![]() |
|||||||
| |||||||
|
|||||||
শ্রীপুরীধাম মাহাত্ম্য-মুক্তা-মালা চটকপর্ব্বতের কথা
শ্রীপুরীধামে এক জায়গা চটকপর্ব্বত নামে আছে । এটা হচ্ছে অভিন্ন গোবর্দ্ধন । মাঝে মাঝে স্নান করতে গিয়ে মহাপ্রভু এই স্থান দেখতে পেয়ে কাঁদতে কাঁদতে গোবর্দ্ধনের স্তব করতে করতে বায়ুর মত এখানে দৌড়তে শুরু করলেন । এখানে পৌঁছে গিয়ে বিরহজ্বলে তাঁর অষ্টসাত্ত্বিকবিকার হয়ে গেল—তাঁর অপ্রাকৃত লীলা প্রকাশ করে তিনি কৃষ্ণলীলা দর্শন করতেন । যখন সমস্ত ভক্তগণ এখানে গিয়ে তাঁর কানে “হরে কৃষ্ণ” মহামন্ত্র করতে শুরু করলেন, তখন সঙ্গে সঙ্গে মহাপ্রভু আবার শান্ত হয়ে হঠাৎ করে উঠে বিরক্ত হয়ে বললেন, “কে আমাকে গোবর্দ্ধন থেকে এখানে এনেছে ?! আমি কৃষ্ণলীলা দেখছিলাম আর এখন আমি কোথায় ? কেন তোমরা আমাকে দুঃখ দিয়ে এখানে এনেছ ?” মহাপ্রভু কাঁদতে শুরু করলেন । এইটা হচ্ছে খুব উচ্চ, গোপনীয় স্থান । সেই জায়গায় প্রভুপাদ শ্রীলভক্তিসিদ্ধান্ত সরস্বতী ঠাকুর শ্রীপুরুষোত্তম-গৌড়ীয় মঠ স্থাপন করলেন । সেখানে তিনি প্রতি বছর উৎসব, প্রচার এবং ভজন করতেন । সেখানে আজও তাঁর ভজন কুটির বিদ্যমান আছে । আপনারা নিশ্চয় শুনেছেন যে, আমাদের পরম গুরুদেব ওঁ বিষ্ণুপাদ শ্রীলভক্তি রক্ষক শ্রীধর দেবগোস্বামী মহারাজ শ্রীলপ্রভুপাদের কাছে আশ্রয় গ্রহণ করেছেন । তিনি তাঁর সম্বন্ধে লিখেছেন:
নিখিল-ভুবন-মায়া-ছিন্নবিচ্ছিন্নকর্ত্রী প্রভুপাদ শ্রীলভক্তি সিদ্ধান্ত সরস্বতী ঠাকুর মায়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন এবং বিধিকেও শিথিল করেছেন । যখন তিনি নবদ্বীপে গিয়েছেন, তখন লোক তাঁকে অনেক অত্যাচার করেছে । তিনি বললেন:
জগতে কৈলে ঘোষণা ‘তরোরিব সহিষ্ণুনা’ এই তিনি ঘোষণা করলেন । তাঁর ভক্তি-সিদ্ধান্ত-বাণী দ্বারা তিনি এই জগতে রাগানুগ ভক্তি প্রদান করেছেন । শ্রীঅদ্বৈত প্রভু শ্রীমন্মহাপ্রভুকে আহ্বান করে নিয়ে এসেছিলেন কারণ তিনি দুঃখিত হয়ে পড়ে দেখতে পেলেন যে, এই জগতের শুদ্ধ ধর্ম্ম বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল । মহাপ্রভুর যাওয়ার পর অনেক অপসম্প্রদায় উৎপন্ন হয়েছিল—আউল, বাউল, কর্তাভজা, নেড়া, দরবেশ, সাঁই, সহজিয়া, সখীভেকী, স্মার্ত, জাত-গোসাঞি, অতিবাড়ী, চূড়াধারী, গৌরাঙ্গনাগরী (আর এখনই তেরটার থেকে তের হজার হয়ে গিয়েছে !) । এইটার থেকে মুক্তি দেওযার জন্য শ্রীলভক্তিবিনোদ ঠাকুর ভগবতীদেবীকে নিয়ে বিমলাদেবীর কাছে প্রার্থনা করলেন, “হে দেবী, এমন একজনকে পাঠাও যে এইজগতে শুদ্ধ-ভক্তি-সিদ্ধান্তের কথা জগতে প্রদান করতে পারবে !” তখন জগন্নাথদেবের কৃপায় শ্রীলভক্তিসিদ্ধান্ত সরস্বতী ঠাকুর (বিমলা প্রসাদ) জগতে আসলেন । তিনি অনেক উপদেশ দিয়েছেন : “কোটি কোটি হসপিটাল তৈরি না করার চেয়ে, কোটি কোটি রোগী সেবা না করার চেয়ে একজন কৃষ্ণ-বহির্মুখ ব্যক্তিকে তুমি যদি এই পথে আনতে পার, তাহলে কোটি গুন উত্তম হবে !”
“তোষামোদকারী কখনও গুরু হতে পারেন না ।” “মনের খেয়াল খুশিমত ভজনের অভিনয়কে ভজন বলে না । গুরু-বৈষ্ণবের আনুগত্যে, গুরু-বৈষ্ণবের সেবা করে তাঁদের মন সন্তুষ্টি বিধান করার নামই হইল ভজন ।” এইভাবে অনেক তিনি উপদেশ দিয়েছেন, অনেক তীর্থ ভ্রমণ করেছেন আর ৬৪টি মঠ স্থাপন করেছেন । যদি আমাদের গুরুর প্রতি আনুগত্য নেই—যদি আমরা রূপ-রঘুনাথের সিদ্ধান্ত প্রচার না করে অন্যান্য ভাবে চলি—তাহলে আমরা শ্রীলভক্তিসিদ্ধান্ত সরস্বতী ঠাকুরের কৃপা কখনও লাভ করতে পারব না।
শ্রীগৌরাঙ্গ-পারিষদ ঠাকুর ভক্তিবিনোদ তিনি সারা জগতের প্রতি শিক্ষা দিয়েছে :
তৃণাদপি সুনীচেন তরোরিব সহিষ্ণুনা । এই শিক্ষা যদি আমরা সব গ্রহণ করি, তাহলেই আমরা ভক্তিসিদ্ধান্ত সরস্বতী ঠাকুরের কৃপা লাভ করতে পারব ।
জয় শ্রীলভক্তিসিদ্ধান্ত সরস্বতী ঠাকুর প্রভুপাদ কি জয় ।
|
অনন্তশ্রীবিভূষিত ওঁ বিষ্ণুপাদ পরমহংসকুলচূড়ামণি বিশ্ববরেণ্য জগদ্গুরু শ্রীশ্রীমদ্ভক্তিনির্ম্মল আচার্য্য মহারাজের পদ্মমুখের হরিকথামৃত
সূচীপত্র
সূচনা : |
||||||
বৃক্ষসম ক্ষমাগুণ করবি সাধন । প্রতিহিংসা ত্যজি আন্যে করবি পালন ॥ জীবন-নির্ব্বাহে আনে উদ্বেগ না দিবে । পর-উপকারে নিজ-সুখ পাসরিবে ॥ | |||||||
© Sri Chaitanya Saraswat Math, Nabadwip, West Bengal, India. For any enquiries please visit our contact page. |