![]() |
|||||||
| |||||||
|
|||||||
শ্রীভক্তিরক্ষক হরিকথামৃত ১২ । ভগবানের সঙ্গে যোগাযোগের উপায়
ভয়ং দ্বিতীয়াভিনিবেশতঃ স্যাদ্ (ভাঃ ১১/২/৩৭) আমাদের ভয় এটা হচ্ছে দ্বিতীয়াভিনিবেশের জন্য, separate interest ই হচ্ছে আমাদের বিপদ সুতরাং Back to God Back to Home; কেননা একটা পাগলের যেমন সবই আছে, ছেলে-মেয়ে, পিতা-মাতা, সহায়-সম্পদ কিন্তু মাথাটা বিগড়ে গিয়েছে, রাস্তায় কাগজ কুড়িয়ে বেড়াচ্ছে, তাকে খানকতক কাগজ হাতে দিলেই তো তার সেবা করা হবে না, তার ব্রেইনটার যে এলোমেলোভাব সেইটাকে ঠিক করতে হবে । সেই রকম আমাদের আসল সমস্যা হচ্ছে God conscious অর্থাৎ ঈশ্বর চেতনা থেকে দূরে সরে আসার জন্য যে দ্বিতীয়াভিনিবেশ অর্থৎ ঈশ্বর সম্পর্ক হীন অন্য কিছু খুঁজতে এসে এই land of misconception এখানে নিয়ে এসেছে, আর এখানে মায়াবশতঃ স্বরূপের বিস্মৃতি ঘটছে । মায়া মানে ‘মৃয়তে অনয়া’, আর ‘মা-যা’ অর্থাৎ যাহা নয় । রবিঠাকুরের বিসর্জন নাটকে তিনি বলছেন মহামায়া মানে মহামিথ্যা, এই মহামিথ্যার পাল্লায় পড়ে এই misconception, separate interest আমাদেরকে ঘোরাচ্ছে । এখন এসব থেকে বেরুনোর উপায় বলতে গিয়ে বলেছেন—যজ্ঞার্থাৎ কম্মণোঽন্যত্র লোকঽয়ং কর্ম্মবন্ধনঃ । (গীতা) যজ্ঞ মানে ভগবদর্পিত নিষ্কাম-কর্ম অর্থাৎ ভগবৎ-প্রীতি সাধক কর্মই হচ্ছে যজ্ঞ । Action Reaction অর্থাৎ আমি আজ যাকে খাচ্ছি সে একদিন আমাকে খাবে এভাবে চলতে থাকবে আর এ হোতে বেরুনো অত্যন্ত কঠিন, কেবল ঐ কৌশল দিয়ে বেরুতে হবে, ‘যোগ কর্মসুকৌশলম্ ।’ যোগ কি ? সমস্ত কামনা বাসনা বিসর্জন দাও, লাভ লোকসান, জয়-পরাজয়, সুখ-দুঃখ সব বিসর্জন দিয়ে infinite -এর সঙ্গে কানেকশন্ কর । সেই প্লেনে যে ওয়েভ চলছে সেই ওয়েভের সঙ্গে তুমি হারমনিতে এস, এটি বাঁচবার বাঁচাবার শুধু নয়, এহল প্রকৃত সমৃদ্ধময় জীবন ।Land of dedication সেটা, সেখানে প্রত্যেকটা ইউনিট শুধু দেয়, নেয় না । ব্যাংকে টাকা জমা করে চেক কাটেনা । অর্থাৎ পরমেশ্বরকে শুধু সেবা করে যাওয়া বিনিময়ে কিছুর প্রত্যাশা নয় । এখানে exploitation করে বাঁচা মানেই একে অপরকে খাওয়া, আর সেখানে প্রত্যেকে কেবল নিজেকে দেয় । সেবা করে সেখানে আনন্দ পাওয়া যায় । চন্দন ঘষলেই যেমন অতি সুন্দর সৌরভ উঠে তেমনি প্রত্যেকে সেবা করছে বলে সেখানে হলাহলের পরিবর্তে অমৃত উত্থিত হচ্ছে । সুতরাং, এই আত্মদান সেটার আবার দুই স্তর । প্রথম স্তরে বৈকুন্ঠতে সেটা constitutional, আইন মেনে চলা, শাস্ত্র মেনে চলা আর উপরে সেটা continious—অটোমেটিক love of labour, সেখানে প্রত্যেকে নিজেকে বিতরণ করছে । এই হলো গোলক-বৃন্দাবনের পরিচয় । সেখানে শ্রীকৃষ্ণ তিনিই হচ্ছেন Reality the Beautiful, আর এই জগত শাসন করবার মূল কারণ হচ্ছে প্রীতি, সৌন্দর্য্য—সত্যম্-শিবম্-সুন্দরম্, সৎ-চিৎ-আনন্দ, তিনিই প্রাইম কজ, তিনিই শাসন করছেন । এই সবই হচ্ছে মহা প্রভুর চিন্তাধারা । এখন সেখানে যাওয়া যেতে পারা যায় যদি সেইরকম যোগাযোগ করা যায়, মহাপ্রভু বলছেন—
ব্রহ্মাণ্ড ভ্রমিতে কোন ভাগ্যবান্ জীব । (চৈঃ চঃ মধ্য ১৯/১৫১-১৬৩) এখন গৌড়ীয় সম্প্রদায় কি প্রচার করে ? একটা হচ্ ফচ্ পাঁচ মিশুলি খিচুড়ি পাকিয়ে বুঝিয়ে দেওয়া, এই প্রকারের নয়, সূক্ষ্ম বিচার, শাস্ত্রের চুল-চেরা বিচার করে গোস্বামীগণ দেখিয়ে গেছেন, মহাপ্রভুর প্রেরণা অনুসারে শ্রীসনাতন গোস্বামী, শ্রীরূপ গোস্বামী, শ্রীজীব গোস্বামী দেখিয়ে গেছেন । আর গৌড়ীয় মঠ মানে Comparative study of Theology ।প্রশ্নঃ যে গোলকের কথা বলা হচ্ছে সেখানে কি ভাবে যাওয়া যেতে পারে ? গুরুমহারাজঃ হাঁ, সেখানে যাবার উপায় আছে, আদৌ শ্রদ্ধা এই লাইনে যেতে হবে । শ্রদ্ধা কাকে বলে ? ‘শ্রদ্ধা শব্দে বিশ্বাস কহে সুদৃঢ় নিশ্চয় / কৃষ্ণে ভক্তি কৈলে সর্ব কর্ম কৃত হয় ।’ এই ধরনের একটা সেন্ট্রাল ট্রুথ আছে—
যস্মিন জ্ঞাতে সর্ব্বমিদং বিজ্ঞাতং ভবতি
যথা তরোর্মূলনিষেচনেন সর্ব্বধর্ম্মান্ পরিত্যজ্য মামেকং শরণং ব্রজ । অহং ত্বাং সর্ব্বপাপেভ্য মোক্ষয়িস্যামি মা শুচঃ ॥ তার justification কি ? আমার মনে আছে ছেলে বেলায় যখন ঝোক ছিল সাধু হয়ে যাব তখন গীতা পড়তে গিয়ে—শ্রেয়ান্ স্বধর্ম্মো বিগুণঃ পরধর্ম্মাৎ স্বনুষ্ঠিতাৎ । স্বধর্ম্মে নিধনং শ্রেয়ঃ পরধর্ম্মো ভয়াবহঃ ॥এই জায়গায় ঘাবড়ে যেতাম যে বেশী বাড়াবাড়ি করব না—পরধর্ম্ম ভয়াবহ । কিন্তু যখন আবার ‘সর্ব্বধর্মান পরিত্যজ্য মামেকং শরণং ব্রজ’ এই শ্লোকের চিন্তা করতাম তখন গায়ে বল হয়ে যেত । একটা কনষ্টিটিউশানেল মেথড্ আর একটা বৈপ্লবিক মেথড্ । ‘সর্ব্বধর্মান পরিত্যজ্য মামেকং শরণং ব্রজ’ এর জাষ্টিফিকেশন হচ্ছে, যে যেখানে আছ সমস্ত কর্তব্য পরিত্যাগ করে আমার দিকে এগোও, আমি রক্ষা করব চিন্তা নেই । এরকম আশ্বাসবাণীর ঘোষণা দিচ্ছেন, যেখানে যে পজিসনে আছ সব ছেড়ে Absolute Call এ সাড়া দাও । তখন Relative Call—এর কোন দাম থাকে না । দেশে যখন যুদ্ধ বাধে তখন জরুরী অবস্থা ঘোষণা করে দেওয়া হয়, তখন গভর্ণমেন্টের ক্ষমতা অনেক বেড়ে যায় তখন সাধারণের সম্পত্তি গভর্ণমেন্টের অধিকারে এসে যায় । সুতরাং Absolute Call মানেই যে যেখানে যে পজিসনে আছ আমার দিকে এগোও আমি দেখব । সুতরাং শ্রদ্ধা, ভক্তি এসব থাকা চাই । ভক্তি জন্মে কোথা হতে, ‘ভক্তিস্তু ভগবৎ ভক্ত-সঙ্গেন পরিজায়তে, ভক্তি জন্মে ভক্তের সঙ্গে । ‘কৃষ্ণভক্তি জন্ম মূল হয় সাধুসঙ্গ’, দীপ থেকে যেমন দীপের জন্ম তেমনি সাধুর ভেতর যে ফ্লেম ঐ ফ্লেম জ্বালিয়ে নাও তোমার হৃদয়েতে । আর সাধুসঙ্গ পাওয়া যায় কি করে ? সুকৃতির দ্বারা । সুকৃতি দুই প্রকার, জ্ঞাত সুকৃতি আর অজ্ঞাত সুকৃতি হয় । সেটা জেনেও হতে পারে না জেনেও হতে পারে । আমার অজানা অবস্থায় হলে অজ্ঞাত সুকৃতি । তারপর শ্রদ্ধা faith ভেতরে এসে যায় । শ্রদ্ধা বা faith এবং সেটি প্রকৃত faith হওয়া চাই । প্রকৃত faith তাকে শ্রদ্ধা বলে । ‘শ্রদ্ধাময়োং লোক’ উপনিষদে এই কথা বলেছেন । যেমন কান থাকলে শব্দ জগৎ আছে । চোখ থাকলে রূপ জগৎ আছে তেমনি শ্রদ্ধা থাকলে ঐ ভগবৎ-ধাম আছে । শ্রদ্ধার সাহায্যে সেই লোকটাকে দেখা যায়, অনুভব করা যায় ‘বিশ্বপূর্ণ সুখায়তে’ ।
|
শ্রীশ্রীগুরু-গৌরাঙ্গ-প্রণতি PDF ডাউনলোড (26.7 Mb) |
||||||
বৃক্ষসম ক্ষমাগুণ করবি সাধন । প্রতিহিংসা ত্যজি আন্যে করবি পালন ॥ জীবন-নির্ব্বাহে আনে উদ্বেগ না দিবে । পর-উপকারে নিজ-সুখ পাসরিবে ॥ | |||||||
© Sri Chaitanya Saraswat Math, Nabadwip, West Bengal, India. For any enquiries please visit our contact page. |