বর্ণাদি বিচার নাহি শ্রীনামসঙ্কীর্ত্তনে ।
দীক্ষাপুরশ্চর্য্যা বিধি বাধা নাই গণে ॥১৪৬॥
নারায়ণ জগন্নাথ বাসুদেব জনার্দ্দন ।
যার মুখে সদা শুনি, পূজ্য গুরু সেই জন ॥১৪৭॥
শয়নে স্বপনে আর চলিতে বসিতে ।
কৃষ্ণনাম করে যেই, পূজ্য সর্ব্ব মতে ॥১৪৮॥
নারায়ণ জগন্নাথ বাসুদেব জনার্দ্দন ।
ইতীরয়ন্তি যে নিত্যং তে বৈ সর্ব্বত্র বন্দিতাঃ ॥১৪৯॥
স্বপন্ ভুঞ্জন্ ব্রজংস্তিষ্ঠনুত্তিষ্ঠংশ্চ বদংস্তথা ।
যে বদন্তি হরের্নাম তেভ্যো নিত্যং নমো নমঃ ॥১৫০॥
স্ত্রী-শূদ্র-পুক্কশ-যবনাদি কেন নয় ।
কৃষ্ণনাম গায়, সেও গুরু পূজ্য হয় ॥১৫১॥
স্ত্রী শূদ্রঃ পুক্কশো বাপি যে চান্যে পাপযোনয়ঃ ।
কীর্ত্তয়ন্তি হরিং ভক্ত্যা তেভ্যোঽপীহ নমো নমঃ ॥১৫২॥
অন্যগতিশূন্য ভোগী পর-উপতাপী ।
ব্রহ্মচর্য্য-জ্ঞানবৈরাগ্যহীন পাপী ॥১৫৩॥
সর্ব্বধর্ম্মশূন্য নামজপী যদি হয় ।
তাহার যে সুগতি তাহা সর্ব্ব ধার্ম্মিকের নয় ॥১৫৪॥
অনন্যগতয়ো মর্ত্ত্যা ভোগিনোঽপি পরন্তপাঃ ।
জ্ঞানবৈরাগ্যরহিতা ব্রহ্মচর্য্যাদিবর্জ্জিতাঃ ॥১৫৫॥
সর্ব্বধর্ম্মোজ্ঝিতা বিষ্ণোর্নামমাত্রৈকজল্পকাঃ ।
সুখেন যাং গতিং যান্তি ন তাং সর্ব্বেঽপি ধার্ম্মিকাঃ ॥১৫৬॥
হরিনামগ্রহণে দেশকালের নিয়ম নাই ।
উচ্ছিষ্ট অশৌচে বিধি নিষেধ না পাই ॥১৫৭॥
ন দেশনিয়মস্তস্মিন্ ন কালনিয়মস্তথা ।
নোচ্ছিষ্টাদৌ নিষেধোঽস্তি শ্রীহরের্নাম্নি লুব্ধকঃ ॥১৫৮॥
কৃষ্ণনাম সদা সর্ব্বত্র করহ কীর্ত্তন ।
অশৌচাদি নাহি মান, নাম স্বতন্ত্র পাবন ॥১৫৯॥
চক্রায়ুধস্য নামানি সদা সর্ব্বত্র কীর্ত্তয়েৎ ।
নাশৌচং কীর্ত্তনে তস্য স পবিত্রকরো যতঃ ॥১৬০॥
যজ্ঞে দানে স্নানে জপে আছে কালের নিয়ম ।
কৃষ্ণকীর্ত্তনে কালাকালচিন্তা মহাভ্রম ॥১৬১॥
দেশ-কাল-নিয়মাদি নামে কভু নাই ।
কৃষ্ণকীর্ত্তন সদা করহ সবাই ॥১৬২॥
ন দেশনিয়মো রাজন্ ন কালনিয়মস্তথা ।
বিদ্যতে নাত্র সন্দেহো বিষ্ণোর্নামানুকীর্ত্তনে ॥১৬৩॥
কালোঽস্তি দানে যজ্ঞে চ স্নানে কালোঽস্তি সজ্জপে ।
বিষ্ণুসঙ্কীর্ত্তনে কালো নাস্ত্যত্র পৃথিবীতলে ॥১৬৪॥
সংসারে নির্ব্বিণ্ণচিত্ত অভয়পদ চায় ।
হেন যোগীর জন্য নাম একমাত্র উপায় ॥১৬৫॥
এতন্নির্ব্বিদ্যমানানামিচ্ছতামকুতোভয়ম্ ।
যোগীনাং নৃপ নির্ণীতং হরের্নামানুকীর্ত্তনম্ ॥১৬৬॥
হরিনাম বিনা আর সহজ মুক্তিদাতা ।
কেহ নাহি ত্রিজগতে, নামই জীবের ত্রাতা ॥১৬৭॥
একবার মুখে বলে ‘হরি’ দু’অক্ষর ।
সেইজন মোক্ষপ্রতি বদ্ধপরিকর ॥১৬৮॥
সকৃদুচ্চারিতং যেন হরিরিত্যক্ষরদ্বয়ম্ ।
বদ্ধ পরিকরস্ তেন মোক্ষায় গমনং প্রতি ॥১৬৯॥
জিতনিদ্র হঞা একবার ‘নারায়ণ’ বলে ।
শুদ্ধ-চিত্ত হঞা সেই নির্ব্বাণপথে চলে ॥১৭০॥
সকৃদুচ্চারয়েদ্যস্তু নারায়ণমতন্ব্রিতঃ ।
শুদ্ধান্তঃকরণো ভূত্বা নির্ব্বাণমধিগচ্ছতি ॥১৭১॥
এ ঘোর সংসারে বলে বিবশে ‘হরে হরে’ ।
সদ্যোমুক্ত হয়, ভয় তারে ভয় করে ॥১৭২॥
আপন্নঃ সংসৃতিং ঘোরাং যন্নাম বিবশো গৃণন্ ।
ততঃ সদ্যো বিমুচ্যেত যদ্বিভেতি স্বয়ং ভয়ম্ ॥১৭৩॥
মৃত্যুকালে বিবশে যে করে উচ্চারণ ।
তাঁর অবতার নাম লীলা বিড়ম্বন ॥১৭৪॥
বহুজন্মদুরিত সাহস ত্যাগ করি’ ।
যায় সে পরমপদে ভজে সেই হরি ॥১৭৫॥
যস্যাবতারগুণকর্ম্মবিড়ম্বনানি
নামানি যেঽসুবিগমে বিবশা গৃণন্তি ।
তেঽনেকজন্মশমলং সহসৈব হিত্বা
সংযান্ত্যপাবৃতামৃতং তমজং প্রপদ্যে ॥১৭৬॥
চলিতে বসিতে স্বপ্নে ভোজনে শয়নে ।
কলিদমন কৃষ্ণোচ্চারে বাক্যের পূরণে ॥১৭৭॥
হেলাতেও করি’ নাম নিজ স্বরূপ পাঞা ।
পরমপদ বৈকুণ্ঠে যায় নির্ভয় হইয়া ॥১৭৮॥
ব্রজংস্তিষ্ঠন্ স্বপন্নশ্নন্ শ্বসন্ বাক্যপ্রপূরণে ।
নামসঙ্কীর্ত্তনং বিষ্ণোর্হেলয়া কলিবর্ধনম্ ।
কৃত্বা স্বরূপতাং যাতি ভক্তিযুক্তঃ পরং ব্রজেৎ ॥১৭৯॥
যেন তেন প্রকারেতে লয় কৃষ্ণনাম ।
তাকে প্রীতি করে কৃষ্ণ করুণা-নিদান ॥১৮০॥
মদ্যপানে ভূতাবিষ্ট বায়ু-পীড়া-স্থলে ।
হরিনামোচ্চারে মুক্তি তাঁর করতলে ॥১৮১॥
বাসুদেবস্য সঙ্কীর্ত্ত্যা সুরাপো ব্যাধিতোঽপি বা ।
মুক্তো জায়েত নিয়তং মহাবিষ্ণুঃ প্রসীদতি ॥১৮২॥
হরিনাম স্বতঃ পরমপুরুষার্থ হয় ।
উপেয়-মাঙ্গল্য-তত্ত্ব পরংধনময় ॥১৮৩॥
জীবনের ফল বস্তু কাশীখণ্ডে বলে ।
পদ্মপুরাণেও তাহা কহে বহু স্থলে ॥১৮৪॥
ইদমেব হি মাঙ্গল্যং এতদেব ধনার্জ্জনম্ ।
জীবিতস্য ফলঞ্চৈতদ্ যদ্দামোদরকীর্ত্তনম্ ॥১৮৫॥
সর্ব্ব মঙ্গলের হয় পরম মঙ্গল ।
চিত্তত্ত্ব-স্বরূপ সর্ব্ববেদবল্লীফল ॥১৮৬॥
কৃষ্ণনাম লয় যেই শ্রদ্ধা বা হেলায় ।
নর-মাত্র ত্রাণ পায় সর্ব্ববেদে গায় ॥১৮৭॥
মধুরমধুরমেতন্মঙ্গলং মঙ্গলানাং
সকলনিগমবল্লী সৎফলং চিৎস্বরূপম্ ।
সকৃদপি পরিগীতং শ্রদ্ধয়া হেলয়া বা
ভৃগুবর নরমাত্রং তারয়েৎ কৃষ্ণনাম ॥১৮৮॥
ভক্তির প্রকার যত শাস্ত্রে দেখা যায় ।
তঁহি মধ্যে নামাশ্রয় শ্রেষ্ঠ বলি’ গায় ॥১৮৯॥
কষ্টেতে অষ্টাঙ্গ যোগে বিষ্ণুস্মৃতি সাধে ।
ওষ্ঠস্পন্দনেই শ্রেষ্ঠ কীর্ত্তন বিরাজে ॥১৯০॥
অঘচ্ছিৎ স্মরণং বিষ্ণোর্বহ্বায়াসেন সাধ্যতে ।
ওষ্ঠস্পন্দনমাত্রেণ কীর্ত্তনন্তু ততো বরম্ ॥১৯১॥
দীক্ষাপূর্ব্বক অর্চ্চন যদি শত জন্ম করে ।
তাহার জিহ্বায় নিত্য হরিনাম স্ফুরে ॥১৯২॥
যেন জন্মশতৈঃ পূর্ব্বং বাসুদেবঃ সমর্চ্চিতঃ ।
তন্মুখে হরিনামানি সদা তিষ্ঠন্তি ভারত ॥১৯৩॥
সত্যযুগে বহুকালে যাহা তপোধ্যানে ।
যজ্ঞাদি যজিয়া ত্রেতায় যেবা ফল টানে ॥১৯৪॥
দ্বাপরে অর্চ্চনাঙ্গেতে পায় যেবা ফল ।
কলিতে হরিনামে পায় সে সকল ॥১৯৫॥
ধ্যায়ন্ কৃতে যজন্ যজ্ঞৈস্ত্রেতায়াং দ্বাপরেঽর্চ্চয়ন্ ।
যদাপ্নোতি তদাপ্নোতি কলৌ সঙ্কীর্ত্ত্য কেশবম্ ॥১৯৬॥
কলিকালে মহাভাগবত বলি তারে ।
কীর্ত্তনে যে হরিভজে এভব সংসারে ॥১৯৭॥
মহাভাগবতা নিত্যং কলৌ কুর্ব্বন্তি কীর্ত্তনং ॥১৯৮॥
চিদাত্মক হরিনাম বারেক উচ্চারে ।
শিব-ব্রহ্মা-অনন্ত তার ফল কহিতে নারে ॥১৯৯॥
নামোচ্চারণ মাহাত্ম্য অদ্ভুত বলি’ গায় ।
উচ্চারণ মাত্রে নর পরমপদ পায় ॥২০০॥
সকৃদুচ্চারয়ন্ত্যেব হরের্নাম চিদাত্মকং ।
ফলং নাস্য ক্ষমো বক্তুং সহস্রবদনো বিধিঃ ॥২০১॥
নামোচ্চারণ মাহাত্ম্যং শ্রূয়তে মহদদ্ভুতং ।
যদুচ্চারণমাত্রেণ নরো যায়াৎ পরং পদম্ ॥২০২॥
কৃষ্ণ বলে, ‘শুন অর্জ্জুন ! বলিব তোমায় ।
শ্রদ্ধায় হেলায় জীব মম নাম গায় ॥২০৩॥
সেই নাম মম হৃদি সদা বর্ত্তমান ।
নামসম ব্রত নাই, নামসম জ্ঞান ॥২০৪॥
নামসম ধ্যান নাই, নামসম ফল ।
নামসম ত্যাগ নাই, নামসম বল ॥২০৫॥
নামসম পুণ্য নাই, নামসম গতি ।
নামের শক্তিগানে বেদের নাহিক শকতি ॥২০৬॥
নামই পরমা মুক্তি, নামই পরমা গতি ।
নামই পরমা শান্তি, নামই পরমা স্থিতি ॥২০৭॥
নামই পরমা ভক্তি, নামই পরমা মতি ।
নামই পরমা প্রীতি, নামই পরমা স্মৃতি ॥২০৮॥
জীবের কারণ নাম, নামই জীবের প্রভু ।
পরম আরাধ্য নাম, নামই গুরু প্রভু’ ॥২০৯॥
শ্রদ্ধয়া হেলয়া নাম রটন্তি মম জন্তবঃ ।
তেষাং নাম সদা পার্থ বর্ত্ততে হৃদয়ে মম ॥২১০॥
ন নামসদৃশং জ্ঞানং, ন নামসদৃশং ব্রতম্ ।
ন নামসদৃশং ধ্যানং, ন নামসদৃশং ফলম্ ॥২১১॥
ন নামসদৃশস্ত্যাগো, ন নামসদৃশঃ শমঃ ।
ন নামসদৃশং পুণ্যং, ন নামসদৃশী গতিঃ ॥২১২॥
নামৈব পরমা মুক্তির্নামৈব পরমা গতিঃ ।
নামৈব পরমা শান্তির্নামৈব পরমা স্থিতিঃ ॥২১৩॥
নামৈব পরমা ভক্তির্নামৈব পরমা মতিঃ ।
নামৈব পরমা প্রীতির্নামৈব পরমা স্মৃতিঃ ॥২১৪॥
নামৈব কারণং জন্তোর্নামৈব প্রভুরেব চ ।
নামৈব পরমারাধ্যং নামৈব পরমো গুরুঃ ॥২১৫॥
হরিনাম-মাহাত্ম্যের কভু নাহি পার ।
যে নাম শ্রবণে সদ্য পুক্কশ উদ্ধার ॥২১৬॥
যন্নাম সকৃচ্ছ্র বণাৎ পুক্কশোঽপি বিমুচ্যতে সাক্ষাৎ ॥২১৭॥
স্বপনে জাগ্রতে যেবা জল্পে কৃষ্ণনাম ।
কলিতে সে কৃষ্ণরূপী, কৃষ্ণের বিধান ॥২১৮॥
কৃষ্ণ কৃষ্ণেতি কৃষ্ণেতি স্বপন্ জাগ্রদ্ ব্রজংস্তথা ।
যো জল্পতি কলৌ নিত্যং কৃষ্ণরূপী ভবেদ্ধি সঃ ॥২১৯॥
কৃষ্ণ বলি’ নিত্য স্মরে সংসার-সাগরে ।
জলোত্থিত পদ্ম যেন নরকে উদ্ধরে ॥২২০॥
কৃষ্ণ কৃষ্ণেতি কৃষ্ণেতি যো মাং স্মরতি নিত্যশঃ ।
জলং হিত্বং যথা পদ্মং নরকাদুদ্ধরাম্যহম্ ॥২২১॥
কৃষ্ণনাম সর্ব্বমুখ্য জীবের আশ্রয় ।
অশেষ পাপ হরে, সদ্য পাপমুক্তিকর ॥২২২॥
নাম্নাং মুখ্যতরং নাম কৃষ্ণাখ্যং মে পরন্তপ ।
প্রায়শ্চিত্তমশেষাণাং পাপানাং মোচকং পরম্ ॥২২৩॥
নাম চিন্তামণি, কৃষ্ণ, চৈতন্য-স্বরূপ ।
পূর্ণ, শুদ্ধ, নিত্যমুক্ত, নামনামী একরূপ ॥২২৪॥
নাম চিন্তামণিঃ কৃষ্ণশ্চৈতন্যরসবিগ্রহঃ ।
পূর্ণঃ শুদ্ধো নিত্যমুক্তোঽভিন্নত্বান্নামনামিনোঃ ॥২২৫॥
বিষ্ণুনাম বিষ্ণুশক্তি যেই জন জানে ।
সুমতি প্রার্থনা করে অপ্রাকৃত জ্ঞানে ॥২২৬॥
ওঁ আস্য জানন্ত নাম চিদ্বিবক্তন ।
মহস্তে বিষ্ণো সুমতিং ভজামহে” ॥২২৭॥
স্থানেশ্বরী কৃষ্ণদাস যোড় করি’ কর ।
বলে, “প্রভু, এক বস্তু প্রার্থনা হামার ॥২২৮॥
এরূপ মাহাত্ম্য নামের শুনিনু শ্রবণে ।
সর্ব্বত্র সমান ফল নাহি হোয় কেনে” ॥২২৯॥
প্রভু বলে, “শ্রদ্ধা-বিশ্বাস সকলের মূল ।
বিশ্বাস-অভাবে কেহ নাহি লভে ফল” ॥২৩০॥
প্রভু বলে, “অন্তর্য্যমী নাম ভগবান্ ।
বিশ্বাসানুসারে ফল করেন প্রদান ॥২৩১॥
নামের মহিমা পূর্ণ বিশ্বাস না করে ।
নামের ফল নাহি পায়, নাম-অপরাধে মরে ॥২৩২॥
অর্থবাদ করে ফলে বিশ্বাস ত্যজিয়া ।
ফল নাহি পায়, থাকে নরকে পড়িয়া” ॥২৩৩॥
অর্থবাদং হরের্নাম্নি সম্ভাবয়তি যো নরঃ ।
স পাপিষ্ঠো মনুষ্যাণাং নিরয়ে পতিত স্ফুটম্ ॥২৩৪॥
যন্নামকীর্ত্তনফলং বিবিধং নিশম্য
ন
শ্রদ্দধাতি মনুতে যদুতার্থবাদম্ ।
যো মানুষস্তমিহ দুঃখচয়ে ক্ষিপামি
সংসার-ঘোর-বিবিধার্ত্তিনিপীড়িতাঙ্গম্ ॥২৩৫॥
|