| |||||||
|
|||||||
শ্রীপুরীধাম মাহাত্ম্য-মুক্তা-মালা সূচনা : শ্রীজগন্নাথদেব
আমরা যখন শ্রীপুরীধামে শ্রীজগন্নাথদেব দর্শন করতে আসি, তখন শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য মহাপ্রভুর কথা চিন্তা করি এবং ভক্তসঙ্গে তাঁর ধাম, সমস্ত তীর্থস্থান যেখানে তিনি গিয়েছিলেন, সেখানে গিয়ে পরিক্রমা করি ।
গৌর আমার যে সব স্থানে করল ভ্রমণ রঙ্গে । (শ্রীলভক্তিবিনোদ ঠাকুর) অনেকেই জিজ্ঞেস করেন, “জগন্নাথদেবের বিগ্রহ কি করে হল ?” তার সম্বন্ধে একটা প্রাচীন ও সুন্দর ইতিহাস আছে ।
অনেক বছর আগে উড়িষ্যার রাজা ছিলেন রাজা ইন্দ্রদ্যুম্ন । রাজা হয়েও তিনি ভগবদ্ভক্ত ছিলেন : অত্যন্ত প্রীতি সহকারে ভগবদসেবা করতেন । একদিন রাজা ইন্দ্রদ্যুম্ন ভাবলেন, “আমি তো রাজা, আমার সবই আছে—রাজ্য আছে, ধন-দৌলত আছে, সুন্দরী রাণী আছে—কিন্তু শুধু একটিমাত্র জিনিস আমি জীবনে করতে পারিনি : আমি কখনও ভগবানকে সেবা করি নি !” তখন ভগবান তাঁর কাছে স্বপ্নে এসে বললেন, “আমি তোমার জন্য অপেক্ষা করছি । আমি তোমার রাজ্যেই আছি ! তুমি আমাকে খুঁজে বার কর ।” পরের দিন সকালবেলা রাজা ইন্দ্রদ্যুম্ন সমস্ত সৈন্য ডেকে দক্ষিণ, পশ্চিম ও উত্তর দিকে পাঠিয়ে দিয়ে আজ্ঞা দিলেন, “ভগবান আমার রাজ্যে লুকিয়ে আছেন । তোমরা তাঁকে খোঁজ করে নিয়ে এস ।” সবাই খুঁজতে আরম্ভ করলেন কিন্তু কেউ ভগবানকে খুঁজে পেলেন না । কিছু না পেয়ে, অনেক দিন পর সমস্ত সৈন্য ফেরৎ এসে গেলেন । রাজা ইন্দ্রদ্যুম্ন খুব দুঃখিত হয়ে পড়ে ভগবানকে প্রার্থনা করলেন । সেই সময় প্রধানমন্ত্রী বিদ্যাপতি রাজার কাছে এলেন । রাজা ওঁকে বললেন, “তুমি পূর্ব্ব দিকে যাও । ঠাকুরের নাম নিয়ে দেখবে তুমি যে কোন ভাবে ঠিকই ঠাকুরকে খুঁজে পাবে ।” বিদ্যাপতি পূর্ব্ব দিকে একা একা হাঁটতে শুরু করলেন । অনেক দূর হাঁটতে হাঁটতে একটা জঙ্গলের মধ্যে এলেন । সেই জঙ্গলে বিরাট পর্ব্বত আর নদী ছিল আর চারদিকে ঘন বন । তার মধ্যে তিনি হঠাৎ করে একটা ছোট কুটির দেখতে পেলেন আর তার পাশে একটি মেয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন । মেয়েটাকে দেখা মাত্রই বিদ্যাপতি আবার ওখান থেকে চলে যেতে শুরু করলেন কিন্তু মেয়েটা (ওঁর নাম ছিল ললিতা) ওঁকে ডেকে বললেন, “আপনাকে দেখতে ব্রাহ্মণ সন্তানের মত লাগছে । আমরা জাতিতে শবর, গাছের ফল-মূল খেয়ে থাকি । আপনি কি আমার হাত থেকে এক গ্লাস জলও খাবেন না ?” “না । তুমি একাই এখানে আছ, তোমার বাবা বা কেউ আসলে কী মনে করবেন ? এটা ঠিক নয় ।” “না, বাবা শুনবেন যে, আপনি এসেছেন আর আমি আপনাকে এক গ্লাস জলও দেইনি, তাহলে আমার প্রতি রাগ করবেন ।” বিদ্যাপতি এসে বসলেন আর সঙ্গে সঙ্গে ললিতার বাবা বাড়ি ফিরে এলেন । ললিতা বাবাকে বললেন, “বাবা, ইনি চলে যেতে চাইছিলেন কিন্তু আমি বললাম 'থাকুন, এক গ্লাস জল অন্ততপক্ষে পান করুন ।'” বাবা বললেন, “ঠিকই তো বলেছ । আপনি যাবেন কেন ? এই সন্ধ্যার সময় এসেছেন—সারা দিন হাঁটতে হাঁটতে কোথা থেকে এসেছেন জানি না, কিন্তু আপনি এখানেই থাকুন ।” বিদ্যাপতি ওখানে থাকতে লাগলেন । থাকতে থাকতে ললিতার সঙ্গে তাঁর ভাব হয়ে গেল এবং বাবার আশীর্বাদ পেয়ে তিনি ললিতাকে বিয়ে করলেন । তাই ললিতার বাবা বিদ্যাপতির শ্বশুর হয়ে গেলেন । ললিতার বাবার নাম ছিল বিশ্বাবসু । তাঁর কাছে একটি বিগ্রহ ছিল আর তিনি প্রতি দিন বিগ্রহের কাছে গিয়ে পূজা করতেন । এক দিন বিশ্বাবসুর কাছে ভগবান স্বপ্নে হাজির হয়ে বললেন, “বিশ্বাবসু, তুমি অনেক দিন ধরে গাছের কন্দমূল আমাকে খাওয়াচ্ছ কিন্তু আমার একটু ভালোমন্দ রাজভোগ খাওয়ার ইচ্ছা হয়েছে ।” ক্রোধ-ভয় পেয়ে তিনি ভাবলেন, “রাজা কোন দিন জানতে পারবে ? উনি আমার ঠাকুর নিয়ে চলে যাবে !” তাই তখন বিশ্বাবসু ভগবানকে জঙ্গলের মধ্যে লুকিয়ে লুকিয়ে সেবা করতেন । এক দিন বিদ্যাপতি তাঁর স্ত্রীকে জিজ্ঞেস করলেন, “ললিতা, তোমার বাবা প্রতিদিন সকালবেলা উঠে চলে যান আর যখন সন্ধ্যা সময় ফিরে আসেন, তখন ওঁর শরীর থেকে অনেক সুগন্ধি বের হয় । উনি কোথায় যান গো ?” ললিতা উত্তরে বললেন, “উনি পূজা করতে যান ।” “পূজা করতে ? কোথায় ? ওঁর কাছে কি ঠাকুর আছে ?” “আমি শুধু জানি যে, উনি ঠাকুরের পূজা করতে যান । কোথায় যান আমি সেটা বলতে পারি না ।” রাতে যখন বিশ্বাবসু বাড়ি ফিরে এলেন, তখন ললিতা ওঁকে বললেন, “বাবা, তোমার জামাই আমাকে জিজ্ঞেস করছে তুমি কোথায় প্রতিদিন যাও । আমি ওকে বললাম যে, তুমি প্রতিদিন পূজা করতে যাও । কিন্তু ও জানতে চাইছে কোথায় তুমি পূজা কর, আমি সেটা বলিনি ।” বিশ্বাবসু বললেন, “ঠিকই করেছ, কিছু ওকে বলবে না ।” আর নিজে নিজে ভাবলেন, “হে কপাল, ও কি আমার ঠাকুরকে নিতে এসেছে ! বোধহয় ও রাজার গোয়েন্দা হচ্ছে, আমি তো ওর সম্বন্ধে কিছুই জানি না । আমি ওকে জীবিত রাখব না, আজই ওকে মেরে ফেলব !” কিন্তু কিছুক্ষণ চিন্তা করার পর তিনি ভাবলেন, “জীবহত্যা মহাপাপ, আমি ঠাকুরের পূজা করে এটা করতে পারব না ।” তখন তিনি ললিতাকে ডেকে বললেন, “ঠিক আছে । তোমার স্বামী যখন দেখতে চাইছে, তখন আমি যে জায়গায় পূজা করি সেই জায়গাটা ওকে দেখাব । আমি ওখানে গিয়ে ওকে নিয়ে যাব কিন্তু আমার একটা শর্ত আছে । তুমি ওকে ভাল করে চোখ কাল কাপড় দিয়ে বেঁধে দেবে যেন ও রাস্তাটা দেখতে পারে না । আর ঠাকুরকে দেখে ওর চোখ আবার বেঁধে দিয়ে আমার সঙ্গে ফিরে আসতে হবে ।” ললিতা বললেন, “ঠিক আছে, আমি ওকে বলব ।” ইনি বিদ্যাপতির কাছে গিয়ে ওঁকে বললেন, “বাবা রাজি হলেন তোমাকে জায়গাটা দেখাতে, কিন্তু আমি তোমার সঙ্গে বেইমানি করতে পারব না । তুমি কাজ কর : এক হাতের মধ্যে কিছু সরিষা নাও, যখন বাবা তোমাকে হাত ধরে নিয়ে যাবেন, তুমি ওই সরিষা ছড়াতে ছড়াতে যাবে । তখন তুমি পরে রাস্তা চিনবে ।” বিদ্যাপতি সেটাই করলেন । পরের দিন সকালবেলা ললিতা ওঁর স্বামীর হাতে কিছু সরিষা দিলেন আর ওঁকে চোখ বেঁধে দিয়ে বিশ্বাবসু নীলমাধবের কাছে ওঁকে নিয়ে গেলেন । ওখানে এলে বিদ্যাপটি চোখটা খুলে দিয়ে ঠাকুরকে দেখে প্রণাম করলেন আর আবার চোখ বেঁধে দিয়ে বিশ্বাবসুর সঙ্গে বাড়ি ফিরে গেলেন । কিছু দিন পর বৃষ্টির মধ্যে সরিষা-গাছ আস্তে আস্তে বড় হয়ে গেল আর বিদ্যাপতি নিজে গিয়ে দেখতে চেয়েছিলেন, “আমি রাস্তা চিনব কি না ? নিজে গিয়ে ঠাকুরকে দেখতে পাব কি না ?” সরিষা-গাছ অনুসরণ করে গিয়ে তিনি ঠাকুরের কাছে সহজে এলেন । তাঁর উদ্দেশ্য সফল হয়ে গেল । তারপর বিদ্যাপতি একদিন স্ত্রীকে বললেন, “ললিতা, শুন, অনেক দিন কেটে গেছে, আমি তোমার কাছে থাকলাম কিন্তু আমারও বাবা-মা আছে । তাদের অনেক দিন দেখা হয়নি, আমায় ফিরে যেতে হবে... ।” “তুমি কি চলে যাচ্ছ ?” “হ্যাঁ, কিন্তু আমি একটু পরে ফিরে আসব । কোন চিন্তা কর না, তুমি আমার স্ত্রী, আমি তোমাকে ছেড়ে দেব না ।” “ঠিক আছে...”—ললিতা দুঃখ করে বললেন । এদিকে বিদ্যাপতি পুরীতে ফিরে এসে সরাসরি রাজার কাছে গিয়ে বললেন, “আপনারই কৃপায়, ভগবানের কৃপায় ঠাকুরকে পেয়েছি !” রাজা ইন্দ্রদ্যুম্ন উত্তেজিত হলেন, “কোথায় ? কোথায় আমার ঠাকুর আছে ?” “জায়গাটা আমি দেখাব কিন্তু যে ঠাকুরের পূজা করে, তার নাম বিশ্বাবসু, সে ঠাকুরকে কিছুতেই দেবে না ।” রাজা বললেন, “কী ? ও একটি শবর জাতির লোক আর আমি রাজা ! আমার রাজ্যে বাস করছে আর ঠাকুরকে রাখবে ? আমি ওকে বন্দী করে রাখব !” তখন রাজা ইন্দ্রদ্যুম্ন সৈন্য, হাতি-ঘোড়া নিয়ে বিশ্বাবসুর কাছে এসে ওকে বন্দী করে রাখলেন কিন্তু সেইক্ষণে ঠাকুর আকাশ-বাণী দিয়ে বললেন, “আমি এই ভাবে যাব না ! বিশ্বাবসু এত দিন পর্যন্ত আমার সেবা করেছেন আর তুমি তাকে অপমান করেছ । তুমি এবার ফিরে যাও । আগে আমার ঘর তৈরি কর, তারপর আমি নিজেই আসব—আমাকে নিতে আসতে হবে না ! আর বিশ্বাবসু, তুমি ঝগড়া কর না । আমি তোমাকে আগেই বলে দিয়েছি যে, আমি চলে যেতে চাই ।” তখন রাজা বিশ্বাবসুকে মুক্ত করে পুরীতে ফিরে এলেন আর বিরাট জগন্নাথের মন্দির তৈরি করলেন ।
মন্দিরটা তৈরি করে রাজা ইন্দ্রদ্যুম্ন ভাবলেন, “কবে ঠাকুর আসবেন ? তিনি বললেন নিজেই আসবেন কিন্তু আসছেন না... কবে ঠাকুর আসবেন ?” পরের দিন ঠাকুর রাজার কাছে স্বপ্নে হাজির হয়ে বললেন, “মন দিয়ে শুন, রাজা । আমি সমুদ্র তীরে তিনটা কাষ্ঠরূপে আসব । ওই কাষ্ঠগুলো শুধু তিনজনই স্পর্শ করতে পারবে—আমার আগের সেবক বিশ্বাবসু, বিদ্যাপতি আর তুমি ।” তখন বিশ্বাবসুকে জঙ্গল থেকে নিয়ে রাজা বিদ্যাপতির সঙ্গে চক্র তীর্থে এলেন । এসে দেখলেন যে, সমুদ্র থেকে তিনটা কাষ্ঠ ভাসতে ভাসতে আসছেন । কাষ্ঠগুলো দেখে রাজা ভাবলেন, “এত বড় কাষ্ঠগুলো আমরা মাথায় কি করে নিয়ে যাব ? এটা অসম্ভব ব্যাপার !” কিন্তু যখনই রাজা কাষ্ঠটায় হাত দিলেন, তখনই কাষ্ঠটা সোলার মত হালকা হয়ে গেল । তারপর তিনজন এক এক কাষ্ঠ নিয়ে তাদেরকে জগন্নাথ মন্দিরের মধ্যে রাখলেন । রাজা বিগ্রহ করবার জন্য কাঠমিস্ত্রি খুঁজতে আরম্ভ করলেন । প্রতিবার যখন কাঠমিস্ত্রি বিগ্রহ খোদাই করতে গেল, প্রতিবার তার হাতুড়ি-বাটাল ভেঙ্গে গেল—কেউ বিগ্রহ তৈরি করতে পারল না । তখন ভগবান রাজাকে বললেন, “আমি নিজজনকে পাঠিয়ে দেব, তাঁর নাম বিশ্বকর্ম্মা । তাঁর কথা শুনে চললে বিগ্রহ হয়ে যাবে ।” কিছু দিন পর এক বয়স্ক লোক এসে বললেন, “রাজা বাবু, আমার নাম বিশ্বকর্ম্মা । আমি কাঠমিস্ত্রি । শুনেছি আপনি ঠাকুরের বিগ্রহ তৈরি করতে চান । যদি অনুমতি দেবেন, আমি করতে পারি ।” “নিশ্চয় । তবে এখন পর্যন্ত কেউ ওইটা করতে পারল না । আপনি করতে পারলে করুন ।” “ঠিক আছে কিন্তু আমার একটা শর্ত আছে ।” “কী শর্ত ?” “আমি ভিতরে একুশ দিন থাকব । আমি দরজা পিছন দিয়ে লাগিয়ে দেব আর আপনারাও সামনে থেকে লাগিয়ে দেবেন । যখন একুশ দিন কেটে যায়, তখন আপনি দরজা খুলে দেবেন আর ঠাকুরের বিগ্রহ দেখতে পাবেন । আর তার আগে কেউ সেখানে ঢুকতে পারবে না ।” রাজা ইন্দ্রদ্যুম্ন রাজি হলেন । ঠাকুরের ঘর পরিষ্কার হাওয়ার পর কাঠমিস্ত্রি সেখানে ঢুকলেন আর দরজা পিছন দিয়ে বন্ধ করলেন । পরের দিন ইন্দ্রদ্যুম্ন রাজা আর রাণী গুণ্ডিচাদেবী ভাবলেন, “সেই লোকটি কাজ করছে কি না, আমরা কি করে বুঝব ?” তাঁরা দরজার সামনে গিয়ে কান পাতলেন—হাতুড়ি-বাটালের শব্দ শুনতে পেয়ে তাঁরা সন্তুষ্ট হলেন । সেইভাবে তাঁরা প্রত্যেক দিন যেতেন আর “ঠুক-ঠুক-ঠুক” আওয়াজ শুনতে পেয়ে সন্তুষ্ট মনে চলে যেতেন । পনের দিন চলে গেল যখন তাঁরা টের পেলেন যে, কোন শব্দ ঘরের মধ্যে নেই । তখন সবাই বললেন, “যে ঠাকুর তৈরি করতে এসেছে এত বয়স্ক মানুষ, বোধ হয় সে মারা গেছে । তিনি ওখানে ভিতরে পনের দিন ধরে না খেয়ে আছে—সে কি করে আছে ? যদি সত্যই লোকটি মারা গেছে, মন্দিরটা মলিন হয়ে যাবে, তখন ভালো করে ধুতে হবে ।” আর অপেক্ষা করতে না পেরে রাজা দরজা ভেঙ্গে দিতে আদেশ দিলেন । দরজা খুলে দিয়ে রাজা দেখলেন যে, কেহ ভিতরে নেই আর ঘরের মধ্য বিগ্রহ দাঁড়িয়ে ছিল : জগন্নাথ, বলদেব ও সুভদ্রা আর তাঁদের আকার যে ভাবে ছিল তা আজও আছে—হাত নেই, আঙ্গুল নেই, পা নেই, কান নেই । রাজা বিস্মিত হয়ে গেলেন । তখন ভগবান আবার তাঁর কাছে হাজির হয়ে বললেন, “যদি কেউ আমাকে ইচ্ছা করে অঙ্গুল লাগায়, লাগাতে পারে, কিন্তু আমাকে ছাপান্নবার ভোগ লাগাতে হবে—এই অবস্থায় থেকে আমি সব গ্রহণ করব । এই অবস্থায়ই আমি জগতে থাকব এবং রথের দিন সর্ব্ব জীবকে কৃপা করব । আর একটা শর্ত হচ্ছে যে, আমার মন্দির একুশ ঘণ্টা ধরে খুলে রাখতে হবে ।” রাজা ঠিক মত সেই ভাবেই করলেন আর ঐসময় থেকে জগন্নাথদেবের মন্দির ওই ভাবে চলছে । তাই বলদেব, সুভদ্রা ও জগন্নাথ এই রূপে প্রকট হলেন ।
আরেকটা কথা বলা হয় । জগন্নাথ মন্দিরের পাশে একটা আঠারনালা নামে সেতু আছে—তার মধ্যে আঠারো গর্ত আছে । তার একটা কারণ আছে । রাজা ইন্দ্রদ্যুম্নের আঠারো পুত্র হয়েছিল কিন্তু “পরে সব পুত্র বলবে যে, ‘সেটা আমার ঠাকুর ! সেটা আমার মন্দির !’ আর বিবাদ করবে ।”—ভেবে রাজা ইন্দ্রদ্যুম্ন তাঁর আঠারো পুত্রকে হত্যা করেছিলেন । সেইভাবে তিনি স্থাপন করেছিলেন যে, জগন্নাথদেবের মন্দির কারও নয়—জগন্নাথ বলদেব সুভদ্রা সর্ব্ব জগতের বিগ্রহ হচ্ছেন । ‘জগন্নাথ’ মানে ‘জগতের নাথ’ । এই জগন্নাথদেবের মন্দিরে যেতে সবাইয়ের অধিকার আছে, সবাই তাঁর সেবা করতে পারে । এই ভাবে জগন্নাথের সেবা হচ্ছে । আমরা এই জগন্নাথের রথ যাত্রা দর্শন করতে যাব, তবে সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, জগন্নাথ দর্শন করবার আমাদের কি চক্ষু আছে ?
অন্ধীভূত চক্ষুযার বিষয় ধূলিতে । আমাদের চক্ষু বিষয় ধূলিতে অন্ধ হয়ে গিয়েছে । আমরা কি করে জগন্নাথদেবকে দেখতে পাব বলুন ?
অপ্রাকৃত বস্তু নহে প্রাকৃত-গোচর । (চৈঃ চঃ ২/৯/১৯৫) অপ্রাকৃত বস্তু এই প্রাকৃত জিনিস দিয়ে দেখা যায় না । যখন আমরা ঠাকুরের কাছে আসব, তখন ঠাকুর বুঝতে পারবেন যে, আমরা সেখানে তাঁর সামনেই আছি । ঠাকুরের কাছে গিয়ে কী বলতে হবে ? “হে জগন্নাথ, আমায় দয়া কর, তুমি আমার অপরাধ ক্ষমা কর । বহু কাল ধরে, বহু জীবন ধরে, বহু যুগ ধরে আমি অনন্ত অনন্ত অপরাধ করেছি, তবে যে কোন ভাবে আমি এখন তোমার চরণে এসেছি । প্রভু, আমার অপরাধ খণ্ডন কর ।” জগন্নাথদেবের কাছে এই প্রার্থনা করতে হবে ।
|
অনন্তশ্রীবিভূষিত ওঁ বিষ্ণুপাদ পরমহংসকুলচূড়ামণি বিশ্ববরেণ্য জগদ্গুরু শ্রীশ্রীমদ্ভক্তিনির্ম্মল আচার্য্য মহারাজের পদ্মমুখের হরিকথামৃত
সূচীপত্র
সূচনা : |
||||||
বৃক্ষসম ক্ষমাগুণ করবি সাধন । প্রতিহিংসা ত্যজি আন্যে করবি পালন ॥ জীবন-নির্ব্বাহে আনে উদ্বেগ না দিবে । পর-উপকারে নিজ-সুখ পাসরিবে ॥ | |||||||
© Sri Chaitanya Saraswat Math, Nabadwip, West Bengal, India. For any enquiries please visit our contact page. |