আমাদের শ্রীগুরুপরম্পরা :
শ্রীশ্রীল ভক্তিনির্ম্মল আচার্য্য মহারাজ শ্রীশ্রীল ভক্তিসুন্দর গোবিন্দ দেবগোস্বামী মহারাজ শ্রীশ্রীল ভক্তিরক্ষক শ্রীধর দেবগোস্বামী মহারাজ ভগবান্ শ্রীশ্রীল ভক্তি সিদ্ধান্ত সরস্বতী গোস্বামী ঠাকুর
              প্রভুপাদ
“শ্রীচৈতন্য-সারস্বত মঠে সূর্যাস্ত কখনই হয় না” :
আমাদের মঠের পরিচয় ও বৈশিষ্ট্য
 
আমাদের সম্পর্কে শ্রীউপদেশ শ্রীগ্রন্থাগার শ্রীগৌড়ীয় পঞ্জিকা ছবি ENGLISH
 

শ্রীভক্তিরক্ষক হরিকথামৃত


১০ । সর্ব্বাবস্থায় ভগবানের
কৃপাদর্শনেই প্রকৃত সুখ লাভ

 

     এজগতে আমরা প্রত্যেকেই সুখ-দুঃখের সম্মুখীন হই । এই সুখ-দুঃখকে সাধারণ মানুষ একভাবে গ্রহণ করেন, আর যাঁরা অসাধারণ অর্থাৎ প্রকৃত ধর্ম্মতত্ত্বজ্ঞ তাঁরা আর একভাবে গ্রহণ করেন । কিভাবে গ্রহণ করা উচিত সে সম্পর্কে শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা ও শ্রীমদ্ভাগবতে বলা আছে । এখন আমরা সেইটা আলোচনা করব ।
     সুখ-দুঃখ যাই আমরা পাই না কেন তাতেই বুঝতে হবে এর পেছনে ‘Universal Backing’ (পূর্ণতত্ত্বের সমর্থন) আছে এবং আমার কর্ম্ম হচ্ছে তার কারণ । যে ‘Punishment’ (শাস্তি) আমার উপর আসছে বাইরে হতে তার দাবী আছে আমার উপর, অর্থাৎ তা আমার পূর্ব্ব কর্ম্মানুসারেতেই আমার প্রাপ্য ছিল শুধু এই ভাবেতে নিলে হলো । গীতার কথা—খানিক উদাসীন হয়ে নেবে, ভাল-মন্দ বিচার করতে যাবে না, সুখ-দুঃখ ভাল-মন্দ সমানভাবে নেবে ।

দুঃখেষ্বনুদ্বিগ্নমনাঃ সুখেষু বিগতস্পৃহঃ ।
বীতরাগভয়ক্রোধঃ স্থিতধীর্মু নিরুচ্যতে ॥

(গীঃ ২।৫৬)

     আর শ্রীমদ্ভাগবতে আর একটু এগিয়ে গিয়ে বলেছেন যে সুখ-দুঃখ, ভাল-মন্দ যাই আসুক না কেন সে সব সমান ভাবে মেনে নেওয়া নয়, অথবা কোন রকমে সহ্য করে নেওয়া নয়, ওতেই ভগবানের দয়া দেখতে হবে । তাঁর হাত ছাড়া তো কোন কিছু পাশ করে না, যা কিছু ঘটুক চরমে তাঁর ক্ষমতা আছে, তিনি ইচ্ছে করলে নাও করতে পারেন, কিন্তু তিনি তা করছেন না । যে জিনিষটি আসছে তা আমার কর্ম্মানুসারেই আসছে । আমি আমার পূর্ব্ব কর্ম্মফল ভোগ করছি, এইটুকু জানলে পরে সকলেরই একটা ‘Independent Authority’ (স্বাধীন কর্ত্তৃত্ব) স্বীকার করা হয় ।
     আর সম্পূর্ণ তাঁর অধীন, তাঁকে যদি বন্ধুর মত দেখতে হয় তাহলে সবকিছু তাঁর হাত দিয়ে Passed (অনুমোদিত) হয়ে আমার কাছে আসছে, সুতরাং নিশ্চয়ই এর মধ্যে আমার মঙ্গল আছে । এটিই বিশুদ্ধ বিচার ।
শ্রীমদ্ভাগবতে বলেছেন—

তত্তেঽনুকম্পাং সুসমীক্ষমাণো ভুঞ্জান এবাত্মকৃতং বিপাকম্ ।
হৃদ্বাগ্বপুর্ভির্বিদধন্নমস্তে জীবেত যো মুক্তিপদে স দায়ভাক্ ॥

(ভাঃ ১০/১৪/৮)

     প্রকৃত মুক্তি হচ্ছে ‘স্বরূপেন ব্যবস্থিতি’ Positive Attainment’ কেবল ‘Negative Side’ (নেতিবাচক দিক) থেকে মুক্তি সেটাকে মুক্তি বলছেন না ‘Positive Attainment’ এর (নিত্য, বাস্তব তত্ত্ব) লাইনে তোমার ‘Internal Adoptability’ (অন্তরের গ্রহণক্ষমতা) অনুসারে যেখানে ‘Self Determination’ (স্বরূপোপলব্ধি) চরম জায়গায় গেল, সেখানে পৌঁছালে তবে মুক্তি বলা যাবে । কেবল ‘Negative Side’ (অসৎ মায়িক দিক) থেকে ‘Withdrawal’ (প্রত্যাহার) নয়, ‘Positive Side’ এ সৎ, (বাস্তব তত্ত্বের দিকে) ঠিক তোমার ‘Adjusted Position’ (সামঞ্জস্যময় স্থান) যেটি তোমার স্বরূপে আছে, এইটে হলে পরে তবে তাকে মুক্তি বলে । এখন সেই মুক্তি লক্ষ্য করতে গেলে, সেই মুক্তি পেতে চায় কে ? যে ‘Adjustment in the position, Adjustment of the whole’ (নিজের ক্ষেত্রে সামঞ্জস্য এবং সেই সঙ্গে সবটার সঙ্গে সামঞ্জস্য) তাতে দয়া দেখতে হবে, যাতে বিদ্বেষ নাই, ঔদাসীন্যও নাই, কেবল আমার কর্ম্মের উপর ফেলে দেওয়া নেই, প্রভুর হাত এতে আছে, স্নেহের হাত এতে আছে । আমার ‘Guardian’ (অভিভাবক) এর হাত আছে দেখতে হবে, এটা আমার মঙ্গলের জন্যে । তত্ত্বেঽনুকম্পাং সুসমীক্ষমাণো … সুষ্ঠ সমীক্ষাতে দেখা যাবে এটা তোমার দয়া, ভুঞ্জান এব আত্মকৃতং বিপাকম্ … যদিও এটা আমার পক্ষে খারাপ, আমার পূর্ব্বকর্ম্মের ফল ভোগ করছি—এতেও দয়া শাস্তির মধ্যেও দয়া । মা ছেলেকে মারে—শোধন করবার জন্য, বিদ্বেষবশতঃ নয়, শোধন হোল লক্ষ্য, সুতরাং ছেলে যখন বলবে, মা আরো বেশী করে মার, আমি খুবই অন্যায় করেছি, তখনই মার বন্ধ হয়ে যাবে, কারণ ছেলে বুঝেছে তার কল্যাণের জন্য মেরেছে, সুতরাং তখন মার ‘Stop’ (বন্ধ) হয়ে যাবে ।
     সুতরাং আমার মঙ্গলের জন্য, শোধনের জন্য তার শাস্তি এইটে বুঝতে পারলেই ঠিক ‘Adjusted’ (সামঞ্জস্য) হওয়া যায়, ‘Higher Adjustment’ is there (উচ্চ জাতীয় সামঞ্জস্য সেখানে) শুধু আমার নিজের বিচারে সব সুবিধা হবে এটাই নয়—আমার অসুবিধা গুলিও ‘Universal’ (অনন্তের) বিচারে যেটি হচ্ছে আমার প্রতি ব্যবহার, সেটাও আমার পক্ষে কল্যাণকর এইভাবে ‘Positive’ (নিশ্চয়াত্মিকা) দর্শন হলেই ‘Adjustment’ (সামঞ্জস্য) । শুধু খাতিরে বাইরের সঙ্গে মিল করে নিলাম প্রয়োজনেতে এই বলে নয় সেটা আস্বাদনযোগ্য—মধুর । তাঁর দেওয়া শাস্তি মিষ্টি লাগতে হবে, তিনি দণ্ড দিচ্ছেন তাঁর দণ্ড পায় কে ? দণ্ড পেয়েছি আমি ধন্য ।
     দণ্ড পেয়ে উৎফুল্ল হয়েছিলেন অদ্বৈত প্রভু । মহাপ্রভু তাঁকে প্রাচীন বলে একটু গৌরব দেখাতেন । এজন্য তিনি শান্তিপুরে গিয়ে বিরুদ্ধ ব্যাখ্যা আরম্ভ করলেন—ভক্তির চেয়ে জ্ঞান বড় । একথা শুনে মহাপ্রভু নিত্যানন্দ প্রভুকে নিয়ে শান্তিপুরে গিয়ে অদ্বৈত প্রভুকে মার দিতে লাগলেন; তখন সীতা দেবী এসে বললেন কর কি ! হরিদাস ঠাকুর একদিকে, আর নিত্যানন্দ প্রভু মজা দেখছেন—‘এবার জব্দ হলে তো! এইবার দণ্ড দিলে তো! এতদিন শুধু আমায় বড় বলে বলে এসেছিলে; এবার তুমি বড় হলে তো!’এরকম দণ্ড পেলে ভাবতে হবে দণ্ড পায় কে ? দণ্ডটাও ‘Reward’ (পুরস্কার) বলে মেনে নিতে হবে । ‘Universal wave’ (অনন্তের তরঙ্গে) যা আসছে তাকে মেনে নিতে পারলেই তুমি সুখী হতে পারবে ।

 


 

← ৯. বজীবের স্বাধীন ইচ্ছার নিশ্চয়াত্মক স্বার্থকতা ১১. মানব জীবনের কর্ত্তব্য →

 

সূচীপত্র:

শ্রীশ্রীগুরু-গৌরাঙ্গ-প্রণতি
নম্র নিবেদন
প্রণতি-দশকম্
শ্রীগুরু আরতি-স্তুতি
শ্রীল ভক্তিরক্ষক শ্রীধর দেবগোস্বামী মহারাজ সম্পর্কে
১। আত্মতত্ত্ব ও ভগবৎ-তত্ত্ব
২। জীবের চরম প্রাপ্তি
৩। সমস্যা ও সমাধান
৪। পরমার্থ লাভের পন্থা
৫। বন্ধন মুক্তির উপায়
৬। বৈষ্ণব জীবনে আনুগত্য
৭ । ধর্ম্ম শিক্ষা ও বিশ্বাস
৮ । শ্রীশরণাগতি
৯ । বজীবের স্বাধীন ইচ্ছার নিশ্চয়াত্মক স্বার্থকতা
১০ । সর্ব্বাবস্থায় ভগবানের কৃপাদর্শনেই প্রকৃত সুখ লাভ
১১ । মানব জীবনের কর্ত্তব্য
১২ । ভগবানের সঙ্গে যোগাযোগের উপায়
১৩ । আগুন জ্বালো, বাতাস আপনি আসবে
১৪ । মা মুঞ্চ-পঞ্চ-দশকম্


PDF ডাউনলোড (26.7 Mb)
বৃক্ষসম ক্ষমাগুণ করবি সাধন । প্রতিহিংসা ত্যজি আন্যে করবি পালন ॥ জীবন-নির্ব্বাহে আনে উদ্বেগ না দিবে । পর-উপকারে নিজ-সুখ পাসরিবে ॥