আমাদের শ্রীগুরুপরম্পরা :
শ্রীশ্রীল ভক্তিনির্ম্মল আচার্য্য মহারাজ শ্রীশ্রীল ভক্তিসুন্দর গোবিন্দ দেবগোস্বামী মহারাজ শ্রীশ্রীল ভক্তিরক্ষক শ্রীধর দেবগোস্বামী মহারাজ ভগবান্ শ্রীশ্রীল ভক্তি সিদ্ধান্ত সরস্বতী গোস্বামী ঠাকুর
              প্রভুপাদ
“শ্রীচৈতন্য-সারস্বত মঠে সূর্যাস্ত কখনই হয় না” :
আমাদের মঠের পরিচয় ও বৈশিষ্ট্য
 
আমাদের সম্পর্কে শ্রীউপদেশ শ্রীগ্রন্থাগার শ্রীগৌড়ীয় পঞ্জিকা ছবি ENGLISH
 

শ্রীশ্রীপ্রেমবিবর্ত্ত


২ । গ্রন্থরচনা

 

চৈতন্যের রূপ গুণ সদা পড়ে মনে ।

পরাণ কাঁদায় দেহ ফাঁপায় সঘনে ॥১॥

কাঁদিতে কাঁদিতে মনে হইল উদয় ।

লেখনী ধরিয়া লিখি ছাড়ি’ লাজ ভয় ॥২॥

নামেতে ‘পণ্ডিত’ মাত্র, ঘটে কিছু নাই ।

চৈতন্যের লীলা তবু লিখিবারে চাই ॥৩॥

স্বরূপ গোসাঞি ও পণ্ডিত জগদানন্দ

গোসাঞি স্বরূপ বলে, “কি লিখ পণ্ডিত” ।

আমি বলি, “লিখি তাই যাহাতে পীরিত ॥৪॥

চৈতন্যের লীলাকথা যাহা পড়ে মনে ।

লিখিয়া রাখিব আমি অতি সঙ্গোপনে” ॥৫॥

স্বরূপ বলেন, “তবে লিখ প্রভুর চরিত ।

যাহা পড়ি’ জগতের হবে বড় হিত” ॥৬॥

আমি বলি, “জগতের হিত নাহি জানি ।

যাহা যাহা ভাল লাগে তাই লিখে আনি” ॥৭॥

স্বরূপ ছাড়িল মোরে বাতুল বলিয়া ।

একা বসি’ লিখি আমি প্রভু ধেয়াইয়া ॥৮॥

দেখিছি অনেক লীলা থাকি’ প্রভু-সঙ্গে ।

কিছু কিছু লিখি তাই নিজ মনোরঙ্গে ॥৯॥

মন কাঁদে, প্রাণ কাঁদে, কাঁদে দুটী আঁখি ।

যখন যাহা মনে পড়ে তখন তাহা লিখি ॥১০॥

শ্রীমহাপ্রভু ও গ্রন্থকার

প্রভু মোরে হাস্য করি’ কৈল এক দিন ।

“দ্বারকার পাটেশ্বরী তুমি ত’ প্রবীন ॥১১॥

আমি ত’ ভিখারী অতি, মোরে সেব কেন ।

কত শত সন্ন্যাসী পাইবে আমা হেন” ॥১২॥

মুঞি বলি, “রেখে দাও তোমার ছলনা ।

রাধাপদ-দাসী আমি, ও কথা বলো না ॥১৩॥

আমার রাধার বর্ণ করিয়াছ চুরি ।

ব্রজে লয়ে যাব আমি তোমায় চোর ধরি’ ॥১৪॥

আমি চাই রাধাপদ, তুমি ফেল ঠেলি’ ।

দ্বারকা পাঠাও মোরে, এই তোমার কেলি ॥১৫॥

তোমার সন্ন্যাসি-গিরি আমি ভাল জানি ।

মোদের বঞ্চিয়া রাধা সেবিবে আপনি” ॥১৬॥

বাল্য-ঘটনা-স্মরণে গ্রন্থকারের আক্ষেপোক্তি

আহা সে চৈতন্যপদভজনের সম্পদ

কোথা এবে গেল আমা ছাড়ি’ ।

আমাকে ফেলিয়া গেলমৃত্যু মোর না হৈল

শোকে আমি যাই গড়াগড়ি ॥১৭॥
 
একদিন শিশুকালেদুজনেতে পাঠশালে

কোন্দলে করিনু হাতাহাতি ।

মায়াপুরে গঙ্গাতীরেপড়িয়া দুঃখের ভারে

কাঁদিলাম এক দিন রাতি ॥১৮॥
 
সদয় হইয়া নাথনা হইতে পরভাত
গদাধরের সঙ্গেতে আসিয়া ।

ডাকেন, “জগদানন্দ !অভিমান বড় মন্দ
কথা বলো বক্রতা ছাড়িয়া” ॥১৯॥
 
প্রভুর বদন হেরি’অভিমান দূর করি’
জিজ্ঞাসিলাম, “এত রাত্রে কেন ।

নদীয়ার কড়া ভূমিচলি’ কষ্ট পাইলে তুমি

মো লাগি’ তোমার কষ্ট হেন” ॥২০॥
 
প্রভু বলে, “চল চলনিশি অবসান ভেল
গৃহে গিয়া করহ ভোজন ।

তব দুঃখ জানি’ মনেছিলাম আমি অনশনে
শয্যা ছাড়ি’ ভূমিতে শয়ান ॥২১॥
 
হেনকালে গদাধরআইল আমার ঘর

দুঁহে আইনু তোমার তল্লাসে ।

ভাল হৈল মান গেলএবে নিজ গৃহে চল 

কালি খেলা করিব উল্লাসে” ॥২২॥
 
গদাই-চরণ ধরি’উঠিলাম ধীরি ধীরি

প্রভু-আজ্ঞা ঠেলিতে না পারি ।

প্রভুর গৃহেতে গিয়াকিছু খাই জল পিয়া

শুইলাম দণ্ড দুই চারি ॥২৩॥
 
প্রাতে শচী-জগন্নাথমোরে দিলা দুধ-ভাত

প্রভু সঙ্গে পড়িতে পাঠায় ।

পড়িয়া শুনিয়া তবেআইলাম গৃহে যবে

প্রভু মোরে গৃহে আসি’ খায় ॥২৪॥
 
কোন্দলের পরে প্রেমহয় যেন শুদ্ধ হেম

কত সুখ মনেতে হইল ।

প্রভু বলে, “এই লাগি’তুমি রাগো, আমি রাগি

পরস্পর প্রেম বৃদ্ধি ভেল” ॥২৫॥

গ্রন্থকারের শ্রীচৈতন্য প্রীতি

এ হেন গৌরাঙ্গচাঁদনা ভজিলে পরমাদ

ভজিলে পরম সুখ হয় ।

দয়ার ঠাকুর তেঁহতাঁকে কি ভুলিবে কেহ 

এত দয়া দাসে বিতরয় ॥২৬॥
 
চৈতন্য আমার প্রভুচৈতন্যে না ছাড়ি কভু

সেই মোর প্রাণের ঈশ্বর ।

যে “চৈতন্য” বলি’ ডাকেউঠে কোল দিই তাকে 

সেই মোর প্রাণের সোদর ॥২৭॥
 
“হা চৈতন্য প্রাণধন”না বলিল যেই জন

মুখ তার না দেখি নয়নে ।

চৈতন্যে ভুলিল যেবাযদিও সে দেবী দেবা

কুপ্রভাত তার দরশনে ॥২৮॥
 
চৈতন্যে ছাড়িয়া অন্যসন্ন্যাসীরে করে মান্য

তারে যষ্টি করিব প্রহার ।

ছাড়িয়া চৈতন্যকথাঅন্য ইতিহাস বৃথা

বলে যেই মুখে আগুন তার ॥২৯॥
 
চৈতন্যের যাহে সুখতাহে যদি ঘটে দুঃখ

চির দুঃখ ভোগ হউ মোর ।

সে যদি স্বসুখ ত্যজেযতি-ধর্ম্ম কভু ভজে

আমি তাহে দুঃখেতে বিভোর ॥৩০॥

শ্রীগৌর-গদাধর তত্ত্ব

একদিন প্রভু মোর খেলিতে খেলিতে ।

চলিল অলকাতীরে নিবিড় বনেতে ॥৩১॥

আমি আর গদাধর আছিলাম সঙ্গে ।

বকুলের গাছে শুক পক্ষী ধরে রঙ্গে ॥৩২॥

শুকে ধরি’ বলে, “তুই ব্যাসের নন্দন ।

রাধাকৃষ্ণ বলি’ কর আনন্দ বর্ধন” ॥৩৩॥

শুক তাহা নাহি বলে, বলে, “গৌরহরি” ।

প্রভু তারে দূরে ফেলে কোপ ছল করি’ ॥৩৪॥

তবু শুক “গৌর গৌর” বলিয়া নাচয় ।

শুকের কীর্ত্তনে হয় প্রেমের উদয় ॥৩৫॥

প্রভু বলে, “ওরে শুক এ যে বৃন্দাবন ।

রাধাকৃষ্ণ বল হেথা শুনুক সর্ব্বজন” ॥৩৬॥

শুক বলে, “বৃন্দাবন নবদ্বীপ হইল ।

রাধাকৃষ্ণ গৌরহরি-রূপে দেখা দিল ॥৩৭॥

আমি শুক এই বনে গৌর-নাম গাই ।

তুমি মোর কৃষ্ণ, রাধা এই যে গদাই ॥৩৮॥

গদাই-গৌরাঙ্গ মোর প্রাণের ঈশ্বর ।

আন কিছু মুখে না আইসে অতঃপর” ॥৩৯॥

প্রভু বলে, “আমি রাধাকৃষ্ণ-উপাসক ।

অন্য নাম শুনিলে আমার হয় শোক” ॥৪০॥

এত বলি’ গদাইয়ের হাতটী ধরিয়া ।

মায়াপুরে ফিরে আইল শুকেরে ছাড়িয়া ॥৪১॥

শুকে বলে, “গাও তুমি যাহা লাগে ভাল ।

আমার ভজন আমি করি চিরকাল” ॥৪২॥

মধুর চৈতন্যলীলা জাগে যার মনে ।

মোর দণ্ডবৎ ভাই তাঁহার চরণে ॥৪৩॥

শ্রীনবদ্বীপ ও বৃন্দাবন

গদাই গৌরাঙ্গে মুঞি “রাধাশ্যাম” জানি ।

ষোলক্রোশ “নবদ্বীপে” “বৃন্দাবন” মানি ॥৪৪॥

যশোদানন্দনে আর শচীর নন্দনে ।

যে জন পৃথক্ দেখে সে না মরে কেনে ॥৪৫॥

নবদ্বীপে না পাইল যেই বৃন্দাবন ।

বৃথা সে তার্কিক কেন ধরয় জীবন ॥৪৬॥

গৌর-ভজন বিনা ‘রাধাকৃষ্ণ’-ভজন বৃথা

গৌর-নাম গৌর-ধাম গৌরাঙ্গ-চরিত ।

যে ভজে তাহাতে মোর অকৈতব প্রীত ॥৪৭॥

 
গৌর-রূপ গৌর-নামগৌর-লীলা গৌর-ধাম

যে না ভজে গৌড়েতে জন্মিয়া ।

রাধাকৃষ্ণ-নাম-রূপ-ধাম-লীলা অপরূপ

কভু নাহি স্পর্শে তার হিয়া ॥৪৮॥

 


 

← ১। মঙ্গলাচরণ ৩। প্রথম প্রণাম →

 

সূচীপত্র:
১। মঙ্গলাচরণ
২। গ্রন্থরচনা
৩। প্রথম প্রণাম
৪। গৌরস্য গুরুতা
৫। বিবর্ত্তবিলাসসেবা
৬। জীব-গতি
৭। সকলের পক্ষে নাম
৮। কুটীনাটি ছাড়
৯। যুক্তবৈরাগ্য
১০। জাতিকুল
১১। নবদ্বীপ-দীপক
১২। বৈষ্ণব-মহিমা
১৩। শ্রীগৌরদর্শনের ব্যাকুলতা
১৪। বিপরীত বিবর্ত্ত
১৫। শ্রীনবদ্বীপে পূর্ব্বাহ্ণ-লীলা
১৬। পীরিতি কিরূপ ?
১৭। ভক্তভেদে আচারভেদ
১৮। শ্রীএকাদশী
১৯। নামরহস্যপটল
২০। নাম-মহিমা
বৃক্ষসম ক্ষমাগুণ করবি সাধন । প্রতিহিংসা ত্যজি আন্যে করবি পালন ॥ জীবন-নির্ব্বাহে আনে উদ্বেগ না দিবে । পর-উপকারে নিজ-সুখ পাসরিবে ॥