আমাদের শ্রীগুরুপরম্পরা :
শ্রীশ্রীল ভক্তিনির্ম্মল আচার্য্য মহারাজ শ্রীশ্রীল ভক্তিসুন্দর গোবিন্দ দেবগোস্বামী মহারাজ শ্রীশ্রীল ভক্তিরক্ষক শ্রীধর দেবগোস্বামী মহারাজ ভগবান্ শ্রীশ্রীল ভক্তি সিদ্ধান্ত সরস্বতী গোস্বামী ঠাকুর
              প্রভুপাদ
“শ্রীচৈতন্য-সারস্বত মঠে সূর্যাস্ত কখনই হয় না” :
আমাদের মঠের পরিচয় ও বৈশিষ্ট্য
 
আমাদের সম্পর্কে শ্রীউপদেশ শ্রীগ্রন্থাগার শ্রীগৌড়ীয় পঞ্জিকা ছবি ENGLISH
 

শ্রীপুরীধাম মাহাত্ম্য-মুক্তা-মালা


রাজা প্রতাপরুদ্রের প্রতি কৃপা

 

রাজা হয়েও রাজা প্রতাপরুদ্র সব বৈষ্ণবগণকে সেবা করতেন, সমস্ত ভক্তগণের জন্য সব আয়োজন করতেন, তবু মহাপ্রভু প্রতিজ্ঞা করেছিলেন যে, তিনি তাঁর মুখ দর্শন করবেন না কারণ তিনি রাজা । কিন্তু রাজা হয়েও তাঁর এত বেশী আর্ত্তি ছিল । আর্ত্তি থাকলে ভগবান কৃপা করবেই । আমরাও আর্ত্তিটা চাই, ভগবানকে ডাকার মত ডাকতে হবে—পারলে তবে তো ভগবান কৃপা করবে !

তাই রাজা প্রতাপরুদ্র মহাপ্রভুর কাছে আসতে পারতেন না । কিন্তু সমস্ত বৈষ্ণবের সেবা করার ফলে তিনি শেষ পর্যন্ত তাঁর দর্শন পেয়েছিলেন । ঘটনাটা ছিল এই রকম ।

নিত্যানন্দ প্রভু, শিবনান্দ সেন, স্বরূপ দামোদর, প্রভৃতি বারবার মহাপ্রভুকে বলতেন, “প্রভু, রাজা প্রতাপরুদ্রের তোমার সঙ্গে দেখা কৃপায় ইচ্ছা হচ্ছে, তাঁকে দর্শন দিতে পারবে ? তিনি ধনী লোক, রাজা, কিন্তু তিনি ভাল লোক, তাঁর মন খুব ভাল । তিনি অনেক চেষ্টা করে সব সময় ভক্তের সেবা করছেন । যখন নিত্যানন্দ প্রভু ও শিবানন্দ সেন ভক্ত নিয়ে এসেন, তিনি সব সময় তাঁদের জন্য ঘর-টর ব্যবস্থা করে দেন ।” তবু মহাপ্রভু রাজি হলেন না, তিনি বললেন, “সেটা আমি জানি, কিন্তু তিনি রাজা, তাই আমি তাঁর মুখে দর্শন করব না ।” বার বার ভক্তরা প্রভুর মন গলাতে চেষ্টা করতেন কিন্তু শেষে রাগ প্রকাশ করে মহাপ্রভু বললেন, “তোমরা যদি আবার ওর সম্পর্কে বলবে, আমি আর এখানে থাকব না । আমি চলে যাব, তোমরা কখনও আমাকে আবার দেখবে না ।” শুনে ভক্তগণ কানে অঙ্গুল দিয়ে কথা দিলেন, “আমরা এটা শুনতে চাই না । প্রভু, আমরা কখনও আবার তাঁর উপারে কথা বলব না ।”

এদিকে রাজা প্রতাপরুদ্র চিন্তা করে থাকতেন । তিনি প্রতি দিন জিজ্ঞেস করতেন, “কী হয়েছে ? কী হয়েছে ? কবে আমি প্রভুর কৃপা লাভ করব ?”

অদর্শনীয়ানপি নীচজাতীন্
সংবীক্ষতে হন্ত তথাপি নো মাম্ ।
মদেকবর্জ্জ্যং কৃপয়িষ্যতীতি
নির্ণীয় কিং সোঽবততার দেবঃ ॥

“অদর্শনীয় নীচজাতিগণকেও দর্শন দিতেছেন, তথাপি আমাকে দর্শন দিবেন না ! আমি বিনা সকল জীবকে কৃপা করিবেন, ইহাই স্থির করিয়া কি তিনি (শ্রীচৈতন্যদেব) অবতীর্ণ হইয়াছেন ?”

(শ্রীশ্রীপ্রপন্নজীবনামৃতম্, ৮/২০)

কেউ তাঁকে মহাপ্রভুর কিছু বসন দিলেন আর রাজা তাঁর পূজা করতে লাগলেন । এক দিন তিনি জিজ্ঞেস করলেন, তিনি তাঁর পুত্রকে মহাপ্রভুর কাছে পাঠাতে পারবেন কিনা । মহাপ্রভু রাজি হলেন । ভক্তরা রাজার পুত্রকে বৈষ্ণব পোশাক দিয়ে মহাপ্রভুর কাছে এনেছিলেন । যখন তিনি বাড়ি ফিরে এলেন, রাজা তাকে আলিঙ্গন করে বললেন, “তুমি এত ভাগ্যবান ! তুমি মহাপ্রভুর কৃপা পেয়েছ ! আমি এত দুর্ভাগা...”

কিছু পরে নিত্যানন্দ প্রভু তাঁকে দয়া করে বললেন, “রাজা, তোমার এত বেশী আর্ত্তি আছে, তাই তুমি এইবার মহাপ্রভুর কৃপা পাবে ! মন দিয়ে শুন, আমি তোমাকে প্রণালীটা বলে দেব । যখন প্রভু জগন্নাথের রথের সামনে গিয়ে নেচে নেচে কীর্ত্তন করবে, অষ্টসাত্ত্বিকবিকার হয়ে তিনি আবার অজ্ঞান হয়ে পড়বে । সেইক্ষণ তুমি তার কাছে গিয়ে পা মালিশ করতে করতে একটা শ্লোকা বলবে ।” রাজা তাই করলেন ।

রথের দিন রাজার পোশাক ছেড়ে দিয়ে, বৈষ্ণব ধুতি কুর্তা পরে তিনি বিনীতভাবে রথের সামনে রাস্তা ঝাড়ু দিলেন । আর যখন মহাপ্রভু ক্লান্ত হয়ে বলগণ্ডী উদ্যনে গিয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়লেন, তখন রাজা তাঁর কাছে গিয়ে পা মালিশ করে বললেন,

তব কথামৃতং তপ্তজীবনং
কবিভিরীড়িতং কল্মষাপহম্ ।
শ্রবণমঙ্গলং শ্রীমদাততং
ভুবি গৃণন্তি তে ভূরিদা জনাঃ ॥

“তোমার কথামৃত ত্বদীয় বিরহকাতর জনগণের জীবন স্বরূপ, প্রহ্লাদ, ধ্রুব প্রভৃতি ভক্তগণও তাহার স্তব করিয়া থাকেন । উহা প্রারব্ধ ও অপ্রারব্ধ পাপ-বিনাশক, শ্রবণমাত্রে মঙ্গলপ্রদ, প্রেম-সম্পত্তিদায়ক এবং কীর্ত্তনকারিগণ কর্ত্তৃক বিস্তৃত । সুতরাং যে ব্যক্তি উহা কীর্ত্তন করেন তিনিই সর্ব্বশ্রেষ্ঠ দাতা ।”

(ভাঃ ১০/৩১/৯)

সেই শ্লোক শুনে মহাপ্রভু উঠে “ভূরিদা জনাঃ ভূরিদা জনাঃ” বলে রাজাকে জোর করে আলিঙ্গন করলেন । ‘ভূরিদা’ মানে কী ? দাতা । এই জগতে কে সবচেয়ে বড় দাতা ? যারা টাকা দেয়, ধন দেয়—তারা কি দাতা ?না । এই জগতে যারা লোকের দ্বারে দ্বারে গিয়ে হরিনাম বিতরণ করেন, কৃষ্ণনাম বিতরণ করেন, তারাই সবচেয়ে বড় দাতা ।

 


 

← ভক্তদের সহিত শ্রীক্ষেত্রে বার্ষিক মিলন গোবিন্দ প্রভুর শিক্ষা →

 

অনন্তশ্রীবিভূষিত ওঁ বিষ্ণুপাদ পরমহংসকুলচূড়ামণি বিশ্ববরেণ্য জগদ্­গুরু শ্রীশ্রীমদ্ভক্তিনির্ম্মল আচার্য্য মহারাজের পদ্মমুখের হরিকথামৃত


ডাউনলোড


 

সূচীপত্র

সূচনা :
শ্রীজগন্নাথদেব
মহাপ্রভুর ইচ্ছা ও পুরীতে যাত্রার আরম্ভ
মহাপ্রভুর পুরীতে যাত্রা :
শান্তিপুর
রেমুণা
সাক্ষীগোপাল
ভুবনেশ্বর
ভুবনেশ্বর শ্রীলিঙ্গরাজ
আঠারনালা
শ্রীপুরীধামে :
সার্বভৌম ভট্টাচার্য্যের সথে মিলন
সার্বভৌম ভট্টাচার্য্যের শিক্ষা
কাশী মিশ্রের কথা
রামানন্দ রায়ের পুনর্মিলন ও প্রকৃতি
ভক্তদের সহিত শ্রীক্ষেত্রে বার্ষিক মিলন
রাজা প্রতাপরুদ্রের প্রতি কৃপা
গোবিন্দ প্রভুর শিক্ষা
দর্শনের আর্ত্তি
শ্রীআলালনাথের কথা
কালিদাসের ব্যতিক্রম
সার্বভৌম ভট্টাচার্য্যের প্রসাদে রুচি
“ষাঠী বিধবা হয়ে যাক !”
গঙ্গা মাতা গোস্বামিণী
শ্রীগোপাল গুরুর কথা
শ্রীজগদানন্দ পণ্ডিতের প্রেম
শ্রীলসনাতন গোস্বামীর সঙ্গ
রামচন্দ্র পুরীর কথা
শ্রীপরমানন্দ পুরীর ভক্তিকূপ
দামোদর পণ্ডিতের বিদায়
ছোট হরিদাসের শাস্তি
গুণ্ডিচা-মার্জ্জন লীলা
শ্রীনারায়ণ ছাতায়
চটকপর্ব্বতের কথা
গম্ভীরা—বিরহের জ্বলন্ত ঘর
শ্রীল হরিদাসঠাকুর : নামাচার্য্য শিরোমণি
শ্রীগদাধর পণ্ডিত : মহাপ্রভুর ছায়া
শ্রীরঘুনাথদাস গোস্বামীর শ্রীপুরীধামে আগমন ও ভজন
পরিশেষ

বৃক্ষসম ক্ষমাগুণ করবি সাধন । প্রতিহিংসা ত্যজি আন্যে করবি পালন ॥ জীবন-নির্ব্বাহে আনে উদ্বেগ না দিবে । পর-উপকারে নিজ-সুখ পাসরিবে ॥