![]() |
|||||||
| |||||||
|
|||||||
শ্রীভক্তিরক্ষক হরিকথামৃত ৮ । শ্রীশরণাগতি
ভগবদ্ভক্তিতঃ সর্ব্বমিত্যুৎসৃজ্য বিধেরপি ।
আজ্ঞায়ৈবং গুণান্ দোষান্ ময়াদিষ্টানপি স্বকান্ ।
তস্মাৎ তমুদ্ধবোৎসৃজ্য চোদনাং প্রতিচোদনাং । বেদ মানে উপদেশ । বেদ হচ্ছে কোন যুক্তির অপেক্ষা করে না এমন সব উপদেশ । ছোট ছেলেকে যেমন প্রয়োজন মত, তার মঙ্গলমত পরিচালনা করে অভিভাবক ; আমি যা বলছি তাই কর ; ডাইরেক্ট অর্ডার । এই হল বেদের লক্ষণ । বেদ হুকুম করবে, কোন যুক্তি দেবে না । পুরাণ বন্ধুভাবে বলবে, অন্যান্য শাস্ত্র তারা যুক্তি দেবে । কিন্তু বেদ বলবে এটা কর, ওটা কর । তোমাকে বুঝতে হবে না । তুমি কতটুকু বুঝবে । ক্ষুদ্র মস্তিষ্ক তোমার । প্রভুপাদ বলতেন—পাপী ব্রেন, কুকুরের ছানার মাথা । এই অনন্তের এক কণাও তোমার ঐ মাথায় ধরবে না । ‘চোদনাং’ মানে সেই বেদকে পর্য্যন্ত উৎসৃজ্য । ‘প্রতিচোদনাং’ মানে বেদ থেকে নিয়ে মনু প্রভৃতির বিচার যে লোকরঞ্জনের দোকান, সে সবও বাদ দাও । ‘প্রবৃত্তিঞ্চ’ ‘নিবৃত্তিঞ্চ’ মানে প্রবৃত্তি মার্গের যত কথা আছে ; এবং নিবৃত্তি মার্গের যত কথা আছে ; অর্থাৎ ভোগ এবং ত্যাগ রাজ্যের যত কথা আছে সব উৎসৃজ্য । ‘শ্রোতব্যং’ মানে ভবিষ্যতে অনেক শুনতে বাকী আছে ; এখনো সব ভালভাবে আবিষ্কারই হয় নাই ; প্রগতির যুগ এগিয়ে যাচ্ছে, শুনতে এখনো অনেক বাকী । ‘শ্রুতমেব চ’ মানে অতীতে যা শোনা হয়ে গেছে, সে সব এখন লুপ্ত । অর্থাৎ অতীতে অনেক কিছু বড় বড় ছিল, কিন্তু এই সব কিছুকেই সম্যক রূপে পরিত্যাগ করে— ‘মামেকমেব শরণং আত্মানং সর্ব্বদেহিনাম্’ একমাত্র আমার শরণ গ্রহণ কর । একটা কৈফিয়ৎ কেবল আমি দিচ্ছি, কি ? না ‘আত্মানং সর্ব্বদেহিনাং’ সমস্ত দেহিগণের আত্মা । ‘আত্মার আত্মা হন কৃষ্ণ সর্ব্ব অবতংস ।” ‘ময়ি সর্ব্বগুহাশয়ে ।’ পার্টি একমাত্র আমিই । আমিই একমাত্র ভোক্তা । আর সব ভোগ্য । অর্থাৎ যখন অন্তর দিয়ে বোঝা যাবে ভোক্তা কেবল তিনিই, অচ্যুতেরই সব, আমরা সব শক্তির পরিবার । চ্যুত অভিমানের পাল্লায় দুদিনের মালিকানা এ শুধু খোসার আত্মাভিমান । জগতের কোন জিনিষের মালিক কেউ নয় । আমার যেমন দেহ, চোখ, কান, নাক, ইন্দ্রিয়গুলি, মন, বুদ্ধি প্রভৃতির মালিক বসে আত্মা, সেই প্রকার আত্মার ভেতর বসে আছেন তিনি—মালিক পরমাত্মা । আমরা সব ‘সুপারভিসিএ্যাল এক্সজিষ্টেন্স’(superficial existence)—সব খোসার দল । এই বিচার দৃঢ় হলে শরণাগতির আওতায় গিয়ে পড়বো । শাস্ত্রীয় সর্ব্বপ্রকার বিধি নিষেধের চাবিটি তখন হাতে এসে যাবে ।তখন শরণাগতি ‘মামেকমেব শরণং’ ‘যাহি সর্ব্বাত্ম ভাবেন ।’ সর্ব্বপ্রকারে—কায়, মন, বুদ্ধি, বাক্য—যা কিছু আছে সব দিয়ে, সব নিয়ে শরণাগত হও । এই হল শরণাগতি । হে উদ্ধব ! তুমি আমার অত্যন্ত প্রিয়, তোমাকে অদেয় আমার কিছুই নাই, আমার আত্মা পর্য্যন্ত সব কিছুই তোমার । তাই তোমায় আমার এই চাবি কাঠিটি দিয়ে দিলাম । গীতায় অর্জ্জুনকে ঐ প্রকার বলেছেন, “প্রতিজানে প্রিয়োঽসি মে” লোকে বোঝে না, বললেও বুঝবে না, আসল কথাটা হচ্ছে আমিই সব । রকমারী মনোহারী বাক্য-প্রদর্শনী, ধর্ম্ম, কর্ম্ম যেখানে যা কিছু দেখছ, সব শো বটল্ । তুমি আমার অত্যন্ত প্রিয় । তাই তোমাকে প্রতিজ্ঞা করে এই নগ্ন সত্যটা বলছি যে আমিই সব । আমার তৃপ্তি বিধানই হচ্ছে একমাত্র করণীয় একে বলে অদ্বয়জ্ঞান । ‘ভয়ং দ্বিতীয়াভিনিবেশতঃ স্যাদীশাদপেতস্য’—এখান হতে চ্যুত হয়ে ধর্ম্ম কর, কর্ম্ম কর, জপ কর, যোগ কর, ত্যাগ কর,—যেমন “মুনয়োঃ বাতরসনা শ্রমণা উর্দ্ধমন্থিনঃ” ইত্যাদি যাই কর কিছু সুবিধা হবে না । পয়ঃ পানকারী ব্রহ্মচারীকে মহাপ্রভু বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়েছেন । প্রহ্লাদও বলেছেন “নিগমস্য সারম”—যেখানে যা কিছু ধর্ম্মের কথা আছে সব ‘স্বাত্মার্পণং’ সব আত্ম-নিবেদনেই সার্থক । নিজেকে নিবেদন করাই হল যাবতীয় ধর্ম্মের সারকথা । ‘আমি তো তোমার তুমি তো আমার’ এর উপর যা কিছু সাজসজ্জা—সবই সুন্দর । সুতরাং যে সেটি বুঝতে পারল তার আর ভয় কি ? তার দুনিয়াদারী, তার অভিমান সব খসে গেল । ‘তৎপরত্বেন নির্ম্মলম’ একটাই অস্ত্র । ‘শ্রীকৃষ্ণপ্রীতিকামঃ’ । ‘প্রপার্টি বিলংস টু কৃষ্ণ’ । দুর্গা পূজাই কর, কালীপূজাই কর, সংকল্প করে যা কিছুই কর না কেন চরমে সেই “কৃতৈতৎ কর্ম্মফলং শ্রীকৃষ্ণায় সমর্পিতমস্তু” । মূল লক্ষ সেই একে গিয়ে শেষ । যতদিন সাধন চেষ্টাপর রয়েছে ততদিন তা আচারে থাকে, সিদ্ধ হয়ে গেলে অন্তরে গাঁথা হয়ে যায় । অন্য কোন বিচার সেখানে আসর করতে পারে না । কর্ম্ম, জ্ঞান, যোগ, তপ, পূজা, অর্চা সমস্তের শুদ্ধি বিধানের লিঙ্ক ঐখানে । আগ্নেয়গিরির ধূম যতদূরেই দেখ না কেন, আগুন থাকে তার গর্ভে ।
'স বৈ পূংসাং পরোধর্ম্মো যতো ভক্তিরধোক্ষজে'
“দীক্ষা কালে ভক্ত করে আত্মসমর্পণ । পরাৎপরতত্ত্বের—লীলাকল্লোলবারিধি ভগবানের ঔদার্য্য ও মাধুর্য্য-পরসেবা-বৈচিত্র্যসম্ভার এই শরণাগতির ভিত্তির উপরই যথাযোগ্যভাবে আত্মপ্রকাশ করেন । সেই শরণাগতির চরমপ্রকাশে দেখা যায়, “কৃষ্ণভক্তিরসভাবিতামতিঃ” অতি সুদুষ্প্রাপ্য জিনিষ । ও কোথাও পাওয়া যায় না । অমূল্যধন কোটী কোটী জন্মের সুকৃতি দিয়েও কেনা যায় না । একমাত্র প্রকৃত রসবোধ—একমাত্র লৌল্যই প্রাপ্তির কারণ । যে পেয়েছে, তার সবকিছু প্রাপ্তি হয়ে গেছে । ‘রসভাবিতামতিঃ’ রসিকশেখর তার সব কিছু হরণ করে নিয়েছেন ।
“চিত্ত কাড়ি’ তোমা হইতে বিষয়ে চাহি লাগাইতে
এবং ব্রতঃ স্বপ্রিয়নামকীর্ত্ত্যা
“যদি গৌর না হ’ত তবে কি হইত
|
শ্রীশ্রীগুরু-গৌরাঙ্গ-প্রণতি PDF ডাউনলোড (26.7 Mb) |
||||||
বৃক্ষসম ক্ষমাগুণ করবি সাধন । প্রতিহিংসা ত্যজি আন্যে করবি পালন ॥ জীবন-নির্ব্বাহে আনে উদ্বেগ না দিবে । পর-উপকারে নিজ-সুখ পাসরিবে ॥ | |||||||
© Sri Chaitanya Saraswat Math, Nabadwip, West Bengal, India. For any enquiries please visit our contact page. |