আমাদের শ্রীগুরুপরম্পরা :
শ্রীশ্রীল ভক্তিনির্ম্মল আচার্য্য মহারাজ শ্রীশ্রীল ভক্তিসুন্দর গোবিন্দ দেবগোস্বামী মহারাজ শ্রীশ্রীল ভক্তিরক্ষক শ্রীধর দেবগোস্বামী মহারাজ ভগবান্ শ্রীশ্রীল ভক্তি সিদ্ধান্ত সরস্বতী গোস্বামী ঠাকুর
              প্রভুপাদ
“শ্রীচৈতন্য-সারস্বত মঠে সূর্যাস্ত কখনই হয় না” :
আমাদের মঠের পরিচয় ও বৈশিষ্ট্য
 
আমাদের সম্পর্কে শ্রীউপদেশ শ্রীগ্রন্থাগার শ্রীগৌড়ীয় পঞ্জিকা ছবি ENGLISH
 

শ্রীভক্তিরক্ষক হরিকথামৃত


৯ । বজীবের স্বাধীন ইচ্ছার নিশ্চয়াত্মক স্বার্থকতা

 

     ঈশ্বরের নিষ্ক্রিয়রূপ সর্ব্বত্রই পরিদৃশ্যমান । কিন্তু তাহা জীবের সকল কর্ম্মের দ্রষ্টা, ঈশ্বরের নিরপেক্ষ সাক্ষীরূপ । তিনি জীবকে সম্পূর্ণরূপে ত্যাগ করেন না, কিন্তু তাহার স্বাধীন ইচ্ছার পথেও প্রতিবন্ধক হন না এবং অন্য এক ব্যবস্থানুযায়ী, তাঁহারই আদিষ্ট সাধুসন্তের এবং ধর্ম্মগ্রন্থাদির অন্তর্নিহিত তত্ত্বের সহায়তায় তিনি যে কোন প্রকারে তাঁর ভক্তকে তাঁর দিকে আকর্ষিত করিতে, তাহাকে স্বগৃহে ফিরাইয়া আনিতে স্বয়ং আবির্ভূত হন । “আপন গৃহে প্রত্যাবর্ত্তন কর, বৎসগণ গৃহে প্রত্যাবর্ত্তন কর ।” ধর্ম্মগ্রন্থাদির মত বহু বিজ্ঞপ্তি আছে, বহু প্রতিনিধিগণও এই কার্য্যে রত রহিয়াছে । “গৃহে প্রত্যাবর্ত্তন কর ।” কিন্তু স্বতন্ত্র ইচ্ছাশক্তিও যে বিদ্যমান । সেই স্থানেই যত গোলোযোগ, কেহ কেহ নিরাশায় উক্তি করেন—কি ? কেন তিনি আমাদের এই বিপজ্জনক স্বতন্ত্র ইচ্ছাশক্তি দিয়াছেন, যাহার প্রাপ্তিতে আমাদের নিরন্তর যাতনা ভোগ করিতে হয় ? কি কারণে দিয়াছেন ? তিনি সর্ব্বদর্শী ; তিনি সর্ব্বজ্ঞ । আমরা এই স্বাধীন ইচ্ছাশক্তির অপব্যবহার করিতে পারি জানিয়াও কেন তিনি এইরূপ বস্তু আমাদের দান করিলেন । এই ইচ্ছাশক্তি দিয়া, প্রতিপালক যেন অবোধ শিশুর হস্তে শাণিত অস্ত্র দিয়াছেন, যাহাতে সে নিজেকে সাংঘাতিকরূপে আঘাত করিতে পারে ।
     কিন্তু ইচ্ছাশক্তি হীন অস্তিত্ব তো জড়ের অস্তিত্ব,—জড়বস্তু । স্বতন্ত্র ইচ্ছাশক্তি হইল এক অমূল্যধন । এবং তাহার সাহায্যে আমরা রসাস্বাদনে সমর্থ হই । জিহ্বা প্রদত্ত হইয়াছে—কেবলমাত্র তিক্তস্বাদ আস্বাদনের জন্য নহে, মিষ্টতা গ্রহণের জন্যও । রসাস্বাদনে অপারগ জিহ্বা কোনো সময়েই মিষ্টত্ব উপভোগ করিতে পারিবে না । আমরা অনুক্ষণ জিহ্বাকে কেবলমাত্র তিক্তবস্তু আস্বাদন করাই বলিয়াই ঈশ্বরের প্রতি কটুবাক্য প্রয়োগ করি ।
     তিনি কি কারণে আমাদের জিহ্বা দিয়াছেন ? আমরা যে সর্ব্বক্ষণ তিক্ত বস্তু সকলই আস্বাদন করিতেছি । কিন্তু তৎসঙ্গে মিষ্ট বস্তুর স্বাদ গ্রহণের জন্য ও জিহ্বার প্রয়োজন । সেইরূপ কর্ম্মক্ষেত্রে ঈশ্বর অভীপ্সিত কার্য্যসাধনের জন্য স্বাধীন ইচ্ছার প্রয়োজন । আমরা কখনও কখনও তিক্তবস্তুর সংস্পর্শে আসি । তজ্জন্য কি আমরা সৃষ্টিকর্ত্তাকে দোষারোপ করিব ? তিনি কেন দিয়াছেন ? কোনো শ্রুতিকটু বাক্য কর্ণকে পীড়া দিয়াছে বলিয়াই আমরা তাহার উচ্ছেদ সাধনের কথা চিন্তা করিব না অথবা চক্ষু দ্বারা কখনও কোনো অবাঞ্ছিত দৃশ্য দেখিতে হয় বলিয়াই তাহাকে বিনষ্ট করিব না । আমাদিগকে চক্ষু প্রদান করা হইয়াছে এই কারণে, যে তদ্দ্বারা দিব্য সৌন্দর্য্য প্রত্যক্ষ করার সুযোগ হইবে । এই উদ্দেশ্যেই আমাদের চক্ষুষ্মান্ করা হইয়াছে । দৃষ্টিশক্তির অপসারণে আমরা প্রস্তরতুল্য হইব । অতএব স্বাধীন ইচ্ছাই সমস্ত বস্তুর সার, চরম নির্য্যাস । চক্ষু, কর্ণ এবং অন্যান্য বহু বস্তুসমূহও ইচ্ছাশক্তির দ্বারাই নিয়ন্ত্রিত । আমাদের সত্তাও ইচ্ছাশক্তির উপর নির্ভরশীল । উহা হইতে বঞ্চিত হইলে আমরা প্রস্তরে পরিণত হইব । এবং তাহা কাহারও আকাঙ্ক্ষণীয় নহে ।
     প্রত্যেকটি বস্তুরই একটি উজ্জ্বল দিক আছে, এবং তাহার জন্যই বস্তুটির সৃষ্টি হইয়াছে এবং আমাদিগকে প্রদান করা হইয়াছে । ইহার কুব্যবহারে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হই, ইহা সৎ উদ্দেশ্যে প্রযুক্ত হইলে আমরা সমৃদ্ধি লাভ করি । ইহাই প্রকৃত অবস্থা এবং আমাদের এখন ইহার উপর নির্ভর করিয়াই সমস্যার সমাধান করিতে হইবে । বস্তু সমূহের উজ্জ্বলিত দিকটি অনুসন্ধান করিতে গিয়া দেখিতে পাইব, সকল বস্তুই কল্যাণপ্রদ । সকল বস্তুই মঙ্গলকর,—পূর্ণমাত্রায় । একমাত্র আপনাকে সেই ঊর্দ্ধতর স্তরে উন্নীত করিতে হইবে, তাহা হইলেই আমরা প্রকৃত সমত্বের এবং পূর্ণ সুসঙ্গতির সন্ধান পাইব, সেখানে সবই আনন্দময় ।

 


 

← ৮. শ্রীশরণাগতি ১০. সর্ব্বাবস্থায় ভগবানের কৃপাদর্শনেই প্রকৃত সুখ লাভ →

 

সূচীপত্র:

শ্রীশ্রীগুরু-গৌরাঙ্গ-প্রণতি
নম্র নিবেদন
প্রণতি-দশকম্
শ্রীগুরু আরতি-স্তুতি
শ্রীল ভক্তিরক্ষক শ্রীধর দেবগোস্বামী মহারাজ সম্পর্কে
১। আত্মতত্ত্ব ও ভগবৎ-তত্ত্ব
২। জীবের চরম প্রাপ্তি
৩। সমস্যা ও সমাধান
৪। পরমার্থ লাভের পন্থা
৫। বন্ধন মুক্তির উপায়
৬। বৈষ্ণব জীবনে আনুগত্য
৭ । ধর্ম্ম শিক্ষা ও বিশ্বাস
৮ । শ্রীশরণাগতি
৯ । বজীবের স্বাধীন ইচ্ছার নিশ্চয়াত্মক স্বার্থকতা
১০ । সর্ব্বাবস্থায় ভগবানের কৃপাদর্শনেই প্রকৃত সুখ লাভ
১১ । মানব জীবনের কর্ত্তব্য
১২ । ভগবানের সঙ্গে যোগাযোগের উপায়
১৩ । আগুন জ্বালো, বাতাস আপনি আসবে
১৪ । মা মুঞ্চ-পঞ্চ-দশকম্


PDF ডাউনলোড (26.7 Mb)
বৃক্ষসম ক্ষমাগুণ করবি সাধন । প্রতিহিংসা ত্যজি আন্যে করবি পালন ॥ জীবন-নির্ব্বাহে আনে উদ্বেগ না দিবে । পর-উপকারে নিজ-সুখ পাসরিবে ॥