![]() |
|||||||
| |||||||
|
|||||||
শ্রীভক্তিরক্ষক হরিকথামৃত ২ । জীবের চরম প্রাপ্তি
জনৈক ভক্ত ঃ—দণ্ডবৎ প্রণাম মহারাজ !
অনেকদিন আপনার দর্শন পাই নাই । চারিদিকে বিপদ ও নানা সমস্যায় জড়িয়ে পড়েছি । তাই
সময় মত আসতে পারি না ।
তত্তেঽনুকম্পাং সুসমীক্ষমাণো, ভুঞ্জান এবাত্মকৃতং বিপাকম্ । (ভাঃ, ১০/১৪/৮)
অর্থাৎ সর্ব্বত্রই ভগবানের হাত রয়েছে । তিনি
নিষ্ঠুরও নন অবিচারকও নন । যা কিছু আসছে তোমার কল্যাণের জন্য আসছে । তিনি
মঙ্গলময় । এবং স্নেহময় । সম্পদ বিপদ পারিপার্শ্বিকতা সব কিছুর মূলে তাঁর ইচ্ছা
কাজ করছে এবং সবটাই আমাদের মঙ্গলের জন্য । তাঁর Sanction (অনুমোদন) ছাড়া কিছুই
ঘটতে পারে না । তিনি সজাগ দৃষ্টিতে সবকিছু দেখছেন । অতএব বন্ধুভাবে সব কিছুকে
ফেস্ করতে হবে । ‘ভুঞ্জান এবত্ম-কৃতং বিপাকং ।’ দোষটা নিজের ঘাড়ে নাও । তাঁর
রাজ্যে সবই সুন্দর । সেই সুন্দরের Influence (প্রভাব) এসে তোমাকেও সুন্দর করে
দেবে । এই বিচারে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারলেই দেখবে তুমি সব ঝামেলা হতে
মুক্তি লাভ করে স্বরূপে প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছ । সুন্দরের দেশে প্রবেশ লাভ করেছ ।
সত্যম্ শিবম্ সুন্দরম্ । অখিল কল্যাণ গুণখনি তিনি । শুধু কর্ম্ম বা জ্ঞানমুক্তি
নয়, মুক্ত স্বরূপে-তোমার Orginal (মূল) স্বরূপে প্রতিষ্ঠিত হয়ে যাবে ।
“মুক্তির্হিত্বান্যথারূপং স্বরূপেন ব্যবস্থিতিঃ ।” অর্থাৎ সেবাভূমিকায়
প্রতিষ্ঠিত হয়ে যাবে । শ্রীমদ্ভাগবতের ঐ শ্লোকটী আমাদের অনেক আশা অনেক ভরসা দিয়ে
আশ্রয় দিয়েছেন । শুধু Proper adjustment (যথাযথ সমন্বয়) দরকার ।
“সর্ব্বধর্ম্মান্ পরিত্যজ্য মামেকং শরণং ব্রজ । (গীঃ ১৮।৬৬) Absolute call of life (জীবনে পরিপূর্ণের আহ্বান) ঐ দিকে লক্ষ্য রেখে এগিয়ে চল । ভগবান বলছেন—“আমি আছি কোন অসুবিধা হবে না । সব দায়িত্ব আমি নেব ।” আমি যখন মঠে এলাম, আমার গুরুদেবের কাছে, সেই সময়ের ঘটনা বলি । শ্রীমায়াপুর মন্দিরের প্রতিষ্ঠা হল, মন্দিরেতে ঠাকুর গেলেন । মহাপ্রভুর জন্মোৎসব পরিক্রমা শেষ হয়েছে । উৎসব শেষে যে যার বাড়ী যাচ্ছেন । শ্রীল প্রভুপাদ একটী ক্যানভাসের চেয়ারে বারান্দায় বসে আছেন । আমি শোনার আগ্রহ নিয়ে তাঁর পিছনে গিয়ে বসেছি, বাড়ী যাবার আগে ভক্তরা তাঁকে প্রণাম করতে এসেছেন । প্রভুপাদ তাঁদের বললেন—‘আপনারা আমাকে বঞ্চিত করবেন না ।’ আমি কানখাড়া করলাম । বঞ্চিত হবার কি আছে ? উৎসব সমাপ্ত হল, যে যার বাড়ী যাচ্ছেন—এতে বঞ্চনার কি হল ? প্রভুপাদ বলছেন—আপনারা আমাকে আশ্বাস দিয়েছেন—আপনারা কৃষ্ণ-ভজন করবেন । আমিও সেই জন্যে আপনাদের সঙ্গে একটা সম্বন্ধেতে আবদ্ধ হয়েছি । এখন দু’চার দিনের জন্য এসে আবার ফিরে যাচ্ছেন—সেই আবার সংসারেই । তা হলে তো আমি বঞ্চিতই হয়ে গেলাম । যদি বলেন, না প্রভু ! বঞ্চনা করি নাই, এই দু’চারদিন একটু কাজ কর্ম্ম গুছিয়ে চুকিয়ে দিয়ে আমরা আবার ফিরে আসছি, এসে যা বলবেন তাই করবো । আমি বলবো তার কোন প্রয়োজন নাই । যদি কেহ বলেন যে ঘরে আগুন লেগেছে আগুনটা নিভিয়ে দিয়েই আসছি, আমি বলবো তারও প্রয়োজন নাই । আপনাদের, আমাদের সকলেরই একমাত্র স্বার্থগতি হচ্ছেন শ্রীকৃষ্ণ । তাঁর সেবা ছাড়া জীবের আর কোন Duty (কর্ত্তব্য) নাই । সমগ্র দুনিয়া পুড়ে ছারখার হয়ে গেলেও আপনার কোন ক্ষতি হয় না । আপনি চিন্ময় জীবাত্মা । আপনি মরেন না, পোড়েন না, আপনি নিত্য সনাতন তত্ত্ব । একমাত্র কৃষ্ণসেবা ছাড়া আপনার আর কোন কর্ত্তব্য নাই । আপনার যাবতীয় প্রয়োজন সব কৃষ্ণপাদপদ্মে । সেই সময় আমি Finally Surrender (চুড়ান্তভাবে আত্মসমর্পণ) করলাম তাঁর চরণে । বুঝলাম সতিই তো আমরা সুখ চাচ্ছি, শান্তি চাচ্ছি, রস চাচ্ছি, যা কিছু চাচ্ছি তার ভেতর Unconsciously (অচেতনভাবে) তাঁকেই চাচ্ছি । কেননা তিনি অখিলরসামৃতমূর্ত্তি । রসই হল Medium (মাধ্যম) । যেমন টাকা পয়সা, পাউণ্ড, ডলার, রুবল প্রভৃতির মূল Standard (মানদণ্ড) হচ্ছে Gold (সোনা); সেই রকম আস্তিক হতে নাস্তিক পর্য্যন্ত সকলের—সব কিছুর মূল Standard (মানদণ্ড) হচ্ছে ‘রস । এজগতে সে জিনিষ কোথায় পাবে ? ঐ পরতত্ত্বে Absolutely Surrender (পূর্ণ সমর্পণ) ছাড়া আর কোথাও পাওয়ার সম্ভাবনা নাই, কেননা বেদান্ত বলছেন “রসো বৈ সঃ” তিনিই হলেন অখিল রসের মূর্ত্ত বিগ্রহ । “চৈতন্যোরসবিগ্রহ” Ecstasy সত্যম্ শিবম্ সুন্দরম্ । Reality the Beautiful (সত্য ও সুন্দর) তা সে কর্ম্ম, জ্ঞান, যোগ পন্থা—কোন পন্থাতেই তো পাবে না—ঐকান্তিক শরণাগতি ছাড়া সে জিনিস পাওয়ার আর কোন পথ নাই ।
“কর্ম্মবন্ধ জ্ঞানবন্ধ আবেশে মানব অন্ধ শ্রীমন্মহাপ্রভু তাই যখন রাম রায়ের মুখে শুনলেন যে “জ্ঞানে প্রয়াসমুদপাস্য নমন্ত এব জীবন্তি” তখন বললেন, হ্যাঁ, “এহো হয় আগে কহ আর ॥” জ্ঞানশূন্যা ভক্তি । Super subjective এরিয়াতে যেতে হবে । জ্ঞানের চরম ভূমিকা হচ্ছে justice (ন্যায়) । কিন্তু justice (ন্যায়) এর উপর হল Mercy (দয়া) । জ্ঞান তা দিতে পারে না । স্নেহময় ভূমিকা, সেবাময় ভূমিকায় সেইটা পাওয়া সম্ভব । শ্রীমন্মহাপ্রভু সকলকে সেই দিকে টেনে নেবার জন্যই আবির্ভূত হয়েছেন । বাস্তব জীবনের একমাত্র Solution (সমাধান) হচ্ছে ব্রহ্ম পরমাত্মার অনেক ওপরে যে ভগবৎ ধাম, সেই ধামের মধ্যে জ্ঞানশূন্যাভক্তির যে বিভিন্ন উত্তমোত্তম প্রকোষ্ঠে ভগবানের সেবাবিলাস চলছে, কোনপ্রকারে সেইখানে একটু আশ্রয় করে নেওয়া । সেইটাই হল জীবের চরম প্রাপ্তি । একমাত্র সম্পদ ।
|
শ্রীশ্রীগুরু-গৌরাঙ্গ-প্রণতি PDF ডাউনলোড (26.7 Mb) |
||||||
বৃক্ষসম ক্ষমাগুণ করবি সাধন । প্রতিহিংসা ত্যজি আন্যে করবি পালন ॥ জীবন-নির্ব্বাহে আনে উদ্বেগ না দিবে । পর-উপকারে নিজ-সুখ পাসরিবে ॥ | |||||||
© Sri Chaitanya Saraswat Math, Nabadwip, West Bengal, India. For any enquiries please visit our contact page. |