| |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
|
|||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
শ্রীনবদ্বীপধাম মাহাত্ম্য-মুক্তা-মালা —: শ্রীনবদ্বীপ-ধাম-পরিক্রমায় আহ্বান :— (শ্রীল ভক্তিসুন্দর গোবিন্দ দেবগোস্বামী মহারাজ বিরচিত)
শ্রীগৌরধাম ও শ্রীভক্তিবিনোদ
গৌরজন শ্রীশ্রীল ঠাকুর ভক্তিবিনোদ গৌরনাম, গৌরধাম ও গৌরকাম প্রচারের জন্য জগতে অবতীর্ণ হইয়াছিলেন । তিনি গৌরধাম নবদ্বীপের সন্নিকটবর্ত্তী প্রদেশেই আবির্ভূত হন । এই জন্যই ক্ষেত্রপাল তারকেশ্বর এক সময় ঠাকুরকে স্বপ্নে বলিয়াছিলেন,—“তুমি বৃন্দাবনে যাইবে ? তোমার গৃহের নিকটবর্ত্তী শ্রীনবদ্বীপধামে যে কার্য্য আছে, তাহার কি করিলে ?” গৌরধামে ঠাকুরের যে প্রীতি, তাহা অনন্তদেবও অনন্ত-মুখে কীর্ত্তন করিয়া শেষ করিতে পারেন না । ঠাকুর ভক্তিবিনোদ যখন শ্রীধাম-মায়াপুরে যাইতেন, তখন অনেক সময়ই বলিতেন যে, ধামের বৃক্ষ, তৃণ, গুল্ম, লতা, প্রত্যেক রেণু-পরমাণু-দর্শনে তাঁহার হৃদয়ে এক অভূতপূর্ব্ব আনন্দ ও পুলকের সঞ্চার হয় । ঠাকুর গৌরধামে ব্রজধাম দর্শন করিতেন । ঠাকুর ভক্তিবিনোদ নবদ্বীপের নয় দ্বীপে নবধা ভক্তির অধিনায়ক শ্রীগৌরসুন্দরের অষ্টকালীয় লীলারস আস্বদন করিতেন । ঠাকুর তাঁহার ভজনরহস্যে শ্রীগৌরসুন্দরের শিক্ষাষ্টকের দ্বারা যে ব্রজনবযুবদ্বন্দ্বের অষ্টকালীয়-লীলা শ্রবণ, কীর্ত্তন ও স্মরণের বিচার প্রদর্শন করিয়াছেন, ‘শ্রীনবদ্বীপ-ভাবতরঙ্গে’, ‘শ্রীনবদ্বীপধাম-মাহাত্ম্যে’, ‘শ্রীনবদ্বীপশতকে’ তিনি গৌরবনে সেই ব্রজবনের অষ্টকালীয় লীলার অনুশীলনের পরিচয় প্রদান করিয়াছেন । ইহা অতীব গূঢ় রহস্য—কাহারও নিকট বলিবার নহে ; বলিবার মত মর্ম্মিলোকও অতি কম, আবার অনেকে ইহা বিশ্বাসও করিবেন না, বা বুঝিবেন না । ঠাকুর কীর্ত্তনাখ্যদ্বীপ শ্রীগোদ্রুমে শ্রীগৌরহরির পূর্ব্বাহ্ন-লীলা দর্শন করিতেন । গোদ্রুমকে ‘শ্রীনন্দীশ্বরধাম’, ‘গোপাবাস’ বা ‘গোষ্ঠ’ বিচার করিতেন । তাই ঠাকুর নবদ্বীপ-ভাবতরঙ্গে (৪৩।৪৪) গাহিয়াছেন,—
“ভজরে ভজরে মন গোদ্রুম কানন । শ্রীল ঠাকুর ভক্তিবিনোদ কখনও অন্তর্দ্বীপ শ্রীমায়াপুরে শ্রীগোকুলমহাবন ও তথায় শ্রীবৃন্দাবনরাসমণ্ডল দর্শন করিতেন । শ্রীরাসমণ্ডলে নিশান্তলীলার ইঙ্গিত পাওয়া যায়,—
“মায়াপুর হয় শ্রীগোকুল মহাবন । —শ্রীনবদ্বীপ-ধাম-মাহাত্ম্য—অন্তর্দ্বীপ শ্রীল ঠাকুর মধ্যদ্বীপে মধ্যাহ্ণলীলা দর্শন করিতেন—
“শ্রীগৌরাঙ্গ গণসহ মধ্যাহ্ণ সময়ে । —নবদ্বীপভাবতরঙ্গ—৫৭ ঠাকুর শ্রীভক্তিবিনোদ শ্রীসীমন্ত দ্বীপের রক্ষাকর্ত্রী শ্রীগৌর-পাদপদ্মপরাগবিভূষণা শ্রীসীমন্তিনী দেবীকে মূল স্বরূপে যোগমায়া পৌর্ণমাসীরূপে দর্শন করিয়াছেন । শ্রীগৌরসুন্দর পার্ব্বতীদেবীকে বলিতেছেন,—
তুমি মোর ভিন্ন নও শক্তি সর্ব্বেশ্বরী । —শ্রীনবদ্বীপ-ধাম-মাহাত্ম্য—৬ষ্ঠ অঃ ঠাকুর ভক্তিবিনোদ শ্রীধামের রক্ষক বৃদ্ধ শিবকে শ্রীমায়াপুরের ‘ক্ষেত্রপাল’ বলিয়া বর্ণন করিয়াছেন । মহাপ্রভু যখন অপ্রকটলীলা বিস্তার করিবেন এবং গঙ্গাদেবী যখন শ্রীমায়াপুরের কোন কোন অংশ প্রায় আচ্ছাদন করিয়া ফেলিবে, তখন কেবল গৌরজন্মস্থানটী ও তন্নিকটবর্ত্তী কোন কোন ভূমিমাত্র বাকী থাকিবে । শ্রীগৌরসুন্দরের ইচ্ছায় যখন পুনরায় তাঁহার আবির্ভাব-স্থানে ভক্তগণ মন্দির প্রকাশ করিবেন, তখন প্রৌঢ়মায়া ও বৃদ্ধ শিব আসিয়া পুনরায় প্রভুর ইচ্ছায় নিজ কার্য্য সাধন করিবেন । ঠাকুর ভক্তিবিনোদ ভবিকালে গৌর-সেবা-বৈভব-বিস্তারের যে স্বপ্নসমাধি দর্শন করিয়াছেন, তাহা সত্য-সত্যই বাস্তবরূপে পরিণত হইয়াছে । ঠাকুর নবদ্বীপধাম-মাহাত্ম্যে লিখিয়াছেন,—
“অদ্ভূত মন্দির এক হইবে প্রকাশ । —নবদ্বীপধাম মহাতম্য ৫ম অঃ ঠাকুর পরবর্ত্তিকালে লক্ষ্মণ সেন কর্তৃক খণিত বল্লাল দীর্ঘিকাকে ‘বৈষ্ণব মহারাজ পৃথুর কুণ্ড’ বা ‘পৃথুকুণ্ড’ বলিয়া বর্ণন করিয়াছেন । ঠাকুর ভক্তিবিনোদ শরডাঙ্গাকে “শ্রীপুরুষোত্তম-ধাম” বলিয়াছেন । বিদ্যাবাচষ্পতির স্থানকে দ্বারকারূপে দর্শন করিয়া স্বরূপ-রূপানুগবর গৌরজন ঠাকুর ভক্তিবিনোদ—’যঃ কৌমারহরঃ’ ও তদনুরূপ শ্রীরূপের ‘প্রয়ঃ সোঽয়ং’ শ্লোকের বিচারানুসারে গৌরহরিকে পৃথুকুণ্ডতীরে বৃন্দাবনাভিন্ন শ্রীবাসমন্দিরে লইয়া যাইতে চাহিয়াছেন । শ্রীনবদ্বীপ-ভাবতরঙ্গে কোলদ্বীপকে বহুলাবনরূপে বর্ণন দেখিতে পাওয়া যায় ; লসবার শ্রীনবদ্বীপ-ধাম-মাহাত্মযে কুলিয়া পাহাড়কে ‘গিরি-গোবর্দ্ধন’ রূপে বর্ণিত দেখা যায়, যথা—
“ধন্য জীব কোলদ্বীপ করে দরশন । —শ্রীনবদ্বীপ-ভাবতরঙ্গ—৭৪ আবার শ্রীনবদ্বীপধাম-মাহাত্ম্যে (১৮শ অঃ)—
“কোলদ্বীপ পর্ব্বতাখ্য এইস্থান হয় । ঠাকুর ভক্তিবিনোদ নবদ্বীণধাম-মাহাত্ম্যে (১১শ অঃ) কোলদ্বীপের উত্তরে বহুলাবন দর্শন করিয়াছেন এবং শ্রীনবদ্বীপ-ধামে শ্রীবৃন্দাবন-ধামের দ্বাদশ বনের ক্রমবিপর্য্যয়ের মধ্যে যে অপূর্ব্ব সমন্বয় ও মাধুর্য্য আছে, তাহা বর্ণন করিয়াছেন,—
“শ্রীবহুলবান দেখ ইহার উত্তরে । শ্রীনবদ্বীপ-ধাম-মাহাত্ম্যে সমুদ্রগড় দ্বারকাপুরী-রূপে বর্ণিত হইয়াছে—
“এই যে সমুদ্রগড়ি কর দরশন । —নঃ ধঃ মঃ ঐ ঠাকুর ভক্তিবিনোদ ঋতুদ্বীপের অন্তর্গত চম্পহট্টকে খদিরবন বা রাধাকুণ্ড-প্রদেশের একদেশ বলিয়া বর্ণন করিয়াছেন,—
“এই স্থানে ছিল পূর্ব্বে চম্পক-কানন । —নঃ ধঃ মঃ ১১শ অঃ আবার নবদ্বীপভাবতরঙ্গে বলিতেছেন,—
“চম্পকহট্ট গ্রামে আছে চম্পকের বন । —শ্রীনবদ্বীপভাবতরঙ্গ ৭৮-৭৯ নবদ্বীপধাম-মাহাতম্যে দ্বাদশ অধ্যায় ঋতুদ্বীপকে রাধাকুণ্ডরূপেও বর্ণিত হইয়াছে,—
গৌরাঙ্গের নাম শুনি, নিতাই উঠে অমনি, শ্রীনবদ্বীপভাবতরঙ্গে (৮০-৮১) ঠাকুর ভক্তিবিনোর ঋতুদ্বীপে রাধাকুণ্ড-স্ফুর্ত্তির কথা বর্ণন করিয়াছেন,—
“কবে আমি ঋতুদ্বীপে করিয়া ভ্রমণ । ঠাকুর ভক্তিবিনোদ জহ্ণুদ্বীপে ‘ভদ্রবন’ (নঃ ভাঃ তঃ ৯৬ ও নঃ ধাঃ ১৩শ অঃ), মোদদ্রুম-দ্বীপে ‘ভাণ্ডীর বন’ (নঃ ভাঃ তঃ ১১০), মোদদ্রুমের অন্তর্গত বৈকুণ্ঠপুরে ‘নিঃশ্রেয়স বন’ [কল্যাণ-কল্পতরু], (নঃ ভাঃ তঃ ১১৭) মহৎপুরে ‘কাম্যবন’ (নঃ ভাঃ তঃ ১২৪) দর্শন করিয়াছেন । ঠাকুর শ্রীল ভক্তিবিনোদ নবদ্বীপভাবতরঙ্গে নিদয়াকে ‘সাযুজ্য মুক্তি’স্বরূপা বলিয়া কীর্ত্তন করিয়াছেন । শ্রীগৌরসুন্দর সর্ব্বজীবকে নিস্তার করিলেন, এমন কি, সালোক্য, সামীপ্য, সারূপ্য, সার্ষ্টি মুক্তি পর্যন্ত বৈকুণ্ঠে চলিয়া গেল, কিন্তু একমাত্র নির্দ্দয় হইলেন সাযুজ্য-মুক্তির প্রতি । কারণ, ইহার প্রতি ভক্তগণ অত্যন্ত বিরূপ ।
“শ্রীগৌরাঙ্গ প্রভু সর্ব্বজনে নিস্তারিল । —নঃ ভাঃ তঃ ১৪০ শ্রীল ঠাকুর ভক্তিবিনোদ গৌরধাম নবদ্বীপকে নবধা ভক্তির পীঠ এবং কর্ম্মজ্ঞান যোগাদিকে সেই নবধা ভক্তির সেবা-প্রতীক্ষাকারী কিঙ্কররূপে বর্ণন করিয়াছেন । যাহারা বহির্ম্মুখ, তাহাদিগকে শাস্ত্র দুষ্টমতি প্রদান করিয়া থাকেন, এবং শিষ্টজনকে কৃষ্ণরতি দান করিয়া থাকেন । শাস্ত্র পড়িয়াও অনেকে গৌরধামের প্রতি বিশ্বাসী হইতে পারেন না ।
“এই নবদ্বীপ হয় সর্ব্বধাম সার । —নঃ ধাঃ মাঃ ১৩ষ অঃ ঠাকুর ভক্তিবিনোদ গৌরধাম ও ব্রজধামে কি লীলাবৈচিত্রা দর্শন করিতেন, তাহাও তাঁহার কৃপায় তাঁহার সাহিত্যের মধ্যে প্রকাশিত হইয়াছে । ঠাকুর লিখিয়াছেন,—“নবদ্বীপমণ্ডল, ব্রজমণ্ডল এবং গোলোক—একই অখণ্ড তত্ত্ব ; কেবল প্রেমবৈচিত্রাগত অনন্ত ভাব-বিশেষ উদিত হইয়া বিবিধ হইয়াছেন ।” (ব্রঃ সং ৫।৫) শ্রীনবদ্বীপধাম মাহাত্ম্যে গোলোকের মাধুর্য্য ও ঔদার্য্য প্রকোষ্ঠরূপব্রজ এবং নবদ্বীপধামের স্বরূপ এইরূপভাবে বর্ণিত হইয়াছে—
“এই নবদ্বীপ হয় সর্ব্বধাম সার । —নঃ ধাঃ মাঃ ১৩ষ অঃ জৈবধর্ম্মে ঠাকুর বলিয়াছেন,—“’গোলোক’, ‘বৃন্দাবন’ ও ‘শ্বেতদ্বীপ’—এই তিনটি পরব্যোমের অন্তঃপুর । গোলোকে কৃষ্ণের স্বকীয় (স্বীয় স্বরূপশক্তিসহ) লীলা, বৃন্দাবনে পারকীয় লীলা, শ্বেতদ্বীপ সেই লীলার পরিশিষ্ট । গোলোক, বৃন্দাবন, শ্বেতদ্বীপে তত্ত্বভেদ নাই—শ্রীনবদ্বীপ বস্তুতঃ শ্বেতদ্বীপ হইয়াও বৃন্দাবন হইতে অভেদ ।” শ্রীগৌরধাম দর্শন করিবার চক্ষু কিরূপে লাভ করিতে হয়, তাহাও নদীয়াপ্রকাশ ঠাকুর ভক্তিবিনোদ আমাদিগকে জানাইয়াছেন । গৌরধামের কৃপা লাভ করিতে হইলে সর্ব্বাগ্রে শ্রীল ঠাকুর ভক্তিবিনোদের কৃপা লাভ করিতে হইবে । গৌরধামে নিত্য-বসতির সৌভাগ্য লাভ করিতে চাহিলে শ্রীভক্তিবিনোদের পাদপদ্মধামের সংলগ্ন রেণু হইতে হইবে । দেহে আত্মবুদ্ধি থাকিতে, মাংসদর্শন থাকিতে, ধামাত্মবুদ্ধি বা ধাম দর্শন হয় না । নাম-দৃক্ই ধামের স্বরূপ দর্শন করিতে পারেন । এই কথাই ঠাকুর পুনঃ পুনঃ কীর্ত্তন করিয়াছেন—
“যতদিন না ছাড়িবে প্রভুর ইচ্ছায় । —নঃ ভাঃ তঃ ১০৫-১০৬ গৌরধামে কি ভাবে হরিভজন হয়, তাহা ঠাকুর ভক্তিবিনোদ শ্রীনবদ্বীপভাবতরঙ্গের ১০০-১০৮ সংখ্যক পদ্যাবলীতে আমাদিগকে জানাইয়াছেন । তাহার সারমর্ম্ম এই—সকল আশা-ভরসা পরিত্যাগ করিয়া একমাত্র গৌরধামে অবস্থানপূর্ব্বক গৌরহরির ভজনই বিষয়-বন্ধন হইতে মুক্তিলাভের এবং শ্রীগৌরচরণ-প্রাপ্তির উপায় । মহাপ্রভুর কৃপা হইলে এই গৌরধামে মুক্তজন সর্ব্বক্ষণ কৃষ্ণলীলা ও গৌরলীলা দর্শন করিতে পারেন । শুদ্ধভক্তগণ এই ধামে কৃষ্ণকৈঙ্কর্য্য-মাধুর্য্যে সর্ব্বদা মগ্ন থাকিয়া জাগতিক অভাব, পীড়া ও সংসার যাতনায় ক্লিষ্ট হন না ; তাঁহারা সিদ্ধকাম ও শুদ্ধদেহ । গৌরধাম অনন্ত ; তথায় জড় মায়া নাই । যে পর্যন্ত জীবের মায়িক শরীর আছে, সে পর্যন্ত অতিশয় সতর্কতা অবলম্বন করিয়া সহিষ্ণুতা ও ধৈর্য্যের সহিত শুদ্ধভক্তের সেবা বিষয়ে শৈথিল্যভাব ছাড়িয়া, সর্ব্বক্ষণ কৃষ্ণনাম, যুগল ভজন, শ্রীধাম, শ্রীনাম ও ভক্তকৃপা-যাচ্ঞা, অসাধু-সংসর্গ হইতে সর্ব্বদা সাবধান হইয়া ভজন করিলে শ্রীধামের কৃপা লাভ হয় । ঠাকুর ভক্তিবিনোদ শ্রীগৌরধামের কথা বর্ণন করিতে করিতে তাঁহার প্রিয়তম শ্রীরাধা কুণ্ডাভিন্ন গোদ্রুম-দ্বীপ, স্বানন্দ-সুখদ-কুঞ্জ, স্বানন্দকুঞ্জেশ্বরী এবং অভীষ্ট স্বারসিকী সেবাস্থিতি ও কৈঙ্কর্য্যের কথা বর্ণন করিয়া নিজস্বরূপ প্রকাশ করিয়াছেন । ঈশাক্ষেত্রে অবস্থানপূর্ব্বক ঈশানাথের সেবাই—ঠাকুরের সাধ্য ও সাধন । শ্রীল ঠাকুর মায়াপুরের দক্ষিণাংশে জাহ্ণরীর তটে সরস্বতী-সঙ্গমের সন্নিকটে ঈশোদ্যান নামক এক উপবনের কথা তাঁহার শ্রীধাম-গ্রন্থাবলীতে জানাইয়াছেন । সেই বনে ঠাকুরের রাধাকুণ্ডের মধ্যাহ্ণলীলা-স্মৃতির এইরূপ পরিচয় পাওয়া যায়—
“মায়াপুর-দক্ষিণাংশে জাহ্ণবীর তটে । —শ্রীনবদ্বীপভাবতরঙ্গ ২৬-২৭ শ্রীগোদ্রুমবনেও ঠাকুরের শ্রীরাধাকুণ্ড-স্মৃতি উদ্দীপ্ত হইত । তাঁহার নিত্যলীলাপ্রবেশের কালে তাঁহাতে সেই স্বারসিকী-সিদ্ধি সাক্ষাদ্ভাবে প্রকটিত হইয়াছিল—ইহা মহাজন-বাক্যে শুনিয়াছি, ইহা এক অলৌকিক ব্যাপার । ইহা হইতে স্পষ্টই প্রমাণিত হয় য়ে, গৌরধামের সর্ব্ববিধ বৈভবের বিস্তারের জন্যই শ্রীধামেশ্বর গৌরহরি ঠাকুরকে জগতে প্রেরণ করিয়াছিলেন । ঠাকুরের রাধাকুণ্ডাভিন্ন শ্রীগোদ্রুমে এইরূপ লালসার পরিচয় পাওয়া যায়,—
“সেই শ্রীগোদ্রুমবন অদ্ভূত ব্যাপার । (শ্রীনবদ্বীপপশতক—৪২-৪৩) গৌরাঙ্গৈকগতি নদীয়াপ্রকাশ ঠাকুর ভক্তিবিনোদ কিরূপ লৌল্যের সহিত তাঁহার জীবনসর্ব্বস্ব গৌরধামের নিকট কৃপা প্রার্থনা করিয়াছেন, গৌরধামের কৃপা কি, গৌরধামে বাসের প্রয়োজন কি, গৌরধামবাসীর দৈন্য কিরূপ কাহার কৃপায় গৌরধামে বসতি হয়, তাহা তাঁহারই ভাষায় নিম্নে উদ্ধার করিয়া তাঁহার দাসানুদাসগণের কৃপাকণা যাচ্ঞাপূর্ব্বক এই প্রবন্ধের উপসংহার করিতেছি ।
“ঈশোদ্যান সন্নিকটে নিজকুঞ্জে বসি । —নঃ ভাঃ তঃ ১৬৩-১৬৭
|
অনন্তশ্রীবিভূষিত ওঁ বিষ্ণুপাদ পরমহংসকুলচূড়ামণি বিশ্ববরেণ্য জগদ্গুরু শ্রীশ্রীমদ্ভক্তিনির্ম্মল আচার্য্য মহারাজের পদ্মমুখের হরিকথামৃত এইগ্রন্থশিরোমণি শ্রীগুরুপাদপদ্ম ওঁ বিষ্ণুপাদ শ্রীল ভক্তিনির্ম্মল আচার্য্য মহারাজের ইচ্ছা পূর্ণ করবার জন্য এবং তাঁর শ্রীচরণের তৃপ্তির জন্য তাঁর অহৈতুক কৃপায় শ্রীচৈতন্য-সারস্বত মঠ হইতে প্রকাশিত হয় শ্রীমন্ মহাপ্রভুর শুভার্বিভাব তিথিতে শ্রীগৌরাব্দ ৫৩৪, বঙ্গাব্দ ১৪২৬, খৃষ্টাব্দ মার্চ্চ ২০২০ । সূচীপত্র:
শ্রীনবদ্বীপধাম মাহাত্ম্য
শ্রীনবদ্বীপধাম মাহাত্ম্য-মুক্তা-মালা |
||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
বৃক্ষসম ক্ষমাগুণ করবি সাধন । প্রতিহিংসা ত্যজি আন্যে করবি পালন ॥ জীবন-নির্ব্বাহে আনে উদ্বেগ না দিবে । পর-উপকারে নিজ-সুখ পাসরিবে ॥ | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
© Sri Chaitanya Saraswat Math, Nabadwip, West Bengal, India. For any enquiries please visit our contact page. |