ।

লক্ষবর্ষ চিন্তি তাহা না বুঝিবে আনে ॥১২॥

রাধাকৃষ্ণ-প্রণয়ের বিকার হ্লাদিনী ।

প্রণয়ের পরে জন্মে চিত্ত-উন্মাদিনী ॥১৩॥

রাধা-কৃষ্ণ দুই হলে হয় ত প্রণয় ।

প্রণয় হৈলে তবে বিকার ঘটয় ॥১৪॥

দুই দেহ হবার আগে বিকার না ছিল ।

তবে এক রূপ দুই কেমনে হৈল ॥১৫॥

হ্লাদিনী হইতে হয় দুই দেহ ভেদ ।

কোথা বা হ্লাদিনী ছিল হইল প্রভেদ ॥১৬॥

এই প্রশ্নের এক মাত্র আছে ত’ উত্তর ।

দেশকালাতীত কৃষ্ণতত্ত্ব নিরন্তর ॥১৭॥

অপ্রাকৃত-তত্ত্বে দেশকালাদির বিচার নাই

প্রকৃতির মধ্যে দেখ কালের প্রভাব ।

ভূত-ভবিষ্যতের বুদ্ধি তাহার স্বভাব ॥১৮॥

অপ্রাকৃত-তত্ত্বে ভূত ভবিষ্যৎ নাই ।

নিত্য-বর্ত্তমান তথা বলিহারি যাই ॥১৯॥

বাঙ্​মনের অগোচর অপ্রাকৃত-তত্ত্ব ।

বর্ণিতে আইসে দোষ এই মাত্র সত্য ॥২০॥

অপ্রাকৃত-তত্ত্বে কভু দোষ নাহি পাই ।

অচিন্ত্য-শক্তিতে সব সমাধান ভাই ॥২১॥

পূর্ব্বাপর হেন কথা কভু নাহি তায় ।

সর্ব্বদা নূতন সব আনন্দে মাতায় ॥২২॥

অতএব তত্ত্বে যে অখণ্ড-খণ্ড-ভাব ।

সমকালে দেখি সেও তত্ত্বের স্বভাব ॥২৩॥

বিরুদ্ধ-ধর্ম্মাশ্রয় তত্ত্ব আশ্চর্য তার গুণ ।

জন্মে নাই হ্লাদিনী তবু ক্রিয়াতে নিপুণ ॥২৪॥

জন্মিবার পূর্ব্বে রাধা-কৃষ্ণে দুই করে ।

দুঁহে প্রেমের বিকার হয়ে নিজে জন্ম ধরে ॥২৫॥

নিত্য-বর্ত্তমান তত্ত্ব কালদোষহীন ।

কালদোষ-বিচার প্রাকৃতে সমীচীন ॥২৬॥

শ্রীঅদ্বয়তত্ত্ব আর রাধাকৃষ্ণতত্ত্ব ।

সমকাল সত্য নিত্য আর শুদ্ধ সত্ত্ব ॥২৭॥

শ্রীরাধাকৃষ্ণই শ্রীচৈতন্য

অতএব রাধাকৃষ্ণ দুই এক হঞা ।

অধুনা প্রকট মোর চৈতন্য গোসাঞাঁ ॥২৮॥

“অধুনা” বলিতে কালভেদ নাহি কর ।

অপ্রাকৃতে কালভেদ নাহি তাহা স্মর ॥২৯॥

“রাধাকৃষ্ণ ছিল, ভেল চৈতন্য গোসাঞি” ।

এ বলিলে কালদোষ সত্যবস্তু হারাই ॥৩০॥

‘একাত্মা’ শব্দেতে যদি শ্রীচৈতন্য মান ।

রাধাকৃষ্ণে হবে ভাই আধুনিক জ্ঞান ॥৩১॥

“অগ্রে রাধাকৃষ্ণ কিবা শচীর নন্দন” ।

এ বিচারে বৃথা কাল না কর কর্ত্তন ॥৩২॥

বলিয়াছি অপ্রাকৃতে সব বর্ত্তমান ।

চৈতন্য কৃষ্ণেতে তর্কে হও সাবধান ॥৩৩॥

সমকাল নিত্যকাল দুই তত্ত্ব সত্য ।

অখণ্ড অদ্বয় লীলা তত্ত্বের মহত্ত্ব ॥৩৪॥

প্রণয়-বিকার-শক্তি সেই আহ্লাদিনী ।

দুই তত্ত্বে সমকাল রাখে এই জানি ॥৩৫॥

সেই ত’ চৈতন্য এবে প্রপঞ্চ-প্রকটে ।

সঙ্কীর্ত্তন করি’ বুলে গঙ্গাসিন্ধুতটে ॥৩৬॥

কৃষ্ণলীলার অধিক এই শ্রীচৈতন্যলীলা ।

প্রণয়-বিকার যাতে উৎকট হইলা ॥৩৭॥

উৎকট হইয়া কৃষ্ণে রাধাভাবদ্যুতি ।

মাখাইল প্রেমভরে আহ্লাদিনী সতী ॥৩৮॥

ব্রজের অধিক সুখ নবদ্বীপধামে ।

পাইল পুরট কৃষ্ণ আসি’ নিজ কামে ॥৩৯॥

শ্রীচৈতন্যের স্বরূপ

চৈতন্যমুরতি কৃষ্ণের অপূর্ব্বস্বরূপ ।

কৃষ্ণমূর্ত্তি চৈতন্যের স্বরূপ অপরূপ ॥৪০॥

হ্লাদিনীর দুই সাজ পরম মধুর ।

মধু হৈতে মধু, তাহা হৈতে সুমধুর ॥৪১॥

সুমধুর স্বরূপ কৃষ্ণের চৈতন্য মুরতি ।

নিরন্তর করি তাঁতে দণ্ডবন্নতি ॥৪২॥

যদি বল ‘একাত্মা’ শব্দে ব্রহ্ম নির্ব্বিকার ।

যাহা হৈতে রাধাকৃষ্ণস্বরূপ সাকার ॥৪৩॥

এ সিদ্ধান্ত হৈতে নারে শ্লোকের আভাসে ।

সেই দুই এক আত্মা চৈতন্যপ্রকাশে ॥৪৪॥

ব্রহ্ম শ্রীচৈতন্যের অঙ্গকান্তি

চৈতন্য নহেন কভু ব্রহ্ম নির্ব্বিকার ।

আনন্দবিকারপূর্ণ বিশুদ্ধ সাকার ॥৪৫॥

ব্রহ্ম তাঁর শ্রীঅঙ্গের জ্যোতি নির্ব্বিশেষ ।

ব্রহ্মের প্রতিষ্ঠা কৃষ্ণচৈতন্যবিশেষ ॥৪৬॥

অতএব ‘একাত্মা’ শব্দেতে শ্রীচৈতন্য ।

বুঝেন পণ্ডিতগণ স্বরূপাদি ধন্য ॥৪৭॥

সেই ত’ ‘একাত্মা’-তত্ত্বে কর পরণাম ।

রাধাকৃষ্ণসেবা পাবে, সিদ্ধ হবে কাম ॥৪৮॥

পরমাত্মা শ্রীচৈতন্যের অংশ

যদি বল ‘একাত্মা’ শব্দে হয় পরমাত্মা ।

যাহা হইতে রাধাকৃষ্ণ হয় দুই আত্মা ॥৪৯॥

শ্লোকের আভাসে তাহা কভু নহে সিদ্ধ ।

“চৈতন্যাখ্য”-শব্দে হয় বড়ই বিরুদ্ধ ॥৫০॥

মূলতত্ত্ব শ্রীচৈতন্যস্বরূপ জানিবা ।

তাঁহার অংশ পরমাত্মা সর্ব্বদা বুঝিবা ॥৫১॥

রাধাকৃষ্ণ-ঐক্য সেই ‘একাত্ম’-স্বরূপ ।

শ্রীচৈতন্য মোর প্রাণ-নাথ অপরূপ ॥৫২॥

রাধাপদ-দাসী আমি রাধাপদ-দাসী ।

রাধা দ্যুতি সুবলিত রূপ ভালবাসি ॥৫৩॥

পরাৎপর শচীসুত তাঁহার চরণে ।

দণ্ড-পরণাম মোর অনন্যশরণে ॥৫৪॥

 


 

← সূচীপত্র ২ । গ্রন্থরচনা →

 

সূচীপত্র:
১। মঙ্গলাচরণ
২। গ্রন্থরচনা
৩। প্রথম প্রণাম
৪। গৌরস্য গুরুতা
৫। বিবর্ত্তবিলাসসেবা
৬। জীব-গতি
৭। সকলের পক্ষে নাম
৮। কুটীনাটি ছাড়
৯। যুক্তবৈরাগ্য
১০। জাতিকুল
১১। নবদ্বীপ-দীপক
১২। বৈষ্ণব-মহিমা
১৩। শ্রীগৌরদর্শনের ব্যাকুলতা
১৪। বিপরীত বিবর্ত্ত
১৫। শ্রীনবদ্বীপে পূর্ব্বাহ্ণ-লীলা
১৬। পীরিতি কিরূপ ?
১৭। ভক্তভেদে আচারভেদ
১৮। শ্রীএকাদশী
১৯। নামরহস্যপটল
২০। নাম-মহিমা
বৃক্ষসম ক্ষমাগুণ করবি সাধন । প্রতিহিংসা ত্যজি আন্যে করবি পালন ॥ জীবন-নির্ব্বাহে আনে উদ্বেগ না দিবে । পর-উপকারে নিজ-সুখ পাসরিবে ॥