শ্রীনবদ্বীপধাম মাহাত্ম্য-মুক্তা-মালা
—: শ্রীনবদ্বীপধাম মাহাত্ম্য :—
দশম অধ্যায়় : শ্রীব্রাহ্মণপুষ্কর, শ্রীউচ্চহট্টাদি দর্শন ও
পরিক্রমা-ক্রম বর্ণন
(শ্রীশ্রীল সচ্চিদানন্দ ভক্তিবিনোদ ঠাকুর রচিত)
জয় গৌর নিত্যানন্দ অদ্বৈত সহিত ।
জয় গদাধর জয় শ্রীবাসপণ্ডিত ॥
জয় নবদ্বীপ শুদ্ধ প্রেম ভক্তি ধাম ।
জয় জয় জয় গৌর নিত্যানন্দ নাম ॥
শুনহে কলির জীব ছাড়ি জ্ঞান কর্ম্ম ।
নিতাই চৈতন্য ভজ ত্যজি ধর্ম্মাধর্ম্ম ॥
দয়ার সমুদ্র সেই গৌর নিত্যানন্দ ।
অকাতরে দিবে ভাই সার ব্রজানন্দ ॥
যামিনী প্রভাত হৈলে নিত্যানন্দ রায় ।
জীবেরে লইয়া ধাম ভ্রমণেতে যায় ॥
বলে দেখ জীব এই গ্রাম মনোহর ।
এখন ব্রাহ্মণপুরা ডাকে সর্ব্বনর ॥
ব্রাহ্মণপুষ্কর নাম সর্ব্বশাস্ত্রে কয় ।
হেথা যে রহস্য তাহা অতি গুহ্য হয় ॥
সত্যযুগে দিবদাস নামেতে ব্রাহ্মণ ।
গৃহ ত্যজি করে সর্ব্বতীর্থ দরশন ॥
পুষ্করতীর্থেতে তার হৈল বড় প্রীত ।
তথাপি ভ্রমিতে নবদ্বীপে উপস্থিত ॥
এইস্থানে রাত্রযোগে দেখিল স্বপন ।
হেথা বাস কর বিপ্র পাবে নিত্যধন ॥
এই স্থানে কুটীর বাঁধিয়া দিবদাস ।
বৃদ্ধ কালাবধি তেঁহ করিলেন বাস ॥
বৃদ্ধকালে চলিতে অশক্ত দ্বিজবর ।
ইচ্ছা হৈল এবে আমি দেখিব পুষ্কর ॥
চলিতে না পারে দ্বিজ করয় ক্রন্দন ।
আর না পাইব আমি পুষ্কর দর্শন ॥
তখন পুষ্কররাজ সদয় হইল ।
দ্বিজরূপে দিবদাসে দরশন দিল ॥
দিবদাসে বলে বিপ্র না কর ক্রন্দন ।
তোমার সম্মুখে এই কুণ্ড সুশোভন ॥
এই কুণ্ডে স্নান তুমি কর একবার ।
প্রত্যক্ষ হইবে তীর্থ পুষ্কর তোমার ॥
তাহা শুনি কুণ্ডে স্নান করে দ্বিজবর ।
দিব্যচক্ষু লভি দেখে সম্মুখে পুষ্কর ॥
ক্রন্দন করিয়া দ্বিজ পুষ্করে বলিল ।
আমা লাগি বড় ক্লেশ তোমার হইল ॥
পুষ্কর বলেন শুন দ্বিজ ভাগ্যবান ।
দূর হৈতে না আসিনু হেথা বিদ্যমান ॥
এই নবদ্বীপধাম সর্ব্বতীর্থ ময় ।
নবদ্বীপে সেবি হেথা থাকে তীর্থ চয় ॥
আমার স্বরূপ এক পাশ্চাত্যে প্রকাশ ।
নিজে আমি এই স্থানে নিত্য করি বাস ॥
শতবার কেহ সেই তীর্থে করি স্নান ।
যেই ফল পায় হেথা সেফল বিধান ॥
অতএব নবদ্বীপ ছাড়ি যেই জন ।
অন্যতীর্থ আশা করে সে মূঢ় দুর্জ্জন ॥
সর্ব্বতীর্থ ভ্রমি যদি হয় ফলোদয় ।
নবদ্বীপ তবে তার বাস স্থান হয় ॥
ঐ দেখ উচ্চ স্থান হট্টের সমান ।
কুরুক্ষেত্র ব্রহ্মাবর্ত্ত তথা বিদ্যমান ॥
সরস্বতী দৃষদ্বতী দুই পার্শ্বে তার ।
অতি শোভা পায় পুণ্য করয়ে বিস্তার ॥
ওহে বিপ্র গূঢ় কথা বলিব তোমায় ।
অতি অল্প কালে হবে আনন্দ হেথায় ॥
মায়াপুরে শচী গৃহে গৌরাঙ্গ সুন্দর ।
প্রকট হইয়া প্রেম বিলাবে বিস্তর ॥
এইসব স্থানে প্রভু ভক্তবৃন্দ লয়ে ।
সঙ্কীর্ত্তন রসে নাচিবেন মত্ত হয়ে ॥
সর্ব্ব অবতারে ছিলা যে যে ভক্তগণ ।
সকলে লইয়া প্রভু করিবে কীর্ত্তন ॥
প্রেম-বন্যা জলে সর্ব্ব জগত ভাসাবে ।
কুতার্কিক বিনা সবে মহাপ্রেম পাবে ॥
এই ধামনিষ্ঠা করি যেবা করে বাস ।
তারে মিলে গৌরপদ ওহে দিবদাস ॥
কোটি কোটি বর্ষ করি শ্রীকৃষ্ণ ভজন ।
তথাপি নামেতে রতি না পায় দুর্জ্জন ॥
গৌরাঙ্গ ভজিলে দুষ্টভাব দূর যায় ।
অল্প দিনে ব্রজধামে রাধা-কৃষ্ণ পায় ॥
নিজ সিদ্ধদেহ পায় সখীর আশ্রয় ।
নিজকুঞ্জ শ্রীযুগলসেবা তার হয় ॥
ওহে বিপ্র হেথা থাকি করহ ভজন ।
সপার্ষদে শ্রীগৌরাঙ্গ পাবে দরশন ॥
এই কথা বলি তীর্থরাজ গেল চলি ।
শুনিল আকাশ বাণী আইসে ধন্য কলি ॥
তুমি বিপ্র সেই কালে জন্মিবে আবার ।
শ্রীগৌর কীর্ত্তন প্রেমে দিবেত সাঁতার ॥
এত শুনি দিবদাস নিশ্চিন্ত হইল ।
এই কুণ্ডতীরে বসি ভজন করিল ॥
এসব পুরাণ কথা শ্রীজীবে কহিয়া ।
উচ্চহট্ট কুরুক্ষেত্রে প্রবেশিল গিয়া ॥
নিত্যানন্দ বলে হেথা সর্ব্বদেবগণ ।
কুরুক্ষেত্রে তীর্থ সহ কৈল আগমন ॥
ব্রহ্মাবর্ত্তে কুরুক্ষেত্রে যত তীর্থ ছিল ।
সর্ব্বতীর্থ আসি হেথা বিরাজ করিল ॥
পৃথূদক আদি করি সব হেথা বৈসে ।
সবে নবদ্বীপ সেবা করে অনায়াসে ॥
শতবর্ষ কুরুক্ষেত্রে বাসে যেই ফল ।
হেথা এক রাত্র বাসে লভে সে সকল ॥
প্রভু বলে হেথা বাস করি দেবগণ ।
হট্ট করি গৌর কথা করে আলোচন ॥
হট্টডাঙ্গা বলি নাম হইল ইহার ।
ইহার দর্শনে পায় প্রেম পারাবার ॥
এই এক সীমা জীব দেখ নদীয়ার ।
এবে চল যাই মোরা ভাগীরথী পার ॥
ভাগীরথী পার হয়ে মধ্যাহ্ণ সময় ।
কোলদ্বীপে নিত্যানন্দ হইল উদয় ॥
কুলিয়াপাহাড় পুরে যাইতে যাইতে ।
শ্রীজীবে নিতাইচাঁদ লাগিল কহিতে ॥
যে ক্রমে আইনু মোরা হয়ে গঙ্গাপার ।
সেই ক্রম সিদ্ধ ক্রম পরিক্রমা সার ॥
যবে প্রভু শ্রীচৈতন্য লয়ে নিজগণ ।
করিলেন শ্রীচৌদ্দমাদল সঙ্কীর্ত্তন ॥
কাজিরে শোধিতে প্রভু সন্ধ্যা আগমনে ।
মায়াপুর ছাড়ি চলে লয়ে ভক্তজনে ॥
সেইরাত্র ব্রহ্মরাত্র শীঘ্র নহে শেষ ।
এই ক্রমে মহাপ্রভু ভ্রমে নিজদেশ ॥
তারপর প্রতি একাদশী তিথি ধরি ।
ভ্রমিলা আমার প্রভু সঙ্কীর্ত্তন করি ॥
কভু পঞ্চক্রোশ ভ্রমে অন্তর্দ্বীপময় ।
কভু অষ্টক্রোশ ভ্রমে যেন মনে লয় ॥
নিজ গৃহ হৈতে বারকোণা ঘাট ছাড়ি ।
দীর্ঘিকা বেষ্টনে যায় শ্রীধরের বাড়ী ॥
তথাহৈতে অন্তর্দ্বীপ সীমা ভ্রমি আসে ।
পঞ্চক্রোশ পরিক্রমা হয় অনায়াসে ॥
সিমুলিয়া হয়ে কাজিগৃহে বেড়ি চলে ।
শ্রীধরে সম্ভাসি আইসে গাদিগাছা স্থলে ॥
মাজিদা হইতে হয় ভাগীরথী পার ।
পারডাঙ্গা ছিনাডাঙ্গা পুলিন বিস্তার ॥
ছাড়িয়া জাহ্ণবী পার হইয়া তখন ।
অষ্টক্রোশ ভ্রমি চলে আপন ভবন ॥
সিদ্ধ পরিক্রমা হয় পূর্ণ ষোলক্রোশ ।
সেই পরিক্রমা কৈলে প্রভুর সন্তোষ ॥
সেই পরিক্রমা আমি তোমারে করাই ।
ইহার সমান পরিক্রমা আর নাই ॥
বৃন্দাবন ষোলক্রোশ দ্বাদশ কানন ।
এই পরিক্রমা মধ্যে পাবে দরশন ॥
নবরাত্রে এই পরিক্রমা শেষ হয় ।
নবরাত্র বলি এর নাম শাস্ত্রে কয় ॥
পঞ্চক্রোশ পরিক্রমা একদিনে করে ।
রাত্রত্রয় অষ্ট ক্রোশ পরিক্রমা ধরে ॥
একরাত্র মায়াপুরে দ্বিতীয় গোদ্রুমে ।
পুলিনে তৃতীয় রাত্র এই ক্রমে ভ্রমে ॥
শুনি পরিক্রমা তত্ত্ব জীবমহাশয় ।
প্রেমেতে অধৈর্য্য হয়ে কতক্ষণ রয় ॥
নিতাই জাহ্ণবা পদ ছায়া আশ যার ।
নদীয়া মহিমা বর্ণে অকিঞ্চন ছার ॥
|
|
শ্রীনবদ্বীপধাম
মাহাত্ম্য-মুক্তা-মালা
অনন্তশ্রীবিভূষিত ওঁ বিষ্ণুপাদ
পরমহংসকুলচূড়ামণি বিশ্ববরেণ্য জগদ্গুরু
শ্রীশ্রীমদ্ভক্তিনির্ম্মল আচার্য্য মহারাজের
পদ্মমুখের হরিকথামৃত
এইগ্রন্থশিরোমণি শ্রীগুরুপাদপদ্ম ওঁ বিষ্ণুপাদ শ্রীল ভক্তিনির্ম্মল আচার্য্য
মহারাজের ইচ্ছা পূর্ণ করবার জন্য এবং তাঁর শ্রীচরণের তৃপ্তির জন্য তাঁর অহৈতুক
কৃপায় শ্রীচৈতন্য-সারস্বত মঠ হইতে প্রকাশিত হয় শ্রীমন্ মহাপ্রভুর শুভার্বিভাব
তিথিতে শ্রীগৌরাব্দ ৫৩৪, বঙ্গাব্দ ১৪২৬, খৃষ্টাব্দ মার্চ্চ ২০২০ ।
সূচীপত্র:
শ্রীগৌরধাম ও
শ্রীভক্তিবিনোদ
শ্রীনবদ্বীপধাম মাহাত্ম্য
(১) শ্রীশ্রীনবদ্বীপধামের সাধারণ
মাহাত্ম্য কথন
(২) শ্রীশ্রীগৌড়মণ্ডল ও
শ্রীশ্রীনবদ্বীপধামের বাহ্যস্বরূপ ও পরিমাণ
(৩) শ্রীশ্রীনবদ্বীপধাম
পরিক্রমার সাধারণ বিধি
(৪) শ্রীজীবের আগমন ও শ্রীনিত্যানন্দ
প্রভু তাঁহাকে শ্রীনবদ্বীপতত্ত্ব বলেন
(৫) শ্রীমায়াপুর ও
শ্রীঅন্তর্দ্বীপের কথা
(৬) শ্রীগঙ্গানগর,
শ্রীপৃথুকুণ্ড, শ্রীসীমন্তদ্বীপ, শ্রীবিশ্রামস্থানাদি দর্শন
(৭) শ্রীসুবর্ণবিহার ও
শ্রীদেবপল্লী বর্ণন
(৮) শ্রীহরিহরক্ষেত্র,
শ্রীমহাবারাণসী ও শ্রীশ্রীগোদ্রুমদ্বীপ বর্ণন
(৯) শ্রীমধ্যদ্বীপ ও নৈমিষ
বর্ণন
(১০) শ্রীব্রাহ্মণপুষ্কর, শ্রীউচ্চহট্টাদি দর্শন ও পরিক্রমা-ক্রম
বর্ণন
(১১) শ্রীশ্রীকোলদ্বীপ,
শ্রীসমুদ্রগড়, শ্রীচম্পাহট্ট ও শ্রীজয়দেব-কথা বর্ণনা
(১২) শ্রীশ্রীঋতুদ্বীপ ও
শ্রীরাধাকুণ্ড বর্ণন
(১৩) শ্রীবিদ্যানগর ও
শ্রীজহ্ণুদ্বীপ বর্ণন
শ্রীনবদ্বীপধাম মাহাত্ম্য-মুক্তা-মালা
•
শ্রীল ভক্তিবিনোদ ঠাকুরের ভজনকুটির
(স্বানন্দ-সুখদা-কুঞ্জ)
•
শ্রীনৃসিংহপল্লী
•
শ্রীকোলদ্বীপ
|