শ্রীনবদ্বীপধাম মাহাত্ম্য-মুক্তা-মালা
—: শ্রীনবদ্বীপধাম মাহাত্ম্য :—
দ্বিতীয় অধ্যায় : শ্রীশ্রীগৌড়মণ্ডল ও শ্রীশ্রীনবদ্বীপধামের বাহ্যস্বরূপ ও
পরিমাণ
(শ্রীশ্রীল সচ্চিদানন্দ ভক্তিবিনোদ ঠাকুর রচিত)
জয় জয় নবদ্বীপচন্দ্র শচীসুত ।
জয় জয় নিত্যানন্দরায় অবধূত ॥
জয় জয় নবদ্বীপ সর্ব্বধাম সার ।
সে ধামের তত্ত্ব বর্ণে সাধ্য আছে কার ॥
নবদ্বীপধাম গৌড়মণ্ডল ভিতরে ।
জাহ্ণবী সেবিত হয়ে সদা শোভা করে ॥
এ গৌড়মণ্ডল একবিংশতি যোজন ।
মধ্য ভাগে গঙ্গাদেবী রহে অনুক্ষণ ॥
শতদলপদ্ম সম মণ্ডল আকার ।
মধ্যভাগে নবদ্বীপ অতিশোভা তার ॥
পঞ্চ ক্রোশ হয় তার কেশব আধার ।
পরিমল পূর্ণ পুষ্প যোজন চত্বার ॥
বাহির পাপড়ি তার শতদল হয় ।
একাধিক যোজন বিংশতি বিস্তারয় ॥
মণ্ডল পরিধি হয় সেই পরিমাণ ।
যোজন সপ্তক ব্যাস শাস্ত্রের বিধান ॥
ব্যাসার্দ্ধ প্রমাণ সার্দ্ধ তৃতীয় যোজন ।
মধ্যবিন্দু হৈতে তার হইবে গণন ॥
মধ্যবিন্দু নবদ্বীপধাম মধ্যস্থল ।
যোগপীঠ হয় তাহা চিন্ময় বিমল ॥
চিন্তামণিরূপ হয় এই গৌড় মণ্ডল ।
চিদানন্দময়ধাম চিন্ময় সকল ॥
জল ভূমি বৃক্ষ আদি সকলি চিন্ময় ।
সদা বিদ্যমান তথা কৃষ্ণশক্তিত্রয় ॥
স্বরূপশক্তির সেই সন্ধিনী প্রভাব ।
তার পরিণতি এই ধামের স্বভাব ॥
প্রভু লীলা পীঠ রূপে ধাম নিত্য হয় ।
অচিন্ত্য শক্তির কার্য্য প্রাপঞ্চিক নয় ॥
তবে যে এই ধামে দেখে প্রপঞ্চের সম ।
বদ্ধ জীবে তাহে হয় অবিদ্যা বিভ্রম ॥
মেঘাচ্ছন্ন চক্ষু দেখে সূর্য্য আচ্ছাদিত ।
দিবাকর নাহি কভু হয় মেঘাবৃত ॥
সেইরূপ এ গৌড়মণ্ডল চিদাকার ।
প্রাপঞ্চিক জন দেখে জড়ের বিকার ॥
নিত্যানন্দ কৃপা যার প্রতি কভু হয় ।
সে দেখে আনন্দধাম সর্ব্বত্র চিন্ময় ॥
গঙ্গা যমুনাদি তথা সদা বিদ্যমান ।
সপ্তপুরী প্রয়াগাদি আছে স্থানেস্থান ॥
সাক্ষাৎ বৈকুণ্ঠ তত্ত্ব এ গৌড়মণ্ডল ।
ভাগ্যবান জীব তাহা দেখে নিরমল ॥
স্বরূপশক্তির ছায়া মায়া বলি যারে ।
প্রভুর আজ্ঞায় নিজ প্রভাব বিস্তারে ॥
বহির্ম্মুখ জীব চক্ষু করে আবরণ ।
চিদ্ধাম প্রভাব সবে না পায় দর্শন ॥
এ গৌড়মণ্ডল যার বাস নিরন্তর ।
বড় ভাগ্যবান সেই সংসার ভিতর ॥
দেবগণে স্বর্গে থাকি দেখে সেই জনে ।
চতুর্ভুজ শ্যামকান্তি অপূর্ব্ব গঠনে ॥
ষোলক্রোশ নবদ্বীপধামবাসী যত ।
গৌরকান্তি সদা নামসংকীর্ত্তনে রত ॥
ব্রহ্মা আদি দেবগণে অন্তরীক্ষ হৈতে ।
নবদ্বীপবাসীগণে পূজে নানামতে ॥
ব্রহ্মা বলে কবে মোর হেন ভাগ্য হবে ।
নবদ্বীপে তৃণ কলেবর পাব যবে ॥
শ্রীগৌর চরণসেবা করে যত জন ।
তা সবার পদরেণু লভিব তখন ॥
হায় মোরে গৌরচন্দ্র বঞ্চনা করিয়া ।
ব্রহ্মাণ্ডের অধিপতি রাখিল করিয়া ॥
কবে মোর কর্ম্মগ্রন্থি হইবে ছেদন ।
অভিমান ত্যজি মোর শুদ্ধ হবে মন ॥
অধিকার বুদ্ধি মোর কবে হবে ক্ষয় ।
শুদ্ধদাস হয়ে পাব গৌর পদাশ্রয় ॥
দেবগণ ঋষিগণ রুদ্রগণ যত ।
স্থানেস্থানে নবদ্বীপে বৈসে অবিরত ॥
চিরকাল তপ করি জীবন কাটায় ।
তবু নিত্যানন্দ কৃপা সে সবে না পায় ॥
দেববুদ্ধি যত দিন নাহি যায় দূরে ।
যত দিন দৈন্য ভাব মনে নাহি স্ফূরে ॥
তত দিন শ্রীগৌর নিতাই কৃপা ধন ।
ব্রহ্মা শিব নাহি পায় করিয়া যতন ॥
এই সব কথা আগে হইবে প্রকাশ ।
যত্ন করি শুন ভাই করিয়া বিশ্বাস ॥
এ সব বিষয়ে ভাই তর্ক পরিহর ।
তর্ক সে অপার্থ অতি অমঙ্গলকর ॥
শ্রীচৈতন্যলীলা হয় গভীর সাগর ।
মোচাখোলা রূপ তর্ক তথায় ফাঁপর ॥
তর্ক করি এ সংসার তরিতে যে চায় ।
বিফল তাহার চেষ্টা কিছুই না পায় ॥
তর্কে জলাঞ্জলি দিয়া সাধু শাস্ত্র ধরে ।
অচিরে চৈতন্য লাভ সেই জন করে ॥
শ্রুতি স্মৃতি তন্ত্র শাস্ত্র অবিরত গায় ।
নদীয়া-মাহাত্ম্য নিত্যানন্দের আজ্ঞায় ॥
সেই সব শাস্ত্র পড় সাধু বাক্য মান ।
তবেত হইবে তব নবদ্বীপ জ্ঞান ॥
কলিকালে তীর্থ সব অত্যন্ত দুর্ব্বল ।
নবদ্বীপ তীর্থ মাত্র পরম প্রবল ॥
প্রভুর ইচ্ছায় সেই তীর্থ বহু দিন ।
অপ্রকট মহিমা আছিল স্ফুর্ত্তিহীন ॥
কলির প্রভাব যবে অত্যন্ত বাড়িল ।
অন্য তীর্থ স্বভাবত নিস্তেজ হইল ॥
জীবের মঙ্গল লাগি পুরুষপ্রধান ।
মনে মনে চিন্তা করি করিল বিধান ॥
পীড়া বুঝি বৈদ্যরাজ ঔষধ খাওয়ায় ।
কঠিন ঔষধ দেয় কঠিন পীড়ায় ॥
এবে কলি ঘোর হৈল রোগ হইল ভারি ।
কঠিন ঔষধ বিনা নিবারিতে নারি ॥
অতিশয় গোপনে রাখিনু যেই ধাম ।
অতিশয় গোপনে রাখিনু যেই নাম ॥
অতিশয় গোপনে রাখিনু যেই রূপ ।
প্রকাশ না কৈলে জীব তরিবে কিরূপ ॥
জীবত আমার দাস আমি তার প্রভু ।
আমি না তারিলে সেই না তরিবে কভু ॥
এই বলি শ্রীচৈতন্য হইল প্রকাশ ।
নিজ নাম নিজ ধাম লয়ে নিজ দাস ॥
প্রভুর প্রতিজ্ঞা এই হয় সর্ব্বকাল ।
তারিব সকল জীব ঘুচাব জজ্ঞাল ॥
ব্রহ্মার দুর্ল্লভ ধন বিলাব সংসারে ।
পাত্রাপাত্র না বাছিব এই অবতারে ॥
দেখিব কিরূপে কলি জীবে করে নাশ ।
নবদ্বীপধাম আমি করিব প্রকাশ ॥
সেই ধামে কলির ভাঙ্গিব বিষদাঁত ।
কীর্ত্তন করিয়া জীবে করি আত্মসাথ ॥
যত দূর মম নাম হইবে কীর্ত্তন ।
তত দূর হইবেত কলির দমন ॥
এই বলি গৌর হরি কলির সন্ধ্যায় ।
প্রকাশিল নবদ্বীপ স্বকীয় মায়ায় ॥
ছায়া সম্বরিয়া নিত্য স্বরূপ বিলাস ।
গৌরচন্দ্র গৌড়ভূমে করিল প্রকাশ ॥
এমন দয়ালু প্রভু যে জন না ভজে ।
এমন অচিন্ত্য ধাম যেই জন ত্যজে ॥
এই কলিকালে তার সম ভাগ্যহীন ।
না দেখি জগতে আর শোচনীয় দীন ॥
অতএব ছাড়ি ভাই অন্য বাঞ্ছা রতি ।
নবদ্বীপ ধামে মাত্র হও একমতি ॥
জাহ্ণবী নিতাই পদ ছায়া যার আশ ।
সে ভক্তিবিনোদ করে এতত্ত্ব প্রকাশ ॥
|
|
![](../../../../photo/2020/SriNabadwipDham.jpg)
শ্রীনবদ্বীপধাম
মাহাত্ম্য-মুক্তা-মালা
অনন্তশ্রীবিভূষিত ওঁ বিষ্ণুপাদ
পরমহংসকুলচূড়ামণি বিশ্ববরেণ্য জগদ্গুরু
শ্রীশ্রীমদ্ভক্তিনির্ম্মল আচার্য্য মহারাজের
পদ্মমুখের হরিকথামৃত
এইগ্রন্থশিরোমণি শ্রীগুরুপাদপদ্ম ওঁ বিষ্ণুপাদ শ্রীল ভক্তিনির্ম্মল আচার্য্য
মহারাজের ইচ্ছা পূর্ণ করবার জন্য এবং তাঁর শ্রীচরণের তৃপ্তির জন্য তাঁর অহৈতুক
কৃপায় শ্রীচৈতন্য-সারস্বত মঠ হইতে প্রকাশিত হয় শ্রীমন্ মহাপ্রভুর শুভার্বিভাব
তিথিতে শ্রীগৌরাব্দ ৫৩৪, বঙ্গাব্দ ১৪২৬, খৃষ্টাব্দ মার্চ্চ ২০২০ ।
সূচীপত্র:
শ্রীগৌরধাম ও
শ্রীভক্তিবিনোদ
শ্রীনবদ্বীপধাম মাহাত্ম্য
(১) শ্রীশ্রীনবদ্বীপধামের সাধারণ
মাহাত্ম্য কথন
(২) শ্রীশ্রীগৌড়মণ্ডল ও শ্রীশ্রীনবদ্বীপধামের বাহ্যস্বরূপ ও পরিমাণ
(৩) শ্রীশ্রীনবদ্বীপধাম
পরিক্রমার সাধারণ বিধি
(৪) শ্রীজীবের আগমন ও শ্রীনিত্যানন্দ
প্রভু তাঁহাকে শ্রীনবদ্বীপতত্ত্ব বলেন
(৫) শ্রীমায়াপুর ও
শ্রীঅন্তর্দ্বীপের কথা
(৬) শ্রীগঙ্গানগর,
শ্রীপৃথুকুণ্ড, শ্রীসীমন্তদ্বীপ, শ্রীবিশ্রামস্থানাদি দর্শন
(৭) শ্রীসুবর্ণবিহার ও
শ্রীদেবপল্লী বর্ণন
(৮) শ্রীহরিহরক্ষেত্র,
শ্রীমহাবারাণসী ও শ্রীশ্রীগোদ্রুমদ্বীপ বর্ণন
(৯) শ্রীমধ্যদ্বীপ ও নৈমিষ
বর্ণন
(১০) শ্রীব্রাহ্মণপুষ্কর,
শ্রীউচ্চহট্টাদি দর্শন ও পরিক্রমা-ক্রম বর্ণন
(১১) শ্রীশ্রীকোলদ্বীপ,
শ্রীসমুদ্রগড়, শ্রীচম্পাহট্ট ও শ্রীজয়দেব-কথা বর্ণনা
(১২) শ্রীশ্রীঋতুদ্বীপ ও
শ্রীরাধাকুণ্ড বর্ণন
(১৩) শ্রীবিদ্যানগর ও
শ্রীজহ্ণুদ্বীপ বর্ণন
শ্রীনবদ্বীপধাম মাহাত্ম্য-মুক্তা-মালা
•
শ্রীল ভক্তিবিনোদ ঠাকুরের ভজনকুটির
(স্বানন্দ-সুখদা-কুঞ্জ)
•
শ্রীনৃসিংহপল্লী
•
শ্রীকোলদ্বীপ
|