আমাদের শ্রীগুরুপরম্পরা :
শ্রীশ্রীল ভক্তিনির্ম্মল আচার্য্য মহারাজ শ্রীশ্রীল ভক্তিসুন্দর গোবিন্দ দেবগোস্বামী মহারাজ শ্রীশ্রীল ভক্তিরক্ষক শ্রীধর দেবগোস্বামী মহারাজ ভগবান্ শ্রীশ্রীল ভক্তি সিদ্ধান্ত সরস্বতী গোস্বামী ঠাকুর
              প্রভুপাদ
“শ্রীচৈতন্য-সারস্বত মঠে সূর্যাস্ত কখনই হয় না” :
আমাদের মঠের পরিচয় ও বৈশিষ্ট্য
 
আমাদের সম্পর্কে শ্রীউপদেশ শ্রীগ্রন্থাগার শ্রীগৌড়ীয় পঞ্জিকা ছবি ENGLISH
 

শ্রীভক্তিরক্ষক হরিকথামৃত


নম্র নিবেদন

 

     পরমারাধ্য শ্রীগুরুপাদপদ্ম ওঁ বিষ্ণুপাদ শ্রীল ভক্তিরক্ষক শ্রীধর দেবগোস্বামী মহারাজের অপ্রাকৃত হরিকথামৃতের কিছু অংশ বাংলা ভাষায় ‘অমৃতবিদ্যা’ নামে প্রকাশ পেয়েছিলেন সেটি নিঃশেষ হয়ে যাওয়ায় শ্রীগুরু-গৌরাঙ্গের কৃপায় সেটিই এবারে আরো একটু বর্দ্ধিত কলেবরে ‘শ্রীভক্তিরক্ষক হরিকথামৃত’ এই নামে প্রকাশ পেতে চলেছেন । এই প্রসঙ্গে শ্রীগুরুপাদপদ্মের হরিকথার বৈশিষ্ট্য ও মহিমা সম্পর্কে কিছু বলার ইচ্ছা হলেও আপন অযোগ্যতার জন্য মনে ক্ষোভ নিয়ে পরমারাধ্য শ্রীগুরুপাদপদ্ম ও পরমপূজ্য বৈষ্ণববৃন্দের কৃপা প্রার্থনা করে শ্রীগুরুপাদপদ্ম সম্পর্কে পূজনীয় গুরুবর্গ ও বৈষ্ণববৃন্দের কথাগুলিই তুলে ধরার চেষ্টা করছি ।
     পরমারাধ্য শ্রীগুরুপাদপদ্ম শ্রীল ভক্তিরক্ষক শ্রীধর দেবগোস্বামী মহারাজের মুখপদ্ম-নিঃসৃত হরিকথামৃত, অতিলৌকিক প্রজ্ঞানপ্রতিভা, অমূল্য রচনারত্নাবলী, দিব্য মহাভাগবতীয় চরিত্রে বিচিত্র রাগমাধুরীতে রচিত হয়েছে আনন্দলীল ভগবানের অনুপম অখিলরসামৃত-রূপ । যে সকল শ্রদ্ধালু ভাগ্যবান সুমেধগণ এই শ্রীরূপানুগ আচার্য্যশ্রেষ্ঠের হরিকথামৃত শ্রবণে শ্রুতিকে নন্দিত করেছেন, রচনা-সম্ভার পাঠ করে হৃদয়কে তৃপ্ত করেছেন তাঁরাই জানেন কি স্বাদু, শ্রীরূপানুগভক্তিসিদ্ধান্তপূর্ণ গভীর ভাব-অনুভূতিময় সেই প্রকাশ । তাঁরাই কোনো এক অনির্ব্বচনীয় প্রভাবে স্বতোৎসারিত সমাদরে, প্রেরণায়, শ্রদ্ধায় অভিভূত হয়ে আরাধ্য পাদপদ্মে নত হয়েছেন, ভালবেসেছেন তাঁকে । আমরা দেখেছি তাঁর মাঝে এই ভক্তিসিদ্ধান্ত-বাণী-বিলাস-বৈভব লক্ষ্য করে তাঁর অনেক প্রিয় সতীর্থগণ তাঁকে কত প্রগাঢ় সমাদর করে, শ্রেষ্ঠ সম্মানে ভূষিত করে শিক্ষাগুরুর মহিমাময় সিংহাসনে বরণ করে ভালবেসেছেন, শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন । এ প্রসঙ্গে আমাদের পরমপূজ্যপাদ আচার্য্যবর্গ যেমন শ্রীল ভক্তিবিচার যাযাবর মহারাজ, শ্রীল ভক্তিকমল মধুসূদন মহারাজ, শ্রীল ভক্ত্যালোক পরমহংস মহারাজ প্রমুখ ভাগবতগণের শ্রীমুখ থেকে শ্রীল গুরুমহারাজ-সম্বন্ধীয় কিছু কথা শোনার সৌভাগ্য হয়েছে । কখনও ভাষণে, কখনও একান্তে একাধিকবার তাঁদের বিবিধভাবে বলতে শুনেছি ‘শ্রীল শ্রীধর মহারাজের হরিকথা শুনলে মনে হয় যেন শ্রীল প্রভুপাদের মুখ থেকে হরিকথা শুনেছি । … শ্রীল শ্রীধর মহারাজের মধ্যে আমরা শুদ্ধ রূপানুগ ভক্তিসিদ্ধান্ত সরস্বতী ধারা দেখতে পাই ।’ পরম পূজ্যপাদ শ্রীল ভক্তিকঙ্কন তপস্বী মহারাজ গুরুমহারাজ সম্পর্কীয় বক্তৃতার মাঝে বলেন—“শ্রীল প্রভুপাদ বলেছিলেন যে শাস্ত্রনিপুণ শ্রীধর মহারাজ । ‘শ্রীরূপমঞ্জরীপদ’ কীর্ত্তন গান করিয়ে প্রভুপাদ শ্রীল শ্রীধর মহারাজকে আত্মসাৎ করে গেলেন । … শ্রীভক্তিরক্ষক নামে ভূষিত করে প্রভুপাদ তাঁকে ভক্তির রক্ষণ, শ্রীরূপানুগ সম্প্রদায়কে সংরক্ষণ ও পোষণের ভার দিয়ে গেলেন ।” পরম অর্চ্চনীয় আচার্য্যভাষ্কর শ্রীল ভক্তিসিদ্ধান্ত সরস্বতী প্রভুপাদ শ্রীল গুরুমহারাজের শ্রীভক্তিবিনোদ বিরহদশকম দেখে happy style বলে প্রশংসা করেছেন এবং উত্তরকালে সম্প্রদায় সেবার শুভেচ্ছা ও আশা প্রকাশ করেছিলেন ।
     পরমপূজ্যপাদ শ্রীল ভক্তিপ্রমোদ পুরী গোস্বামী মহারাজ গুরুপাদপদ্ম শ্রীল ভক্তিরক্ষক শ্রীধর দেবগোস্বামী মহারাজ ও তাঁর হরিকথা সম্পর্ক যে সব কথা লিখে রেখেছেন সেগুলি আজও আমাদেরকে অনুপ্রাণিত করছে । তাঁর বলিষ্ঠ লেখনীতে তিনি লিখেছেন “পূজ্যপাদ শ্রীধর মহারাজের এক একটি বক্তৃতা এক একটি থিসিস্ তুল্য । আমি একবার তাঁহার গীতা সম্বন্ধে ভাষণ শ্রবণ করিয়া অত্যন্ত বিস্মিত হইয়াছিলাম ।” এছাড়া শ্রীল গুরুমহারাজের ব্রহ্মগায়ত্রীর ব্যাখ্যা ও অন্যান্য রচনাবলী শ্রীল ভক্তিপ্রমোদ পুরী গোস্বামী মহারাজ বিশেষ আগ্রহের সঙ্গে পড়তেন সেটি দেখার সুযোগ আমার হয়েছিল । আর এক জাগায় তিনি লিখেছেন “পূজ্যপাদ শ্রীধর মহারাজের নিত্য নব-নবায়মান ভাববৈচিত্র্যসহ হরিকথা কীর্ত্তন সত্যই অতীব হৃৎকর্ণরসায়ণ, শ্রদ্ধালু শুশ্রুষু মাত্রেই তাঁর কথামৃত পরিবেশন ভঙ্গীকে সর্ব্বোতভাবে সমাদর করিয়া থাকেন । … আমাদের আরও আনন্দের বিষয় যে পাশ্চাত্যদেশের বহু সত্যানুসন্দিৎসু সজ্জন পূজ্যপাদ মহারাজের শ্রীমুখে ভগবৎকথা শ্রবণে আকৃষ্ট হইয়া তাঁহার শিষ্যত্ব গ্রহণ করিয়াছেন এবং তাঁহার আনুগত্যে বিপুল উদ্যমে ভজন সাধনে ব্রতী হইয়াছেন ।”
     সারা বিশ্বে কৃষ্ণভাবনা প্রচারকারী বিশ্বরেণ্য পরমপূজ্যপাদ শ্রীল এ. সি. ভক্তিবেদান্ত স্বামী মহারাজের একটি ভাষণ এই গ্রন্থের প্রথমেই আছে, যাতে তিনি শ্রীল ভক্তিরক্ষক শ্রীধর দেবগোস্বামী সম্পর্কে বলতে গিয়ে তাঁকে তাঁর শিক্ষা গুরুরূপে উল্লেখ করেছেন । পরমপূজ্য শ্রীল কৃষ্ণদাস বাবাজী মহারাজ শ্রীল গুরু মহারাজের শ্লোকাদি রচনাসমূহকে শ্রীল রূপ গোস্বামীর রচনার সঙ্গে অভিন্ন বলে মন্তব্য করেছেন । এমনি করে আরও অনেকেই তাঁর হরিকথার ও দিব্য ভজন জীবনের বহুল প্রশংসা করে গেছেন । শ্রীল গুরু মহারাজ তাঁর অন্তলীলায় ইংরাজী ভাষায় পাশ্চাত্যদেশাগত ভক্তবৃন্দকে যে কথামৃত দান করেছেন সেইগুলি আজ বেশ কয়েকখানি সুন্দর সুন্দর গ্রন্থ রূপে পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষায় প্রকাশিত হয়ে জগৎজীবের অশেষ মঙ্গল বিধান করছে ।
     অযোগ্যতাবশতঃ এখানে সামান্য কিছু শ্রীগুরু-মুখপদ্ম-নিঃসৃত হরিকথা তুলে ধরার প্রয়াস করেছি । এই অভক্ত প্রয়াসে ভূল-ক্রুটীর জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করি । ইতি—

বিনীত
প্রকাশক

 


 

← শ্রীশ্রীগুরু-গৌরাঙ্গ-প্রণতি প্রণতি-দশকম্ →

 

সূচীপত্র:

শ্রীশ্রীগুরু-গৌরাঙ্গ-প্রণতি
নম্র নিবেদন
প্রণতি-দশকম্
শ্রীগুরু আরতি-স্তুতি
শ্রীল ভক্তিরক্ষক শ্রীধর দেবগোস্বামী মহারাজ সম্পর্কে
১। আত্মতত্ত্ব ও ভগবৎ-তত্ত্ব
২। জীবের চরম প্রাপ্তি
৩। সমস্যা ও সমাধান
৪। পরমার্থ লাভের পন্থা
৫। বন্ধন মুক্তির উপায়
৬। বৈষ্ণব জীবনে আনুগত্য
৭ । ধর্ম্ম শিক্ষা ও বিশ্বাস
৮ । শ্রীশরণাগতি
৯ । বজীবের স্বাধীন ইচ্ছার নিশ্চয়াত্মক স্বার্থকতা
১০ । সর্ব্বাবস্থায় ভগবানের কৃপাদর্শনেই প্রকৃত সুখ লাভ
১১ । মানব জীবনের কর্ত্তব্য
১২ । ভগবানের সঙ্গে যোগাযোগের উপায়
১৩ । আগুন জ্বালো, বাতাস আপনি আসবে
১৪ । মা মুঞ্চ-পঞ্চ-দশকম্


PDF ডাউনলোড (26.7 Mb)
বৃক্ষসম ক্ষমাগুণ করবি সাধন । প্রতিহিংসা ত্যজি আন্যে করবি পালন ॥ জীবন-নির্ব্বাহে আনে উদ্বেগ না দিবে । পর-উপকারে নিজ-সুখ পাসরিবে ॥