আমাদের শ্রীগুরুপরম্পরা :
শ্রীশ্রীল ভক্তিনির্ম্মল আচার্য্য মহারাজ শ্রীশ্রীল ভক্তিসুন্দর গোবিন্দ দেবগোস্বামী মহারাজ শ্রীশ্রীল ভক্তিরক্ষক শ্রীধর দেবগোস্বামী মহারাজ ভগবান্ শ্রীশ্রীল ভক্তি সিদ্ধান্ত সরস্বতী গোস্বামী ঠাকুর
              প্রভুপাদ
“শ্রীচৈতন্য-সারস্বত মঠে সূর্যাস্ত কখনই হয় না” :
আমাদের মঠের পরিচয় ও বৈশিষ্ট্য
 
আমাদের সম্পর্কে শ্রীউপদেশ শ্রীগ্রন্থাগার শ্রীগৌড়ীয় পঞ্জিকা ছবি ENGLISH
 

শ্রীশ্রীপ্রেমবিবর্ত্ত


১৯। নামরহস্যপটল

 

একদা গৌরাঙ্গচাঁদ চন্দ্রালোক পাঞা ।

সমুদ্রের তীরে আইল ভক্তবৃন্দ লঞা ॥১॥

হরিদাস-সমাজের উপকণ্ঠে বসি’ ।

সর্ব্ব বৈষ্ণবের প্রতি বলে গৌরশশী ॥২॥

শ্রীনামই একমাত্র ও শ্রেষ্ঠ সাধন

“শুন হে ভকতবৃন্দ, কলিকালের ধর্ম্ম ।

শ্রীকৃষ্ণকীর্ত্তন বিনা আর নাহি কর্ম্ম ॥৩॥

কর্ম্ম-জ্ঞান-যোগ-ধ্যান দুর্ব্বল সাধন ।

অপ্রাকৃত সম্পত্তি লাভের নহে ক্রম ॥৪॥

ধর্ম্ম, ব্রত, ত্যাগ, হোম, সকলই প্রাকৃত ।

অপ্রাকৃত তত্ত্ব লাভে নাহি করে হিত ॥৫॥

কৃষ্ণনাম উচ্চারণে, স্মরণে, শ্রবণে ।

অপ্রাকৃতসিদ্ধি হয়, বলে শ্রুতিগণে ॥৬॥

শ্রীনামরহস্য সর্ব্বশাস্ত্রেতে দেখিবা ।

নাম-উচ্চারণমাত্র চিৎসুখ লভিবা ॥৭॥

পদ্মপুরাণ স্বর্গখণ্ড ৪৮ অধ্যায়, নামরহস্যপটলং, যথা—

‘শ্রীশৌনক উবাচ—


নামোচ্চারণমাহাত্ম্যং শ্রূয়তে মহদদ্ভুতম্ ।

যদুচ্চারণমাত্রেণ নরো যায়াৎ পরং পদম্ ।

তদ্বদস্বাধুনা সূত বিধানং নামকীর্ত্তনে ॥৮॥

শ্রীসূত উবাচ—


শৃণু শৌনক বক্ষ্যামি সংবাদং মোক্ষসাধনম্ ।

নারদঃ পৃষ্টবান্ পূর্ব্বং কুমারঃ তদ্বদামি তে ॥৯॥

একদা যমুনাতীরে নিবিষ্টং শান্তমানসম্ ।

সনৎকুমারং পপ্রচ্ছ নারদো রচিতাঞ্জলিঃ ।

শ্রুত্বা নানাবিধান্ ধর্ম্মান্ ধর্ম্মব্যতিকরাংস্তথা ॥১০॥

শ্রীনারদ উবাচ—


যোঽসৌ ভগবতা প্রোক্তা ধর্ম্মব্যতিকরো নৃণাম্ ।

কথং তস্য বিনাশঃ স্যাদুচ্যতাং ভগবৎপ্রিয়’ ॥১১॥

এই পটলের অর্থ কিছু বিশেষ করিয়া ।

বলি স্বরূপ রামানন্দ শুন মন দিয়া ॥১২॥

শ্রীনামকীর্ত্তন কি ? ‘উচ্চারণ’

‘উচ্চারণ’ শব্দে বুঝ শ্রীনামকীর্ত্তন ।

‘করে’ বা ‘মালায়’ সঙ্খ্যা করে ভক্তগণ ॥১৩॥

সঙ্খ্যা ছাড়ি’ অসঙ্খ্য নাম কভু কভু হয় ।

‘উচ্চারণ’ শব্দে এসব জানহ নিশ্চয় ॥১৪॥

জপ ও কীর্ত্তন

লঘূচ্চারে ‘জপ’ হয়, উচ্চারে ‘কীর্ত্তন’ ।

স্মরণ-কীর্ত্তনে সব হয় ত’ গণন ॥১৫॥


কি প্রকারে নাম কৈলে সুকীর্ত্তন হয় ।

শ্রীনামকীর্ত্তনে তাহা বিধান নিশ্চয় ॥১৬॥

কীর্ত্তন সর্ব্বথা ও সর্ব্বদা কর্ত্তব্য

শ্রীনামকীর্ত্তন হয় জীবের নিত্যধর্ম্ম ।

জগতে বৈকুণ্ঠে জীবের এই মুখ্য কর্ম্ম ॥১৭॥

মায়াবদ্ধ জীবের এই মোক্ষ সাধন হয় ।

মুক্তজীবের পক্ষে তাহা সাধ্যাবধি রয় ॥১৮॥

ভক্তিহীন শুভকার্য ত্যাজ্য

ধর্ম্মশাস্ত্র-উক্ত ভক্তিহীন ধর্ম্ম যত ।

ভক্ত্যুদ্দেশ বিনা আর যত প্রকার ব্রত ॥১৯॥


ভক্ত্যুত্থিত বিরাগ ব্যতীত যত ত্যাগ ।

ভক্তি-প্রতিকূল যজ্ঞ প্রাকৃত বিভাগ ॥২০॥


এই সব শুভকর্ম্ম সম্বন্ধ বিচারে ।

ভক্তি-অনুকূল বলি’ শাস্ত্রেতে প্রচারে ॥২১॥


কলিকালে সেই সব জড়ধর্ম্ম হইল ।

ভক্তি-আনুকূল্য ত্যজি’ ধর্ম্ম নষ্ট ভেল ॥২২॥

অতএব কলিকালে নামসঙ্কীর্ত্তন ।

বিনা আর ধর্ম্ম নাই শুন ভক্তগণ ॥২৩॥

সে ধর্ম্মের ব্যতিকর যাহাই দেখিবে ।

তাহাই বর্জ্জিবে যত্নে ভক্তির প্রভাবে ॥২৪॥

‘শ্রীসনৎকুমার উবাচ—


শৃণু নারদ গোবিন্দপ্রিয় গোবিন্দধর্ম্মবিৎ ।

যৎ পৃষ্টং লোকনির্ম্মুক্তিকারণং তমসঃ পরম্’ ॥২৫॥

তুমি ত’ নারদ শ্রীগোবিন্দধর্ম্মবেত্তা ।

গোবিন্দের প্রিয়, মায়াবন্ধনের ছেত্তা ॥২৬॥

লোকনির্ম্মুক্তির হেতু জিজ্ঞাসা তোমার ।

তব প্রশ্নোত্তরে জীব হবে তমঃ পার ॥২৭॥

কলিতে সকল ধর্ম্মাধর্ম্ম তমোময় ।

নামধর্ম্ম বিনা জীবের সংসার নহে ক্ষয় ॥২৮॥

অতএব

‘সর্ব্বাচারবিবর্জ্জিতাঃ শঠধিয়ো ব্রাত্যা জগদ্বঞ্চকাঃ
দম্ভাহঙ্কৃতিপানপৈশুন্যপরাঃ পাপাশ্চ যে নিষ্ঠুরাঃ ।

যে চান্যে ধনদারপুত্রনিরতাঃ সর্ব্বেঽধমাস্তেঽপি হি
শ্রীগোবিন্দপদারবিন্দশরণাঃ শুদ্ধা ভবন্তি দ্বিজ’ ॥২৯॥

নামে সর্ব্বপাপক্ষয়

শ্রীগোবিন্দপদারবিন্দে শরণ যে লয় ।

তার সর্ব্বপাপ নামে নিশ্চয় হয় ক্ষয় ॥৩০॥

কৃষ্ণনাম লয়ে কাঁদে, নিজ দোষ বলে ।

অতি শীঘ্র তার পাপ যায় ভক্তিবলে ॥৩১॥

কর্ম্ম প্রায়শ্চিত্তে বাসনা নষ্ট হয় না

কর্ম্মজ্ঞান-প্রায়শ্চিত্তে তার কিবা ফল ।

সে ফল দুর্ব্বল অতি, তার নাহি বল ॥৩২॥

এক কৃষ্ণনামে পাপীর যত পাপক্ষয় ।

বহু জন্মে সেই পাপী করিতে নারয় ॥৩৩॥

হেন পাপ স্মার্ত্তশাস্ত্রে না আছে বর্ণন ।

এক কৃষ্ণনামে যাহা না হয় খণ্ডন ॥৩৪॥

তবে কেন স্মার্ত্তলোক প্রায়শ্চিত্ত করে ? ।

সুকৃতি-অভাবে তার কর্ম্মে মতি হরে ॥৩৫॥

কর্ম্ম-প্রায়শ্চিত্তে কভু বাসনা না যায় ।

জ্ঞান-প্রায়শ্চিত্তে শোধে বাসনা হিয়ায় ॥৩৬॥

বাসনার মূল অবিদ্যা ভক্তিতে বিনষ্ট হয়

পুনঃ কিছুদিনে সে বাসনা হয় স্থূল ।

ভক্তিতে অবিদ্যা যায় বাসনার মূল ॥৩৭॥

যে জন গোবিন্দপদে লইয়া শরণ ।

নাম লয় কাকুভরে করয় রোদন ॥৩৮॥


তার পক্ষে শ্রীমুখের বাক্য সুমধুর ।

জীবের মঙ্গল, গীতায় দেখহ প্রচুর ॥৩৯॥

শ্রীগীতা—

‘সর্ব্বধর্ম্মান্ পরিত্যজ্য মামেকং শরণং ব্রজ ।

অহং ত্বাং সর্ব্বপাপেভ্যো মোক্ষয়িষ্যামি মা শুচঃ ॥৪০॥

অপি চেৎ সুদুরাচারো ভজতে মামনন্যভাক্ ।

সাধুরেব স মন্তব্যঃ সম্যগ্ব্যবসিতো হি সঃ ॥৪১॥

ক্ষিপ্রং ভবতি ধর্ম্মাত্মা শশ্বচ্ছান্তিং নিগচ্ছতি ।

কৌন্তেয় প্রতিজানীহি ন মে ভক্তঃ প্রণশ্যতি’ ॥৪২॥

অতএব কর্ম্মাঙ্গ প্রায়শ্চিত্তাদি পরিহরি’ ।

বুদ্ধিমান্ জন ভজে প্রাণেশ্বর হরি ॥৪৩॥

অতএব

নামের ফল

‘তমপি দেবকরং করুণাকরং
স্থাবর-জঙ্গম-মুক্তিকরং পরম্ ।

অতিচরন্ত্যপরাধপরা জনা 
য ইহ তান্বপতি ধ্রুবনাম হি’ ॥৪৪॥

কৃষ্ণনাম দয়াময় কৃষ্ণতেজোময় ।

স্থাবর-জঙ্গম-মুক্তিদাতা সুনিশ্চয় ॥৪৫॥

নাম-অপরাধী তাহে করে অপরাধ ।

অতিচার আসি’ নাম-ধর্ম্মে করে বাধ ॥৪৬॥

সেই মহা-অপরাধীর দোষ, নামে হয় ক্ষয় ।

নাম বিনা জীববন্ধু জগতে না হয় ॥৪৭॥

‘শ্রীনারদ উবাচ—


কে তেঽপরাধা বিপ্রেন্দ্র নাম্নো ভগবতঃ কৃতা ।

বিনিঘ্নন্তি নৃণাং কৃত্যং প্রাকৃতং হ্যানয়ন্তি চ’ ॥৪৮॥

নামাপরাধ

ওহে গুরু সনৎকুমার কৃপা করি বল ।

নামে অপরাধ যত প্রকার সকল ॥৪৯॥


নামরূপ মহাকৃত্য জীবের নিশ্চয় ।

সেই কৃত্য যাহে সাধকের নষ্ট হয় ॥৫০॥

নামকে প্রাকৃত করি’ সাধন করাঞা ।

সামান্য প্রাকৃত ফলে দেয় ফেলাইয়া ॥৫১॥

‘শ্রীসনৎকুমার উবাচ—


সতাং নিন্দা নাম্নঃ পরমপরাধং বিতনুতে
যতঃ খ্যাতিং যাতং কথমুসহতে তদ্বিগর্হাম্ ।

শিবস্য শ্রীবিষ্ণোর্য ইহ গুণনামাদিসকলং
ধিয়াভিন্নং পশ্যেৎ স খলু হরিনামাহিতকরঃ’ ॥৫২॥

নামাপরাধ হইতে মুক্তি

দশটী নামাপরাধ ভিন্ন ভিন্ন করি’ ।

বুঝিয়া লইলে নাম-অপরাধে তরি ॥৫৩॥

এই শ্লোকে দুই অপরাধের বিচার ।

করিয়া করহ শুদ্ধ নামের আচার ॥৫৪॥

একান্ত নামেতে আশ্রয় আছে যাঁর ।

সাধুপদবাচ্য তেঁহ তারেন সংসার ॥৫৫॥

জড়কর্ম্মজ্ঞানচেষ্টা ছাড়ি’ সেই জন ।

শুদ্ধভক্তিভাবে নাম করেন উচ্চারণ ॥৫৬॥

নামের প্রচার একা তাঁহা হৈতে হয় ।

তাঁর নিন্দা কৃষ্ণনাম কভু না সহয় ॥৫৭॥

সাধুনিন্দা

সে সাধুর নিন্দা, তাঁতে লঘু-বুদ্ধি যার ।

বড় অপরাধ নামে নিশ্চয় তাহার ॥৫৮॥

যত্নে এই অপরাধ করিয়া বর্জ্জন ।

সেই সাধু-সঙ্গ-বলে করহ ভজন ॥৫৯॥

শ্রীনাম-নামী একতত্ত্ব

মঙ্গলস্বরূপ বিষ্ণু পরতত্ত্ব হরি ।

অপ্রাকৃত স্বরূপেতে শ্রীব্রজবিহারী ॥৬০॥

তাঁর নাম-রূপ-গুণ-লীলা অপ্রাকৃত ।

তাঁহার স্বরূপ হৈতে ভিন্ন নহে তত্ত্ব ॥৬১॥

নাম নামী এক তত্ত্ব অপ্রাকৃত ধর্ম্ম ।

এ জড় জগতে তার নাহি আছে মর্ম্ম ॥৬২॥

এই শুদ্ধজ্ঞানলাভ ভক্তিবলে হয় ।

তর্কে বহু দূর ইহা জানিহ নিশ্চয় ॥৬৩॥

নিজ শুদ্ধসাধন, আর সাধুগুরুবল ।

দুইয়ের সংয়োগে লভি’ এ তত্ত্বমঙ্গল ॥৬৪॥

এই তত্ত্বসিদ্ধি যত দিন নাহি হয় ।

ততদিন প্রাকৃতবুদ্ধি কভু না ছাড়য় ॥৬৫॥


ততদিন নাম করি’ না পাই স্বরূপ ।

নামাভাসমাত্র হয় ভজনবিরূপ ॥৬৬॥

বহু যত্নে লাভ ভাই স্বরূপের সিদ্ধি ।

শুদ্ধনামোচ্চারে পাবে পরংপদ-বুদ্ধি ॥৬৭॥


যত্নসহ নিরন্তর নামাভাসে হরি ।

নামেতে স্বরূপসিদ্ধি দিবে কৃপা করি’ ॥৬৮॥

কৃষ্ণ সর্ব্বেশ্বর, শিবাদি তাঁহার অংশ

সর্ব্বেশ্বর কৃষ্ণ, তাহে জানিবে নিশ্চয় ।

শিবাদি দেবতা তাঁর অংশরূপ হয় ॥৬৯॥

সেই সেই দেবের নামাদি গুণরূপ ।

কৃষ্ণশক্তিদত্ত সিদ্ধ জানহ স্বরূপ ॥৭০॥

এরূপ জানিলে শিববিষ্ণুতে অভেদে ।

জন্মিবে স্বরূপবুদ্ধি, গায় সর্ব্ববেদে ॥৭১॥

ভেদবুদ্ধি অপরাধ যত্নেতে ত্যজিবে ।

গুরুকৃপাবলে তবে শ্রীনাম ভজিবে ॥৭২॥

‘গুরোরবজ্ঞা শ্রুতিশাস্ত্রনিন্দনং
তথার্থবাদো হরিনাম্নি কল্পনম্ ।

নাম্নো বলাদ্​যস্য হি পাপবুদ্ধির্-
ন বিদ্যতে তস্য যমৈর্হি শুদ্ধিঃ’ ॥৭৩॥

গুরু-কর্ণধারের অনাদর

কৃপা করি’ যেই জন হরি দেখাইল ।

হরিনাম-পরিচয় করাইয়া দিল ॥৭৪॥


সেই মোর কর্ণধার গুরু মহাশয় ।

তাঁহারে অবজ্ঞা কৈলে নামাপরাধ হয় ॥৭৫॥

‘হীনজাতি পাণ্ডিত্য-রহিত মন্ত্রহীন’ ।

নামের গুরুতে হেন বুদ্ধি অর্ব্বাচীন ॥৭৬॥

শ্রুতিশাস্ত্রে অনাদর

যেই শ্রুতিশাস্ত্র নামের ব্রহ্মত্ব দেখায় ।

অপার মাহাত্ম্য নামের জগতে জানায় ॥৭৭॥


তারে অনাদর করি’ কর্ম্মাদি প্রশংসে ।

শ্রুতিনিন্দা বলি’ তারে সর্ব্বশাস্ত্রে ভাষে ॥৭৮॥

নামে কল্পনাবুদ্ধি

নাম নিত্যধন সদা চিন্ময় অগাধ ।

তাহাতে কল্পনাবুদ্ধি গুরু অপরাধ ॥৭৯॥

নামবলে পাপবুদ্ধি

নামবলে পাপবুদ্ধি হৃদয়ে যাহার ।

সতত উদয় হয়, সেই ত’ অসার ॥৮০॥

নামে অর্থবাদ

রোচনার্থা ফলশ্রুতি কর্ম্মমার্গে সত্য ।

ভক্তিমার্গে নামফল সর্ব্বকালে নিত্য ॥৮১॥

অপ্রাকৃত নামের মাহাত্ম্য সীমাহীন ।

তাতে যার ‘অর্থবাদ’ সেই অর্ব্বাচীন ॥৮২॥

এই সব অপরাধ বর্জ্জনে নামের কৃপা

এই পঞ্চ অপরাধ বর্জ্জিবে যতনে ।

তবে ত’ নামের কৃপা লভিবে সাধনে ॥৮৩॥

‘ধর্ম্মব্রতত্যাগহুতাদিসর্ব্বশুভক্রিয়াসাম্যমপি প্রমাদঃ ।

অশ্রদ্দধানে বিমুখেঽপ্যশৃণ্বতি যশ্চোপদেশঃ শিবনামাপরাধঃ’ ॥৮৪॥

সর্ব্ব শুভকর্ম্ম প্রাকৃত

বর্ণাশ্রমময়-ধর্ম্ম ধর্ম্মশাস্ত্রে যত ।

দর্শপৌর্ণমাসী-আদি তমোময়-ব্রত ॥৮৫॥


দণ্ডী মুণ্ডী সন্ন্যাসাদি ত্যাগের প্রকার ।

নিত্য নৈমিত্তিক হোম-আদির ব্যাপার ॥৮৬॥


অষ্টাঙ্গ-ষড়ঙ্গ-যোগ-আদি শুভ-কর্ম্ম ।

সকলই প্রাকৃত-তত্ত্ব, এই সত্য মর্ম্ম ॥৮৭॥

উপায় রূপেতে তারা উপেয় সাধয় ।

না সাধিলে জড় বই কিছু আর নয় ॥৮৮॥

শ্রীনাম উপায়, উপেয়

নাম কিন্তু অপ্রাকৃত চিন্ময় ব্যাপার ।

সাধনে উপায়তত্ত্ব সাধ্যে উপেয়-সার ॥৮৯॥

অতএব নামতত্ত্ব বিশুদ্ধ চিন্ময় ।

জড়োপায় কর্ম্ম সহ সাম্য কভু নয় ॥৯০॥

কর্ম্মজ্ঞান সহ নাম তুল্য নহে

কর্ম্মজ্ঞান সহ নামে সাম্যবুদ্ধি যথা ।

নাম-অপরাধ গুরুতর ঘটে তথা ॥৯১॥

অবিশ্বাসী জনে নাম উপদেশ

নামে যার বিশ্বাস না জন্মিল ভাগ্যাভাবে ।

তাকে নাম উপদেশি’ অপরাধ পাবে ॥৯২॥

এই দুই অপরাধ সদ্গুরুকৃপায় ।

বহু যত্নে ছাড়ি’ ভাই নামধন পায় ॥৯৩॥

‘শ্রুত্বাপি নামমাহাত্ম্যং যঃ প্রীতিরহিতোঽধমঃ ।

অহং‑মমাদি-পরমো নাম্নি সোঽপ্যপরাধকৃৎ’ ॥৯৪॥

নামের মাহাত্ম্য সব শুনি’ শাস্ত্র হৈতে ।

তবু তাহে রতি যার নৈল কোনমতে ॥৯৫॥


অহংতা-মমতা-বুদ্ধি দেহেতে করিয়া ।

লাভ-পূজা-প্রতিষ্ঠাতে রহিল মজিয়া ॥৯৬॥


পাপে রত হঞা পাপ ছাড়িতে না পারে ।

নামে যত্ন করি’ চেষ্টা করিবারে নারে ॥৯৭॥


সাধুসঙ্গে মতি নহে অসাধু বিষয়ে ।

সুখ পায় বিবেক বৈরাগ্য ছাড়াইয়ে ॥৯৮॥


এই ত’ নামাপরাধ ঘটনা তাহার ।

নামে রুচি নাহি পায় কৃষ্ণের সংসার ॥৯৯॥

এই দশ অপরাধ নামাপরাধ হয় ।

নামধর্ম্মে বাধা দেয় সুমঙ্গলক্ষয় ॥১০০॥

‘সর্ব্বাপরাধকৃদপি মুচ্যতে হরিসংশ্রয়ঃ ।

হরেরপ্যপরাধান্ যঃ কুর্য্যাদ্দ্বিপদপাংসনঃ ॥১০১॥


নামাশ্রয়ঃ কদাচিৎ স্যাত্তরত্যেষ[ব?] স নামতঃ ।

নাম্নোহি সর্ব্বসুহৃদোহ্যপরাধাৎ পতত্যধঃ’ ॥১০২॥

পাপ তাপ অপরাধ জীবের যত হয় ।

শ্রীহরিসংশ্রয়ে সব সদ্য হয় ক্ষয় ॥১০৩॥

কলির সংসার ছাড়িয়া কৃষ্ণের সংসার কর

কলির সংসার ছাড়ি’ কৃষ্ণের সংসার ।

অকৈতবে করে যেই অপরাধ নাহি তার ॥১০৪॥

দীক্ষাকালে অকৈতবে আত্মনিবেদনে সর্ব্বপাপক্ষয়

পূর্ব্ব যত পাপাদি বহু জন্মে করে ।

হরিদীক্ষামাত্রে সেই সব পাপে তরে ॥১০৫॥

অকৈতবে করে যবে আত্মনিবেদন ।

কৃষ্ণ তার পূর্ব্ব পাপ করেন খণ্ডন ॥১০৬॥

প্রায়শ্চিত্ত করিবারে তার নাহি হয় ।

দীক্ষামাত্র পাপক্ষয় সর্ব্বশাস্ত্রে কয় ॥১০৭॥

নিষ্কপটে হর্য্যাশ্রয় করে যেই জন ।

সর্ব্ব অপরাধ তার বিনষ্ট তখন ॥১০৮॥


আর পাপতাপে কভু রুচি নাহি হয় ।

পুণ্য পাপ দূরে যায়, মায়া করে জয় ॥১০৯॥

সেবা-অপরাধ

তবে তার কভু হয় সেবা-অপরাধ ।

সেই অপরাধে হয় ভক্তিক্রিয়াবাধ ॥১১০॥


সাধুসঙ্গে করে কৃষ্ণনামের আশ্রয় ।

নামাশ্রয়ে সেবা-অপরাধ নষ্ট হয় ॥১১১॥

নামকৃপা হৈলে জীব সর্ব্বশুদ্ধি পায় ।

কৃষ্ণের নিকট গিয়া করে শুদ্ধসেবার আশ্রয় ॥১১২॥

সর্ব্বদা নামাপরাধ বর্জ্জনীয়

কিন্তু যদি নাম-অপরাধ তার হয় ।

তবে পুনঃ অধঃপাত হইবে নিশ্চয় ॥১১৩॥

সর্ব্বজীব-বন্ধু নাম, তাঁর অপরাধ ।

কোনক্রমে ক্ষয় নহে প্রাপ্ত্যে হয় বাধ ॥১১৪॥

নাম অপরাধ ত্যাগ বহু যত্নে করি’ ।

লভে জীব সর্ব্বসিদ্ধি প্রাপ্ত হয় হরি ॥১১৫॥

‘এবং নারদঃ শঙ্করেণ কৃপয়া মহ্যং মুনীনাং পরং

প্রোক্তং নাম সুখাবহং ভগবতো বর্জ্জ্যং সদা যত্নতঃ ।

যে জ্ঞাত্বাপি ন বর্জ্জয়ন্তি সহসা নামাপরাধান্দশ

ক্রুদ্ধা মাতরমপ্যভোজনপরাঃ খিদ্যন্তি তে বালবৎ’ ॥১১৬॥

আমি পূর্ব্বে শিবলোকে শঙ্করসন্নিধানে ।

নাম-অপরাধ-কথা জিজ্ঞাসিলাম মুনে ॥১১৭॥

বহুমুনিগণ মধ্যে শম্ভু কৃপা করি’ ।

আমায় উপদেশ করে কৈলাস উপরি ॥১১৮॥

ভগবানের নাম সর্ব্বজীবসুখাবহ ।

তাতে অপরাধ সর্ব্ব-অমঙ্গল-বহ ॥১১৯॥

মঙ্গল লভিতে যার ইচ্ছা আছে মনে ।

সদা নাম-অপরাধ বর্জ্জিবে যতনে ॥১২০॥

সাধুগুরুসন্নিধানে বহু দৈন্য ধরি’ ।

দশ অপরাধ-তত্ত্ব লবে শিক্ষা করি’ ॥১২১॥

অপরাধগুলি যত্নে জানিয়া ত্যজিবে ।

সত্বরে শ্রীহরিনামে প্রেম উপজিবে ॥১২২॥

নাম পেয়ে অপরাধ বর্জ্জন না করে ।

সহসা তাহারে দশ অপরাধ ধরে ॥১২৩॥

অপরাধ বর্জ্জন না করিয়া নাম করা মূঢ়তা

অপরাধ বুঝিয়া যে বর্জ্জনে উদাসীন ।

তার দুঃখ নিরন্তর সেই অর্ব্বাচীন ॥১২৪॥

মায়ে ক্রোধ করি’ বালক না করে ভোজন ।

সুপথ্য অভাবে সদা ক্লেশের ভাজন ॥১২৫॥

সেইরূপ অপরাধ বর্জ্জন না করি’ ।

নাম করে মূঢ় নিজ শিব পরিহরি’ ॥১২৬॥

‘অপরাধবিমুক্তো হি নাম্নি জপ্তং সদাচর ।

নাম্নৈব তব দেবর্ষে সর্ব্বাং সেৎস্যতি নান্যথা’ ॥১২৭॥

সনৎকুমার বলে, ‘ওহে দেবর্ষিপ্রবর ।

নিরপরাধে নাম জপ সদাই আচর ॥১২৮॥

নাম বিনা অন্য পন্থা নাহি প্রয়োজন ।

নামেতে সকল সিদ্ধি পাবে তপোধন’ ॥১২৯॥

‘শ্রীনারদ উবাচ—


সনৎকুমার প্রিয় সাহসানাং
বিবেক-বৈরাগ্যবিবর্জ্জিতানাম্ ।

দেহপ্রিয়ার্থাত্ম্য-পরায়ণানাম্
উক্তাপরাধাঃ প্রভবন্তি নো কথম্’ ॥১৩০॥

ওহে সনৎকুমার তুমি সিদ্ধ হরিদাস ।

অনায়াসে করিলে নামরহস্যপ্রকাশ ॥১৩১॥

সাধকের নামাপরাধ বর্জ্জনোপায়

সাধক আমরা আমাদের বড় ভয় ।

অপরাধ-ত্যাগে যত্ন কিরূপেতে হয় ॥১৩২॥

বিষয় মোদের বন্ধু তাহার সাহসে ।

করিবে সকল কর্ম্ম বদ্ধ মায়াপাশে ॥১৩৩॥

বিবেকবৈরাগ্যশূন্য দেহ প্রিয়জন ।

অর্থস্বরূপে মোরা সদা পরায়ণ ॥১৩৪॥

কিরূপে সাধক-মনে অপরাধ দশ ।

নাহি উপজিবে তাহা করহ প্রকাশ ॥১৩৫॥

‘শ্রীসনৎকুমার উবাচ—


জাতে নামাপরাধে তু প্রমাদে বৈ কথঞ্চন ।

সদা সঙ্কীর্ত্তয়েন্নাম তদেকশরণো ভবেৎ ॥১৩৬॥


নামাপরাধযুক্তানাং নামান্যেব হরন্ত্যঘম্ ।

অবিশ্রান্ত-প্রযুক্তানি তান্যেবার্থকরাণি হি’ ॥১৩৭॥

নামেতে শরণাপত্তি যেই ক্ষণে হয় ।

তখনই নামাপরাধের সদ্য হয় ক্ষয় ॥১৩৮॥

তথাপি প্রমাদে যদি উঠে অপরাধ ।

তাহাতেও ভক্তিতে হইয়া পড়ে বাধ ॥১৩৯॥

অপরাধ প্রমাদেতে হইবে যখন ।

নামসঙ্কীর্ত্তন তবে করিবে অনুক্ষণ ॥১৪০॥


নামেতে শরণাগতি সুদৃঢ় করিবে ।

অনুক্ষণ নামবলে অপরাধ যাবে ॥১৪১॥

নামই উপায়

নামেই নামাপরাধ হইবেক ক্ষয় ।

অপরাধ নাশিতে আর কারও শক্তি নয় ॥১৪২॥

এ বিষয়ে মূলতত্ত্ব বলি হে তোমায় ।

বুঝহ নারদ তুমি বেদে যাহা গায় ॥১৪৩॥

‘নামৈকং যস্য বাচি স্মরণপথগতং শ্রোত্রমূলং গতং বা

শুদ্ধং বাশুদ্ধবর্ণং ব্যবহিতরহিতং তারয়ত্যেব সত্যম্ ।

তচ্চেদ্দেহ‑দ্রবিণ‑জনতা‑লোভ‑পাষণ্ড‑মধ্যে

নিক্ষিপ্তং স্যান্নফলজনকং শীঘ্রমেবাত্র বিপ্র’ ॥১৪৪॥

যার মুখে উচ্চারিত এক কৃষ্ণনাম ।

যাহার স্মরণপথে এক নাম গুণধাম ॥১৪৫॥


যার শ্রোত্রমূলে তাহা প্রবেশ করিবে ।

ব্যবহিত-রহিত হৈলে তখনই তারিবে ॥১৪৬॥

‘ব্যবহিত’ এই শব্দে দুই অর্থ হয় ।

অক্ষরের ব্যবধানে নাম আচ্ছাদয় ॥১৪৭॥


অবিদ্যার আচ্ছাদনে প্রাকৃত প্রকাশ ।

নাম নামী একভাবে অবিদ্যা-বিনাশ ॥১৪৮॥

ব্যবহিত-রহিত হৈলে শুদ্ধনামোদয় ।

বর্ণশুদ্ধাশুদ্ধিক্রমে দোষ নাহি হয় ॥১৪৯॥

অপ্রাকৃত নামে কৃষ্ণ সর্ব্বশক্তি দিল ।

কালাকাল শৌচাশৌচ নামে না রহিল ॥১৫০॥

সর্ব্বকাল সর্ব্বাবস্থায় শুদ্ধ নাম কর ।

সর্ব্ব শুভোদয় হবে সর্ব্বাশুভ হর ॥১৫১॥

অসৎসঙ্গ ত্যাগপূর্ব্বক নামগ্রহণ

এমত অপূর্ব্ব-নাম সঙ্গযুক্ত যথা ।

শীঘ্র শুভফলদাতা না হয় সর্ব্বথা ॥১৫২॥

দেহ, ধন, জন, লোভ, পাষণ্ডসঙ্গ ক্রমে ।

ব্যবহিত জন্মে, জীব পড়ে মহাভ্রমে ॥১৫৩॥

অতএব সকলের অগ্রে সঙ্গ ত্যজি’ ।

অনন্যশরণ লঞা নামমাত্র ভজি ॥১৫৪॥

নামকৃপাবলে হবে প্রমাদ রহিত ।

অপরাধ দূরে যাবে, হইবেক হিত ॥১৫৫॥

অপরাধমুক্ত হঞা লয় কৃষ্ণনাম ।

প্রেম আসি’ নামসহ করিবে বিশ্রাম ॥১৫৬॥

অপরাধীর নামলক্ষণ কৈতব নিশ্চয় ।

সে সঙ্গ যতনে ছাড়ি’ কর নামাশ্রয় ॥১৫৭॥

‘ইদং রহস্যং পরমং পুরা নারদ শঙ্করাৎ ।

শ্রুতং সর্ব্বাশুভহরমপরাধনিবারকম্ ॥১৫৮॥


বিদুর্বিষ্ণ্বাভিধানং যে হ্যপরাধপরা নরাঃ ।

তেষামপি ভবেন্মুক্তিঃ পঠনাদেব নারদ’ ॥১৫৯॥

সনৎকুমার বলে, ‘ওহে দেবর্ষিপ্রবর ।

পূর্ব্বে শ্রীশঙ্কর মোরে হঞা দয়াপর ॥১৬০॥


শ্রীনামরহস্য সর্ব্ব-অশুভ নাশন ।

অপরাধ-নিবারক কৈল বিজ্ঞাপন ॥১৬১॥

অপরাধপর জন বিষ্ণুনাম জানি’ ।

পাঠ করিলেই মুক্তি লভে ইহা মানি’ ॥১৬২॥

নামরহস্যপটল প্রচার

ওহে স্বরূপ রামরায় এ নামরহস্য- ।

পটল যতনে প্রচার করিবে অবশ্য ॥১৬৩॥

কলিতে জীবের নাহি অন্য প্রতিকার ।

নামরহস্যেতে পার হইবে সংসার ॥১৬৪॥

পূর্ব্বে মুঞি ‘শিক্ষাষ্টকে’ যে তত্ত্ব কহিল ।

এবে ব্যাসবাক্যে তাহা পুনঃ দেখাইল ॥১৬৫॥

যতনে রহস্যপটল প্রচারিবে সবে ।

সর্ব্বক্ষণ আলোচিয়া নাম লবে তবে ॥১৬৬॥

নামাচার্য্য ঠাকুর হরিদাসের আনুগত্যে শ্রীনামভজন

পৃথিবীর শিরোমণি ছিল হরিদাস ।

এই নামরহস্য সব করিল প্রকাশ ॥১৬৭॥

প্রচারিল আচরিল এই নামধর্ম্ম ।

নামের আচার্য্য হরিদাস, জান মর্ম্ম ॥১৬৮॥

হরিদাসের অনুগত হইয়া শ্রীনাম ।

ভজিবে যে জন সেই নিত্যসিদ্ধকাম” ॥১৬৯॥

 


 

← ১৮। শ্রীএকাদশী ২০। নাম-মহিমা →

 

সূচীপত্র:
১। মঙ্গলাচরণ
২। গ্রন্থরচনা
৩। প্রথম প্রণাম
৪। গৌরস্য গুরুতা
৫। বিবর্ত্তবিলাসসেবা
৬। জীব-গতি
৭। সকলের পক্ষে নাম
৮। কুটীনাটি ছাড়
৯। যুক্তবৈরাগ্য
১০। জাতিকুল
১১। নবদ্বীপ-দীপক
১২। বৈষ্ণব-মহিমা
১৩। শ্রীগৌরদর্শনের ব্যাকুলতা
১৪। বিপরীত বিবর্ত্ত
১৫। শ্রীনবদ্বীপে পূর্ব্বাহ্ণ-লীলা
১৬। পীরিতি কিরূপ ?
১৭। ভক্তভেদে আচারভেদ
১৮। শ্রীএকাদশী
১৯। নামরহস্যপটল
২০। নাম-মহিমা
বৃক্ষসম ক্ষমাগুণ করবি সাধন । প্রতিহিংসা ত্যজি আন্যে করবি পালন ॥ জীবন-নির্ব্বাহে আনে উদ্বেগ না দিবে । পর-উপকারে নিজ-সুখ পাসরিবে ॥