| |||||||
|
|||||||
শ্রীভক্তিরক্ষক হরিকথামৃত ৭ । ধর্ম্ম শিক্ষা ও বিশ্বাস
বর্ত্তমান জগতে যে সমস্ত সমস্যা রয়েছে তন্মধ্যে
শিক্ষা-সমস্যার স্থান সর্ব্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ । যেহেতু কোমলমতি বালক বালিকা
হতে প্রত্যেক বয়ঃস্তরেই আস্তিক্য-শিক্ষার গুণে মনুষ্যত্বের ক্রমবিকাশ ঘটে থাকে ।
শ্রীমদ্ভাগবত বলেন—
আহারনিদ্রাভয়মৈথুনঞ্চ
আহার নিদ্রা ইন্দ্রিয়তর্পনাদিই মনুষত্ব নয় ।
প্রকৃতপক্ষে শাস্ত্রানুশাসিত ধর্ম্ম জীবনই প্রকৃত মনুষ্য জীবন । নতুবা জীবনের
পশুস্তরেও যেটুকু কাণ্ডজ্ঞান, দয়ামায়া, শৌর্য্য, বীর্য্য বা শালীনতা দেখা যায়
মানুষ সেটুকু হতে ও প্রায়ই বঞ্চিত হতে বাধ্য । বিদ্যা বুদ্ধিতে সমৃদ্ধ হলে ও
ধর্ম্মাধর্ম্মজ্ঞান বা ঈশ্বর বিশ্বাস না থাকার ফলে জীব উশৃঙ্খলতা ও পাষণ্ডতা
প্রাপ্ত হয়ে চরম নিষ্ঠুর হয়ে পড়ে । মনুষ্য জাতির দেশকাল পাত্র ভেদে ধর্ম্মমত
বিভিন্ন হলেও ঈশ্বর বিশ্বাস তাই সর্ব্বত্র সর্ব্বকালেই পরিব্যাপ্ত দেখতে পাওয়া
যায় নিজাপেক্ষা শ্রেষ্ঠ বস্তু বা বিষয়ের সম্মাননা যে প্রকার ধর্ম্মবুদ্ধি
প্রণোদিত, সেইরূপ সর্ব্বশ্রেষ্ঠের আনুগত্যে পূর্ণবিশ্বাস জীবগণকে বহুবিধ
অবাঞ্ছিত দুষ্কৃতির হাত হতে রক্ষা করে । এর বহু প্রমাণ আছে । অতএব শিক্ষার
সর্ব্বস্তরে যতদিন পর্য্যন্ত ধর্ম্মের পরিব্যাপ্তি ও মর্য্যাদাময় আসন সংরক্ষিত
না হবে ততদিন প্রকৃত মনুষ্যত্ব তো দূরের কথা সাধারণ সৌজন্যও আমাদের আশার বাইরে
থেকে যাবে । মহর্ষি বেদব্যাস হতে আরম্ভ করে সর্ব্বস্তরের সূক্ষ্মদর্শী মনীষিগণ
তাই বলেন—
কৌমারং আচরেৎ প্রাজ্ঞো ধর্ম্মান্ ভাগবতানিহ ।
অতএব জন্ম হতে মৃত্যু পর্য্যন্ত প্রতিধাপেই
আস্তিক্যধর্ম্ম শিক্ষা বা ধর্ম্মানুশীলন প্রচেষ্টা প্রতিটি রাষ্ট্রেই বিধিবদ্ধ
হওয়া একান্ত প্রয়োজন । আস্তিকতার দ্বারা আত্মোন্নতি বা পরমার্থ লাভ তো হয়ই
তাছাড়া ব্যতিরেক ভাবে দুর্নৈতিকতা, উশৃঙ্খলতা, হৃদয়হীনতা ও অপরাধ প্রবণতা
প্রভৃতি হতে স্বতঃই মুক্তিলাভ ঘটে থাকে ।
ঈশ্বরঃ পরমঃ কৃষ্ণ সচ্চিদানন্দ-বিগ্রহঃ ।
এ শুধু মাত্র কোন শ্রেণী বিশেষ মানুষের মুখের কথা
নয় । এ সাক্ষাৎ সহজ ভক্তি সমাধি লব্ধ ধন । ‘বৃহতের অভিমুখে অণুর অভিগমন’ এই
নিত্য সত্যের অনুশীলনের কথা বর্ত্তমান বিজ্ঞানও অকুণ্ঠ চিত্তে স্বীকার করে ।
প্রকৃত বিশ্বাস বা শ্রদ্ধার বিশুদ্ধরূপ যা কবিরাজ গোস্বামীর লেখনীতে পাই—
শ্রদ্ধা শব্দে বিশ্বাস কহে সুদৃঢ় নিশ্চয় ।
সেই বিশ্বাসের অনুভূতিই জীবের প্রকৃত শোক, মোহ,
ভয়াদি অপহরণ করে । কেন্দ্রীয় সত্যের অহৈতুক আকর্ষণে সত্য, ত্রেতা, দ্বাপর ও
কলিযুগের পুনঃ পুনরাবর্ত্তনে এই নিত্য সত্যের যে ক্রমবিকাশ ঘটেছে, তা
সর্ব্বকালজ্ঞ দেবর্ষিগণের অনুভূতি লব্ধ লেখনী দ্বারা, প্রকাশিত, নাস্তিকতা বলে
যা একশ্রেণীর মনুষ্যের দ্বারা প্রচারিত তা যে আস্তিকতারই বিকৃত প্রতিক্রিয়াশীল
সাময়িক প্রচেষ্টা বিশেষ, এটি আর বর্ত্তমানে বুঝতে কিছুমাত্র অসুবিধা হয় না । স্বল্পমপ্যস্য ধর্ম্মস্য ত্রায়তে মহতো ভয়াৎ । এত বড় নিশ্চিন্ততার কথা, ভরসার কথা থাকতেও আমরা যে চিরকালের দুর্ভাগ্যের ধুর বহন করতে করতে হা হুতাশ করে জন্ম জন্মান্তর কাটিয়ে দিচ্ছি—এটি বড়ই আক্ষেপের, বড়ই দুঃখের বিষয় ।
|
শ্রীশ্রীগুরু-গৌরাঙ্গ-প্রণতি PDF ডাউনলোড (26.7 Mb) |
||||||
বৃক্ষসম ক্ষমাগুণ করবি সাধন । প্রতিহিংসা ত্যজি আন্যে করবি পালন ॥ জীবন-নির্ব্বাহে আনে উদ্বেগ না দিবে । পর-উপকারে নিজ-সুখ পাসরিবে ॥ | |||||||
© Sri Chaitanya Saraswat Math, Nabadwip, West Bengal, India. For any enquiries please visit our contact page. |