আমাদের শ্রীগুরুপরম্পরা :
শ্রীশ্রীল ভক্তিনির্ম্মল আচার্য্য মহারাজ শ্রীশ্রীল ভক্তিসুন্দর গোবিন্দ দেবগোস্বামী মহারাজ শ্রীশ্রীল ভক্তিরক্ষক শ্রীধর দেবগোস্বামী মহারাজ ভগবান্ শ্রীশ্রীল ভক্তি সিদ্ধান্ত সরস্বতী গোস্বামী ঠাকুর
              প্রভুপাদ
“শ্রীচৈতন্য-সারস্বত মঠে সূর্যাস্ত কখনই হয় না” :
আমাদের মঠের পরিচয় ও বৈশিষ্ট্য
 
আমাদের সম্পর্কে শ্রীউপদেশ শ্রীগ্রন্থাগার শ্রীগৌড়ীয় পঞ্জিকা ছবি ENGLISH
 

শ্রীপুরীধাম মাহাত্ম্য-মুক্তা-মালা


শ্রীল হরিদাসঠাকুর : নামাচার্য্য শিরোমণি

 

শ্রীলভক্তি সুন্দর গোবিন্দ দেবগোস্বামী মহারাজ বলেছেন:
“শ্রীলহরিদাস ঠাকুরের গুণ মহিমা স্মরণ করতে করতে
আমাদের সব অপবিত্রতা চলে যাবে ।”

সিদ্ধবকুল । এটা হচ্ছে শ্রীলহরিদাস ঠাকুরের ভজন কুটির ।

মহাপ্রভু যখন শ্রীপুরীধামে এসেছিলেন, তখন কাশী মিশ্রকে বললেন, “প্রভু, আমার জন্য আর একটা ছোট জায়গা রাখতে হবে, পারবেন ?” মহাপ্রভু বললেন না, কার জন্য ঘরটা দরকার—নিজের জন্য অনুরোধ করলেন ; আর কার জন্য ঘরটা ছিল, সেটা জিজ্ঞেস করতে কেউ সাহস করলেন না । কাশী মিশ্র বললেন, “হ্যাঁ, নিশ্চয় । বাড়ির পাশে একটা ঘর আছে । এই ঘরটা আমি আপনাকে দিয়ে দেব ।”

তখন মহাপ্রভু দক্ষিণ দেশে গেয়েছিলেন আর ফিরে এসে কাশী মিশ্রকে আবার জিজ্ঞেস করলেন, “আমার ঘরটা কোথায় ?” কাশী মিশ্র ঘরটা তাঁকে দেখিয়ে দিলেন ।

আমি আগেও বলছিলাম যে, ভগবান তিনটি করাণে এই জগতে এসেছিলেন : ১) হরিনাম বিতরণ করবার জন্য; ২) আমার নাম করে রাধারাণী এত কেন কাঁদে ? ৩) রাধারাণি আমার সেবা করে কী শান্তি পায় ?—সেই রসটাকে আস্বাদন করবার জন্যই ভগবান শ্রীকৃষ্ণ এই কলিযুগে গৌরহরিরূপে অবতীর্ণ হয়েছেন । এসে তিনি দ্বারে দ্বারে যেতে যেতে লোককে ডেকে বললেন, “জীব জাগ, জীব জাগ ! কত নিদ্রা যাও মায়া-পিশাচীর কোলে ! জীব, ঘুমাইও না ! তুমি উঠ পড় !” আর তাঁর কাছে সব সময় দুটো সেনাপতি ছিল : শ্রীলহরিদাস ঠাকুর ও শ্রীনিত্যানন্দ প্রভু :

শুন শুন নিত্যানন্দ, শুন হরিদাস ।
সর্ব্বত্র আমার আজ্ঞা করহ প্রকাশ ॥
প্রতি ঘরে ঘরে গিয়া কর এই ভিক্ষা ।
‘বল কৃষ্ণ, ভজ কৃষ্ণ, কর কৃষ্ণ শিক্ষা’ ॥

(চৈঃ ভঃ ২/১৩/৮-৯)

শ্রীপুরীধামে এসে মহাপ্রভু নিত্যানন্দ প্রভুকে নদিয়ায় রেখে দিয়ে হরিদাস ঠাকুরকে তাঁর সঙ্গে শ্রীপুরীতে এনেছিলেন আর তাঁর নিজের ঘরের পাশে একটা ঘর দিয়েছিলেন । সেই ঘরটা হচ্ছে সিদ্ধবকুল ।

এক দিন মহাপ্রভু এখানে এসে দেখলেন যা, হরিদাস ঠাকুর হরিনাম করতে করতে ঘরের বাহিরে রোদের মধ্যে বসে আছেন । তখন তিনি জগন্নাথের দাঁতনকাঠি নিয়ে এখানে পুঁতে দিয়েছিলেন । সঙ্গে সঙ্গে সেই স্থানে এই বকুল গাছ হয়ে গিয়েছিল । তাঁর ভক্তকে ছায়া দেওয়ার জন্য মহাপ্রভু এত বড় গাছ প্রকাশ করলেন ।

আস্তে আস্তে গাছ বড় হয়ে গেল বলে পাণ্ডারা এই গাছের জন্য তারা জগন্নাথের চূড়া দেখতে পেতেন না । এই গাছ কাটার জন্য জগন্নাথ মন্দিরে যারা বিভাগীয় ম্যানেজার ছিলেন, আর যে হর্তাকর্তা ছিলেন, সে গাছটা কেটে দিতে আদেশ দিলেন । হরিদাস ঠাকুর মহাপ্রভুর কাছে প্রার্থনা করলেন, “প্রভু, গাছটাকে রক্ষা কর ।”

পরের দিন যখন কাঠুরিয়ারা সকাল গাছটা কাটতে এসেছিলেন, তখন তারা দেখলেন যে, গাছটাই নেই—শুধু গাছের বাকলটা থাকল (সারাংশ চলে গিয়েছিল) ! গাছের ছালটা নিয়ে কি করবেন ? কোন ছালটাকে কাজে লাগাতে পারবেন না, তাই তারা কিছু না পেয়ে ফিরৎ চলে গেলেন ।

আজও আপনি দেখতে পারেন যে, আসলে এখানে গাছটাই নেই—বাকলটা পড়ে আছে । এই জন্য সেই স্থানের নাম হচ্ছে সিদ্ধবকুল । এই গাছের তলায় হরিদাস ঠাকুর ভজন করতেন ।

 

শ্রীলহরিদাস ঠাকুরের নির্যাণ-লীলা ।

এই সিদ্ধ-বকুলের গাছের পাশে শ্রীল হরিদাস ঠাকুরের নির্যাণ লীলা হয়েছিল ।

যখন সমস্ত ভক্তগণ গৌড়দেশ থেকে রথের সময় আসতেন, তখন উড়িষ্যার লোকগুলো বলতেন, “যে বাংলা থেকে লোকগুলো আসে, তারা সব খুব বেশী বেশী খায়, ওরা খালি খাওয়ার জন্যই আসে । ওদের জ্ঞান-ধ্যান নেই, এরা এসে সমুদ্রে স্নান না করে, মস্তক মুণ্ডন না করে, সর্বাগ্রে এসে মহাপ্রভুর কাছে খেতে বসে ! এমনকি জগন্নাথদেবকে না দেখে মহাপ্রভুকে দেখতে যায় ।” মহাপ্রভুও বললেন, “সত্যই তো বলছেন—তোমরা জগন্নাথদেবের দর্শন না করে আগে আমার কাছে কেন এস ?” কিন্তু সমস্ত ভক্তগণ বললেন, “প্রভু, আপনাকে দর্শন করলে আমাদের জগন্নাথ দর্শন হয় !”

আর শ্রীলহরিদাস ঠাকুর কী বলতেন ? “আমার জগন্নাথ দর্শন করবার অধিকার নেই । আমি অতি পাপী, যবন, নিচু জাতি, আমার নাহি লক্ষণ-গুণ, তাহলে আমি কি করে জগন্নাথ মন্দিরে যাব ? আমার কোন যোগ্যতা নেই ।” তাই মহাপ্রভু নিজে প্রত্যেক দিন জগন্নাথদেবের মন্দিরে মঙ্গলারতিতে যাওয়ার পরে হরিদাস ঠাকুরের কাছে আসতেন ।

মহাপ্রভু ভক্তের মহিমা কি করে প্রকাশ করেছেন ? হরিদাস ঠাকুর কে ছিলেন ? তিনি স্বয়ং ব্রহ্মা, জগতের সৃষ্টিকর্তা আর ভগবান নিজে তাঁর কাছে এসে হরিকথা বলতেন ।

আপনারা সবাই জানেন যে, হরিদাস ঠাকুরের বৈশিষ্ট্য ছিলে যে, তিনি প্রতি দিন তিন লক্ষ হরিনাম উচ্চঃস্বরে গাছটার তলার বসে বসে করতেন । কেন তিনি উচ্চৈঃস্বরে কীর্ত্তন করতেন ? হরিনাম করার তিনটা প্রকার আছে—১) মনে মনে কীর্ত্তন করলে জপ হয়, ২) উচ্চঃস্বরে করলে সংকীর্ত্তন হয় আর ৩) নেচে নেচে হাত তুলে কীর্ত্তন করলে মহাসংকীর্ত্তন হয় । তিনরকম কীর্ত্তন আছে আর তিনরকমও ফল আছে । শ্রীল হরিদাস ঠাকুর উচ্চঃস্বারে কীর্ত্তন করতেন কারণ পশুপাখি, গাছপালা, কীটপতঙ্গ, সব প্রাণী যে নিজে হরিনাম বলতে পারে না, উচ্চঃস্বারে কীর্ত্তন করলে সে সব হরিনাম অন্তত শুনতে পায় । তাই সব জীবের মঙ্গল করবার জন্য শ্রীলহিরদাস ঠাকুর উচ্চঃস্বারে কীর্ত্তন করতেন ।

আরও একটা কথা হচ্ছে যে, শ্রীল শ্রীধর দেবগোস্বামী মহারাজ বলেছেন যে, মনে মনে কীর্ত্তন করলে সেটা সহজে আঙ্গুলের ব্যায়াম (finger exercise) হতে পারে কারণ জপ করতে করতে আমাদের মন এদিকে সেদিকে যায় (“আমার লাউ গাছটা কি রকম বড় হচ্ছে?” “ওই ছাগল কোথায় যাচ্ছে ? লাউ গাছ খেতে যাচ্ছে কি না ?”) বা আমি দেখেছি অনেক লোক মালা করছেন আর কথা বলছেন, “আপনি কেমন আছেন ? কোত্থেকে এসেছেন ? আপনার বাড়ি কোথায় ? ইত্যাদি ।” এটা সব কী হরিনাম হচ্ছে ? জিহ্বায় ওষ্ঠ স্পন্দন করলেই অন্ততপক্ষে মন সব জায়গায় ঘুরে বেড়াবে না ।

এক দিন মহাপ্রভু এসে হরিদাস ঠাকুরকে জিজ্ঞেস করলেন, “হরিদাস, একটা কথা বলব ? এই যবন কোন মতে হইবে নিস্তার ? তাহার হেতু না দেখিয়ে এ দুঃখ অপার ।” (চৈঃ চঃ, ৩/৩/৫১) “যবনরা কি করে উদ্ধার পাবেন ?”

হরিদাস ঠাকুর উত্তরে বললেন, “প্রভু, নামাভাস হইতে হয় সর্ব্বপাপক্ষয়—তারা হরিনাম যদি করেন, তা নাম হতে পারে না, কিন্তু যদি সেটা নামাভাস হয়, তাতেও তারা মুক্ত হয়ে যাবে ।”

তাই আমাদের যদি নামাভাস হয়, তাও ভালো, কিন্তু সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে যে, আমাদের সাবধান থাকতে হবে যেন আমরা নামাপরাধ করব না ।

তাই সেরকম হরিনামের প্রতি সুদৃঢ় বিশ্বাস সহকারে শ্রীলহরিদাস ঠাকুর প্রতিদিন তিন লক্ষ হরিনাম করতেন । আর প্রতি দিন জগন্নাথদেবের প্রসাদ যে মহাপ্রভুর জন্য আসতেন, মহাপ্রভু সেটা পেয়ে বাকি যে থাকত, সেটা গোবিন্দ (মহাপ্রভু সেবক) হরিদাস ঠাকুরকে এনে দিতেন । সেই জন্য হরিহাস ঠাকুর প্রতি দিন মহাপ্রভুর প্রসাদ পেতেন ।

এক দিন গোবিন্দ হরিদাস ঠাকুরের কাছে এসে দেখলেন, যে উনি খুব আস্তে আস্তে মনে মনে হরিনাম করছিলেন ।

গোবিন্দ বললেন, “প্রভু, প্রসাদ নিয়ে এসেছি ।”

“আজকে আমি লঙ্ঘন করব ।”

“মানে ?”

“প্রতি দিন আমি তিন লক্ষ নাম শেষ করে প্রসাদ পাই আর আজকে হরিনাম শেষ না করে আমি কি করে প্রসাদ পাব ? কিন্তু তুমি প্রসাদ ঠিক সময় নিয়ে এসেছ, আমি প্রসাদটা কি করে ফেরৎ দিয়ে দেব ? তাই আজকে আমাকে আগে প্রসাদ নিতে হবে ।”

তখন তিনি একটু একটু হাতের কিঞ্চিৎ মাত্র নিয়ে মুখে দিলেন আর গোবিন্দকে বললেন, “ প্রভু, তুমি এখন যাও ।”

গোবিন্দ মহাপ্রভুর কাছে এসে বললেন, “প্রভু, হরিদাসের খবর ভাল নয় । তাঁকে সুস্থ দেখতে পেলাম না ।”

পরের দিন সকালবেলা মহাপ্রভু হরিদাস ঠাকুরের কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, “হরিদাস, তোমার কী হয়েছে ? তুমি কী অসুস্থ ?”

হরিদাস ঠাকুর বললেন, “প্রভু, অসুস্থ নয় মোর শরীর, অসুস্থ হয় মোর মন ।”

“কী হয়েছে ? তোমার কী রোগ ?”

আমরা হইলে কী বলতাম ? “আমার শরীর খারাপ হয়েছে, অসুস্থ হয়েছি, জ্বর হয়েছে, কাশি হয়েছে, বমি হয়েছে”—তাই না ? কিন্তু হরিদাস ঠাকুর বললেন, “প্রভু আজকে আমার সংখ্যা নাম পূরণ হয়নি, সেইজন্য আমার মন অসুস্থ হয়ে পড়েছে ।”

মহাপ্রভু বললেন, “নামের তুমি শিরোমণি । তুমি নামাচার্য্য হরিদাস আর তুমি কী বলছ ? তোমার সংখ্যা নাম পূরণ হয় নি, কিন্তু তোমার এখন তো বয়স হয়েছে, একটু কম কম করে হরিনাম করতে পার ? এত বেশী হরিনাম করার কী দরকার ?”

হরিদাস ঠাকুর মাথা নেড়ে বললেন, “ঠিক আছে । প্রভু, কিছু বলব ?”

“বল, কী হয়েছে ?”

“প্রভু, আমি ম্লেচ্ছ হয়েই, তুমি আমাকে ব্রাহ্মণের অবশেষ পাত্র দিয়েছ, কত সম্মান তুমি আমাকে দিয়েছ । তোমার কাছে আজ পর্যন্ত আমি কিছু চাই নি কিন্তু আজ একটা নিবেদন করব । তুমি আমাকে তোমার সব লীলা দেখিয়েছ । তোমার জন্ম লীলা, বাল্য লীলা, শৈশব লীলা, গৃহস্থ লীলা, সন্ন্যাস লীলা, বিরহ লীলাও আমি সব দেখেছি, তবে এখন আমার মনে হচ্ছে যে, তুমি এই জগতে আর বেশী দিন থাকবে না... তাহলে আমার একটা ইচ্ছা হচ্ছে, প্রভু—ওই লীলাটা যে তুমি আমার আগে চলে যাবে, সেই লীলাটা তুমি আমাকে দেখিও না, প্রভু । আমি ওই লীলা দেখতে চাই না । তুমি আমাকে কৃপা কর, তুমি আমাকে আশীর্বাদ কর, যেন আমি তোমার আগে চলে যেতে পারি ।”

“কী বলছ, হরিদাস ?! ভগবান তোমার ইচ্ছা পূরণ করবেন কিন্তু—”

হরিদাস ঠাকুর মহাপ্রভুর মুখে হাত দিয়ে বন্ধ করে বললেন, “কৃপা করে আর কোন কিন্তু নয়, প্রভু !” প্রভুর পায়ে পড়ে হরিদাস ঠাকুর প্রার্থনা করলেন, “প্রভু কৃপা করে আমাকে কোন মায়া দিও না । আমি জানি তুমি আমাকে কত ভালবাস, সেইজন্য আমি আর কিছু শুনতে চাই না । তুমি আমাকে চলে যেতে দাও ।”

“তুমি চলে যাবে, ঠিক আছে, কিন্তু আমার লীলা কি করে শেষ হবে ?”

হরিদাস ঠাকুর মহাপ্রভুর পায়ে হাত ধরে জোর করে বললেন, “প্রভু, আমার মত পিপীলিকা মরে গেলেই, তোমার কী ক্ষতি হবে ? কত লোক তোমার কাছে আসবে । তুমি আমার ইচ্ছা সম্পূর্ণ কর ।”

হৃদয়ে ধরিমু তোমার কমল চরণ ।
নয়নে দেখিমু তোমার চাঁদ বদন ॥
জিহ্বায় উচ্চারিমু তোমার ‘কৃষ্ণচৈতন্য’ নাম ।
এইমত মোর ইচ্ছা,—ছাড়িমু পরাণ ॥

(চৈঃ চঃ ৩/১১/৩৩-৩৪)

“এই চোখ দিয়ে তোমার শ্রীবদন দর্শন করব । এই মুখ দিয়ে আমি তোমার নাম শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য উচ্চারণ করব । আর তোমার শ্রীচরণযুগল আমার বক্ষে ধারণ করব । যেন এই তিনটা করতে করতে তোমার নাম বলে চলে যেতে পারি, সেটা আমার ইচ্ছা, প্রভু ।”

বৈষ্ণের ইচ্ছা ভগবান কখনও অপূর্ণ রাখেন না । তাই কিছু বলতে না পেরে মহাপ্রভু বললেন, “ঠিক আছে, আসছি । কালকে আসব…” হরিদাস ঠাকুরকে আলিঙ্গন করে মহাপ্রভু সমুদ্রে স্নান করতে গেলেন ।

পরের দিন ভক্তগণকে নিয়ে মহাপ্রভু এসেছিলেন :

প্রভু কহে,—“হরিদাস, কহ সমাচার” ।
হরিদাস কহে,— “প্রভু, যে কৃপা তোমার” ॥

(চৈঃ চঃ ৩/১১/৪৭)

মহাপ্রভু বললেন, “হরিদাস, তোমার কী খবর ?”

হরিদাস ঠাকুর বললেন, “প্রভু, যা ইচ্ছা তোমার ।”

তখন মহাপ্রভুর আদেশ অনুসারে সমস্ত ভক্তগণ হরিদাস ঠাকুরকে বেড় করে কীর্ত্তন ও পরিক্রমা করতে শুরু করলেন । হরিদাস ঠাকুর মহাপ্রভুর হাতটাকে টান দিয়ে জোর করে নিজের পাশে বসিয়ে দিলেন । তাঁর চরণযুগলটা বক্ষে নিয়ে, তাঁর মুখের দিকে তাকিয়ে তিনি বললেন, “শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য, শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য, শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য” আর এই নামের সহিত তাঁর প্রাণ চলে গেলেন... ।

মহাপ্রভু হরিদাসের দেহ কোলে নিয়ে নাচতে শুরু করলেন । তারপর তিনি তাঁর শরীর নিজে কাঁধে করে সমুদ্রে নিয়ে এসে স্নান করিয়ে দিলেন আর ঘোষণা করলেন, “আজ এই সমুদ্র মহাতীর্থ হল!” সবাই কিছু সমুদ্রের জল মুখে দিয়ে হরিদাস ঠাকুরের শরীর তীরে রেখেছিলেন আর মহাপ্রভু নিজে হাতে বালি খুঁড়তে খুঁড়তে গর্ত করেছিলেন আর শেষে হরিদাস ঠাকুরের শরীর সেখানে সমাধি করে দিলেন ।

জগন্নাথ মন্দিরে পাশে ‘আনন্দ বাজার’ একটা জায়গা আছে—সেখানে জগন্নাথদেবের প্রসাদ বিক্রি করা হয় । উত্তরীয় সামনে ধরে মহাপ্রভু এক এক দোকানে গিয়ে বললেন, “আমার হরিদাস চলে গিয়েছে—আজকে আমি উৎসব করব । তোমরা যা পার সেটা দাও ।” সবাই এত বেশী প্রসাদ দিয়েছিলেন যে সেই দিন বিরাট মহোৎসব হয়ে গেল, সেখানে মহাপ্রভু নিজে হাতে প্রসাদ পরিবেশন করেছিলেন ।

সেই ভাবে হরিদাসের নির্যাণের লীলা হয়েছিল ।

 


 

← গম্ভীরা—বিরহের জ্বলন্ত ঘর গদাধর পণ্ডিত : মহাপ্রভুর ছায়া →

 

অনন্তশ্রীবিভূষিত ওঁ বিষ্ণুপাদ পরমহংসকুলচূড়ামণি বিশ্ববরেণ্য জগদ্­গুরু শ্রীশ্রীমদ্ভক্তিনির্ম্মল আচার্য্য মহারাজের পদ্মমুখের হরিকথামৃত


ডাউনলোড


 

সূচীপত্র

সূচনা :
শ্রীজগন্নাথদেব
মহাপ্রভুর ইচ্ছা ও পুরীতে যাত্রার আরম্ভ
মহাপ্রভুর পুরীতে যাত্রা :
শান্তিপুর
রেমুণা
সাক্ষীগোপাল
ভুবনেশ্বর
ভুবনেশ্বর শ্রীলিঙ্গরাজ
আঠারনালা
শ্রীপুরীধামে :
সার্বভৌম ভট্টাচার্য্যের সথে মিলন
সার্বভৌম ভট্টাচার্য্যের শিক্ষা
কাশী মিশ্রের কথা
রামানন্দ রায়ের পুনর্মিলন ও প্রকৃতি
ভক্তদের সহিত শ্রীক্ষেত্রে বার্ষিক মিলন
রাজা প্রতাপরুদ্রের প্রতি কৃপা
গোবিন্দ প্রভুর শিক্ষা
দর্শনের আর্ত্তি
শ্রীআলালনাথের কথা
কালিদাসের ব্যতিক্রম
সার্বভৌম ভট্টাচার্য্যের প্রসাদে রুচি
“ষাঠী বিধবা হয়ে যাক !”
গঙ্গা মাতা গোস্বামিণী
শ্রীগোপাল গুরুর কথা
শ্রীজগদানন্দ পণ্ডিতের প্রেম
শ্রীলসনাতন গোস্বামীর সঙ্গ
রামচন্দ্র পুরীর কথা
শ্রীপরমানন্দ পুরীর ভক্তিকূপ
দামোদর পণ্ডিতের বিদায়
ছোট হরিদাসের শাস্তি
গুণ্ডিচা-মার্জ্জন লীলা
শ্রীনারায়ণ ছাতায়
চটকপর্ব্বতের কথা
গম্ভীরা—বিরহের জ্বলন্ত ঘর
শ্রীল হরিদাসঠাকুর : নামাচার্য্য শিরোমণি
শ্রীগদাধর পণ্ডিত : মহাপ্রভুর ছায়া
শ্রীরঘুনাথদাস গোস্বামীর শ্রীপুরীধামে আগমন ও ভজন
পরিশেষ

বৃক্ষসম ক্ষমাগুণ করবি সাধন । প্রতিহিংসা ত্যজি আন্যে করবি পালন ॥ জীবন-নির্ব্বাহে আনে উদ্বেগ না দিবে । পর-উপকারে নিজ-সুখ পাসরিবে ॥