![]() |
|||||||
| |||||||
|
|||||||
শ্রীপুরীধাম মাহাত্ম্য-মুক্তা-মালা রামচন্দ্র পুরীর কথা
শ্রীমাধবেন্দ্র পুরীপাদের দুটো বিখ্যাত শিষ্য ছিল—শ্রীঈশ্বর পুরী আর শ্রীরামচন্দ্র পুরী । শেষপর্যন্ত মাধবেন্দ্র পুরী সব সময় এই শ্লোক কাঁদতে কাঁদতে আস্বাদন করতেন : অয়ি দীনদয়ার্দ্র নাথ হে মথুরানাথ কদাবলোক্যসে । হৃদয়ং ত্বদলোককাতরং দয়িত ভ্রাম্যতি কিং করোম্যহম্ ॥ “ওহে দীনদয়ার্দ্রনাথ ! ওহে মথুরানাথ ! কবে তোমাকে দর্শন করব ! তোমার দর্শনাভাবে আমার কাতর হৃদয় অস্থির হয়ে পড়েছে ! হে দয়িত, আমি এখন কি করব ? হে প্রভু ! তোমাকে আমি কোথায় গেলে পাব ?” এক দিন সেই রামচন্দ্র পুরী মাধবেন্দ্র পুরীর কাছে গিয়ে বললেন, “প্রভু, আপনি তো ব্রহ্মবিৎ—আপনি কাঁদছেন কেন ? ব্রহ্ম স্মরণ করলে সব দুঃখ দূরে যাবে ।” তাঁর মায়াবাদী কথা শুনে মাধবেন্দ্র পুরী রেগে গিয়ে বললেন, “দূর হও পাপিষ্ঠ ! তোমার মুখ আবার দেখলে, আমার সর্বনাশ হয়ে যাবে ! হে প্রভু, আমি তোমাকে না পেয়ে মরি আর এই মূর্খ এসে আরও ব্যথা দিচ্ছে!” সেই ভাবে রামচন্দ্র পুরী গুরু ত্যাগ করে পুরীতে এসেছিলেন । শিষ্যর মধ্যে তিনপ্রকার শিষ্য আছে—গুরু-ভোগী, গুরু-সেবী আর গুরু-ত্যাগী । সেই রামচন্দ্র পুরী গুরু-ত্যাগী হয়েছিলেন । শ্রীপুরীধামে এসে তিনি শুধু সব সময় বৈষ্ণবগণের নিন্দা করতেন । সবাই মহাপ্রভুকে বললেন, “আপনি তাঁকে এত বেশী সম্মান করছেন কেন ? তিনি সবাইকে নিন্দা করেন, আপনাকেও নিন্দা করেন, আর আপনি তাকে উঠিয়া আসন দিচ্ছেন ।” কিন্তু মহাপ্রভু এ সব কথায় কান দিলেন না—মহাপ্রভুর শিক্ষা হচ্ছে : তৃণাদপি সুনীচেন তরোরিব সহিষ্ণুনা । অমানিনা মানদেন কীর্ত্তনীয়ঃ সদা হরিঃ ॥ (চৈঃ চঃ ৩/৬/২৩৯) মাহপ্রভুর গুরু শ্রীঈশ্বপুরী । আর রামচন্দ্রপুরী ও ঈশ্বরপুরী গুরু-ভ্রাত্রা ছিলেন, সেইজন্য মহাপ্রভু রামচন্দ্রপুরীকে সব সময় সম্মান করতেন । সেই জন্য যখন ভক্তরা নালিশ করতেন, মহাপ্রভু কিছু বলতেন না । এক দিন রামচন্দ্র পুরী গম্ভীরায় লুকিয়ে গেলেন আর গিয়ে দেখলেন যে মহাপ্রভুর ঘরে অনেক পিপীলিকা আছে । তিনি মহাপ্রভুকে বললেন, “কী, নবীন সন্ন্যাসী ? ঘরের মধ্যে এত পিপীলিকা, তুমি বুঝি বেশী মিষ্টি খাচ্ছ ?” মহাপ্রভু কী বলবেন ? তিনি কখনও মিষ্টি ঘরে রাখতেন না আর সবাই জানেন যে, পিপীলিকা ইচ্ছা মত সব জায়গায় যায় । তাই মহাপ্রভু উত্তরে বললেন, “হ্যাঁ, প্রভু, আমার জিহ্বা এত দুষ্ট হয়ে গেল, ওকে সংযম করতে না পেরে আমি মিষ্টি সব সময় খাই ।” এটা বলে মহাপ্রভু মনে করলেন, “আমি আগে শুনেছি যে, ও আমার পিছনে নিন্দা করত আর এখন দেখছি আমার সামনে তিনি আজেবাজে কথা বলছে ।” কিন্তু তিনি আর কিছু তাঁকে বললেন না । পুরীতে ভক্তরা সব সময় মহাপ্রভুকে নিমন্ত্রণ করতেন এক এক বাড়িতে প্রসাদ পাওয়ার জন্য । কিন্তু রামচন্দ্র পুরীকে সবাই অপছন্দ করতেন, তাই তাঁকে কেউ নিমন্ত্রণ কখনও করতেন না । এক দিন মহাপ্রভু এক ভক্তের বাড়িতে প্রসাদ পাওয়ার সময় এলেন আর হঠাৎ করে রামচন্দ্র পুরী সেখানে এসে হাজির হলেন । মহাপ্রভুর থালাটা দেখে তিনি বললেন, “বাঃ, সাধুরা তো এত খায় !” শুনে মহাপ্রভু ভক্তগণকে বললেন, “ঠিকই তো । আজ থেকে আমাকে আবার নিমন্ত্রণ কর না । আমি আর কোন বাড়িতে খাব না । আর যদি কেউ আমাকে খাওয়াতে চান, দুটো-একটা তরকারি রান্না করতে হব, আর কিছু খাব না ।” প্রভুর কথা শুনে সমস্ত ভক্তের মন খারাপ হয়ে গেল । তখন সবাই জগন্নাথদেবের কাছে গিয়ে প্রার্থনা করলেন, “হে প্রভু, রামচন্দ্র পুরীকে এখান থেকে বিদায় করে দাও । ও কত কষ্ট, কত নিন্দা আমাদের প্রভুকে দেয় !” জগন্নাথ ভক্তদের প্রার্থনা শুনলেন আর সঙ্গে সঙ্গে রামচন্দ্র পুরীকে শ্রীপুরীধাম থেকে চলে যেতে হল । সেই ভাবে গুরু-অপরাধের ফলে, বৈষ্ণব-নিন্দার ফলে তিনি সব কিছু হারিয়ে গেলেন—গুরুর আশ্রয়হীন হয়ে, গুরুদেবের কৃপা বিনা সেবা থেকে বিচ্যুত হয়ে তিনি নরক প্রাপ্ত হয়েছেন । আমাদের সব সময় সাবধান থাকতে হবে ।
|
অনন্তশ্রীবিভূষিত ওঁ বিষ্ণুপাদ পরমহংসকুলচূড়ামণি বিশ্ববরেণ্য জগদ্গুরু শ্রীশ্রীমদ্ভক্তিনির্ম্মল আচার্য্য মহারাজের পদ্মমুখের হরিকথামৃত
সূচীপত্র
সূচনা : |
||||||
বৃক্ষসম ক্ষমাগুণ করবি সাধন । প্রতিহিংসা ত্যজি আন্যে করবি পালন ॥ জীবন-নির্ব্বাহে আনে উদ্বেগ না দিবে । পর-উপকারে নিজ-সুখ পাসরিবে ॥ | |||||||
© Sri Chaitanya Saraswat Math, Nabadwip, West Bengal, India. For any enquiries please visit our contact page. |