আমাদের শ্রীগুরুপরম্পরা :
শ্রীশ্রীল ভক্তিনির্ম্মল আচার্য্য মহারাজ শ্রীশ্রীল ভক্তিসুন্দর গোবিন্দ দেবগোস্বামী মহারাজ শ্রীশ্রীল ভক্তিরক্ষক শ্রীধর দেবগোস্বামী মহারাজ ভগবান্ শ্রীশ্রীল ভক্তি সিদ্ধান্ত সরস্বতী গোস্বামী ঠাকুর
              প্রভুপাদ
“শ্রীচৈতন্য-সারস্বত মঠে সূর্যাস্ত কখনই হয় না” :
আমাদের মঠের পরিচয় ও বৈশিষ্ট্য
 
আমাদের সম্পর্কে শ্রীউপদেশ শ্রীগ্রন্থাগার শ্রীগৌড়ীয় পঞ্জিকা ছবি ENGLISH
 

শ্রীভক্তিরক্ষক হরিকথামৃত


১৩ । আগুন জ্বালো, বাতাস আপনি আসবে

 

     আগুন জ্বালো, বাতাস আপনি আসবে । স্বয়ম্ অসিদ্ধঃ কথম্ অন্যান্ সাধয়েৎ—এর চেয়ে অনেক বড় কথা হ’ল “যারে দেখ তারে কহ কৃষ্ণ উপদেশ । আমার আজ্ঞায় গুরু হইয়া তার এই দেশ ।”
     যাঁরা গোষ্ঠ্যানন্দী সাধক, তাঁদের ‘আমার ভাল মন্দ কি কতটা হ’ল, সে দিকে খেয়াল নাই । শ্রীমন্মহাপ্রভুর এসিওরেন্স বাণী । এই আদেশের মধ্যেই তাঁরা নিজেদের ও অপরের মঙ্গল দেখে থাকেন । তুমি সাধক সিদ্ধ না হয়েও তুমি কৃষ্ণনাম প্রচার কর । এই আদেশের মধ্যেই মহাপ্রভু সাধকের প্রচারের অধিকার দিয়েছেন । শ্রীযাযাবর মহারাজের সন্ন্যাসের সময় শ্রীল প্রভুপাদ তাঁকে অভয় দিয়ে বলেছিলেন—ভয় করছে ?ভয় কি ? অভয় পদে শরণ নিতে যাচ্ছ । ‘যদ্বিভেতি স্বয়ং ভয়ম্’ । শ্রীমন্মহাপ্রভুর সংকীর্ত্তন যজ্ঞে আত্মহুতিই আমাদের সকলের সকলের একমাত্র রক্ষার উপায় । আমরা যে জিনিষের অনুশীলন করছি, তাতে বিষয়ীর বিষয় রোগের সঙ্গে সঙ্গে নিজেরও সর্ব্ববিধ রোগ সেরে যায় । ডাই টু লিভ্ ! বাঁচার অধিকার আমাদের সহজাত এবং বাঁচার মতই বাঁচতে হবে । সংকীর্ত্তনাগ্নিই আমাদের সত্তাকে ফিরিয়ে দিতে পারেন । “ভস্মী ভবন্তি রাজেন্দ্র মহাপাতককোটয়ঃ ।” যদি সত্যিকারের কৃষ্ণ কীর্ত্তন কর, তা’হলে তোমার আর কোন ভয় থাকবে না । পারমার্থিক আগুনের প্রয়োজন । নিজের কল্যাণ ও জীবকল্যাণের জন্য “আমার আজ্ঞায় গুরু হইয়া তার এই দেশ ।” শ্রোতাই তোমার সংকীর্ত্তনাগ্নিতে ইন্ধন দেবে । একবার শ্রীপাদ ভক্তিহৃদয় বন মহারাজ ভিক্ষা করতে গিয়ে এক পতিতালয়ে উঠে পড়েছিলেন । প্রভুপাদ তাই শুনে হরিকথা বলতে বলতে বলেছিলেন “আমি কি তাহলে ভুল করছি ? যারা বিষয়কে মলবৎ পরিত্যাগ ক’রে বাড়ী ঘর ছেড়ে চলে এসেছে, সেই সব ছেলেদের আবার বিষয়ীর দ্বারে দ্বারে পাঠাচ্ছি—কেন পাঠাচ্ছি ? আমি ভুল করি নাই । এই প্রসঙ্গে হরিদ্বারের দুই সাধুর গল্প বলেছিলেন । দু’জন সাধু দেখলেন, গঙ্গা জলে একটা কাল কম্বল ভেসে যাচ্ছে । তাই দেখে সেটা আনার জন্য একজন গিয়ে সেই কম্বলে হাত দিয়ে যেই তুলতে গেছে, কম্বলটা অমনি তাকে জড়িয়ে ধরেছে । আসলে সেটা ছিল ভালুক । সে ভেসে যেতে যেতে আশ্রয় মনে করে সাধুকেই জড়িয়ে ধরেছে । অপর সাধুটি দেখলেন যে ও কম্বল নিয়ে উঠছে না । তখন বললেন “আরে ভেইয়া কমলিকো ছোড় দে, চলা আও” । সে তখন বলছে “ভাইয়া হামতো কমলিকো ছোড় দেতা লেকিন কমলি হামকো ছোড়তা নেহি ।” সেই প্রকার বিষয় হতে দূরে থাকতে গেলেও বিষয় তোমাকে ছেড়ে দেবে না । তার সঙ্গে এতদিন যে মাখা মাখি ক’রে এলে, আজ তাকে তুমি কেউ নয় বললেই সে ছেড়ে দেবে কেন ? কোটি কোটি জন্মের সঙ্গে তার সম্পর্ক জড়িয়ে আছে । সে তোমার মজ্জায় মজ্জায় প্রবেশ ক’রে তোমার তুমিত্বকে বেদখল করে দিয়েছে । সুতরাং তাকে ছাড় বললেই সে ছাড়বে না । এটা অতি সত্য কথা । সুতরাং তাকে সরাতে গেলে তোমাকেও সেই প্রকার প্রকৃষ্ট উপায় গ্রহণ করতে হবে । “ইন্দ্রিয়াণি মনোবুদ্ধেরস্যাধিষ্ঠানমুচ্যতে ।” তোমার মন, তোমার বুদ্ধি, তোমার ইন্দ্রিয় প্রভৃতি ঘাঁটিগুলি সে বেদখল করে রেখেছে, সেই হেতু তারই বল হবে বেশী । অথচ তোমার কাজই হচ্ছে সেগুলি উদ্ধার করা । কৃষ্ণ-সম্বন্ধ-বিজ্ঞান-ই হচ্ছে তোমার একমাত্র ব্রহ্মাস্ত্র ।

     “তাবদ্ভয়স্য ভেতব্যম্ যাবদ্ভয়মনাগতম্ ।
     আগতন্তু ভয়ং বীক্ষ্য প্রতিকুর্য্যাৎ যথোচিতম্ ॥”

     বিদ্রোহ যখন ঘোষণা করছ, তখন প্রত্যাঘাতের জন্যও প্রস্তুত থাকতে হবে । মেহনত করতে হবে । কামাদীনাং শ্লোকে তার পরিচয় রয়েছে । অতএব বিষয়কে পিছনে ঠেলে দিলেই সে যাবে না । যুক্ত বৈরাগ্যই হচ্ছে বিষয় ত্যাগের প্রকৃষ্ট উপায় । ‘নির্ব্বন্ধঃ কৃষ্ণ সম্বন্ধে” না হলে হবে না । প্রভুপাদের গৌড়ীয়ের শিরোনামায় তাঁর নিজের লেখা এই বাংলা পয়ার দুটি থাকতো—

     শ্রীহরি সেবায়যাহা অনুকূল
     বিষয় বলিয়া ত্যাগে হয় ভুল ।
     আসক্তি রহিতসম্বন্ধ সহিত
     বিষয় সমূহ সকলি মাধব ॥
     এই হলো প্রভুপাদের ফর্ম্মুলা ।

     পারিপার্শ্বিকতা সৃষ্টি কর । ‘যারে দেখ তারে কহ কৃষ্ণ উপদেশ ।’ ‘কভু না বাধিবে তোমায় বিষয় তরঙ্গ ।’ মরিয়া হ’য়ে যাও । টোটালেটেরিএন্ ওয়ার্ । যে, যে অবস্থায় আছ, জেনো এইটাই বাঁচার একমাত্র পথ । শ্রীমহাপ্রভু বলছেন, ভেবো না যে আমি তোমাকে এগিয়ে দিয়ে নিশ্চেষ্ট থাক্বো । ‘পুনরপি’ এই ঠাঁই পাবে মোর সঙ্গ ।’ তুমি সৈনিক । তোমার সবটুকু দায়িত্বই আমাকে বহন করতে হচ্ছে । এই কাজের মধ্যেই তুমি আমাকে পাবে ।

 


 

← ১২. ভগবানের সঙ্গে যোগাযোগের উপায় ১৪. মা মুঞ্চ-পঞ্চ-দশকম্ →

 

সূচীপত্র:

শ্রীশ্রীগুরু-গৌরাঙ্গ-প্রণতি
নম্র নিবেদন
প্রণতি-দশকম্
শ্রীগুরু আরতি-স্তুতি
শ্রীল ভক্তিরক্ষক শ্রীধর দেবগোস্বামী মহারাজ সম্পর্কে
১। আত্মতত্ত্ব ও ভগবৎ-তত্ত্ব
২। জীবের চরম প্রাপ্তি
৩। সমস্যা ও সমাধান
৪। পরমার্থ লাভের পন্থা
৫। বন্ধন মুক্তির উপায়
৬। বৈষ্ণব জীবনে আনুগত্য
৭ । ধর্ম্ম শিক্ষা ও বিশ্বাস
৮ । শ্রীশরণাগতি
৯ । বজীবের স্বাধীন ইচ্ছার নিশ্চয়াত্মক স্বার্থকতা
১০ । সর্ব্বাবস্থায় ভগবানের কৃপাদর্শনেই প্রকৃত সুখ লাভ
১১ । মানব জীবনের কর্ত্তব্য
১২ । ভগবানের সঙ্গে যোগাযোগের উপায়
১৩ । আগুন জ্বালো, বাতাস আপনি আসবে
১৪ । মা মুঞ্চ-পঞ্চ-দশকম্


PDF ডাউনলোড (26.7 Mb)
বৃক্ষসম ক্ষমাগুণ করবি সাধন । প্রতিহিংসা ত্যজি আন্যে করবি পালন ॥ জীবন-নির্ব্বাহে আনে উদ্বেগ না দিবে । পর-উপকারে নিজ-সুখ পাসরিবে ॥