![]() |
|||||||
| |||||||
|
|||||||
শ্রীভক্তিরক্ষক হরিকথামৃত ৫ । বন্ধন মুক্তির উপায়
এই পৃথিবীতে আমরা বাস করছি, অসংখ্য জীব বাস করছে,
কিন্তু সবাই বেঁচে আছে কেমন করে এটা যদি চিন্তা করতে যাই তাহলে দেখব এখানে বেঁচে
থাকা মানেই শোষণ করা । শোষণ না করে কেউ এখানে বাঁচতে পারে না । ঋষিগণ
এই শোষণের কথা বলে গেছেন । শোষণ ছাড়া এখানে অস্তিত্ব থাকবে না—“জীবো জীবস্য
জীবনম্” । এখানে একে অপরকে খেয়েই বেঁচে আছে । একটা দেহ বাঁচানো মানে
লক্ষ লক্ষ প্রাণী হত্যা করা । কিন্তু আবার বলা হয়েছে যেমন কর্ম্ম করছি ঠিক
তেমনি ফল পেতে হবে । নিউটন সাহেব বলেছেন—“For every action there is an
equal and opposite reaction.” আদর্শের দিক দিয়ে ছোট বড় নেই । আমি আজ যাকে
খাচ্ছি, সেও একদিন আমাকে খাবে । এই হল আইন জগতের । অবিচার নেই
প্রকৃতির রাজ্যে । তাই এই যে শোষণ করা হচ্ছে তা পুরোপুরি শোধ করে দিতে
হবে । এই শোষণের জন্যই জীব অনাদিকাল থেকে নাগরদোলার মত উপরে যাচ্ছে আর নীচে
নামছে । শোষণ করছে আর ভারী হচ্ছে, ঋণভারে ভারী হয়ে নীচে নামছে,
automatically একেবারে computer method এ ব্যবস্থা না করবার জো নেই । আর
নীচের যারা তারাই উপরে যাচ্ছে ও শোষণ করছে ফলে নীচে নামছে । হাল্কা হচ্ছে
উপরে যাচ্ছে আর ভারী হচ্ছে নীচে নামছে ।
যজ্ঞার্থাৎ কর্ম্মণোঽন্যত্র লোকঽয়ং কর্ম্মবন্ধনঃ । এখানে তুমি নিজের স্বার্থে কিছু করো না, তুমি as an agent of the Absolute এইভাব নিয়ে as a member of the whole সেইভাবে নিজেকে connect করে সেই অনুভুতিতে সব কাজ কর । নিজের selfishness (স্বার্থপরতা)-কে sacrifice (সমর্পিত) কর তা হলে তোমার যে কর্ম্ম সেই কর্ম্মের ভাল মন্দ তোমার মালিকের কাছে চলে যাবে—সেখানে সব adjustment (সমন্বয়)-এর ব্যবস্থা আছে । এই একমাত্র উপায়—connect with Infinite, Absolute এর সঙ্গে connection থাকা চাই । গীতায় বলছেন—
যৎ করোষি যদশ্নাসি যজ্জুহোষি দদাসি যৎ । ভগবানের agent রূপেতে তুমি সব কর । তুমি তাঁর সেবা করবে তাই তোমার খাবার প্রয়োজন আছে ; তুমি সে ভাব নিয়ে কর, তাঁকে নিবেদন করে প্রসাদ গ্রহণ কর । Absolute world এর একটা member হয়ে নিজের কর্ত্তব্য পালন কর এবং নিজের যেটুকু দরকার সেটুকু নাও তাঁর ভাণ্ডার থেকে । আর এইভাবে করলেই তোমাকে পাপের ফল ভোগ করতে হবে না । তুমি যে জীব হত্যা করছ, যেমন লতাপাতা শাকসজী গ্রহণ করছ এগুলিরও প্রাণ আছে, কিন্তু তাঁর উদ্দেশ্যে সেগুলো যখন ব্যবহৃত হবে তখন সেগুলি নষ্ট হবার জন্য কোন পাপই হবে না, কারণ সকলের একটা সম্বন্ধ সেখানে অর্থাৎ centre-এর সঙ্গে আছে । তিনি হচ্ছেন পরতত্ত্ব তিনিই ভোক্তা । জার্মান philosopher হেগেল সাহেব বলেছেন—‘Reality is by itself and for itself’ সবই তাঁর জন্য ; তা নাহলে বাস্তবতা হয় না । পরতত্ত্ব হতে গেলে পরম কারণ হতে গেলে তাঁর এ দু’টি বৈশিষ্ট্য থাকতেই হবে—‘By itself’ এবং ‘For itself’ । ‘By itself’ হচ্ছে তিনি নিজেই নিজের কারণ’ । তাঁকে যদি কেউ জন্ম দেয় তাহলে যে জন্ম দিয়েছে সে বড় হয়ে যাবে । অতএব যদি তিনি মূলবস্তু হন তাহলে তিনি নিজেই নিজেকে সৃষ্টি করে আছেন অর্থাৎ স্বয়ম্ভু বা eternal । আর একটি হচ্ছে ‘For itself’ অর্থাৎ ‘তিনি নিজের জন্যই আছেন ।’ তিনি যদি অন্য কারো জন্য হন তাহলে সে বড় হয়ে যাবে । তাই তিনি সবকিছুর বড়, আর সবকিছু তাঁরই জন্য । গীতায় বলেছেন— অহং হি সর্ব্বযজ্ঞানাং ভোক্তা চ প্রভুরেব চ । অর্থাৎ ‘সবকিছু আমারই জন্য আমিই সবকিছুর ভোক্তা । আর আমিই সকলের প্রভু, তোমরা আমার দাস । আমিই ‘one whole Absolute’জীব যখন এই understanding এ পৌঁছায় যে ভগবানই সবকিছুর ভোক্তা ও মালিক—
ভোক্তারং যজ্ঞতপসাং সর্ব্বলোকমহেশ্বরম্ । প্রশ্ন হতে পারে, মনকে সেই স্তরে নেওয়াটা কি করে সম্ভব হবে । এবিষয়ে অনেক calculation করে মোটামুটি এটা বলা হয়েছে যে, ‘association is the best and most forceful thing to convert.’ সঙ্গগুণের প্রভাব আমরা জীবনের প্রতি পদক্ষেপেই অনুভব করি । যখন কোন ঔষধে কাজ করছে না তখন মানুষ change-এ যায়, সেখানে জ্ঞাতসারে অজ্ঞাতসারে সেখানকার জলবায়ুতে শরীরটাকে ভাল করে দেয় । আমি হয়ত বুঝতে পারছি না কিন্তু সেখানকার আবহাওয়াই আমাকে ভাল করে দেয় । তেমনি good association, যেখানে সেরকম ভাবের চিত্তবৃত্তি আছে সেই atmosphere-এ নিজেকে ফেলতে হবে, ফেললে পরে সেই জিনিষ automatically আসবে, association-এর প্রভাবে আমার পরিবর্ত্তন ঘটবে । আমার যেসব খারাপ দিক যেমন—স্বার্থপরতা, হিংসা, দ্বেষ ইত্যাদি সবই সেই ভাল ভাবের দ্বারা নষ্ট হয়ে যাবে । যেমন ময়লা জল ভাল জলের সঙ্গে মিশে ভাল হয়ে যায় । তাই সাধুসঙ্গ ও শাস্ত্র এই দুইয়ের প্রভাবে প্রভাবিত হওয়ার প্রয়োজন । সাধুসঙ্গ ও শাস্ত্র খুবই powerful জিনিষ । যে এই দুটি জিনিষকে আদরের সঙ্গে গ্রহণ করতে পারে তার পক্ষেই নিজের ভুল সংশোধন করে সম্মুখের দিকে অগ্রসর হওয়া সম্ভব । আর তা না হলে মনকে বশে আনা খুবই কঠিন । গীতায় শ্রীভগবানকে অর্জ্জুন বলছেন ‘চঞ্চলং হি মনঃ কৃষ্ণ প্রমাথি বলবদ্দৃঢ়ম্’ অর্থাৎ মন স্বভাবতই চঞ্চল, এই চঞ্চল মন স্থির করা খুবই কঠিন । এর উত্তরে শ্রীভগবান বলছেন—, ‘অভ্যাসেন তু কৌন্তেয় বৈরাগ্যেন চ গৃহ্যতে,’ অর্থাৎ সদ্গুরুর উপদেশ মত পরমেশ্বরের ধ্যানযোগের পুনঃ পুনঃ অভ্যাস এবং বিষয়ের প্রতি বৈরাগ্যের দ্বারা সেই মনকে বশীভূত করা যায় । আমাদের যে পরিবর্ত্তন ঘটে অর্থাৎ আমরা কিছু গ্রহণ করি তা আমাদের ইন্দ্রিয়গুলির মধ্যে দিয়েই সম্ভব হয় । শ্রীমদ্ভাগবতের প্রথমে আমরা দেখতে পাই, পরীক্ষিত মহারাজ বলছেন—আমার পুঁজি এই পাঁচটি—চক্ষু, কর্ণ, নাসিকা, জিহ্বা ও ত্বক ; এরই মধ্য দিয়ে আমরা কিছু লাভ করতে পারি । সেগুলিকে কিভাবে utilise (ব্যবহার) করলে পরম মঙ্গল লাভ করব, আমার সাতদিন মাত্র পরমায়ু, কৃপা করে আপনি বলুন । আমি কি করে এগুলির best utilise (সর্ব্বোত্তম ব্যবহার) করতে পারি যাতে আমার প্রকৃত কল্যাণ হয় । তার উত্তরে শুকদেব বললেন সমস্ত শ্রীমদ্ভাগবত । বড় বড় ঋষিরা সকলে চুপ করে শুনলেন । সাতদিন অনবরত চলল ভাগবত কীর্ত্তন । এই ভাবেতে জবাব সব দেওয়া আছে, সে সব আলোচনা করতে হবে । মানুষ জন্ম পেয়েছি আমরা মরে গেলে যে মানুষ হব তার কোন নিশ্চয়তা নেই । কোথায় যে posted হব তার কোন ঠিক নেই । কেননা আমাদের ভেতরে কত রকমের আশা, আকাঙ্খা ও সংস্কার রয়েছে, কত সব কাজ করেছি সে সব সূক্ষ্মভাবে সুরক্ষিত আছে, আর সে সব বাসনা অনুযায়ী আমাদের জন্ম হবে । সুতরাং মানুষ জন্মেই নিজেকে একটু help (সাহায্য) করা যায় । এই জন্মে যে independence (স্বাধীনতা) পেয়েছি, যে স্বাতন্ত্র্যটুকু আছে তার সদ্ ব্যবহার করি তাহলে হয়ত এমন হতে পারে যে এই ভাল কাজের দ্বারা আমি এমন অবস্থায় যেতে পারি যেখানে পূর্ব্ব কর্ম্ম ফল আর ভোগ করতে হবে না । সেগুলি সব ভেতরেই suppress করা যায়, ধ্বংস করা যায় । সুতরাং শাস্ত্রে পুনঃ পুনঃ বলছেন মনুষ্য জন্মকে পশু জন্মের মত ব্যবহার করতে যেয়ো না । আহার, নিদ্রা, ভয় ও মৈথুন সব জন্মেই পাওয়া যেতে পারে । কুকুর রাস্তায় ঘুমিয়ে যে সুখ পাবে তুমি ভাল বিছানায় ঘুমিয়েও সে সুখ পাবে না । শূকর বিষ্টা ভোজন করে যে তৃপ্তি পাবে, তুমি পঞ্চব্যঞ্জন দিয়ে খেয়েও সে তৃপ্তি পাবে না । সুতরাং এগুলি যেখানে যাবে সেখানেই পাবে, কেউ কেড়ে নেবে না । কিন্তু তোমার eternal life (শাশ্বত জীবন) এর যে চক্র চলছে তার থেকে বেরিয়ে আসবার ব্যবস্থা এক এই মনুষ্য জন্ম ছাড়া আর কোন জন্মেই সম্ভব নয় । অতএব এই মনুষ্য জন্ম পেলেই তোমার সেই eternal life এর solution (সমাধান)-এর জন্য যা করণীয় তাই করবে । এই ভাবে জীবন ধারণই হচ্ছে বুদ্ধিমত্তা । আর যদি না করলে যে chance (সুযোগ)-টা তুমি miss (হারালে) করলে তাতে suicide (আত্মহত্যা) করা হল । এই valuable (মূল্যবান) মনুষ্য জন্মটা পশুর কার্য্যে দেওয়া মানেই সোনা দিয়ে গর্ত্ত বোঝাই করা, এর চেয়ে দুঃখের আর কি হতে পারে । অতএব দুর্ল্লভ মনুষ্য জন্ম লাভ করে পূর্ব্বজন্ম ও ইহজন্মে নিজের যে কৃতকর্ম্ম সেগুলি থেকে নিস্তার পাওয়ার জন্য সদ্গুরুর চরণাশ্রয় ও শাস্ত্রালোচনার প্রয়োজন । স্বপ্নেতে যে দেহ দেখি সেরকম জগৎ আছে, separate system (পৃথক ব্যবস্থা) যা খুশী ইচ্ছামত অরাজকতা করা চলবে না । এখানের চেয়েও ভাল ‘systematic Govt.,’ যেখানে বিচার হয় । আমাদের দেহটা তো একটা খোসা পড়ে থাকে এখানে, party তো সেখানে । আসল চেতন যে অনুভূতি, যা সুখ দুঃখ অনুভব করছে সেটাতো সেই সাত্ত্বিক দেহের ভেতরে আছে । আমরা সুখ দুঃখ অনুভব করি এই চেতনার দ্বারা । আমাদের ভয় দুঃখের । সুখ চাই আর দুঃখকে এড়াতে চাই । দুঃখর solution (সমাধান) টা আমরা চাই । স্বপ্ন দেহের মনের মধ্যেই চেতন থাকে, সেইটিই বেরিয়ে যায় আর এখানে ওখানে গিয়ে দুঃখ ভোগ করে । এখন এই যে দুঃখ একে এড়াবার জন্য উপায় অনুসন্ধান করতে হবে, নিজের গরজে এসব অনুসন্ধান করতে হবে । নিজের solution নিজে না করলে কে করে দেবে । গীতায় ভগবান বলছেন —
উদ্ধরেদাত্মনাত্মানং নাত্মানমবসাদয়েৎ ।
|
শ্রীশ্রীগুরু-গৌরাঙ্গ-প্রণতি PDF ডাউনলোড (26.7 Mb) |
||||||
বৃক্ষসম ক্ষমাগুণ করবি সাধন । প্রতিহিংসা ত্যজি আন্যে করবি পালন ॥ জীবন-নির্ব্বাহে আনে উদ্বেগ না দিবে । পর-উপকারে নিজ-সুখ পাসরিবে ॥ | |||||||
© Sri Chaitanya Saraswat Math, Nabadwip, West Bengal, India. For any enquiries please visit our contact page. |