![]() |
|||||||
| |||||||
|
|||||||
শ্রীপুরীধাম মাহাত্ম্য-মুক্তা-মালা রামানন্দ রায়ের পুনর্মিলন ও প্রকৃতি
যখন মহাপ্রভু বললেন যে, তিনি দক্ষিণ দেশে ভ্রমণ করতে যাবেন, তখন সার্বভৌম ভট্টাচার্য্য তাঁকে বললেন, “গোদাবরী তীরে তোমার মত একজন রসিক ভক্ত আছে । তাঁর নাম রামানন্দ রয় । তুমি ওখানে গিয়ে তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ কর ।” তখন দক্ষিণ দেশে গিয়ে মহাপ্রভুর রামানন্দ রায়ের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ হল । তাঁদের মধ্যেও অনেক কথা-বর্থা হয়েছিল । শেষ পর্যন্ত মহাপ্রভু তাঁকে বললেন, “আমি যখন পুরীতে ফিরে যাব, তখন তুমিও চলে এস । আমি তোমার ছেড়ে আরও থাকব না ।” শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য প্রভু জীবে দয়া করি’ । স্বপার্ষদ স্বীয় ধাম সহ অবতরি ॥ রাধার ভাবে বিভাবিত হয়ে শ্রীকৃষ্ণ গৌর হয়ে গেলেন আর রাধারাণীকে কে সাহায্য করতেন ? ললিতা ও বিশাখা । তাই দ্বাপর-যুগে স্বরূপ দামোদর ছিলেন ললিতা আর বিশাখা রামানন্দ রায়ের রূপে অবতীর্ণ হয়েছিলেন । তাঁরা উভয় সব সময় মহাপ্রভুর সঙ্গেই থাকতেন । রামানন্দ রায় রাজার মন্ত্রী ছিলেন । যখন মহাপ্রভু তাকে পুরীতে যেতে বললেন, তিনি রাজা প্রতাপরুদ্রের কাছে গিয়ে তাঁকে জানালেন যে, তিনি চাকরি ছেড়ে দিয়ে পুরীতে মহাপ্রভুর সঙ্গে থাকবেন । রাজা তাঁকে বললেন, “হ্যাঁ, যাও, নিশ্চয়ই যাও ! ভাল করে সেবা কর আর তুমি যত দিন বাঁচবে, তত দিন আমি নিজে তোমার সম্পূর্ণ বেতন দিয়ে দেব । তুমি মহাপ্রভুর সেবা কর, তোমার এখানে কিছু কাজ করতে হবে না ।” সেইভাবে রাজার অনুমতি নিয়ে রামানন্দ রায় পুরীতে এসে গিয়ে জগন্নাথ মন্দিরের পাশাপাশি বাস করতে লাগলেন । যেখানে তিনি বাস করতেন, সেখান জগন্নাথদেবের উদ্যান আছে । যে জগন্নাথদেবের মালা হয়, ফুল হয়, তুলসী হয়, সব সেখান থেকে যায় । সেইজন্য সেই জায়গাকে জগন্নাথ-উদ্যানও বলা হয় ।
এক দিন একজন ব্রাহ্মণ প্রদ্যুম্ন মিশ্র নামে মহাপ্রভুর কাছে এসে বললেন, “প্রভু, আমাকে একটু কৃষ্ণকথা শোনাবেন ?” মহাপ্রভু বললেন, “আমি কৃষ্ণ কথা জানি না । যদি আপনি কৃষ্ণ কথা শুনতে চান, তাহলে রামানন্দ রায়ের কাছে যান । তিনি সব জানেন ।” তখন প্রদ্যুম্ন মিশ্র রামানন্দ রায়ের বাড়িতে চলে গেলেন । এসে একজনকে জিজ্ঞেস করলেন, “রামানন্দ রায় প্রভু কোথায় ?” ভৃত্যটা বললেন, “তিনি একটু কাজে ব্যস্ত আছেন ।” তখন তিনি দেখতে পেলেন যে, বাগানের মধ্যে জগন্নাথের যে যুবতী ১৩-১৬ বছর মেয়েদেরকে সেবিকা আছে, তিনি তা বাগানের মধ্যে নিয়ে জগন্নাথের সেবার জন্য নিজের হাতে কাপড় পরাচ্ছেন, নিজ হাতে মালা পরাচ্ছেন আর নাচ-গান শিখাচ্ছিলেন । প্রদ্যুম্ন মিশ্রের এটা দেখে ভাল লাগল না । মন খারাপ হয়ে গেল—তিনি ভাবলেন, “এই সাধু মানুষ মেয়েদের গায়ে হাত দিচ্ছে, মেয়েদের কাপড় পরাছেন, এ সব কী হচ্ছে ?” তিনি অপেক্ষা না করে মাহপ্রভুর কাছে ফিরে এলেন । মহাপ্রভু তাঁর চিন্তিত মুখ দেখে জিজ্ঞেস করলেন, “কী ব্যাপার ? কৃষ্ণকথা শুনেছেন ?” প্রদ্যুম্ন মিশ্র বললেন, “আমার ওখানে ভাল লাগল না ।” মহাপ্রভু তাঁর মন বুঝতে পেরে বললেন, “দেখুন, আমি সন্ন্যাসী হয়েও প্রাকৃত মেয়েদের ছবি দেখলে আমার মনও বিকৃত হতে পারে কিন্তু রামানন্দ রায় মেয়েদের নিজ হাতে অঙ্গ স্পর্শ করছেন কিন্তু তাঁর মন বিকৃত হচ্ছে না ! তুমি কি ভাবছ সে সাধারণ মানুষ ? যখন তিনি এ সব করেন, তিনি তখন গোপী হয়ে যান—তাঁর তখন কোন পুরুষ অভিমান থাকে না । এই জগতে শুধু এক রামানন্দ রায় আছে, আর কেউ তাঁর মত দ্বিতীয় নেই । আপনি আবার তাঁর কাছে যান ।” পরের দিন প্রদ্যুম্ন মিশ্র আবার রামানন্দ রায়ের বাড়িতে গেলেন । রামানন্দ রায় তাঁকে দেখে কাছে এসে বললেন, “প্রভু, আমার অপরাধ হয়ে গেছে, আপনি কালকে এসেছিলেন কিন্তু আমি ব্যস্ত হয়ে সময় দিতে পারি নি আর আপনি চলে গেলেন । আপনি কিছু বলতে চাইছেন ? আপনার কিছু প্রশ্ন আছে ?” তখন প্রদ্যুম্ন মিশ্র কিছু প্রশ্ন করে তাঁকে কৃষ্ণকথা বলতে অনুরোধ করেছিলেন আর রামানন্দ রায়ের মুখে মহাপ্রভু নিজে বক্তা হয়ে তিনি বিকাল থেকে সারা রাত ধরে কৃষ্ণকথা বলেছিলেন । রাতে প্রসাদ চলে এসেছিলেন কিন্তু প্রসাদের দিকে উভয়ের মনও নেই । যখন সকালবেলা সূর্য উঠে গেছে, তখন প্রদ্যুম্ন মিশ্র বললেন, “প্রভু, অনেক হয়েছে, আজকে আসি ।” তারপর প্রদ্যুম্ন মিশ্র মহাপ্রভুর কাছে গিয়ে বললেন, “প্রভু, আপনি আমাকে সত্যিকারের লোকের কাছে পাঠিয়েছেন ! সত্যই উনিই কৃষ্ণ কথা জানেন ।” সেই রকম কৃষ্ণ কথা রামানন্দ রায় বললেন আর তিনি ও স্বরূপ দামোদর সব সময় মহাপ্রভুর সঙ্গে থাকতেন । এই দুইজন সব সময় মহাপ্রভুর কাছে থেকে সারাদিন আর সর্বক্ষণ কৃষ্ণকথা আলোচনা করতেন । নিজ জন প্রিয় লোক না হলে, কার সঙ্গে কৃষ্ণকথা বলা যায় ? যেখানে কিছু নিজ প্রিয় জন না থাকে, সেখানে কারও কাছে কৃষ্ণকথা বলা যায় না । গুরুমহারাজও বললেন : “মহাপ্রভুর যাওয়ার পর সমস্ত পৃথিবীতে, বিশেষ ভাবে পুরীধামে, ভক্তগণের মন অত্যন্ত দুঃখিত হয়ে পড়ল । অনেক ভক্তগণও তখন দেহ ছেড়ে দিলেন, স্বরূপ দামোদরও মহাপ্রভুর চলে যাওয়ার পরে চলে গিয়েছিলেন কিন্তু রামনন্দ রায় রয়েছেন আর সবাইকে লালনপালন করতেন, সব ঝামেলা manage (ম্যানেজ) করতেন । তাঁর লালনপালন দ্বারা পুরীধামে সব আবার স্থির হয়ে গেল । আমরা জানি না মহাপ্রভু তাঁকে এরকম আদেশ দিয়েছিলেন কি না, কিন্তু আমরা দেখতে পারছি যে, যদি রামানন্দ রায় না থাকতেন, সব অবস্থা খুব কষ্টকর ও শোচনীয় হত ।”
জয় শ্রীরায় রামানন্দ প্রভু কি জয় ।
|
অনন্তশ্রীবিভূষিত ওঁ বিষ্ণুপাদ পরমহংসকুলচূড়ামণি বিশ্ববরেণ্য জগদ্গুরু শ্রীশ্রীমদ্ভক্তিনির্ম্মল আচার্য্য মহারাজের পদ্মমুখের হরিকথামৃত
সূচীপত্র
সূচনা : |
||||||
বৃক্ষসম ক্ষমাগুণ করবি সাধন । প্রতিহিংসা ত্যজি আন্যে করবি পালন ॥ জীবন-নির্ব্বাহে আনে উদ্বেগ না দিবে । পর-উপকারে নিজ-সুখ পাসরিবে ॥ | |||||||
© Sri Chaitanya Saraswat Math, Nabadwip, West Bengal, India. For any enquiries please visit our contact page. |